হরিয়ালি তীজ 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Hariyali Teej 2024: History and Significance

হরিয়ালি তীজ 2024 (Hariyali Teej 2024 Date Time and Significance) 2024 হরিয়ালি তীজ ইতিহাস এবং জানুন হরিয়ালি তীজ কেন পালন করা হয়? হরিয়ালি তীজ তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য হরিয়ালি তীজ গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

ভারত হলো পূজা-পার্বণ এবং উৎসব প্রবন দেশ। সারা দেশ জুড়ে বিভিন্ন রকমের পার্বণ, উপবাস পালন হয়ে থাকে সংসারে সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করার জন্য। তীজ অথবা তিজ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো তৃতীয় এবং সাধারণত পূর্ণিমা অথবা অমাবস্যার রাতের তৃতীয় দিন, অতএব বলা যেতে পারে এটি পূর্ণিমা অথবা অমাবস্যা রাতের পর তৃতীয় দিনের দিন, বর্ষার আগমনকে স্বাগত জানানো হয়।

হরিয়ালি তীজ ইতিহাস ও তাৎপর্য - Hariyali Teej History and Significance
2024 হরিয়ালি তীজ ইতিহাস ও তাৎপর্য – 2024 Hariyali Teej History and Significance

করবা চৌথ এর মত হরিয়ালী তিজ ভারতের অন্যতম প্রিয় উৎসব। তিজের বর্ষবরণ উৎসব মূলত মহাদিদের মহাদেব এবং দেবী পার্বতীকে উৎসর্গ করা হয়। মহিলারা স্বামীর দীর্ঘায়ু এবং সুস্থতা কামনা করে উপবাস রাখেন এবং এই একই সময়ে অবিবাহিত মহিলারাও শিবের মত স্বামী পেতে উপোস করে থাকেন। বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ, ঝাড়খন্ড, বিহার, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে এই হরিয়ালি তিজ উৎসব পালন করা হয়।

বর্ষাকে আগমন জানানোর জন্য  যে বর্ষবরণ উৎসবের মধ্যে রয়েছে হরিয়ালি তীজ, কাজরী তীজ এবং হরতালিকা তীজ, খুবই গুরুত্বপূর্ণ উৎসব।

হরিয়ালি তীজ 2024:

শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষ এর তৃতীয়ায় স্বাধারনত নাগ পঞ্চমীর দুই দিন আগে পালন করা হয় হরিয়ালি তীজ। এই দিনে নারীরা চাঁদের পূজাও করে থাকেন। হরিয়ালি তীজ সবুজের প্রতিক এবং তাই মহিলারা শুভ উপলক্ষে সবুজ রঙের পোশাক এবং চুড়ি পরে থাকে। বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী লোকগান গেয়ে এবং নেচে ধুমধুম করে পালন করা হয় এই উৎসব। হরিয়ালি তীজ শ্রাবণ তীজ নামেও পরিচিত।

কাজরী তীজ 2024: 

কাজরী তীজ আসে রাখি বন্ধনের তিনদিন পর এবং কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ৫ দিন আগে। উত্তর ভারতীয় ক্যালেন্ডার অনুসারে এটি ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের সময় পালন করা হয় এবং দক্ষিণ ভারতীয় ক্যালেন্ডার অনুসারে এটি শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণপক্ষের সময় অনুষ্ঠিত হয়।

এই দিনে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান এবং ঐতিহ্যের সাথে নিম গাছের পবিত্র পূজা করা হয়। মনে করা হয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রশংসায় নারীরা রাধা ও সখী হিসেবে নাচ গান করে থাকেন। কাজরী তীজ বোদি তীজ নামেও পরিচিত।

কাজরি তীজ ইতিহাস ও তাৎপর্য

হরতালিকা তীজ 2024: 

ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষ এর হরতালিকা তীজের ব্রত পালন করা হয়। হরতালিকা তীজ হরিয়ালি তীজের একমাস পরে আসে এবং বেশিরভাগ সময় গণেশ চতুর্থীর একদিন আগে উদযাপন করা হয়। এই দিনে মহিলারা নির্জলা উপবাস করে থাকেন অর্থাৎ খাবার ও জল ছাড়াই উপবাস পালন করেন। এদিন স্বামীদের দীর্ঘ আয়ু ও দাম্পত্য জীবনের জন্য দেবী পার্বতীর পূজা করা হয়।

তীজ হলো বর্ষার উদযাপন এবং এটির সাথে যা কিছু রয়েছে সেটি প্রাকৃতিক ভাবে উদযাপন এবং এর পুরো সময়ের মধ্যেই রয়েছে এর উৎসবের প্রাচুর্য। প্রাথমিকভাবে ভারত একটি কৃষি ক্ষেত্র হওয়ার কারণে এই উৎসব হিন্দু ঐতিহ্যের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিয়ে রেখেছে।

হরতালিকা তীজ ইতিহাস ও তাৎপর্য

হরিয়ালি তীজের গুরুত্ব 2024: 

দেবী পার্বতীকে তীজমাতা বলা হয় এবং বিশ্বজুড়ে হিন্দু মহিলা হিসেবে অভিহিত করা হয় এবং এই উৎসবে স্বামীর সুরক্ষার জন্য তার কাছে প্রার্থনা করা হয় এবং প্রচুর বর্ষার জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়।

বৃষ্টিপাতের পরে প্রকৃতিতে আমরা যে সবুজ শাকসবজির প্রচুর পরিমাণে প্রাদুরভাব দেখি তা থেকে হরিয়ালি তীজ এর পরিচয় পাওয়া যায়। এটি সৌভাগ্যক্রমে বিবাহিত জীবনের ঐশ্বর্য এবং তৃপ্তির প্রতি হিসেবে বোঝানো হয়েছে।

কাজরী তীজকে বোলি তীজ নামেও অভিভূত করা হয় এবং এই উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে মহিলারা শিবের কাছে প্রার্থনা করে থাকেন যে তারা যেন শ্বশুরবাড়িতে তীজের অনুষ্ঠানটি সঠিকভাবে উপভোগ করতে পারেন এবং সংসারে সুখ শান্তি বজায় থাকে।

এই উৎসবে ঘি, লাড্ডু, নারকেল, সাবুদানার ক্ষীর, আলুর হালুয়া এই উৎসবের সাথে জড়িত কিছু বিশেষ মিষ্টি। যা ঘরে ঘরে প্রস্তুত করা হয় এবং পরিবেশন করা হয়।

যদিও হরিয়ালি তীজের উৎসবটি সর্বত্রই কমবেশি পালন করা হয়। যাই হোক না কেন এই দিনে ফুল, ফল, ধূপ, ধুনার সাথে হরিয়ালিতে উৎসবটি পালন করা হয়। ঘরে ঘরে ক্ষীর, মিষ্টি এবং আরো অন্যান্য নৈবেদ্য তৈরি করার পাশাপাশি সংসারের সমৃদ্ধির জন্য ঘরের মহিলারা উপবাস পালন করে থাকেন। উৎসব সম্পূর্ণ হওয়ার পরে তবেই তারা জলস্পর্শ করেন।

যেহেতু হরিয়ালি তীজ বর্ষাকে আগমন করার উৎসব এবং তার পাশাপাশি সংসারে উন্নতি সাধন এর জন্য প্রার্থনা করা, সেহেতু অনেক জায়গাতেই দেবাদিদের মহাদেব এবং পার্বতীর পূজা করা হয়। তার সাথে সাথে বর্ষাকে আগমন করা হয়। পৃথিবীকে আরও বেশি সবুজ, শস্য শ্যামলা করে তোলার জন্য।

শিবের মতো স্বামী পাওয়ার জন্য যেমন মহা শিবরাত্রি পালন করা হয় তেমনি হরিয়ালি তীজ উৎসবটিও কিন্তু অবিবাহিত মহিলারা শিবের মতো স্বামী পাওয়ার জন্য উপবাস করে ব্রত পালন করেন। এছাড়া যারা বিবাহিত মহিলা তারাও কিন্তু স্বামী, সন্তানের সুস্বাস্থ্য, পরিবারের সমৃদ্ধি, সুখের জন্য এই হরিয়ালি তীজ উৎসবটি পালন করে থাকেন এবং ব্রত পালন করে।

এই উৎসবে মহিলারা গান, বাজনা, নৃত্য অনুষ্ঠান করে থাকেন এবং তার সাথে সাথে বর্ষাকে স্বাগত জানিয়ে থাকেন, উজ্জ্বল বর্ণের পোশাক পরেন এবং হাতের তালুতে মেহেন্দি করে নিজেদেরকে সাজিয়ে তোলেন। তারপর সমস্ত রকম আচার রীতি-নীতি পালন করার সাথে সাথে পরিবার এবং বন্ধু বান্ধবদের সাথে গল্প ও গুজব করে এই দিনটি অতিবাহিত করে।

তাছাড়া একে অন্যের বাড়িতে অতিথি হয়ে গিয়ে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করাটাও হরিয়ালি তীজের মধ্যেই অন্যতম একটি বিষয়। তাছাড়া এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভারতের কৃষি ক্ষেত্রের উন্নতি সাধন। সবদিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে, হরিয়ালি তীজ উৎসবটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top