জন্মাষ্টমী 2023 (Janmashtami 2023 Date Time and Significance) 2023 জন্মাষ্টমীর ইতিহাস এবং জানুন জন্মাষ্টমী কেন পালন করা হয়? জন্মাষ্টমীর তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য জন্মাষ্টমীর গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
সনাতন ধর্মাবলম্বী দের কাছে কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হিসেবে পরিচিত। যে উৎসবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথিতে মথুরা ও বৃন্দাবনের বিভিন্ন মন্দির ফুল মালা এবং অন্যান্য সুন্দর সুন্দর সামগ্রীতে সাজিয়ে তোলা হয়। অনেক দিনের বিশ্বাস অনুযায়ী মথুরাতে মধ্যরাতে শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আর বেড়ে উঠেছিলেন বৃন্দাবনে। সেই থেকে এই তিথিতে কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী উৎসব পালন করা হয়।
জন্মাষ্টমী নিয়ে যে কাহিনী রয়েছে সেই কাহিনী অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ কংসের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল, যে কারণে ঝড় বৃষ্টির রাতে শিশু কৃষ্ণকে তার আসল মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল যশোদা মায়ের কাছে।
জন্মাষ্টমীর ইতিহাস 2023:
ভাদ্র মাসে অন্ধকার পক্ষের অষ্টম দিনে অর্থাৎ অষ্টমীতে জন্মগ্রহণ করে ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। এদিকে কংস রাজার বোন রাজকন্যা দেবকি কৃষ্ণের গর্ভধারিনী মা ছিলেন। দেবকী এবং বাসুদেব বিভিন্ন ধর্মান্ধতার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তবুও একটি ভবিষ্যৎ বাণীতে বলা হয়েছিল যে এই দম্পতির অর্থাৎ দেবকী ও বাসুদেবের অষ্টম গর্ভের সন্তান অর্থাৎ অষ্টম গর্ভের পুত্র সন্তান রাজা কংসের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
2023 জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস ছবি
কিন্তু এই কথা শুনে কংস কখনোই সেই অষ্টম সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইবেন না। সেই কারণে তখনই দেবকী এবং বাসুদেবকে বন্দী করে রাখেন। খুবই দুষ্ট রাজা দেবকী ও বাসুদেবের প্রথম ছয়টি সন্তানকে হত্যা করেছিল তবে সপ্তম গর্ভের সন্তান বলরামের প্রসবের সময় সেই ভ্রুণটি দেবকির গর্ব থেকে রাজকন্যা রোহিনীর গর্ভে রহস্যজনকভাবে স্থানান্তরিত হয়েছিল বলে জানা যায়।
এই দম্পতির অষ্টম সন্তান ছোট্ট শিশু কৃষ্ণের জন্মের পরে বাসুদেব শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং তাকে বৃন্দাবনে নন্দ ঘোষ এবং যশোদা মায়ের কাছে পাঠিয়েছিলেন ঝড় বৃষ্টির রাতে। তারপর একটি কন্যা সন্তানকে নিয়ে এসে কংসের হাতে তুলে দেন। তবুও রাজা যখন সেই শিশুটিকে হত্যার চেষ্টা করছিলেন তখন সেই শিশুকন্যা দেবী দুর্গার রূপ ধারণ করেছিল।
দুষ্টু কৃষ্ণ বৃন্দাবনে নন্দ ঘোষ ও যশোদার আদর যত্নে বেড়ে উঠতে থাকেন। আমরা সবাই জানি যে, কৃষ্ণ মাখন খেতে খুবই পছন্দ করেন, তাই সেখানকার সমস্ত মাখন কৃষ্ণ আর তার বন্ধুবান্ধব মিলে চুরি করে খেয়ে নিতেন। তাই নিয়ে অভিযোগের শেষ থাকতো না পাড়া-প্রতিবেশীদের। আর সেই কারণে কৃষ্ণকে আমরা মাখন চোর হিসাবে চিনি।
যখন বৃন্দাবনে যশোদা এবং নন্দ ঘোষের কাছে কৃষ্ণকে রেখে আসার জন্য বাসুদেব রওনা দিয়েছিলেন তখন মুষলধারে বৃষ্টি ও বজ্রপাত হয়, বৃন্দাবন যেতে গেলে যমুনা পার করে যেতে হবে, সেই যমুনা পার হওয়ার সময় নদীর জল বাসুদেবের বুক পর্যন্ত ছিল, তার বেশি ওঠেনি এবং ছোট্ট শিশু কৃষ্ণকে ঝড়-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করার জন্য শেষ নাগ তার সমস্ত ফণা তুলে কৃষ্ণকে রক্ষা করেছিল সেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে। তারপর যশোদার সদ্যোজাত কন্যা সন্তানের সাথে বদল করে কৃষ্ণকে সেখানে রেখে কন্যা সন্তান নিয়ে বাসুদেব আবার ফিরে আসেন কংসের রাজ্যে মথুরাতে।
কৃষ্ণ কথার অর্থ:
কৃষ্ণ কথার সংস্কৃত অর্থ হল কালো। কৃষ্ণের মূর্তিগুলোতে তার গায়ের রং সাধারণত কালো রাখা হয়েছে তবে ছবিগুলিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় শ্রীকৃষ্ণের গায়ের রং নীল। তার রেশমি ধুতি সাধারণত হলুদ রঙের হয় এবং মাথায় যে মুকুট পরে থাকেন, সেই মুকুটে একটি ময়ূর পালক শোভা পায়। সাধারণত কৃষ্ণের প্রচলিত মূর্তিগুলিতে তাকে বংশীবাদক একটি বালকের রূপে দেখা যায়, যে বালক কোন গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আপন মনে বাঁশি বাজাচ্ছে।।
শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে রাধা, বলরাম এবং সুভদ্রার পূজাও করা হয়। শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল মথুরাতে তবে তিনি বড় হয়েছিলেন গোকুলে। সেই জন্য মথুরা ও বৃন্দাবনে এই উৎসব সবথেকে বড় করে এবং জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করা হয়। কৃষ্ণের মোট ১০৮ টি নাম আছে। মথুরার কমপক্ষে ৪০০ টি মন্দির রয়েছে যে মন্দির গুলির প্রত্যেকটি মন্দিরের শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করা হয় খুবই ভক্তি সহকারে।।
জন্মাষ্টমীর তাৎপর্য 2023:
শ্রীকৃষ্ণের ভক্তরা বৈষ্ণব সম্প্রদায় এবং ইসকন অনুগামীরা খুবই জাকজমকপূর্ণ ভাবে জন্মাষ্টমী পালন করে থাকেন। আর এই দিনটিতে ৫৬ ভোগ গোপালকে নিবেদন করা হয়। মনে করা হয় যে, গোপালকে যদি তুষ্ট করা যায় তাহলে সকল ভক্তদের মনকামনা পূর্ণ হবে এবং ধনলাভ করা সম্ভব হবে। জন্মাষ্টমীর দিন ধনলাভ করার জন্য রাধা কৃষ্ণের মূর্তিতে হলুদ মালা দিয়ে পূজা অর্চনা করার কথা হিন্দু পুরানে রয়েছে।
এমন অনেক মহিলা আছেন যারা শ্রীকৃষ্ণের মত দুষ্টু, মিষ্টি, চঞ্চল এটি পুত্র সন্তান কামনায় জন্মাষ্টমীর ব্রত পালন করেন। এমন বিশ্বাস অনেকদিন আগে থেকেই চলে আসছে। যার ফলে অনেকেই এই ব্রত পালন করার পর পুত্র সন্তানের জননী হয়েছেন। আর এমন ভাবে অনেক বাড়িতে জন্মাষ্টমী উৎসব শুরু হয়েছে। তার সাথে সাথে সংসারের উন্নতি, ধনলাভ, সমস্ত কাজে উত্তীর্ণ হওয়া এসব কিছু তো রয়েছেই।
শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় ফুল:
আমরা সকলেই কমবেশি জানি যে শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় ফুল হলো সাদা রঙের ফুল। তাই যত রকমের সাদা ফুল রয়েছে সবকিছুই যে কৃষ্ণের পছন্দের। তবে কদম গাছের নিচে বাঁশি বাজানো এবং সেখানে বসে গরু চরানোর জন্য কদম গাছ এবং কদম ফুল কেও শ্রীকৃষ্ণ ভালোবাসতেন বলে মনে করা হয়।
টগর ফুল, গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা, বেলফুল, কলকে মুটি আরো বিভিন্ন ধরনের সাদা রঙের ফুল, হলুদ রঙের ফুল ও এই পুজোতে নিবেদন করা হয়। তবে বিশ্বাস আছে যে হিন্দু পুরাণ অনুসারে জন্মাষ্টমীর দিন একটি ঝুনো নারকেল ও ১১ টি বাদাম দিয়ে শ্রীকৃষ্ণকে অভিষেক করলে সব কাজে বাধা মুক্ত হয়ে থাকা যায়।
বিভিন্ন ধরনের প্রসাদের পাশাপাশি শ্রীকৃষ্ণ ক্ষীর খেতে পছন্দ করতেন। ননী চোর হিসেবে আমরা জানি বলে এই দিনটিতে সবথেকে বেশি দুধের ক্ষীর নিবেদন করা হয় তাকে। এই উৎসবের জন্য অনেক পরিমাণ ক্ষীর তৈরি করার ক্ষেত্রে বেশ অনেকটাই দুধের প্রয়োজন হয়।
তাই এই দিনটিতে সমস্ত জায়গা থেকে দুধ এর আয়োজন করা হয়। নারকেল নাড়ু, তালের বড়া, যেহেতু ভাদ্র মাসে পাকা তাল পাওয়া যায় তাই তালের বড়া ও জন্মাষ্টমীর সাথে বিশেষ ভাবে জড়িত।
নন্দ উৎসব 2023:
বাসুদেব যখন মাথায় করে শ্রীকৃষ্ণ কে যমুনা পার করে বৃন্দাবনে নিয়ে আসেন তখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ একেবারে যেন ভেঙে পড়েছিল। তখন শেষনাগ তাকে রক্ষা করার জন্য সমস্ত ফনা তুলে প্রাকৃতিক সেই দুর্যোগ থেকে শিশু শ্রীকৃষ্ণকে রক্ষা করেছিল।
নন্দ উৎসব হল এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবং কৃষ্ণকে নগর ভ্রমণ করার উদ্দেশ্যে মন্দির থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া দুটি মিলিয়ে নন্দ উৎসব। বাচ্চা থেকে বড়দের খুবই আনন্দের উৎসব।
এই উৎসবে কৃষ্ণের মূর্তি ছোট্ট শিশু হিসেবে গঠন করা হয় আর শেষ নাগ তাঁকে রক্ষা করছে, এমন মূর্তি নিয়ে মন্দির থেকে বের হয়ে সারা পাড়া ঘুরে প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে কাদামাখা, তালের বড়া বিতরণ, প্রসাদ বিতরণ করে আবার ঘরে ফিরে আসা এর উৎসবের মূল বিষয়।
প্রতিবছর ভাদ্র মাসে অষ্টমী তিথিতে জন্মাষ্টমী উৎসব হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি বিশেষ উৎসব হিসেবে পরিচিত। যে উৎসবে বর্ষার বৃষ্টির মিষ্টি মধুর পরিবেশের সাথে জন্মাষ্টমী পূজো, নন্দ উৎসব, ভোরবেলা ফুল তোলা, সারাদিন পূজার আয়োজন, রাত জেগে পূজায় অংশগ্রহণ করা, সবকিছু মিলিয়ে নন্দ উৎসব, জন্মাষ্টমী উৎসব খুবই আনন্দের একটি উৎসব।