করবা চৌথ ব্রত 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Karva Chauth Vrat 2024: History and Significance

2024 করবা চৌথ ব্রত: (Karva Chauth Vrat 2024 Date Time and Significance) 2024 করবা চৌথ ব্রত ইতিহাস এবং জানুন করবা চৌথ ব্রত কেন পালন করা হয়? করবা চৌথ ব্রত তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য করবা চৌথ ব্রত গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

করবা চৌথ ব্রত,  নিশ্চয়ই শুনেছেন, কি তাই তো !সারাদিন নির্জলা উপবাস থেকে সূর্যাস্তের পরে সেই উপবাস শেষে  স্বামীর হাতে জল খেয়ে উপবাস ভঙ্গ করতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন সিনেমা, টিভি সিরিয়ালের মধ্য দিয়ে করবা চৌথ ব্রত সম্পর্কে অনেকেই জানেন।

করবা চৌথ ব্রত ইতিহাস ও তাৎপর্য - Karva Chauth Vrat History and Significance
2024 করবা চৌথ ব্রত ইতিহাস ও তাৎপর্য – 2024 Karva Chauth Vrat History and Significance

যদিও এই ব্রত বাংলাতে খুব একটা পালন করা হয় না, তবে হিন্দুদের রীতি গুলির মধ্যে অন্যতম হলো এই করবা চৌথ ব্রত। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার চার দিন পর এই ব্রতটি পালন করা হয়।

হিন্দু ধর্মে প্রতিটি ব্রত’র এর পিছনে রয়েছে  ইতিহাস, তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, করবা চৌথ ব্রতর ইতিহাস সম্পর্কে: 

বিভিন্ন রকমের গল্পের মধ্যে দিয়ে করবা চৌথ ব্রত পালন করার ইতিহাস জানা যায়। যে ঘটনাগুলো শুনতে খুবই আকর্ষণীয়।

মহাভারতের গল্প অনুসারে করবা চৌথ ব্রত:

এই ব্রতর প্রচলন হয়েছিল মহাভারতের যুগ থেকেই। মনে করা হয় যে, দ্রৌপদী তার স্বামীর মঙ্গল কামনার জন্য এই ব্রত পালন করতেন অর্থাৎ দ্রৌপদীর পাঁচটি স্বামীর জন্য এই ব্রত পালন করেছিলেন, একবার অর্জুন কোনো কাজে নীলগিরির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন।

তখন অর্জুনকে ছাড়া বাকি পাণ্ডবরা নানা সমস্যার মধ্যে পড়েছিলেন। আর এমন অবস্থায় দ্রৌপদী ভগবান কৃষ্ণের কাছে সাহায্য চাইতে গিয়েছিলেন, সেই সময় কৃষ্ণ পার্বতীর কথা বলেছিলেন দ্রৌপদী কে।

2024 করবা চৌথ শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস ছবি

মাতা পার্বতীও কিন্তু শিবের জন্য উপবাস রেখেছিলেন এবং সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করেছিলেন দেবাদিদেব মহাদেব। সেই অনুযায়ী দৌপদীও কিন্তু অর্জুনের জন্য উপবাস রাখেন এবং সমস্যা থেকে মুক্তি হন, পান্ডবদের সমস্ত রকম সংকট কেটে যায়।

রানী বীরাবতীর গল্প অনুসারে করবা চৌথ ব্রত:

বিভিন্ন জনপ্রিয় কাহিনীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাহিনী হলো রানী বিরাবতীর গল্প। তিনি ছিলেন খুবই সুন্দরী, তার সাত ভাই এর মধ্যে তিনি ছিলেন একমাত্র বোন। তাই খুবই আদরের ছিলেন তিনি। তিনি বাপের বাড়িতে থাকাকালীন একবার করবা চৌথ ব্রত পালন করেন।

কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি খিদে তৃষ্ণা নিয়ে থাকতে পারেননি। রানী বীরাবতির কষ্ট দেখে তার ভাইরা বলেন উপবাস ভঙ্গ করে দিতে। কিন্তু তাতে তিনি রাজি হননি, বোনের কষ্ট দেখে ভাইয়েরা পিপল গাছেতে আয়না দিয়ে নকল চাঁদ তৈরি করে এবং তাদের বোনকে উপবাস ভেঙ্গে দিতে বলেন।

রানী বিরাবতী সেই আয়নাকে চাঁদ মনে করে উপবাস ভেঙে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি খাবার মুখে নেওয়ার সাথে সাথেই তার স্বামীর মৃত্যু হয়। আর তাইতো যত কষ্টই হোক না কেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত চাঁদ দেখে স্বামীর মুখ দেখছেন মহিলারা, ততক্ষণ পর্যন্ত নির্জলা উপবাসেই থাকতে হয়।

করবা এর গল্প অনুসারে করবা চৌথ ব্রত:

করবা নামে একজন মহিলাকে ঘিরে রয়েছে এই ব্রতর কাহিনী। তিনি ছিলেন খুবই একনিষ্ঠ হিন্দু স্ত্রী। একবার তার স্বামী নদীতে স্নান করতে গিয়েছিলেন এবং সেখানে কুমিরের মুখে পড়েছিলেন, তার স্ত্রী তাকে বাঁচানোর জন্য কুমির টিকে সুতো দিয়ে বেঁধে রাখেন।

এরপর করবা যমরাজকে বলেন কুমিরটিকে নরকে পাঠানোর জন্য। তবে যমরাজ সেই কথা না শোনার জন্য করবা যমরাজকে অভিশাপ দেবেন বলে বলেন। যমরাজ ভয় পেয়ে গিয়ে কুমিরটিকে নরকে পাঠান। এরপর করবা ও তার স্বামী একসঙ্গে শান্তিতে বসবাস করতে থাকেন সুস্থ ভাবে।

সব গল্প থেকে একটাই বিষয় জানা যায় যে, স্বামীর মঙ্গল কামনার জন্য এই ব্রত পালন করা হয়। এইরকম ভাবে বহু যুগ ধরে চলে আসছে করবা চৌথ ব্রত।

করবা চৌথ, এই ব্রতটি মূলত উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের পালনীয় একটি ব্রত। করবা, এর অর্থ হল ছোট পাত্র বা কড়াই। আর চৌথ কথার অর্থ হল চার অর্থাৎ চতুর্থী তিথি। কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষ শুরু হওয়ার চতুর্থ দিনে এই অনুষ্ঠান পালন করা হয় বলে একে করবা চৌথ ব্রত বলে।

এছাড়া এই ব্রত “করক চতুর্থী” নামেও পরিচিত। সারা দেশ জুড়ে পালিত হয় এই ব্রত টি। বিবাহিত নারী এবং পুরুষ উভয়ের কাছে এই ব্রতর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। সূর্যোদয়ের পর থেকে একেবারে নির্জলা উপবাস এ থাকতে হয় বিবাহিত মহিলাদের এবং তারা পালন করেন সমস্ত রীতিনীতি। চাঁদ উঠলে পুজো শেষ করে প্রসাদ গ্রহণ করেন তারা।

ছট পূজা ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়

করবা চৌথ ব্রত কিভাবে পালন করা হয়?

স্বামী ও স্ত্রীর ভালবাসার প্রতিক হিসেবে এই ব্রত প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। উপবাসে থাকেন দুজনেই, সূর্যোদয়ের আগে শাশুড়ি মা পুত্রবধূর হাতে পুজোর সমস্ত উপকরণ দিয়ে, সাজ সজ্জার নানান উপকরণ উপহার হিসেবে তুলে দেন। নতুন পোশাক থাকে মেহেন্দি থাকে হাত রাঙিয়ে তোলার জন্য, তার সাথে সাথে পাট করা হয় ব্রতকথা।

স্বামীর মঙ্গল কামনায় এবং তার দীর্ঘায়ু লাভের জন্য সারাদিন উপবাস থাকার পর সন্ধ্যেবেলায় চতুর্থীর চাঁদ উঠলে শিব, পার্বতী এবং গণেশের পূজা করে একটি জালের পাত্রের মধ্যে দিয়ে চাঁদ দেখেন বিবাহিত মহিলারা। আর সেই জালের পাত্র অথবা ছান্নি বা চালুনি তে প্রদীপ থাকে, এরপর সেই জালের ভিতর দিয়ে স্ত্রীরা চাঁদ দেখেন, তারপর সেই প্রদীপের আলোয় দেখতে হয় স্বামীর মুখ। পুজো শেষে একসঙ্গে উপবাস ভাঙ্গেন বিবাহিত দম্পতি। বিবাহিত মহিলারা এদিন নতুন লাল শাড়ি পরে ব্রতকথা, ধর্মীয় গান শুনে দিন কাটান।

করবা চৌথ ব্রত পালন করার নিয়ম:

করবা চৌথ ব্রততে চন্দ্র দেবতার কাছে স্বামীর মঙ্গল কামনা প্রার্থনা করেন বিবাহিত স্ত্রীরা। চালুনি দিয়ে পুজোর থালায় রাখা প্রদীপের আলোয় স্বামীর মুখ দেখে, তাকে বরণ করে নিতে হয়, এরপর মাটির পাত্র থেকে জল খাইয়ে দেন তার স্বামী এবং ওই জল পান করে তারা উপবাস ভঙ্গ করেন।

করবা চৌথ তে কি করবেন আর কি করবেন না: 

  • করবা চৌথ উপবাস শুরু হওয়ার আগে শাশুড়ি তার পুত্রবধূকে জামা, কাপড়, মিষ্টি, সাজসজ্জা প্রদান করেন যেটিকে সারগি” বলে।
  • আর এর থেকেই শুরু হয় এই ব্রত। তবে এই দিন ভুল করেও আপনার বৈবাহিক জীবনের কোন জিনিস অন্য কোন মহিলাকে দেবেন না, প্রয়োজনে নতুন কোন জিনিস কিনে দিতে পারেন, তবে আপনার কোন জিনিস নয়।
  • এই দিন বাদামি এবং কালো রঙের কোন পোশাক পরা উচিত নয়, কারণ এটিকে অশুভ বলে মনে করা হয়।
  • সেই কারণে লাল রঙের পোশাক সব থেকে শুভ হিসেবে মানা হয়, তাই উজ্জ্বল লাল রঙের পোশাক অথবা শাড়ি পড়বেন।
  • তাছাড়া যদি আপনার কাছে লাল রঙের পোশাক না থাকে প্রয়োজনে হলুদ রঙের পোশাকও করতে পারেন।
  • শাস্ত্র অনুযায়ী এদিন বাড়িতে কোনরকম অশান্তি না করাই মঙ্গলজনক। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এই দিন কোন রকম ঝগড়া যেন না হয়। সেটাকে অশুভ বলে মনে করা হয়। কেননা এই ব্রত স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য এবং স্বামীর মঙ্গল কামনায় করা হয়।
  • তাই বুঝতেই পারছেন স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা বজায় রাখাটা এই ব্রতর মূল কথা।
  • যে সমস্ত মহিলারা করবা চৌথ ব্রত পালন করবেন তাদের কোনরকম ধারালো জিনিস এদের ব্যবহার না করাই ভালো।
  • এই ব্রত শুধুমাত্র যে বিবাহিত মহিলারাই পালন করতে পারবেন, এমনটা কিন্তু নয়, যে সমস্ত মেয়েদের বিবাহ সম্পূর্ণ রূপে ঠিক হয়ে গিয়েছে, তারাও তাদের বিশেষ মানুষটির জন্য এই উপবাস রাখতে পারবেন।

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা ইতিহাস ও তাৎপর্য

তাহলে জেনে নেওয়া যাক করবা চৌথ ব্রত তে যে সমস্ত সাজসজ্জা গুলি থাকে, সেগুলি সম্পর্কে:

  • সিঁদুর,
  • টিপ,
  • কাজল,
  • মেহেন্দি,
  • সুন্দর লাল রঙের পোশাক অথবা শাড়ি,
  • খোপার ফুলের মালা,
  • টিকলি,
  • নাকের নথ,
  • কানের দুল,
  • মঙ্গলসূত্র অথবা গলার সুন্দর হার,
  • আলতা,
  • চুড়ি,
  • হাতের আংটি,
  • কোমর বন্ধ,
  • পায়ের আঙ্গট,
  • নুপুর।

এছাড়া শাশুড়ি মায়েরা যদি আরো অন্যান্য উপহার দিতে চান এগুলি ছাড়া, সেগুলিও দিতে পারেন আপনার পুত্রবধূকে।

স্বামীর মঙ্গল কামনায় যুগ যুগ ধরে বিবাহিত মহিলারা বিভিন্ন রকমের ব্রত পালন করেন। তবে এই যে করবা চৌথ ব্রত, এটি হলো খুবই বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্বামীর মঙ্গল কামনার ব্রত। যার মধ্য দিয়ে স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনা করা, সমস্ত রকম বাধা-বিপত্তি থেকে সুরক্ষা পেতে স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের জন্য এই ব্রত পালন করেন। বিয়ের আগেও বিশেষ মানুষটির জন্য, যার সাথে আপনার বিবাহ ঠিক হয়ে রয়েছে, তার মঙ্গল কামনায় এই করবা চৌথ ব্রত আপনি অনায়াসেই পালন করতে পারেন।

সুন্দর লাল শাড়িতে, চুরিতে সুন্দর ভাবে সেজে সারাদিন উপবাস থাকার পর চাঁদ দেখার পরে, স্বামীর মুখ দেখে, স্বামীর হাতে জল পান করে এই উপবাস ভঙ্গ করার মধ্যে দিয়ে মহিলারা এই উপবাসের সম্পূর্ণ লাভ পেয়ে থাকেন। এছাড়াও পূজা পার্বণের মধ্যে দিয়ে সংসারে সুখ শান্তি, ধন-সম্পত্তি বৃদ্ধি এবং সুস্থ সবল জীবন যাপন কামনা করাটাই এই দিনের ব্রতর মধ্যেই পড়ে।

সারাদিন প্রিয় মানুষটার জন্য পছন্দের খাবার তৈরি করা, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি তৈরি করা, একসাথে অনেক মহিলা মিলে গান নাচ করে এই ব্রত পালন করেন। এই ব্রত উপলক্ষে ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গা আলোকসজ্জায় সেজে ওঠে। তার সাথে সাথে সেজে ওঠেন সব বাড়ির প্রতিটি বিবাহিত মহিলা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top