কাঁকরোল একটি বহুল পরিচিত ও জনপ্রিয় সবজি। এটি সাধারনত গ্রীষ্মকালীন সবজি। এর বাজার মূল্য অনেক। কাঁকরোল তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। এছাড়া এটি ভাজি করে বা ভর্তা করে ও খাওয়া হয়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও খনিজ লবন।
আজ আমরা আপনাদের সাথে কাঁকরোল চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই কাঁকরোল চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।
বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।
মাটিঃ
কাঁকরোল চাষের জন্য সাধারনত দোআঁশ মাটি বা এটেল দোআঁশ মাটি বেশি উপযোগী। মাটিতে যদি পর্যাপ্ত জৈব সার থাকে তাহলে যে কোন মাটিতেই কাঁকরোল চাষ করা যেতে পারে।
জমিঃ
কাঁকরোল চাষে জমি উচু বা মাঝারি উচু হতে হবে। জমি অবশ্যই সুনিষ্কাশিত হতে হবে। জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কাঁকরোল গাছ জলাবদ্ধতা একদম সহ্য করতে পারে না।
জমি তৈরিঃ
কাকরোল চাষে জমি ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। জমিতে ৪-৫ টি চাষ ও মই দিতে হবে। মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হবে।
মাটি সমান করে নিতে হবে এবং আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর জমিতে প্রয়োজনীয় মাপ নিয়ে বেড তৈরি করে দিতে হবে।
চারা তৈরিঃ
বীজ থেকে কাঁকরোল চারা তৈরি করা যায়। আবার কন্দমূল থেকে ও চারা তৈরি করা যায়। তবে বীজ থেকে তৈরি না করা উত্তম। বীজ থেকে মাত্র ৫০% চারা সৃষ্টি হয় এবং বেশির ভাগে চারাই পুরুষ চারা হয়ে থাকে।
বীজ থেকে গজানো চারায় অনেক সময় ফলন কম হয়ে থাকে। এছাড়া জাতের গুনাগুন ও নষ্ট হয়ে যায়। তাই কাঁকরোল এর চারা তৈরি করার জন্য কন্দ বা মোথা থেকে তৈরি করা উচিত।
এতে চারার বৃদ্ধি ও ভালো হয় এবং গুনাগুন ও ভালো থাকে। কাঁকরোল গাছের আগা কেটে নিয়ে তাকে বালি বা মাটিতে ছায়া আছে এমন জায়গায় পুতে দিতে হবে।
১০-১৫ দিনের মধ্যে সেখানে চারা গজাবে। এছাড়া জমিতে মাদা তৈরি করে সরাসরি কন্দমূল ও লাগানো যেতে পারে।
বেড বা মাদা তৈরিঃ
চারা রোপন করার আগে জমিতে বেড তৈরি করে নিতে হবে। বেডের দৈর্ঘ্য হবে জমির লম্বা অনুযায়ী। প্রস্থ হবে ২ মিটার। দুই বেডের মাঝখানে নালা তৈরি করে দিতে হবে।
নালার প্রস্থ হবে ৩০ সেমি ও গভীরতা হবে ২০ সেমি। একটি বেডে দুইটি করে সারি লাগাতে হবে। এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব হবে ২ মিটার। প্রতি সারিতে গর্ত তৈরি করতে হবে । গর্তের আকার হবে ৬০×৬০×৬০ সেমি।
মাদার ৪-৬ সেমি গভীর গর্ত করে কন্দমূল রোপন করতে হবে। তারপর একে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে এবং উপরে খড় বিছিয়ে দিতে হবে। মাদার মাটি যেন শুকিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রয়োজনে জল সেচ দিতে হবে ঝাঝরি দিয়ে ২-১ দিন পর পর। মাটিতে যদি রস না থাকে তাহলে কন্দমূল গজাবে না। আবার রস বেশি হলে কন্দ পচে যেতে পারে। কাজেই এ দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
উন্নত ও ভালো ফলন পেতে হলে গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে।
প্রতি হেক্টরে গোবর সার দিতে হবে ৩-৫ টন।
ইউরিয়া দিতে হবে ১২৫-১৫০ কেজি,
টিএসপি দিতে হবে ১০০-১২৫ কেজি,
এমওপি দিতে হবে ১০০-১২৫ কেজি,
জিপসাম দিতে হবে ৮০-১০০ কেজি।
সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
জমি তৈরি করার সময় জমিতে গোবর সার মিশিয়ে দিতে হবে। টিএসপি সার, এমওপি ও জিপসাম দিতে হবে ১৫ দিন আগে । ইউরিয়া সার দুই ভাগে ভাগ করতে হবে।
তারপর মোথা গজানোর পর ১৫ ও ৩০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে জমিতে। এছাড়া মাটি যদি বেশি অম্লীয় হয় তাহলে প্রতি হেক্টরে ৮০-১০০ কেজি ডলোচুন শেষ বার চাষ দেওয়ার সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
সেচ প্রয়োগঃ
জমিতে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। জমিতে জলের অভাব দেখা দিলে গাছের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
কাঁকরোল গাছ অতিরিক্ত জল সহ্য করতে পারে না। তাই প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন অতিরিক্ত জল বের হয়ে যায়।
আগাছা দমনঃ
আগাছ জমলে তা পরিষ্কার করে দিতে হবে। আগাছা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। প্রয়োজনে জমির মাটি হালকা কুপিয়ে দিতে হবে তাহলে মাটিতে পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায়। গাছে প্রয়োজনে মাচা তৈরি করে দিতে হবে।
রোগ দমন ব্যবস্থাপনাঃ
গাছে রোগ ও পোকা আক্রমন করলে প্রয়োজনীয় ছত্রাক নাশক ও বালাই নাশক প্রয়োগ করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত কাঁকরোল সংগ্রহ করা যায়। কাকরোল হলদে সবুজ রং ধারন করলে তা সংগ্রহ করতে হবে।
গাছ রোপন করার ১.৫-২ মাসের মধ্যেই কাঁকরোল গাছ ফুল দিতে শুরু করে। আর পরাগায়ন হওয়ার ১২-১৫ দিনের মধ্যেই কাuকরোল সংগ্রহ করার সময় হয়।
ফলনঃ
সঠিক পরিচর্যা গ্রহণ করলে ও উন্নত জাত হলে প্রতি হেক্টরে ২৫-৩০ টন কাঁকরোল পাওয়া যায়।