(Bhabanipur Shakti Peeth in Bengali) ভবানীপুর শক্তিপীঠের বর্তমান অবস্থান কোন স্থানে? দেবী সতীর কোন অঙ্গ এখানে পতিত হয়েছে? ভবানীপুর শক্তিপীঠের পৌরাণিক কাহিনী কি? কিভাবে আরাধনা করা হয়? এই মন্দিরের তাৎপর্য কি? জানুন সবকিছু বিস্তারিত।
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে আমরা জানি যে, সতীর দেহ যখন সুদর্শন চক্র দ্বারা খন্ড-বিখন্ড করা হয় তখন সেই দেহ অংশ গুলি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। তেমনি ভাবে দেবীর বাম পায়ের নুপুর পতিত হয়েছিল বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলার শেরপুরে করতোয়া তটে। সতী মাতার ৫১ টি শক্তি পীঠের মধ্যে এটি একটি অন্যতম শক্তি পীঠ। যা কিনা হিন্দু ধর্মাবলম্বী দের কাছে একটি পবিত্র তীর্থস্থান।
বাবার অমতে গিয়ে যখন মহাদেবকে বিবাহ করেছিলেন সতী, তখন দক্ষ রাজা অর্থাৎ সতীর বাবা মহাদেবকে অনেক অপমান করেন। স্বামীর সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে তিনি বাপের বাড়িতেই দক্ষ যজ্ঞে আত্মাহুতী দেন।
এরপর মহাদেব সতীর মৃত্যুতে উন্মাদ পাগল হয়ে যান। আর সতীর দেহ কাঁধে করে নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেন। সেই তান্ডব নৃত্য তে পৃথিবীতে মহাপ্রলয় সৃষ্টি হয়।
তাতে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়। মহাদেবকে শান্ত করতে না পারলে পৃথিবী ধ্বংস হওয়া থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। তাই উপায় না পেয়ে বিষ্ণু মহাদেবকে শান্ত করার জন্য একটাই মাত্র পথ দেখতে পেলেন। সেটা হলো সতী দেবীর দেহকে খন্ড বিখন্ড করা।
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
তখন তিনি সুদর্শন চক্র দিয়ে দেবীর দেহ কে ৫১ টি খন্ডে বিভক্ত করে দেন। যেগুলি পৃথিবী পৃষ্ঠে যে যে স্থানে পতিত হয়েছে, পৃথিবীর মাটিতে পড়া মাত্রই সেগুলি প্রস্তর খণ্ডে পরিণত হয়। পরবর্তীতে সেই সেই জায়গাতে গড়ে ওঠে এক একটি শক্তিপীঠ অথবা সতী পীঠ।
ভবানীপুর শক্তিপীঠ:
শক্তিপীঠের নাম | ভবানীপুর শক্তিপীঠ |
স্থান | ভবানীপুর, করতোয়া নদীর তীরে, শেরপুর উপজেলা থেকে ২৮ কি.মি. দূরে, বগুড়া, রাজশাহী |
দেশ | বাংলাদেশ |
দেবীর অংশ | কেশগুচ্ছ/চূড়ামণি |
শক্তির নাম | অপর্ণা |
ভবানীপুর শক্তি পীঠের ভৌগলিক গুরুত্ব:
ভবানীপুর শক্তিপীঠ বাংলাদেশের করতোয়া নদীর তীরে, শেরপুর উপজেলা থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে, বগুড়া জেলায় অবস্থিত। এই শক্তি পীঠ এখানকার স্থানীয় মানুষজন দের পাশাপাশি দূর দূরান্তর থেকে এবং বাংলাদেশের বাইরে থেকেও ভক্তরা ও পর্যটকরা আসেন এই শক্তিপীঠে পূজা অর্চনা আর মন্দির চত্বর ঘুরে দেখার জন্য।
ভবানীপুর বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত শক্তিপীঠ গুলির মধ্যে একটি অন্যতম শক্তিপীঠ। জাতি- ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে দেশ-বিদেশের বহু ভক্তরা এবং পুন্যার্থীরা, তার সাথে পর্যটকরা সারা বছর ধরে এখানে তীর্থ ভ্রমণ করতে আসেন এবং মন্দিরের পরিবেশ উপভোগ করতে আসেন।
ভবানীপুর শক্তি পীঠের পৌরাণিক কাহিনী:
কাহিনী অনুসারে জানা যায়, এখানে একসময় একজন শাঁখা ওয়ালা ( যিনি হাতের শাঁখা নির্মাণ করে থাকেন), ভবানীপুর মন্দিরের ধারে গভীর জঙ্গলের পাশের একটি পুকুরের ধার ধরে তিনি যখন অতিক্রম করছিলেন তখন এক সময় সিঁথি তে সিঁদুর পরা একটি ছোট্ট মেয়ে তার কাছে গিয়ে বলেছিল যে সে নাটোর রাজবাড়ীর রাজকন্যা।
তখন সে শাঁখা ওয়ালার কাছ থেকে একজোড়া শাখা কিনেছিল সেই ছোট্ট মেয়ে এবং বলল যে শাঁখাওয়ালা যেন নাটোরের মহারানীকে বলেন যে, প্রাসাদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা ঝুড়ি থেকে তার শাঁখার দাম যেন দিয়ে দেন। শাঁখাওয়ালার মুখ থেকে ছোট মেয়েটির কথা শুনে মহারানী লোকজন ও সেই শাঁখা ওয়ালাকে নিয়ে মেয়েটির বলা জায়গায় গেলেন।
শাঁখাওয়ালার প্রার্থনা শুনে মা ভবানী সেই শাঁখা পুকুর থেকে তার দুই হাতে পরা শাঁখা তুলে দেখালেন, মহারানী ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং আরো অন্যান্য লোকজনও এতে একেবারে অবাক হয়ে গেলেন। আর মা ভবানীর মহিমা এই উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ল।
তারপর নাটোর রাজ পরিবার থেকে এই পুকুরের সংস্কার করা হয়। তার সাথে সাথে বর্তমানে শাঁখা পুকুরে তীর্থযাত্রীরা স্নান করেন, মনের সকল আশা পূর্ণ করার জন্য। এই শক্তি পীঠের শক্তি দেবী অপর্ণা এবং ভৈরব হলেন বামেশ অথবা বামন।
ভবানীপুর শক্তিপীঠ এর মন্দির:
এই মন্দিরটি চার একর অর্থাৎ ১২ বিঘা জমি জুড়ে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা একটি জায়গায় অবস্থিত। মন্দির চত্বরটি খুবই বড় বলাই যায়।
মূল মন্দির বেলবরন তলা, শিব মন্দির চারটি রয়েছে, পাতাল ভৈরব শিব মন্দির রয়েছে, গোপাল মন্দির, বাসুদেব মন্দির এবং নাট মন্দির যেটা আটচালা নামেও পরিচিত।
উত্তর দিকে সেবা অঙ্গন, পবিত্র শাঁখা পুকুর রয়েছে, স্নানঘাট রয়েছে দুটি। প্রাচীরের বাইরেও চারটি শিব মন্দির ও একটি পঞ্চমুন্ড আসন রয়েছে।
ভবানীপুর শক্তি পীঠের পূজা পার্বণ:
দেবীর এই শক্তি পীঠে খুবই আরম্বরপূর্ণ ভাবে পূজা অর্চনা করা হয়, প্রভাতী ও বাল্যভোগ, দুপুরের পূজা এবং অন্ন ভোগ, সন্ধ্যার সময় আরতী এবং ভোগের ব্যবস্থা করা হয়, তাছাড়া প্রতিদিন মন্দিরের যে সমস্ত ভক্তরা পুণ্যার্থীরা আসেন তারা মিষ্টান্ন ও অন্ন ভোগ দিতে পারেন এবং পরে প্রসাদ গ্রহণ করতে পারেন।
এর পাশাপাশি রামনবমী, মাঘী পূর্ণিমা, শারদীয় দুর্গাপূজা, দীপান্বিতা শ্যামাপূজা, এবং নবান্ন এই সমস্ত উৎসব গুলি এই মন্দিরে খুবই জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করা হয়।
ভবানীপুর শক্তিপীঠ, এই মন্দিরের ইতিহাস:
এই মন্দিরটি ১৯৯১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ভবানীপুর মন্দির সংস্কার উন্নয়ন ও পরিচালনা কমিটির দ্বারা মা ভবানীর সম্পত্তি সমূহ তত্ত্বাবধান সহ মন্দিরের সমস্ত কর্ম কাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছিল।
ভবানীপুরের এই শাঁখা পুকুরের ঘটনা সকলের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং শিহরণ জাগানোর মত ঘটনা। যার ফলে এখানে এই শাখা পুকুরে স্নান করে অনেকেই মনের ইচ্ছা পূরণ এর জন্য দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন। তাছাড়া দেবীর ৫১ টি শক্তি পীঠের মধ্যে এই শক্তি পীঠ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বী দের কাছে একটি অতি পবিত্র তীর্থস্থান।