সমর্থ স্কিম, টেক্সটাইল মন্ত্রণালয় কতৃক গৃহীত টেক্সটাইল সেক্টরে (এসসিবিটিএস) সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একটি ফ্ল্যাগশিপ স্কিম বাস্তবায়ন করছে।
এটির লক্ষ্য ১০ লক্ষ ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া। সম্প্রতি, এটি খবরে দেখা গেছে যে কভিড -১৯ এর কারণে দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে বিভিন্ন রাজ্যে এই প্রকল্পটি বন্ধ ছিল।
সমর্থ স্কিম সংগঠিত খাতে কাটা এবং বুনন বাদ দিয়ে পুরো টেক্সটাইল ভ্যালু চেইন বিষয়ে দক্ষতা বিকাশ ঘটাতে এবং প্রায়োগিক দক্ষতা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ সরবরাহ করবে।

দেশে দক্ষ কর্মী ও কারিগর বাড়াতে এবং টেক্সটাইল খাতের উন্নয়নে প্রকল্পটি অনেক বড় ভূমিকা রাখবে আশা করা যায়। অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিএএ) এটি ২০১৭ সালে অনুমোদন করেছে।
সুপ্রিয় পাঠক আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে সমর্থ স্কিম (Samarth – Scheme For Capacity Building In Textile Sector) সম্পর্কে বিস্তারিত। চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। সমর্থ স্কিম সম্পর্কে বিস্তারিত-
Contents
সমর্থ প্রকল্পের উদ্দেশ্য
সংগঠিত খাতে কাটন এবং বুনন ব্যতীত টেক্সটাইলের সংক্রান্ত বিষয়ে ১০ লক্ষ ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সুসংগঠিত সেক্টরের আওতায় ৯ লক্ষ ব্যক্তি এবং ঐতিহ্যবাহী টেক্সটাইল কাজের জন্য উক্ত সেক্টরের ১ লক্ষ ব্যক্তিকে সমর্থ প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষিত করা হবে, যা,এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
এটি দশ লক্ষেরও বেশি ব্যক্তিকে জাতীয় দক্ষতা ফ্রেমওয়ার্ক (এনএসএফকিউ) এর অধীনে পরিচালিত দক্ষতা উন্নয়ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে টেক্সটাইল বিষয়ে সবকিছু শেখানো হবে।

এই প্রকল্পটির লক্ষ্য টেক্সটাইল এবং সংশ্লিষ্ট খাতগুলিতে আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যা টেক্সটাইলের পুরো প্রক্রিয়াভিত্তিক কাজ শেখাবে, তবে স্পিনিং এবং বয়নকে বাদ দেবে।
স্কিলিং এবং দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে হ্যান্ডলুম, হস্তশিল্প, সেরিকালচার এবং পাটের ঐতিহ্যবাহী খাতগুলিকে আরও উন্নত করা হবে। যাতে এই বস্ত্র ও কাপড়গুলো দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা যায়।
লক্ষ লক্ষ ব্যক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে, এটি যুবসমাজ এবং অন্যদের মধ্যে স্ব-কর্মসংস্থান ও ব্যবস্যায় বা উদ্যোগ গ্রহণের সক্ষমতা অর্জনে উদ্ভুদ্ধ করা।
এর লক্ষ্য সমাজের সমস্ত বিভাগে টেকসই জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষকে যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তীলা এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।
একটি দেশের জনগোষ্ঠী যখন কাজের ক্ষেত্রে দক্ষ ও অভিজ্ঞ হয়ে উঠবে তখন দেশের উন্নয়নও তরান্বিত হবে।
সমর্থ স্কিমের প্রধান বৈশিষ্ট্য
প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ (টিওটি)- যা মাস্টার প্রশিক্ষকদের উন্নততর দক্ষতা ও শিক্ষাদানের সক্ষমতা সরবরাহ করবে।
আধার সক্ষম বায়োমেট্রিক উপস্থিতি সিস্টেম (এইবিএস) – যা প্রশিক্ষক এবং সুবিধাভোগীদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করবে। প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সিসিটিভি রেকর্ডিং ও সংরক্ষণ করে রাখা হয়, যাতে পুরো প্রকল্পটির উন্নতি, সমস্যা, অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যায়৷
যে কোন ধরনের গাফিলতি বা কোন সমস্যা থাকলে তা যেন দ্রুত শণাক্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়। প্রকল্পের কার্যক্রমে বড় ধরনের দ্বন্দ্ব এড়াতে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলি সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা পুরো প্রশিক্ষণ নিয়ন্ত্রন করেন।
হেল্পলাইন নম্বর সহ কল সেন্টার নাম্বার দেওয়া হয় যাতে যেকোন প্রয়োজনে প্রশিক্ষণার্থীরা যেকোন কিছু সম্পর্কে জানতে পারেন এমন যেন না হয় যে প্রশিক্ষণার্থীরা তেমন কোন জীবনবান্ধব জ্ঞান যেন অর্জন করতে পারে। –
দেশের অর্থনীতিতে টেক্সটাইলের ভূমিকা
মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ভিত্তিক পরিচালন তথ্য সিস্টেম এর মাধ্যমে (এমআইএস) প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়াগুলির অন-লাইন পর্যবেক্ষণ করা হয়, যাতে কোন গাফিলতি বা সমস্যা থাকলে তা দ্রুত শনাক্ত করা যায়।

কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পটি মোট ১৩০০ কোটি টাকা ব্যয় করে অনুমোদন দিয়েছে। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ভারতীয় টেক্সটাইল সেক্টরের প্রায় ১৪ শতাংশ শিল্প উৎপাদন টেক্সটাইল শিল্প থেকে আসে।
মোট বস্ত্রের উৎপাদনে (জিডিপি) ভারতীয় বস্ত্র শিল্পের প্রায় ৪ শতাংশ অবদান রয়েছে এবং এটি এর রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে ১৭ শতাংশ অবদান রাখে। পরিসংখ্যান দেখেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন টেক্সটাইল খাতে দক্ষ জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিকভাবে দেশকে কতটা উপকৃত করবে।
দেশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সমর্থ প্রকল্পের অবদান
৩.৫ কোটিরও বেশি লোক ভারতীয় টেক্সটাইল শিল্পে কর্মরত রয়েছেন – কৃষির পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্প হচ্ছে টেক্সটাইল শিল্প।
টেক্সটাইল শিল্পের প্রচারে সরকারী উদ্যোগ হচ্ছে- টেক্সটাইল সেক্টরে স্টার্ট-আপস এবং উদ্ভাবনী ধারণা বাড়ানোর জন্য, ভারত সরকার একটি উদ্যোগী মূলধন তহবিল (১০০ কোটি টাকা) প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছে।
টেক্সটাইল সেক্টরকে উন্নীত করার জন্য আরও একটি বড় উদ্যোগ হ’ল স্বয়ংক্রিয় রুটের মাধ্যমে ১০০ শতাংশ এফডিআই ভাতা প্রদান করা।
টেক্সটাইল বিষয়ক প্রশিক্ষণের সুবিধার্থে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত ব্রাউনফিল্ড এবং গ্রিনফিল্ড প্রকল্প তৈরি করতে দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সময় ইন্টিগ্রেটেড প্রসেসিং ডেভলপমেন্ট স্কিম (আইপিডিএস) চালু করা হয়েছিল।
১৯৯৯ সালে টেক্সটাইল ও সংশ্লিষ্ট খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সরকার প্রযুক্তি আপগ্রেডেশন তহবিল প্রকল্প (টিইউএফএস) চালু করে।
টেক্সটাইল সেক্টরে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ২০০৫ সালে ইন্টিগ্রেটেড টেক্সটাইল পার্কস (এসআইটিপি) জন্য প্রকল্প চালু করা হয়েছিল।
শেষ কথা
ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্প হচ্ছে টেক্সটাইল। এই খাতে প্রচুর মানুষ কাজ করে। কিন্তু প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল৷ এজন্য নতুন নতুন কাজের ধরন এবং টেক্সটাইল বিষয়ের যাবতীয় খুটিনাটি শিখতে এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে।
স্পিনিং ও বয়ন ব্যাতীত টেক্সটাইল বিষয়ের যাবতীয় জ্ঞান, দক্ষতা, ঐতিহ্যবাহী কাজের বৈশিষ্ট্য ও কৌশল এই প্রকল্পের আওতায় শেখানো হয়। পুরো প্রকল্পের আওতায় ১০ লাখ লোককে প্রশিক্ষিত করা হবে। পুরো প্রকল্পের ব্যয় ১৩০০ কোটি টাকা।
রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে বর্তমানে দেশের মোট আয়ের ১৭% শতাংশ আয় হচ্ছে, এই প্রকল্পের সফলতার উপর এই শতাংশ আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে আশা করি।
দেশের এই চরম অর্থনৈতিক সংকট থেকে দ্রুত উত্তরণ করতে প্রকল্পটি অবশ্যই বড় ভূমিকা রাখতে পারবে আশা করি। সমর্থ স্কিম সম্পর্কে আপনাদেরকে জানানোর ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা স্বার্থক হয়েছে আশা করি।
যে কেউ এই প্রকল্পটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে অফিসিয়াল সাইটটি ভিজিট করতে পারেন- (samarth-textiles.gov.in) টেক্সটাইল খাতে ১০ লক্ষ কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সমর্থ স্কিমের কাজ চলছে।
সুপ্রিয় পাঠক, আমাদের লেখার উদ্দেশ্য থাকে ভারত সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প এবং তার অগ্রগতি সম্পর্কে আপনাদের জানানো, যাতে সেগুলো সম্পর্কে আপনারা অবগত হতে পারেন এবং সুবিধাসমূহ উপভোগ করতে পারেন।
আশা করি পোস্টটি ভাল লাগলে এ বিষয়ে মন্তব্য করে আমাদেরকে উৎসাহ প্রদান করবেন। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।