2023 চিচিঙ্গা চাষের সঠিক ও সহজ পদ্ধতি | 2023 Snake Gourd Cultivation Method in Bangla

চিচিঙ্গা  একটি অতি পরিচিত সবজি। এটি গ্রীষ্মকালীন সবজি। তরকারিতে বা ভাজি করে এটি খাওয়া যায়। এটি সুস্বাদু একটি সবজি। বাজারে এর চাহিদা ও ভালো।

আজ আমরা আপনাদের সাথে চিচিঙ্গা চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই চিচিঙ্গা চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।

Snake Gourd Cultivation Method in Bangla
Snake Gourd Cultivation Method in Bangla

আমাদের সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।

জলবায়ু ও মাটিঃ

চিচিঙ্গা চাষের জন্য সাধারনত উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া বিশেষ উপযোগী। শীতকালের ২-৩ মাস ছাড়া বছরের প্রায় সব সময়ই চিচিঙ্গা চাষ করা যায়।

প্রায় সব রকমের মাটি চিচিঙ্গা চাষে উপযোগী তবে দোআঁশ মাটিতে চিচিঙ্গা ভালো জন্মে। মাটি জৈব সার সমৃ্দ্ধ হলে ফলন ভালো হয়। জমি উচু হতে হবে এবং জল নিকাশের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

সময়ঃ

শুকনা মৌসুমে সাধারনত চিচিঙ্গার চাষ ভালো হয়ে থাকে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি যে কোন সময়ে চিচিঙ্গার বীজ বপন করা যেতে পারে।

চারা তৈরিঃ

চিচিঙ্গার চারা সাধারনত পলিব্যাগে তৈরি করে নিতে হবে। পলিব্যাগে গোবর সার ও মাটি সমপরিমান মিশিয়ে প্রতিটি পলিব্যাগে একটি করে বীজ পুতে দিতে হবে।

প্রতিটি বীজ থেকে একটি করে চারা তৈরি হবে। বীজ বপন করার আগে খেয়াল করতে হবে বীজের খোসা শক্ত কিনা।

খোসা যদি শক্ত হয় তাহলে বীজ বপন করার আগে ২৪ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে নিতে হবে। তাহলে বীজ তাড়াতাড়ি গজায়। চারার বয়স ১৫-২০ দিন হলে তা জমিতে লাগানোর জন্য উপযুক্ত হবে।

জমি তৈরি ও চারা রোপনঃ

চিচিঙ্গা চাষ করতে হলে জানুয়ারি মাস বা ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। ৪-৫ বার ভালো করে চাষ দিতে হবে।

ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জুন মাসের মধ্যে যে কোন সময় বীজ বপন করা যেতে পারে। বীজ বপন করার আগে বেড তৈরি করে নিতে হবে।

দুইটি বেডের মাঝে ৩০ সেমি প্রশস্ত ও ১৫ সেমি গভীর নালা তৈরি করে দিতে হবে। তবে মাদায় ও চিচিঙ্গা চাষ করা যায়। বাসা বাড়ির আঙিনায় চাষ করতে হলে বেড তৈরি করতে হয় না। তখন মাদায় চারা লাগানো যায়।

প্রতিটি মাদায় ২টি করে বীজ বপন করতে হবে। ২ সেমি গভীর করে বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপন করার আগে বীজ অবশ্যই শোধন করে নিতে হবে। বীজ শোধন করে নিলে চারা গুনগত মান ভালো হয় এবং চারা মৃত্যুহার কমে যায়।

সার প্রয়োগঃ

উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি শতক জমিতে শেষ চাষের সময় সার প্রয়োগ করতে হবে।

গোবর সার ৮০ কেজি, টিএসপি ৭০০ গ্রাম,

এমওপি ৪০০ গ্রাম, জিপসাম ৪০০ গ্রাম ইত্যাদি মাটির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। জমি তৈরির সময় গোবর সার অর্ধেক জমিতে ছিটিয়ে মিশিয়ে দিতে হবে।

বাকি অর্ধেক দিতে হবে বীজ বপন করা বা চারা লাগানোর ১০ দিন আগে। সার প্রয়োগ করার পর প্রয়োজনে জল সেচ দিতে হবে।

আগাছা দমনঃ

জমি সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। প্রতিবার ইউরিয়া সার প্রয়োগ করার আগে জমির আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। আগাছা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে।

আগাছা পরিষ্কার করার সময় মাটির চটা ভেঙ্গে দিতে হবে। জমিতে প্রয়োজনে বাউনি দিতে হবে। চারা যখন ২০-২৫ সেমি উচু হবে তখন মাচা তৈরি করে দিতে হবে।

বাউনি দিলে ফলন বেশি হয় ও ফলের গুনগত মান ভালো হয়।

সেচ প্রয়োগঃ

ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সেচ দিতে হবে। মাটি শুকিয়ে গেলে ফুল ঝরে যায় এবং ফল বড় হয় না। তাই মাটি যেন না শুকিয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

মাটি শুকানোর আগেই জল সেচ দিতে হবে। প্রতিবার সার প্রয়োগ করার পর জল সেচ দিতে হবে। মাটিতে জো এলে চটা ভেঙে দিতে হবে।

তবে খেয়াল রাখতে হবে জমিতে যেন জল জমে না থাকে। চিচিঙ্গা গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই জমিতে জল নিকাশের ব্যবস্থা করতে তবে।

পোকামাকড় ও রোগ বালাইঃ

চিচিঙ্গার সবচেয়ে বড় শত্রু হলো মাছি পোকা। এই পোকা কচি ফল নষ্ট করে। ফলের গায়ে ছিদ্র করে ও সেখানে ডিম পাড়ে। পোকা আক্রমন করলে আক্রান্ত ফুল ফল তুলে ফেলতে হবে।

হাত দিয়ে ধরে মেরে ফেলতে হবে। তাছাড়া আরো কিছু পোকা আছে যা চিচিঙ্গা গাছের ক্ষতি করে থাকে। এর মধ্যে  আছে কাটালে পোকা ও ইপিলাকনা বিটল।

এরা চিচিঙ্গার পাতা খেয়ে ঝাঝড়া করে ফেলে। হাত দিয়ে ধরে এই পোকা মেরে ফেলা যায়। তাছাড় বালাই নাশক স্প্রে করে দিতে হবে। নিম তেল ব্যবহার করলে ও  ভালো ফল পাওয়া যায়।

গাছে অন্য রোগ আক্রমন করে থাকলে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।

ফসল সংগ্রহঃ

চারা গজানোর ৬০-৭০ দিন পরেই চিচিঙ্গা গাছ ফল সংগ্রহ করার উপযোগী হয়ে থাকে। চিচিঙ্গা সাধারনত কচি অবস্থায় তুলতে হয়। চিচিঙ্গা সংগ্রহ ২-৩ মাস পর্যন্ত চলতে পারে।

ফলনঃ

উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করতে পারলে প্রতি হেক্টর থেকে ২০-২৫ টন চিচিঙ্গা আহরন করা যেতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top