পেয়ারা আমাদের মাঝে জনপ্রিয় একটি ফল। সুস্বাদু, দেখতে সুন্দর, সহজলভ্য ও দামে তুলনামূলক কম হওয়ায় পেয়ারা সাধারণ মানুষের কাছে পছন্দের ফল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। শহর, গ্রাম, ছোট, বড় সবাই পেয়ারা পছন্দ করে থাকে।
কচি পেয়ারার কচকচে স্বাদ অনেক মজার তেমনি পাকা পেয়ারাও মিষ্টিভাবের জন্য মানুষের পছন্দের তালিকায় আছে। শুধু স্বাদের জন্যই নয়, পেয়ারার পুষ্টিগুন ও অনেক বেশি। প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় একে ভিটামিন সি এর আধারও বলা হয়ে থাকে। তাই পেয়ারা চাষ আমাদের জন্য একটি লাভজনক ব্যবস্থা।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিতভাবে আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা জমি, শিক্ষা, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। জীবনের নানা প্রয়োজনের সময়ে এসকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সাথে পেয়ারা চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো। এতে করে আপনারা সহজেই পেয়ারা চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। এটি আপনাদের পারিবারিক চাহিদা মেটবে এবং চাষাবাদ করে আয় করার সুযোগ লাভ করবেন।
আসুন দেখে নি পেয়ারা চাষের বিস্তারিত তথ্য
পেয়ারার বিভিন্ন জাত
পেয়ারা নিয়ে অনেক গবেষনা হবার ফলে বর্তমানে পেয়ারার অনেকগুলি জাত আবিষ্কার হয়েছে। এর ফলে অপেক্ষাকৃত কম সময়ে বেশি ফলন হচ্ছে, সেই সাথে চাষীরা উপকৃত হচ্ছে। পেয়ারার উন্নতজাত গুলির মাঝে কাজী পেয়ারা, বারী পেয়ারা-২, বারী পেয়ারা-৩, বাউ পেয়ারা, কাঞ্চননগর, মুকুন্দপুরি ও স্বরূপকাঠি পেয়ারাগুলি মানুষের মাঝে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। নিচে বিভিন্ন জাতের পেয়ারার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো।
কাজী পেয়ারাঃ এটি একটি উচ্চ ফলনশীল পেয়ারার জাত। এর স্বাদ সামান্য টক ভাব আছে। এক একটি পেয়ারার ওজন প্রায় ৪০০-৫০০ গ্রাম হতে পারে।
বারী পেয়ারা-২ঃ এটিও পেয়ারার একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। এটি বছরে ২ বার ফল দিয়ে থাকে। এক একটি পেয়ারার ওজন প্রায় ৩৫০-৪০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বারী পেয়ারা ৪ঃ এই পেয়ারা বীজহীন, কচকচে ও খেতে অনেক মিষ্টি হয়ে থাকে। এই জাতের পেয়ারায় রোগবালাই ও পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাব কম থাকে। এর ওজন প্রায় ২৮৪ গ্রাম।
পেয়ারার চারা রোপনের সময়
পেয়ারা বারোমাসী ফল হওয়ায় এটি সবসময় পাওয়া যায়। সাধারনত বর্ষাকালে পেয়ারার ফলন ভালো বেশি হয় কিছু তখন দাম কমে যায়। পেয়ারার চারা মধ্য জ্যৈষ্ঠ হতে আশ্বিন মাসের মাঝে লাগানো উত্তম।
পেয়ারা চাষের পদ্ধতি
পেয়ারা মাটি অথবা টবে যেকোন স্থানেই চাষ করা যায়। তবে সরাসরি সুর্যের আলো পড়ে এমন স্থানে লাগানো উচিত। টবে লাগালে মাঝারি সাইজের টবে লাগাতে হবে। টবে পেয়ারা গাছ লাগালে ভালো বালু ও কম্পোষ্ট করা মাটি দিয়ে লাগানো উচিত। মাটিতে লাগালে পানি জমে না এমন জমিতে লাগানো উচিত।
মাটি প্রস্তুত করা
পেয়ারা গাছের জন্য বেলে দোআস মাটি উত্তম। মাটি প্রস্তুত করার সময় ২ ভাগ মাটির সাথে ১ ভাগ গোবর মিশিয়ে রাখতে হবে। মাটির সাথে ৫০ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০ গ্রাম পটাশ মিশ্রন করতে হবে। মিশ্রনটি পানিতে ভিজিয়ে ১০-১২ দিন রাখতে হবে। এরপর মাটি খুড়ে আবার ৫-৬ দিন রাখতে হবে। এরপর মাটি ঝুরঝুরে হলে পেয়ারার চারা রোপন করতে হবে।
পানি সেচ
পেয়ারা গাছে নিয়মিত পানি দেয়া প্রয়োজন। গাছের নিচে অন্তত ২-৩ ইঞ্চি সমান মাটি ভেজা থাকতে হবে। মাটিতে আদ্রতা না থাকলে পেয়ারা গাছের ফুল ও ফল ঝরে পড়তে পারে।
গাছকে প্ররুনিং করা
পেয়ারা গাছকে পছন্দমত আকার ধারন করাকে প্রুনিং বলা হয়। প্রুনিংয়ের জন্য আপনাকে গাছকে কেটে কেটে রাখতে হবে। এমনভাবে প্রুনিং করতে হবে যাতে করে ফল উৎপাদনের উপর প্রভাব না পড়ে।
সার দেয়া
গাছের পুষ্টিগুন ধরে রাখার জন্য নিয়মিত সার দেয়ার প্রয়োজন হয়ে থাকে। পেয়ারা গাছে মাসে একবার করে সার দিতে হয়। জৈব সার এক্ষত্রে ভালো ফলাফল দিয়ে থাকে। নিয়মিত কম্পোষ্ট সার দিলেও ভালো ফলন হয়ে থাকে।
ফল সংগ্রহ করা
পেয়ারা সাধারণত সবুজ থেকে হালকা হলুদাভাব হলে সংগ্রহ করতে হয়। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে গাছে যেন অনেক পেয়ারা না থাকে। গাছে অনেক পেয়ারা থাকলে পাখি বা পোকায় আক্রমন করতে পারে।
ফলন
পেয়ারার ফলন জাতের উপর নির্ভর করে থাকে। ভালোভাবে যত্ননিলে একটি পূর্নবয়স্ক পেয়ারা গাছে গ্রীষ্মকালে ৬০-৭০ কেজী পেয়ারা এবং হেমন্তকালে ৫০ থেকে ৬০ কেজী ফলন পাওয়া যায়।
এভাবে পেয়ারা চাষ করলে লাভবান হওয়া সম্ভব। এতে করে কৃষকরা আর্থিক উন্নতি লাভ করে থাকে। দিন দিন পেয়ারা চাষ করা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
আজ আমরা পেয়ারা চাষ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আগামীতে পেয়ারা চাষ নিয়ে আরো কিছু আলোচনা করবো, তাই আমাদের পেজে নিয়মিত চোখ রাখুন। এই লেখাটি অনেকের কাজে লাগতে পারে তাই লেখাটি যতটুকু সম্ভব শেয়ার করুন, যাতে করে অনেকে এই লেখা থেকে শিক্ষা নিয়ে পেয়ারা চাষ করে আয় করার ব্যবস্থা করতে পারে।
কৃষি নিয়ে আরো অনেক লেখা পেতে আমাদের সাইটের অন্য লেখাগুলি দেখুন। আমাদের লেখা ভালো লাগলে বা যেকোন মন্তব্য আমাদের ফেসবুক পাতায় লিখুন। আমরা আপনার মন্তব্যের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবো।