আপনার পছন্দ অনুযায়ী অনেক রকম পোশাক আপনি পরতে পারেন। তবে কোথায় কোন পোশাক পরতে হয় সেই ধারণাটুকু কমবেশি থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। না হলে আপনার পার্সোনলিটির উপর প্রশ্ন উঠতে পারে।
“ড্রেস সেন্স” জিনিসটা সবার মধ্যে থাকে না। যেখানে যেটা মনে হয় সেখানে সেটা পড়েই চলে যান। সে ক্ষেত্রে অনেকটা হেনস্তার শিকার হতে হয় তাদের। ‘যখন যেখানে যেমন, তখন সেখানে তেমন।’ কথাটি অনেক আগে থেকেই চলে আসছে।
যেখানে যেমন পোশাক চলে সেখানে সেই রকম পোশাক পরাটা আপনার ব্যক্তিত্বের ভালো দিকটা প্রকাশ পায়। বিয়েবাড়িতে যে পোশাক আপনি পরে যান সেই পোশাক যেমন অফিসে একেবারেই বেমানান তেমনি অফিসের ড্রেস পরে সমুদ্রসৈকতে হাটা অতটাই বেমানান।
জায়গা, সময় এবং উৎসব বুঝে পোশাক পরলে আপনার ফ্যাশন সেন্স ভালো ভাবে প্রকাশ পায়। কোন অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ পেলে সেই অনুষ্ঠানের ধরন সময় এবং জায়গা অনুযায়ী পোশাক বাছাই করাটা আপনার প্রথম কাজ হবে।
পোশাকের ধরন, রং, এবং তার লুক সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনি কোথায় যাচ্ছেন তার ওপর। তারপর আপনার পছন্দমত রং এর কাছাকাছি নিতেই পারেন। তবে পোশাকের ধরন যেন সেই জায়গা মতই হয়।
পৃথিবীর সব জায়গাতেই স্থান-কাল পাত্র বুঝেই পোশাক পরা হয়। অন্যদিকে আপনার পরিচিত পোশাক কিন্তু আপনার ব্যক্তিত্বের পরিচয় দেয়। তাই সব দিক খেয়াল রেখে যা করছি তা ফ্যাশনেবল এর সাথে সাথে অনুষ্ঠান বা সেই জায়গার জন্য উপযুক্ত কিনা সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখা জরুরী।
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক জায়গা বিশেষে কিভাবে পোশাক বাছাই করবেন –
১) কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সময়় :
ঘুরতে যাওয়ার কথা বললে এমন কেউ নেই যে মুখ ফিরিয়ে চলে যাবেন। সবারই ভালো লাগে বেড়াতে। বেড়ানোর প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় উপচে পড়ছে পর্যটকদের ভিড়েে। তাছাড়া দেশে-বিদেশে বেড়াতে যাওয়ার প্রবণতা আজকাল প্রবল।
তাই বেড়াতে যাওয়ার আগে সেই জায়গা অনুযায়ী পোশাক নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত জরুরী। যেমন ধরুন সমুদ্রে বেড়াতে গেলেন জলে নামার সময় মেয়েদের শাড়ি অথবা ঢিলেঢালা পোশাক পরাটা একেবারে শোভা পায় না। এর পরিবর্তে পরতে পারেন টি-শার্ট, টিউনিক, থ্রি কোয়াটার প্যান্ট, এর সাথে টপ। লেগিংস ও পরতে পারেন।
তবে ঘুরতে যাওয়ার পোশাক যেন আরামদায়ক হয় এবং আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সেই পোশাকে। পাহাড়ি এলাকায় যেতে গেলে মেয়েদের পড়া উচিত ট্রাকিং সুট, টি-শার্ট, ট্রাউজার। সাথে কিন্তু কেটস নিতে ভুলবেন না। কেননা পাহাড়ি এলাকায় অনেকটাই ধাপ ভাঙতে হবে আপনাকে।
হিল জুতো এই জায়গায় একেবারেই চলবে না। এতে আপনার কষ্ট হতে পারে। শীতল জায়গায় ঘুরতে গেলে অবশ্যই কোট এবং উলের ও পশমের পোশাক নিতে একেবারেই ভুলবেন না, এটা সকলের মাথায় থাকবে স্বাভাবিক।
২) বিয়ে অথবা পার্টিতে :
বিয়ে বাড়িতে সাজগোজের উপর সবাই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। সবার মাঝে নিজেকে অনন্যা করে তুলতে একেবারে মরিয়া হয়ে ওঠেন নারীরা কেননা বিয়েবাড়িতে নারীদের সাজসজ্জা বেশি চোখে পড়ার মতো।
বিয়েতে মেয়েরাই বেশি আনন্দ করে থাকেন। বিয়ের প্রত্যেকটা রীতিনীতিতে মেয়েদের ছোঁয়া থাকতেই হবে। তাই সে ক্ষেত্রে প্রত্যেকটা রীতিনীতিতে আলাদা আলাদা সাজে সাজিয়ে তোলেন নিজেদের মেয়েরা। বিয়ে একটি সামাজিক অনুষ্ঠান। সেখানে স্বাভাবিকভাবেই শাড়ি পড়াটাই বেশি চলে।
তবে যুগের সাথে মানুষের মন পাল্টাতে শুরু করেছে এখন শাড়ির পাশাপাশি অন্যান্য পোশাকও বিয়ে বাড়িতে প্রায় দেখা যায়। লেহেঙ্গা থেকে লং স্কার্ট, টপ সবকিছুই চলে তবে সেগুলো হতে হবে একেবারে জমকালো। তার সাথে কামিজ ও সারারা এখনতো ফ্যাশন ট্রেন্ডে আছে।
তবে এইরকম অনুষ্ঠানে যাই বলুন না কেন সেই পোশাকে যেন গর্জিয়াস লুক বজায় থাকে। গ্ল্যামার বজায় রাখার জন্য কারুকার্য করা পোশাক পরা টাই বাঞ্ছনীয় এই সব অনুষ্ঠানে। শাড়ি ও লেহেঙ্গর সাথে সাথে সুন্দর ডিজাইনার ব্লাউজ এর উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে।
অধিকাংশ বিয়ে হয় রাতে, সুন্দর লাইটিং, এর সাথে রাতের সাজ আরো বেশি জমকালো হওয়ার জন্য বিয়েতে যত বেশি কারুকার্য করা পোশাক পরবেন ততই আপনার গ্ল্যামার প্রকাশ পাবে। বিয়ে বাড়িতে এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হল গায়ে হলুুদ।
গায়ে হলুদে প্রত্যেকটা মেয়ে হলুদ সাজে সাজতে পছন্দ করেন। আর এখন এটা প্রায়ই চলে আসছে। হলুদ পোশাকের সাথে সাথে হলুদ ফুলের গয়না দিয়ে সাজিয়ে তোলেন নিজেদের । সবার একই রকম রঙের পোশাক ও গয়না একেবারে চোখে পড়ার মতো।
৩) ধর্মীয় কোন অনুষ্ঠানে :
ধর্মীয় অনুষ্ঠান বলতে প্রথমে ভক্তির কথাটা মাথায় আসে। সে ক্ষেত্রে মার্জিত পোশাক পরাটা বাঞ্ছনীয়। ঈদ-পূজা বড়দিন যাই হোক না কেন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য আপনার পোশাকটা বাছতে হবে সুন্দর দেখে। উৎসবের এই আনন্দের দিনগুলিতে সবাই নতুন পোশাকে সেজে উঠতে পছন্দ করেন।
তাই এমন পোষাক বাছুন যা আপনার ব্যক্তিত্বের সাথে মেলে এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য একেবারে পারফেক্ট। ঈদের অনুষ্ঠানে কামিজ, শাড়ি, লেহেঙ্গা, সারারা, এগুলি পরতে পারেন অনায়াসেই। অনেকে গ্ল্যামারাস লুক থাকবে এমন পোশাক পরতে পছন্দ করেন উৎসবের দিনে। তবে যাই পরুন না কেন তাতে যেন মার্জিত ভাব থাকে।
পুজোতে লাল পাড় সাদা শাড়িতে, অথবা লাল সাদা শাড়িতে সুন্দর নকশা করার প্রিন্ট আপনার ঐতিহ্যবাহী লুক বজায় রাখবে। তাছাড়া সুন্দর কামিজ, লেহেঙ্গা, সারারা,পুজোতেও পরতে পছন্দ করেন অনেকেই। বড়দিনে পছন্দমত শাড়ি, কামিজ, টিউনিক, টপ, ব্লেজার, কোট, প্যান্ট, পরতে পারেন অনায়াসেই।
৪) ছোট কোন অনুষ্ঠানে :
বিবাহ বার্ষিকী, জন্মদিন, অথবা ছোট কোনো অনুষ্ঠানে নিজের পছন্দ মত পোশাক পরতেই পারেন। যেহেতু ছোটখাটো অনুষ্ঠান তাই সাজগোজের ধরনটা একটু হালকা হওয়াই ভাল।
৫) অফিসে কেমন পোশাক পরবেন :
অফিসে ফরমাল পোশাক পরা টাই বাঞ্ছনীয়। আপনার স্বস্তি বজায় থাকার পাশাপাশি সংস্কৃতি ও সভ্যতার ছাপ থাকবে আপনার মধ্যে। শাড়ি হোক অথবা সালোয়ার-কামিজ যাই পড়ুন না কেন, এক রঙের হলে ভালো হয়়, এবং রং গুলো যেন বেশি চড়া না হয়।
বেশি ছাপা যুক্ত পোশাক অফিসে বেমানান দেখায়। শাড়ি বা সালোয়ার কামিজের উপর ব্লেজার পরতে পারেন। তাতে কিন্তু আপনার স্মার্টনেস লুকটা বজায় থাকবে। তবে অবশ্যই শাড়ি পরলে ব্লাউজের কাটিং এর দিকটা খেয়াল রাখবেন।
৬) বিভিন্ন দিবস এ :
বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে পোশাক পরতে পারেন নিজের পছন্দমত তবে রঙের দিক বিশেষ খেয়াল রাখাটা প্রয়োজন। বর্ষবরণে নিজের পছন্দসই পোশাকের সাথে ফুলের গয়না অথবা স্নিগ্ধ ভাব বজায় থাকবে এমন পোশাক পরাটা ভালো।
বিজয় দিবস উপলক্ষে সবুজ পোশাক, ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে লাল পোশাক, এবং ভাষা দিবসে সাদাকালো পোশাক, এটা আপনার ব্যক্তিত্বের পরিচয় দেবে।