বহুদিন একভাবে বন্দী দশা কাটানোর পর আস্তে আস্তে সমস্ত মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপনের ফিরতে শুরু করেছে। তবুও সাথে রয়েছে করোনা বিধি নিষেধ। একঘেয়েমি কাটিয়ে কাজের ব্যস্ততা এবং বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, উৎসব-অনুষ্ঠান, সবকিছুই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তার উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আবহাওয়ার কথা মাথায় রাখা টা।
পুজোর আমেজ চলে এলেও আকাশে কিন্তু পরিষ্কারভাবে এখনও দেখা যায়নি পেঁজা তুলোর ভেলা, কাশফুলের মেলা হয়তো দেখা দিয়েছে। তবে মাঝে মাঝে অস্বস্তিকর বৃষ্টি, কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষকে একেবারে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। সেই কারণে সাজপোশাক নিয়ে কিন্তু একটু আলাদা রকমের টেনশন থেকেই যায়।
তাই সাজের বক্সে এমন কিছু টিপস গুছিয়ে রাখুন যেটা সহজ এবং সতেজ ও উজ্জ্বল ত্বকের যত্ন নিতে পারবে। তার ফলে আপনার সাজ এ কিন্তু নতুন চমক আনতে পারবেন।
চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক এমন কিছু মেকআপ টিপস সম্পর্কে –
১) সাদামাটা বেস :
গরম আর আর্দ্রতার কারণে কারও কারও ত্বক হয়ে উঠতে পারে তেলতেলে, আবার কারো হয়ে যেতে পারে স্যাঁতস্যাঁতে। অস্বস্তিকর পরিবেশ এর সৃষ্টি হয় আপনার সাজসজ্জায়। আবার কারো কারো ত্বকে ক্লান্তি ও ভারী ভাব বজায় থাকতে পারে। এই পরিস্থিতি থেকে রেহাাাই পাওয়ার একমাত্র উপায় হল নিজের মেকআপ বেসকে খুব হালকা রাখা।
এর ফলে ত্বকের লোমকূপ গুলো স্বাভাবিক ভাবে কাজ করতে পারবে। ভারী মেকআপ করলে ত্বকে একটা ভারি ভাব তো বজায় থাকবেই। তবে তার পরিবর্তে বি বি ক্রিম অথবা সি সি ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন, তবে হালকা বেস তৈরি হওয়ার সাথে সাথে ভারী মেকআপ লুক আপনার দিতে পারে।
তবে অবশ্যই দেখে নেবেন এই ক্রিম গুলি এসপিএফ ৩০ যুক্ত যেন হয়ে থাকে। তার ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে আপনার ত্বককে রক্ষা করবে অনায়াসেই। এই ধরনের ফাউন্ডেশন গুলির আলাদা বাড়তি সুবিধা রয়েছে। যেমন মেকআপ লুক এর পাশাপাশি ত্বককে আদ্র ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করবে।
ত্বকের হালকা দাগ ছোপ দূরে রাখবে এবং রোদের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করবে ত্বককে। আপনি যদি চান তাহলে টিন্টেড মইস্টারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখার পাশাপাশি মেকাপের লুক কেও সতেজ ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।
২) একে বারে গলে যেতে দেওয়া যাবেনা মেকআপকে :
মেকাপের উপযুক্ত সময় হল শীতকাল। এইসময় জাঁকজমকপূর্ণ সাজগোজেও অস্বস্তির কোন ভয় নেই। তাছাড়া অন্যদিকে গরমের সময় একটুতেই ঘেমে নেয়ে ভিজে যাওয়ার জোগাড়।
তাই মেকআপ টাও করতে হবে সেই হিসাব বুঝেে। না হলে ঘামের সাথে সাথে মেকআপ টাও গলতে শুরু করবে। সেই কারণে গরমের সময় সোয়েট প্রুফ মেকআপ বেছে নেওয়া টা জরুরী। তার সাথে সাথে আইলাইনার, আইশ্যাডো, মাস্কারা অথবা কাজল হওয়া চাই স্মাচ প্রুফ, ওয়াটার প্রুফ। এতে কিন্তু ঘেমে গেলে ও হালকা বৃষ্টির ঝাপটা লাগলেও মেকআপ থাকবে একেবারে অটুট।
এসব মেকাপের থাকে আলাদা সুবিধা। যেমন এসব মেকাপের প্রতিটা টান দেখায় সুস্পষ্ট, দীর্ঘ সময় স্থায়ী থাকে এবং প্রফেশনাল লুক বজায় রাখে। আইশ্যাডো পরতে ভালবাসলে অনুষ্ঠান অনুযায়ী আইশ্যাডোর রং বাছাই করাটা জরুরী।
গোলাপি, কমলা এবং সোনালী কালার আইশ্যাডো বেছে নেওয়া যেতে পারে। আপনি যদি মনে করেন তাহলে রংহীন মাশকারা ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে আপনার মেকআপ টা কিন্তু নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে অনেকটাই কম।
৩) উজ্জ্বলতা বজায় থাক মেকআপে :
মেকআপ যত উজ্জ্বল হবে ততো আপনার লুক উজ্জলতা ফিরে পাবে। অনেকেই মনে করেন যে গরমের সময় উজ্জ্বল মেকআপটা হয়তো বেমানান। কিন্তু যখন মেকআপ আপনার সঠিক এবং সুন্দর ভাবে ঠিক থাকবে তাহলে সেক্ষেত্রে গরম অথবা শীত আপনার উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে চলবেই।
তবে একটা কথা মাথায় রাখবেন উজ্জ্বল এবং সতেজ লুক সব সময়ের জন্য আকর্ষণীয়। এই জন্য ব্যবহার করতে পারেন হাইলাইটার। এমন আবহাওয়ার জন্য চাই জেল স্ট্রাকচার হাইলাইটার, জেল বেস হাইলাইটার এখন মার্কেটে এভেলেবেল পেয়ে যাবেন।
৪) স্বস্তি ও আরামের দিকটা খেয়াল রাখাা :
সব দিক খেয়াল রাখার পাশাপাশি ঠোঁট দুটো কে সুন্দর ভাবে খেয়াল রাখাটা জরুরি। কারণ আবহাওয়ার কারণে এবং অযত্নের কারণে ঠোঁট কিন্তু শুষ্ক রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। শুধুমাত্র শীতকালে ঠোঁট ফাটে না অতিরিক্ত গরম হলেও কিন্তু আপনার ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
অনেকের সবসময়ের জন্য ঠোঁটের চামড়া ওঠার সমস্যা দেখা দেয় এ জন্য নিয়মিত ঠোঁটে স্ক্রাব করা প্রয়োজন। এর ফলে ঠোঁটের উপরে মরা কোষ গুলি উঠিয়ে দিয়ে ঠোঁট কে দেখাবে সুন্দর, কোমল এবং মসৃণ।
ঠোঁটকে ভেজা লুক দেয়ার জন্য ওয়াটার জেল বেস লিপ টিন্ট ব্যবহার করা প্রয়োজন। এই লিপ টিন্ট অতিরিক্ত আদ্রতার যোগান দিয়ে থাকে। তার কারণেই ঠোঁট সাধারণ ভাবে সুন্দর হয়ে ওঠে। কেউ যদি আরো স্বচ্ছ সাদামাটা এবং মিনিমাল লুক পেতে চান তাহলে স্বচ্ছ লিপগ্লস ব্যবহার করতে পারেন।
৫) গলা ও ঘাড়ের যত্ন :
শুধুমাত্র মুখের দিকে খেয়াল রাখলেই চলবে না। তার সাথে সাথে গলা এবং ঘাড়ের দিকটাও বিশেষ খেয়াল রাখাটা জরুরি, কারণ মুখের পরে কিন্তু গলা ও ঘাড়ের জায়গা, তাই এমন কিছু উপায় মেনেেচলতে হবে মুখ এবং গলা ও ঘাড়ের রং এর স্ট্রাকচার যেন একই থাকে।
ফলে আপনার হালকা মেকআপ লুক হোক অথবা ভারি, আপনাকে লাগবে ভীষণ অনন্যা নইলে গলা ঘাড়ের রং যদি মুখের তুলনায় আরো বেশি ডার্ক হয় তাহলে সবাই কিন্তু এটুকু খেয়াল কর বে যে আপনি মেকআপে সুন্দরী।
বিশেষ বিশেষ বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে আপনি সবার মাঝে হয়ে উঠতে পারেন একেবারে অনন্যা। তাহলে আর কি। সব সময় ব্রাইডাল লুক আপনার যদি ভালো না লেগে থাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাদামাটা সতেজ এবং উজ্জ্বল মেকআপ দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে তুলুন। সে ক্ষেত্রে আপনার ন্যাচারাল লুক বজায় থাকার পাশাপাশি অস্বস্তিতে ভুগতে হবে না যেকোনো পরিস্থিতিতে, যে কোনো ওয়েদারে।