একটু হাঁটাচলা করলে অথবা দাঁড়িয়ে থাকলে বেশ কিছুক্ষন কোমরে ব্যাথা যেন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তারপরে আর ঠিকমতো হাঁটাচলা বা দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। এরকম সমস্যায় পড়তে হয়েছে এমন নারীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। অন্যান্য কারণের সাথে সাথে করোনা মহামারীতে মানুষের শরীরে একেবারে শিরায় শিরায় ব্যথা অনুভব হচ্ছে।
তার সাথে সাথে কোমর এবং হাঁটুর ব্যথা বেড়ে গিয়েছে অনেক গুণ। গবেষণা অনুযায়ী জানা যাচ্ছে যে গোটা বিশ্বের ১০ জনের মধ্যে ১ জন কোমরের ব্যথায় কষ্ট পান। তবে এই সমস্যাটা দেখা দেয় বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে।
সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেরুদন্ডের হাড়ের ক্যালসিয়াম এর পরিমাণ কমতে থাকে, তখনও ব্যথা অনুভব হতে থাকে। শরীর দুর্বল থাকার পাশাপাশি শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার কম থাকলেও কোমর ব্যথার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা অনুযায়ী বলা হয় যে আপনি যত বেশি হাঁটতে পারবেন তত বেশি আপনার শরীরের পক্ষে ভালো। শুধুমাত্র ওজন কমানোর জন্য হাঁটাচলা প্রয়োজন নয়। আরো অনেক কাজে লাগে নিয়মিত হাঁটাচলা করার অভ্যাস।
ফুরফুরে মেজাজ, হালকা লাগতে পারে আপনার সম্পূর্ণ শরীর, প্রতিনিয়ত হাঁটা চলার অভ্যাস থাকলে। প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ মিনিট হাঁটা চলা আপনাকে সুন্দর ও সুস্থ করে তুলতে পারে। তবে এমন বেশ কিছু কারণে কোমরে ব্যথা হওয়া শুরু হয়।
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু কারণ সম্পর্কে, যার ফলে কোমরে ব্যথা ও যন্ত্রণা হতে পারে-
১) পেশিতে বাধা পেলেে :
আমাদের শরীরের বিভিন্ন পেশীী গুলি এদিক ওদিক হলে ব্যথা অনুভূত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কখনো কখনো এক বা একাধিক পেশি ভুলভাবে সরে যায় এবং পেশিতে টান অনুভব হতে থাকে। যখন এটি ঘটে তখন কিন্তু মেরুদণ্ডের উপর একটা চাপ সৃষ্টি হয়। যার ফলে আশেপাশের পেশি গুলিতে দৃড়তা সৃষ্টি হয়।
যার ফলে যন্ত্রনা হওয়াটা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তবে এটা বেশিদন স্থায়ী হয় না। পেশী গুলি যখন নিজের জায়গায় আবার চলে আসে তখন আর সমস্যা দেখা দেয় না। আরাম বোধ করতে পারেন আপনি।
২)সঠিক নিয়মে না হাঁটলে পিঠেব্যথা হতে পারে :
অনেকে হয়তো ভাববেন হাঁটার আবার কেমন নিয়ম থাকতে পারে? ঠিকই শুনেছেন। সঠিক ভাবে না হাঁটলে পিঠে ব্যথা অনুভব হতে পারে। হাঁটা-চলার মাধ্যমে ওজন কমানোর সাথে সাথে শরীরের আরো অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারেন আপনি।
এটি শরীরের ছোট ছোট রোগের চিকিৎসাও বলতে পারেন। তাই প্রতিদিনের অন্যান্য কাজের রুটিন এর মত হাঁটাচলা কেও রুটিনে রাখতে ভুলবেন না যেন। তবে প্রত্যেকটা কাজের মত হাঁটার ও কিন্তু একটা নিজস্ব প্রক্রিয়া আছে। ভুল ভঙ্গিতে হাঁটাচলা করলে শরীরের পেশী এবং শিরায় টান পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
তারপরে পিঠে এবং কোমরে ব্যাথা অনুভব হতে পারে আপনার। অনেকের সামনের দিকে ঝুঁকে হাঁটার অভ্যাস আছে এই অভ্যাস থাকলে তাদের পিঠের ব্যথা হওয়ার বিষয়টা অস্বাভাবিক কিছু নয় এক্ষেত্রে সোজা হয়ে হাটার চেষ্টা করুন।
৩) কোমরে ব্যথা হতে পারে পেশীর ক্লান্তিতে :
শরীরটা যখন খুব দুর্বল হয়ে পড়ে তখন শরীরের পেশী গুলোও দুর্বল হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে ক্লান্তি ভাব থাকলে তখন স্বাভাবিকভাবেই কোমরের যন্ত্রণা ও ব্যথা অনুভব হতে পারে। তাছাড়া অতিরিক্ত ওজন হলে শরীরের সমস্ত জায়গায় ব্যথা হওয়ার সাথে সাথে কোমরেও ব্যথা হতে পারে। এ সমস্যাটি স্থূলকায় মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়।
শরীরের ওজন যখন অস্বাভাবিক হয় তখন হাটার সময় সমস্ত শরীরের ওজন টা পায়ের উপর এবং কোমরের উপরে পড়ে। সে ক্ষেত্রে কিন্তু কোমরে যন্ত্রনা হওয়াটা অস্বাভাবিক বিষয় নয়। নিয়মের থেকে অতিরিক্ত ওজনের ফলে পেশীগুলি ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তারপরে শুরু হয় যন্ত্রণা ও ব্যথা।
দীর্ঘ সময় ধরে হাঁটলে অথবা দাঁড়িয়ে থাকলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ওজন সঠিক রাখা বিশেষভাবে জরুরি। ওজন বেশি যদি থেকে থাকে আপনার, তাহলে ওজন কমানোর চেষ্টা করুন।
৪) ইম্যুনিটি পাওয়ার :
কথায় আছে শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার যত বেশি হবে তত বেশি শরীর স্ট্রং থাকবে। যে কোনো কঠিন কাজ থেকে ভারী কাজ, আপনি করতে পারবেন অনায়াসেই। আপনার শরীরে সহজেই ব্যথা অনুভব হবে না।
তার কারণ প্রত্যেক শিরায় শিরায় প্রত্যেক পেশীতে আপনার ইমিউনিটি পাওয়ার ভরপুর থাকার কারণে পেশীগুলি সহজেই ক্লান্তিবোধ অনুভব করে না। সে কারণে আপনার মধ্যে ব্যথা যন্ত্রণার মত অনুভূতি আসতে অনেক দেরি করে।
৫) ক্যালসিয়ামের অভাব :
হাড়ের মূল উপাদান ক্যালসিয়াম যখন কমতে শুরু করে তখন কিন্তু এই সমস্যা ছোট থেকে বড় সকলের দেখা দিতে পারে। হাড়ের মধ্যে ক্যালসিয়াম এর পরিমাণ কম থাকার কারণে একটু বেশি দাঁড়িয়ে থাকলে, হাঁটাচলা করলে আপনি আর ভালোভাবে বসতে অথবা নড়াচড়া করার মত ক্ষমতায় থাকবেন না। কোমরে ব্যথার জন্য। সেক্ষেত্রে কিন্তু শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বজায় রাখাটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
৬) অনিয়মিত খাদ্যাভাস :
শরীরকে সুস্থ সবল রাখার জন্য নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস কিন্তু বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, সঠিক সময়ে সঠিক খাবার না খাওয়ার ফলে শরীরে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন রকমের সমস্যা, তা থেকে শরীরের কোষ এবং পেশী গুলিতে ব্যাথা অনুভব হতে পারে।
বিশেষ করে সকালের খাবার অথবা ব্রেকফাস্ট বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সারা রাত খালি পেটে থাকার পর সকালে ভারী খাবার কিছু খাওয়া প্রয়োজন। যা শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টির যোগান দেবে।
এইসব কারণে কোমরে ব্যথার মতো সমস্যা আজকাল বেড়েই চলেছে ব্যস্ত থাকার জন্য, দৈনন্দিন জীবনে অনিয়মিত ভাবে চলাফেরা করার কারণে, এমনটা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। তবে একটুখানি সচেতনতার সাথে নিজের শরীরের খেয়াল রাখলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।