পর্যাপ্ত জল পান করার ৫ টি আশ্চর্যজনক সুবিধা

জলের অপর নাম জীবন, জল পান ছাড়া মানুষ বাচতে পারেনা। কিন্তু শরীরের জন্য একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় জল প্রয়োজন হয়, মানুষভেদে প্রয়োজনের মাত্রায় তারতম্য হতে পারে। এর কারণ হচ্ছে তাদের খাদ্যাভ্যাস, পরিশ্রমের ধরণ,ওজন, ইত্যাদি।

কিন্তু প্রত্যেকের জন্যই প্রতিদিন ৮-৯ গ্লাস, অথবা ২-৩ লিটার জল পান করা উচিত। এরচেয়ে কম জল খেলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। ফলে ডিহাইড্রেশন, উচ্চ রক্তচাপ, মাথা ঘোরা, দূর্বলতা, ওজন বৃদ্ধি, শরীরে টক্সিনের মাত্রাবৃদ্ধির মত সমস্যা দেখা দেয়।

জলের উপকারীতা বলে শেষ করা সম্ভব নয়। তবে আজ আমরা পর্যাপ্ত জল পানের ৫ টি বিস্ময়কর সুবিধা সম্পর্কে জানব। জল পানের ব্যাপারে আমরা প্রায়ই অবহেলা করে থাকি। হাতের কাছে জল থাকা সত্ত্বেও জল পানে অবহেলা আমাদের অনেক ক্ষতি করে থাকে।

চলুন প্রিয় পাঠক,  আর দেরী না করব পর্যাপ্ত জল পানের ৫ টি বিস্ময়কর সুবিধা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

পর্যাপ্ত জল পানের ৫ টি বিস্ময়কর সুবিধা


১. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি

সহজেই কোনকিছু ভুলে যাওয়ার সমস্যায় আমরা অনেকেই ভুগে থাকি। এটা অনেকের সমস্যা। কিন্তু খেয়াল করে দেখুন আপনি প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত জল পান করছেন কিনা। যদি না করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আজ থেকেই পর্যাপ্ত জল পান করুন।

মস্তিষ্কের সকল সিন্যাপ্স ও নিউরন সঠিকভাবে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত তরল প্রয়োজন। এজন্য জল কম পান করলে নিউরন ঠিকভাবে কাজ করেনা। ফলে স্মৃতিশক্তি দূর্বল হয়ে যায়। কোন কিছুই মনে থাকতে চায়না।

এ সমস্যা দূর করতে ডক্টরের কাছে যাওয়ার পূর্বে জল পানের মাত্রা বাড়িয়ে দিন। তারপরই দেখবেন, আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। আগের চেয়ে স্মৃতিশক্তি প্রখর হয়ে যাবে। বিশ্বাস না হলে এখন থেকেই পর্যাপ্ত জল পান করুন।

২. মনোযোগ বৃদ্ধি

কোন কাজ সঠিকভাবে করা সম্ভব কিনা তা নির্ভর করে মনোযোগের উপর। মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা সকলের সমান নয়। অনেকেরই মেধা কম, কিন্তু মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা বেশী। তারা অবশ্যই অন্যদের চেয়ে সবক্ষেত্রে এগিয়ে থাকেন।

কিন্তু আপনি যদি প্রয়োজনের তুলনায় কম জল পান করেন, তাহলে আপনার মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা কমে যাবে। অল্প মাত্রার জলের স্বল্পতাও মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। এ ধরনের সমস্যায় ভুগে থাকলে নিয়মিত পর্যাপ্ত জল পান করুন।

মস্তিষ্কের নিউরন ও কোষ কার্যকর ভাবে কাজ করবে। ফলে অমোযোগী হওয়ার সমস্যা কমে যাবে। আর এটা সত্যিই বিস্ময়কর, তাই নয় কি পাঠক!

৩. ওজন কমায়

যারা অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী তারা প্রত্যেকেই জানেন এটা কতটা বিরক্তিকর এবং যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা কখনোই সহজ নয়। নিজেকে মজার খাদ্যগ্রহন থেকে বিরত রাখা খুবই কঠিন কাজ।

কিন্তু অতিরিক্ত খাবার না খাওয়া এবং শরীর চর্চার উপর নির্ভর করে আপনি মোটা থেকে ফিট হতে পারবেন কিনা। আপনি যদি খাবার আগে ও পরে, দুই গ্লাস জল পান করেন তাহলে পেট ভরা ভরা লাগবে, আপনি অতিরিক্ত খেতে পারবেন না।

প্রতিদিন প্রায় ৩০০ ক্যালরি খাদ্যগ্রহন কমানো সম্ভব শুধুমাত্র পর্যাপ্ত জল পান করেই। এরজন্য বাড়তি ডায়েট, এক্সারসাইজ প্রথমেই প্রয়োজন হবেনা। এজন্য অতিরিক্ত ওজন কমাতে চাইলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি করুন। এটা ওজন কমাতে ম্যাজিকের মত কাজ করবে।

৪. উজ্জ্বল ও সুন্দর ত্বক

ত্বক নিয়ে চিন্তিত নন, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই যাবেনা। আমরা সবাই চাই আমাদের ত্বক উজ্জ্বল, সুন্দর ও মসৃণ হোক। এরজন্য পার্লারে বিউটি ট্রিটমেন্ট,  ফেসিয়াল, ফেয়ার পলিস করিয়ে থাকি। কিন্তু এগুলো সাময়িক কাজ করে।

দীর্ঘস্থায়ীভাবে যদি ত্বক উজ্জ্বল ও ঝলমলে করতে চান, তাহলে নিয়মিত পর্যাপ্ত জল পান করুন। এই অভ্যাসটি আপনাকে সুন্দর মোমের মত ত্বক পেতে সাহায্য করবে৷ এছাড়া ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে ত্বক করে তুলবে মোলায়েম।

৫. টক্সিন দূর করে

আমাদের শরীরে সবসমই অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়গুলো চলমান আছে। এইসব প্রক্রিয়া চলমান অবস্থায় শরীরে প্রচুর বিষাক্ত পদার্থ উৎপন্ন হয়। এগুলো বের হয়ে যায় ঘাম, প্রস্রাবের মাধ্যমে। কিন্তু যদি জল কম পান করেন, তাহলে এসব বিষাক্ত পদার্থ শরীরে জমতে থাকবে, এবং বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেবে। যেমন অনিদ্রা, হজমের সমস্যা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, ইত্যাদি।

কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত জল পান করেন, তাহলে শরীরের বিষাক্ত পদার্থসমূহ ঘাম ও প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে দূর হয়ে যাবে। ফলে শরীরে কোন ক্ষতিকারক বিষাক্ত পদার্থ জমে থাকবে না। এটা অনেক ধরনের রোগ থেকে আপনাকে মুক্ত রাখবে।

উপসংহার

শরীরের বিভিন্ন সমস্যায় আমরা অনেক চিন্তায় পড়ে যাই, কিভাবে নিজেদের রোগমুক্ত করব। কিন্তু রোগমুক্রি ও সমস্যার সমাধান থাকে আমাদেরই হাতের মুঠোয়। জল খুবই সহজলভ্য আমাদের কাছে।

অথচ পর্যাপ্ত জল পান না করার জন্য আমরা কত ধরনের শারীরিক সমস্যার মুখোমুখি হই। এগুলো থেকে মুক্তি পেতে পর্যাপ্ত পরিমানে জল পান করুন। তৃষ্ণার সাথে সাথে এটা আপনাকে আরও অনেক সমস্যা থেকেও মুক্তি দেবে।

সুপ্রিয় পাঠক,  উপরিউক্ত আলোচনা থেকে জল পানের ৫ টি বিস্ময়কর সুবিধা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা সফল হয়েছে আশা করি।  এ বিষয়ে কোন মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট করতে পারেন। আমরা অবশ্যই তথ্য জানিয়ে আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top