দৈনন্দিন কাজ মানেই ঘরের কাজ। ঘরের কাজ করতে সবাইকেই জানতে হয়। এমন কোন মানুষ নেই যাকে ঘরের কাজ, দৈনন্দিন কাজ করতে হয়না।
এ সকল কাজ না করার কোন উপায় নেই। যতই কাজের লোক থাকুক, খুটিনাটি কাজ আপনাকেই করতে হবে। আর একদিন কাজের লোক না আসলে তো কথাই নেই। সে দিনে কাজের কোন শেষই হতে চায়না।
অনেকেই চাকরি করেন, তাদের জন্য চটপট কাজ করা খুব জরুরী। এখন দৈনন্দিন কাজে বেশী সময় লাগালে অন্য কাজের জন্য কোন সময়ই থাকবে না। কারণ বর্তমানে সবারই কোন না কোন পেশা বা বাড়তি দায়িত্ব রয়েছে।
তাই দৈনন্দিন কাজে গতি আনতে প্রয়োজন এমন কিছু টিপস যা জাদুর মত কাজ করে। কাজের সময় বাচিয়ে দেয়। সুপ্রিয় পাঠক, এমন কিছু জাদুকরী টিপস নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন। চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
দৈনন্দিন কাজে গতি আনার কিছু জাদুকরী টিপস:
টিপস ১. দীর্ঘদিন যাবত ব্যবহার করলে সব জিনিসই পুরনো হতে থাকে, পড়তে পারে দাগ। এই দাগ দূর করা অনেকক্ষেত্রেই সম্ভব না বলে জিনিসগুলো একসময় বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু দাগ দূর করার খুব সহজ উপায় রয়েছে।
প্লেট,কাপ, গ্লাস, বাটি ইত্যাদিতে বাদামি ছোপ পড়লে তা দূর করতে বেকিং সোডা ও কুসুম গরম জল মিশিয়ে পাতলা পেস্ট তৈরি করুন। এবার পেস্টটি দাগ পড়া অংশে লাগিয়ে কিছুক্ষন রেখে দিন। এরপর ব্রাশ দিয়ে ঘষে দাগ তুলে ফেলুন সহজেই। দেখবেন বাসনগুলি নতুনের মতই ঝকঝকে হয়ে গেছে।
টিপস ২. দুধ জ্বাল দিতে গেলে বা মাংস রান্না করতে গেলে প্রায়ই হাড়ি কড়াই পুড়ে যায়, জেদী দাগ পড়ে যায়, যা তুলতে অনেক কষ্ট হয় এবং অনেক সময় লাগে। এই পোড়া দাগ তুলে ফেলতে পারেন সহজেই। পোড়া হাড়ি বা কড়াইতে লেবুর রস বা ভিনেগার দিয়ে ১/২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন।
এরপর ঘষে তুলে ফেলুন দাগ। একদমই কষ্ট হবেনা দাগ তুলতে। এছাড়াও দাগ তুলতে টমেটো কেচাপ, কোল্ড ড্রিংকস বা টুথপেষ্ট ব্যবহার করতে পারেন। এতেও যদি দাগ না ওঠে তাহলে আগে হাড়িতে দুই কাপ পানি ফুটিয়ে দাগ নরম করে তারপর টুথপেষ্ট মাখিয়ে রাখুন। ১ ঘন্টা পর ঘসলেই দাগ উঠে যাবে। কোন দাগ থাকবেনা।
টিপস ৩. বেসিনে তো আমরা ময়লা হাত ধুয়ে থাকি, বাদ যায়না তেল চর্বি মাখা হাত ধোয়াও। এতে করে বেসিনে খুব দ্রুত হলদে দাগ পড়ে খুবই বাজে দেখায়। এই দাগ কোন কিছু দিয়েই পুরোটা তোলা যায়না। কিন্তু খুব সহজ উপায় রয়েছে দাগ তোলার।
উপায় হচ্ছে পুরো বেসিনে ভিনেগার ছড়িয়ে ২০-২৫ মিনিট রেখে দিন। এবার স্পঞ্জ বা ব্রাশ দিয়ে ঘষুন, দেখবেন দাগ দূর হয়ে বেসিন নতুনের মতই ঝলমলে হয়ে উঠেছে।
টিপস ৪. গৃহিনীরা সারাদিন কত কষ্ট করে রান্নাবান্না করেন, এর মধ্যে যদি কোনদিন তরকারীতে হলুদ বা নুন বেশী পড়ে যায়, চিন্তার আর শেষ থাকেনা, কিভাবে মুখে তুলবে সবাই? অনেক সময় তরকারী ফেলে দিয়ে নতুন করে রাধতে হয়। এটা যেমন অপচয়, তেমনি কষ্টসাধ্য।
তরকারীতে নুন বেশী হলে একটি আলু টুকরো করে তরকারীতে দিয়ে দিন। দেখবেন বাড়তি লবন উধাও হয়ে যাবে। তরকারীতে হলুদ বেশী হয়ে গেলে বিস্বাদ হয়ে যায়। এরজন্য খুন্তি গরম করে তরকারীতে দিয়ে রাখুন। কিছুক্ষন পর বাড়তি হলুদ শুষে নেবে।
টিপস ৫. বাড়িতে কাচের জিনিস ভেঙ্গে যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। এরপর সেই ভাংগা জিনিস পরিষ্কার করতে গিয়ে হাত কেটে যাওয়ার দূর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। এটা এড়াতে প্রথমেই হাতে গ্লাভস বা মোটা পলিথিন জড়িয়ে নিন, পায়ে জুতা বা কেডস পরুন।
তারপর মোটা রুটি বা ব্রেড নিয়ে কাচ পরিষ্কার করুন। কাগুলো ব্রেডে জড়িয়ে সহজেই উঠে আসবে। আর দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকবে না। খুব ঝুকিপূর্ন কাজের খুবই চমৎকার ও সহজ সমাধান এটা।
টিপস ৬. কমোডে কালচে দাগ পড়ে যাওয়া খুবই বিরক্তিকর সমস্যা, এরজন্য কমোড নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর দেখায়। এটা থেকে পরিত্রান পেতে একলিটার কোকাকোলা
এনে কমোডে ঢেলে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন টয়লেট পরিষ্কার করার ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করুন। দেখবেন কালচে সব দাগ একদম উধাও হয়ে যাবে
টিপস ৭. বেসিনে প্রায়ই ময়লা আটকে যায়, ফলে পানি ও আটকে যায়৷ বেসিন ব্যবহার করা যায়না। এভাবে সবসময় মিস্ত্রি ঢাকা সম্ভব হয়না। এ
রজন্য রয়েছে ঘরোয়া টিপস। আপনি গরম জল করে সাথে ভিনেগার মিশিয়ে বেসিনে ঢালুন। তারপর সারারাত আর ব্যবহার করবেন না। সকালে দেখবেন সব ময়লা পরিষ্কার হয়ে গেছে।
টিপস ৮. গৃহিনী নতুন হোক বা পুরাতন, অথবা হোক পুরুষ, মাছ ভাজার সময় তেলের ছিটা লেগে হাত পোড়েনি এমন মানুষ পাওয়া যাবেনা। কিন্তু সহজেই দূর্ঘটনা এড়াতে পারেন।
কড়াইতে বা প্যানে তেল ভালভাবে গরম করে লম্বা খুন্তি বা চামচে করে বেশ কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে মাছ তেলে ছাড়ুন। এতে তেল ছিটে এসে গায়ে বা মুখে লাগার সম্ভাবনা কমে যাবে। মুখে তেল ছিটা লাগা এড়াতে রান্নার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
টিপস ৯. শুকনা খাবার যেমন বিস্কিট, টোস্ট, ডালমুট, মুড়ি ইত্যাদি সাধারনত বেশ কিছুদিন সংরক্ষন করে রাখা হয়। কিন্তু সমস্যা হয়, এগুলো দ্রুত নরম হয়ে যায়, মচমচে ভাবটা আর থাকেনা। ফলে অনেক সময় আর খাওয়াই যায়না।
এ অসুবিধা এড়াতে যে পাত্রে বা বয়ামে এগুলো সংরক্ষন করবেন সে পাত্রে সামান্য চিনি ছড়িয়ে দিন অথবা কিছু কাগজের টুকরা ছড়িয়ে রাখুন। কাগজের টুকরাগুলো মোটা এবং শুকনা হতে হবে। তাহলেই দেখবেন বিস্কিট বা অন্যান্য খাবারগুলো সহজে নরম হবে না, মচমচে থাকবে।
টিপস ১০. অনেক সময় মাংস রান্না করতে গিয়ে তেলের পরিমান খুব বেশী হয়ে যায়। বেশী তেলযুক্ত খাবার শরীর ও ত্বকের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কিন্তু ঝোলযুক্ত তেল কি করবেন তা বুঝে উঠতে পারেন না অনেকেই। আবার এত তেল নষ্টও করতে চাননা।
এক্ষেত্রে খুব সহজ উপায় রয়েছে। পাত্রের উপর থেকে ঝোলযুক্ত তেল চামচে করে তুলে অন্য পাত্রে সংরক্ষন করুন৷ পরে এই তেল অন্য খাবার যেমন আলু বা বেগুন ভাজায় ব্যবহার করতে পারেন। তাতে খুব ভাল স্বাদ হবে। তেল।ও নষ্ট হল না, স্বাস্থ্যও ভাল থাকল, আর ভাজিরও টেস্ট বাড়ল। একের ভিতর তিন, তাই নয় কি পাঠক?
উপসংহার
দৈনন্দিন কাজের কোন শেষ নেই। হতে পারে রান্নাবান্না বা ঘর পরিষ্কার। এগুলো আমাদের সবাইকেই করতে হবে। বাড়িতে ছুটির দিনটি চোখের পলকেই বিভিন্ন কাজ করতে গিয়ে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু কিছু টিপস জানা থাকলে কঠিন কাজ সহজ হয়ে যায়, সাথে ঝুঁকিও কমে যায় আর সময়ও বাচে।
আশা করি আজকের জাদুকরী টিপসটি দৈনন্দিন কাজে গতি আনতে অনেক উপকারী হবে। আপনাদের দৈনন্দিন কাজে গতি আনাই আমাদের পোস্টের উদ্দেশ্য। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বা কোন মতামত দেওয়ার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আমরা অবশ্যই তথ্য দিয়ে আপনাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।