সয়াবিন একটি বহুল পরিচিত ও বহুল ব্যবহৃত তেলবীজ জাতীয় ফসল। রান্নায় এর ব্যবহার সর্বাধিক।
এটি এক ধরনের শুটি জাতীয় উদ্ভিদ। এতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ থাকে। এর বীজ ভাজা হিসেবে ও খাওয়া হয়ে থাকে।
আজ আমরা আপনাদের সাথে সয়াবিন চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই সয়াবিন চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন সয়াবিন চাষের পদ্ধতি বিস্তারিতঃ
মাটি ও জলবায়ুঃ
সয়াবিন চাষে জমি উচু হতে হবে। জমি সুনিষ্কাশিত হতে হবে। তবে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা না থাকলে মাঝারি উচু বা মাঝারি নিচু জমি ও নির্বাচন করা যেতে পারে।
সাধারনত দোআঁশ, বেলে দোআঁশ বা এটেল দোআঁশ মাটি সয়াবিন চাষের জন্য খুবই উপযোগী।
বপনের সময়ঃ
শীতকাল ও বর্ষাকাল উভয় মৌসুমেই সয়াবিন চাষ করা যায়। সাধারনত ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বীজ বপন করার উপযুক্ত সময়।
তবে বর্ষা মৌসুমে ও চাষ করা যায়। বর্ষা মৌসুমে চাষ করলে শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি থেকে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বীজ বপন করা ভালো।
জমি তৈরিঃ
জমি ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। মাটির ধরন বুঝে জমি চাষ দিতে হবে। ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে।
মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে এবং জমি ভালোভাবে আগাছা মুক্ত করে নিতে হবে।
তারপর মাদা তৈরি করতে হবে যেন জমিতে সেচ দিতে বা গাছের পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়।
বীজের হারঃ
সারিতে বীজ বপন করলে এক একর জমিতে ২২ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়ে থাকে।
আর ছিটিয়ে বীজ বপন করলে এক একর জমিতে ২৮ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়ে থাকে।
বীজ বপন পদ্ধতিঃ
সয়াবিন বীজ জমিতে ছিটিয়ে বপন করা যায়। আবার সারিতে ও বপন করা যায়। তবে বীজ সারিতে বপন করা সবচেয়ে ভালো।
সারিতে বপন করলে এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব হবে ৩০ সেমি। ৩-৪ সেমি গভীর করে বীজ বপন করতে হবে।
আর যদি ছিটিয়ে বপন করা হয় তবে বীজ বপন করার পর জমিতে মই দিয়ে বীজ মাটির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
বীজ বপন করার আগে বীজ শোধন করে নেয়া উচিত তাহলে বীজ বাহিত রোগ থেকে ফসল রক্ষা করা যায়।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি ধরন বুঝে জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে।
সাধারনত এক একর জমিতে ই্উরিয়া সার দিতে হবে ২০-২৫ কেজি, টিএসপি দিতে হবে ৬০-৭০ কেজি, এমওপি দিতে হবে ৩৫-৪০ কেজি, জিপসাম দিতে হবে ৩৫-৪৫ কেজি। জমিতে জীবাণু সার ও দেয়া যেতে পারে ২৫-৩০ গ্রাম।
এই সব রাসায়নিক সারের সাথে গোবর সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
তখন রাসায়নিক সারের পরিমান কম হবে। জমি শেষ বার চাষ দেওয়ার সময় সার ভালো ভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে সার প্রয়োগ করার পর জল সেচ দিতে হবে।
জীবানুসার প্রয়োগঃ
সয়াবিন বীজ বপন করার আগে বীজে জীবাণু সার প্রয়োগ করে নেয়া উচিত। তাহলে সয়াবিন গাছের শিকড়ে এক ধরনের গুটি তৈরি হয় যা থেকে গাছ অক্সিজেন পায় খুব সহজে।
এক কেজি পরিমান বীজে ২০-৩০ গ্রাম জীবানুসার ছিটিয়ে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। জীবানুসার প্রয়োগ করার পরেই বীজ বপন করে ফেলা উচিত।
সেচ প্রয়োগঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে ঠিক মত সেচ দিতে হবে। রবি মৌসুমের সময় গাছে যখন ফুল ধরা শুরু হবে বা শুটি ধরার সময় হবে তখন সেচ দিতে হবে।
প্রথম সেচ দিতে হবে বীজ অঙ্কুরোদগম হবার ২০-৩০ দিন পর। দ্বিতীয় সেচ দিতে হবে ৫০-৫৫ দিন পর।
তবে যদি বৃষ্টি হয় তবে সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। খরিফ মৌসুমে সাধারনত সেচ দেওয়ার দরকার হয় না।
জমিতে জল জমে থাকা যাবে না। জল জমে থাকলে তা নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন অতিরিক্ত জল বের হয়ে যায়।
আন্ত:পরিচর্যাঃ
চারা গাছ বড় হবার ২০-২৫ দিন পর জমিতে আগাছা দমন করে দিতে হবে। গাছ যদি খুব বেশি ঘন হয়ে যায় তাহলে পাতলা করে দিতে হবে।
গাছ বেশি ঘন হয়ে গেলে গাছের বৃদ্ধিতে বাধা পায়।
রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনাঃ
সয়াবিন গাছে সাধারনত বিছা পোকা ও পাতা মোড়ানো পোকা বেশি ক্ষতি করে থাকে। পোকা গুলো গাছের পাতা খেয়ে ঝাঝরা করে ফেলে।
পোকার আক্রমন কম থাকলে আক্রান্ত পাতা সহ পোকা তুলে ফেলে দিতে হবে। আক্রমন যদি বেশি হয় তাহলে সেভিন ৮৫ এসপি পাউডার ১০ লিটার জলের সাথে ৩৪ গ্রাম মিশিয়ে জমিতে স্প্রে করতে হবে।
এছাড়া সয়াবিন ক্ষেতে কান্ডের মাছি পোকা ও হলুদ মোজাইক ভাইরাস আক্রমন করে থাকে।
এ সব রোগ থেকে বাচার জন্য জমি সব সময় আগাছামুক্ত ও পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রয়োজনে বালাইনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
ফসল পরিপক্ক হবার পর তা সংগ্রহ করতে হবে। গাছ গুলো যখন শুটি সহ হলুদ হয়ে আসবে তখন ফসল সংগ্রহ করতে হবে।
গাছ মাটির উপর থেকে কেটে নিতে হবে। তারপর এগুলো ৩-৪ দিন রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
ফলনঃ
সঠিক উপায়ে চাষ করতে পারলে প্রতি একরে প্রায় ৬০০-৯০০ কেজি বীজ পাওয়া যাবে।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।