বোকা শব্দটি অবশ্যই হাস্যকর একটি শব্দ। যা অন্যদের বেলায় প্রয়োগ করে আমরা আনন্দ পাই, কিন্তু আমাদের কেউ বোকা বললে নিশ্চয়ই আমাদের ভাল লাগবে না?
বোকা কেউই হতে চায়না, কিন্তু বোকার মত কাজ করলে বা চিন্তা করলে বোকা কথাটা শুনতে হবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে বোকা কথাটা শোনার ইচ্ছা না থাকলেও নিজের অজান্তেই আমরা বোকার মত কাজ করে থাকি।
অথবা অন্যদের মাঝেও বোকামি দেখতে পাই। যদি আপনি নিজে জানতে চান কোন কাজগুলো আসলে বোকামির পর্যায়ে পড়ে তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য। আশা করি পোস্টটি পড়ে উপকৃত হবেন।
আজকের আয়োজনে থাকছে বোকামির ৬টি লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
বোকামির ৬ টি লক্ষণ :-
১. নিজেকে সবার চেয়ে জ্ঞানী ভাবা
যারা নিজেকে সবার চেয়ে বেশী জ্ঞানী ভাবে তারা অন্যদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়না, ভাবে যে তারা যেটা ভাবছেন সেটাই শুধু ঠিক, আর অন্যরা যা ভাবছেন সেটা সবসময়েই ভুল।
অন্যদের মতামতকে তারা মেনে নিতে চান না। একজন মানুষ যত জ্ঞানীই হোক না কেন, সে কখনোই সবসময়ে ঠিক নয়, আর সবাইকে ভুল ভাবার মানসিকতা থাকাটাও যৌক্তিক নয়।
কারণ একেকজনের দৃষ্টিভঙ্গি একেক রকম। কিন্তু তাই বলে নিজের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মিল না থাকলেই অন্যদের বোকা ভাবা ঠিক নয়। এবং এটাও ভাবা উচিত নয় যে আপনি নিজেই সবচেয়ে জ্ঞানী।
যারা ভাবেন এ ধরনের মানুষদের তাই বোকা ভাবা হয়। যদি এই লক্ষণ কারো ভিতর দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে তিনি বোকা।
২. গোপন কথা সবাইকে বলা
এমন কিছু কথা আছে যা সবাইকে বলাটা উচিত নয়, যা নিকটজনদের বললেও পরে সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
কিন্তু যারা বোকা তারা এ বিষয়টা বুঝতে পারেনা, তারা নিজেদের গোপন কথা সবাইকে বলে থাকেন, আপন-পর এবং ক্ষতিকর মানুষ চেনার মত অভিজ্ঞতা ও বিচক্ষণতা তাদের থাকেনা।
তারা এভাবে গোপন কথা অন্যদের বলে পরে বিপদে পড়েন। কারণ মানুষের স্বভাব হচ্ছে ভাল মানুষের মত সব কথা শুনে পরে সেই কথাগুলো বলে আপনাকে আঘাত করা।
তাই নিজের দূর্বলতা নিজের ভিতরই রাখুন। তা বাইরে প্রকাশ করতে যাবেন না।
৩. না ভেবে কাজ করা
যেকোন কাজ করার আগে ভালভাবে চিন্তা করা প্রয়োজন, কাজের ফলাফল কি হতে পারে, কাজটি করা আদৌ ঠিক হবে কিনা, কাজটি দ্বারা অন্যকারো বা নিজের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে কিনা?
কিন্তু বোকা মানুষের লক্ষণ হচ্ছে, তারা একটি কাজ যদি করবেন মনে করেন, তাহলে সেটা করে ফেলেন, কাজটি ঠিক না ভুল, করা উচিত নাকি অনুচিত সেটা ভেবে দেখেন না, ফলে কাজ করার পর অনেক সময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়ে থাকেন, যা তাদের এই ভেবে-চিন্তে কাজ না করার পরিণাম।
এজন্য কাজের পরে না ভেবে চেষ্টা করুন কাজের আগেই ভাবার জন্য, এতে করে কাজ করার পর পস্তাতে হবেনা।
৪. ফলাফল আগেই ভেবে রাখা
বেশিরভাগ মানুষের জীবনে ব্যর্থতার কারণ হচ্ছে ফলাফল আগেই ভেবে রাখা। তারা যে কাজ ই করুক না কেন ভাবে যে এই কাজটি করার আসলে কোন ফায়দা নেই। দিনশেষে ফলাফল শুন্যই আসবে।
এজন্য তারা যেকোন কাজ দায় এড়াতে করে থাকে, তাদের কাজের উদ্দেশ্য থাকে শুধুই দায় এড়ানো, তারা যেহেতু নেগেটিভ মানসিকতা থেকে কাজগুলো করেন এজন্য তাদের কাজের ফলাফল কখনোই ভাল আসেনা।
কাজ করতে হবে পূর্ণ বিশ্বাস রেখে, আপনি সঠিকভাবে বিশ্বাস রেখে কাজ করলে তা আপনাকে সঠিক ফলাফল অবশ্যই এনে দেবে।
৫. অন্যের কথায় হাল ছাড়া
বোকা লোকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হচ্ছে এরা মানুষের কথায় নিজেদের কাজ থামিয়ে দেয়, হতাশ হয় এবং ভেঙে পড়ে। এরা কখনোই নিজেদের চেষ্টা এবং কাজের প্রতি আস্থা রাখতে পারেনা।
ভাবে যে, মানুষ যেহেতু বলছে আমাকে দিয়ে হবেনা,,তারমানে নিশ্চয়ই এটা হবেনা। আর এভাবেই তারা তাদের মূল্যবান সময়ে কোন কাজ না করেই হার মেনে যায়৷
মানুষের মন্দকথাকে জয় করে জয়ী হয়ে দেখানোর মত মনোবল বোকা লোকদের থাকেনা বলেই তারা বোকা। তারা জীবনে শুধু মানুষের কথাতেই পিছিয়ে পড়ে।
৬. সময়কে পরিমাপ করা
সময়ের কাজ অবশ্যই সময়ে করা উচিত, তা না হলে সেই কাজের মূল্য থাকেনা। কিন্তু কিছু কাজ আছে যা আপনি যখন থেকে শুরু করবেন তখন থেকেই আপনার জীবন বদলে দেবে।
কিন্তু এই শুরুর সময়কে পরিমাপ করতে গেলে আপনি সফলতা থেকে দূরে সরে যাবেন। সবার জীবনেই একই সময়ে সবকিছু ঘটেনা।
কারো পড়াশোনা দেরীতে শেষ হয়, কারো চাকরি বা সাফল্য আসে দেরীতে, কারো বিয়ে বা সন্তান হয় দেরীতে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, আপনার সময় শেষ ভেবে হতাশ হয়ে যাওয়া।
নিজের চেষ্টা এবং কাজ অব্যাহত রাখুন, সাফল্য এবং সুখী জীবনকে নির্দিষ্ট সময় দিয়ে বিচার করবেন না।
শেষ কথা
বোকা হয়ে কেউ জন্ম নেয়না। মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা তার পরিবেশ, সঙ্গ এগুলোই তার জীবনে বোকামি করার প্রবণতা তৈরি করে।
কিন্তু আপনি চাইলেই বিচক্ষণতার সাথে এই প্রবণতা দূর করতে পারবেন। মানুষ সবসময়েই চাইবে আপনাকে নেগেটিভ কথা বলে পিছিয়ে দিতে, আপনার মনোবল ভেঙে দিতে।
কিন্তু আপনাকেই ঠিক করতে হবে আপনি কিভাবে জীবনে এগিয়ে যেতে চান। প্রতিদিন নতুন কিছু শিখুন, নিজের দূর্বলতা আড়াল করুন আর সময় শেষ ভেবে হাল ছেড়ে না দিয়ে নতুন উদ্যমে চেষ্টা করুন। অবশ্যই আপনি জয়লাভ করবেন।
সফলতা সবার জীবনে একসময়ে আসেনা, তাই হতাশ হওয়ার কারণ নেই। নিজের বোকামিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো দূর করুন, অবশ্যই আপনি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন।
পোস্টটির বিষয়ে কোন তথ্য জানানোর হলে বা কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করুন। আমরা অবশ্যই তথ্য জানিয়ে আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।