2023 আদা চাষের পদ্ধতি, সঠিক এবং সরল | 2023 Ginger Cultivation Method in Bangla

আদা একটি মসলা জাতীয় ফসল। এটি সাধারনত তরকারিতে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর অনেক ওষুধি গুন ও রয়েছে।

এটি শুকনা ও কাচা দুই ভাবেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আদা দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়া আদার সাথে মধু মিশিয়ে খেলে কাশি দূর হয়ে যায়।

Ginger Cultivation Method in Bangla
Ginger Cultivation Method in Bangla

আজ আমরা আপনাদের সাথে আদা চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই আদা চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন আদা চাষের পদ্ধতি বিস্তারিতঃ

 

জলবায়ু ও মাটিঃ

আদা চাষের জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন হয়ে থাকে। অল্প ছায়া যুক্ত স্থান আদা চাষের জন্য খুবই উপযোগী।

সাধারনত দোআশ মাটি আদা চাষের জন্য উপযুক্ত। তবে এটেল মাটিতে ও আদা চাষ করা যেতে পারে । জমি অবশ্যই সুনিষ্কাশিত হতে হবে।

 

জমি তৈরিঃ

জমি ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। জমিতে যখন জো আসবে তখন জমি ৬-৮ টি চাষ দিতে হবে।

মাটি ভালো ভাবে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। তারপর জমিতে বেড তৈরি করতে হবে। বেডের দৈর্ঘ্য হবে ৪ মিটার এবং প্রস্থ হবে ২ মিটার।

বেডের চারদিকে নালা তৈরি করে দিতে হবে । নালা হবে ৫০ সেমি চওড়া। জমি উচু বা মাঝারি উচু হতে হবে।

 

বীজ রোপনের সময়ঃ

সাধারনত ফাল্গুন মাস থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত বীজ বপন করা যেতে পারে।

এক হেক্টর জমিতে প্রায় ১০০০ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়ে থাকে।

 

বীজ শোধনঃ

বীজ বপন করার আগে তা শোধন করে নিতে হবে। বীজ শোধন করে নিলে পচন রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

এক লিটার জলে ১২-১৩ গ্রাম রিডোমিল গোল্ড বা ডাইথেন এম ৪৫ মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর তাতে ১০ আদার বীজ নিয়ে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে।

তারপর তা তুলে ছায়া যুক্ত স্থানে ঢেকে রাখতে হবে খড় বা চটা দিয়ে। এই অবস্থায় রাখলে কিছুদিন পর আদার ভ্রূণ বের হবে।

পরে এই ভ্রূণ জমিতে রোপন করতে হবে।

Ginger Cultivation Method & Harvesting in Bangla
Ginger Cultivation Method & Harvesting in Bangla

বীজের আকারঃ

বীজের আকারের উপর আদার ফলন নির্ভর করে। বীজ বড় আকৃতির হলে ফলন বেশি হয় ।

৩৫-৪০ গ্রাম ওজনের বীজ রোপন করতে পারলে ফলন ভালো হয়।

 

বীজ বপন পদ্ধতিঃ

সাধারনত ফাল্গুন মাস থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত বীজ বপন করা যেতে পারে। বীজের ওজন হবে ১২-১৫ গ্রাম। বীজ সারিতে বপন করতে হবে।

এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব হবে ৪০-৪৫ সেমি। এক বীজ থেকে আরেক বীজের দূরত্ব হবে ২০ সেমি।

আদার বীজ ৫ সেমি গভীরে লাগাতে হবে। জমিতে কন্দ লাগনোর পর গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে।

বীজ আদা রোপন করার ৭৫-৯০ দিন পর এক পাশের মাটি সরিয়ে আদার রাইজোম সংগ্রহ করা যায়।

 

সার প্রয়োগঃ

উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে বেশি পরিমান জৈব সার থাকলে ফলন বেশি হয়ে থাকে।

এক হেক্টর জমিতে গোবর সার দিতে হবে ৪-৬ টন, ইউরিয়া দিতে হবে ২০০-২৪০ কেজি, টিএসপি দিতে হবে ১৭০-১৯০ কেজি, এমওপি ১৬০-১৮০ কেজি দিতে হবে।

জমিতে কন্দ লাগানোর পর ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সার মিশানোর পর জমি হালকা কুপিয়ে মাটির সাথে সার ভালো ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে সার প্রয়োগ করার পর সেচ দিতে হবে।

 

সেচ ব্যবস্থাঃ

জমিতে ভালো ফলন পেতে হলে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। প্রতিবার সার প্রয়োগের পর সেচ দিতে হবে।

তবে জমিতে জল নিকাশের ব্যবস্থা থাকতে হবে। জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

প্রয়োজনে জমিতে নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন অতিরিক্ত জল বের হয়ে যায়।

 

আন্ত পরিচর্যাঃ

চারা রোপন করার ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে সাধারনত আদার গাছ বের হয়ে থাকে। আদা রোপন করার ৫-৬ সপ্তাহ পর জমির আগাছা ভালোভাবে নিড়িয়ে দিতে হবে।

জমিতে আগাছা জমতে দেয়া যাবে না। আগাছা পরিষ্কার করে প্রয়োজনে আবার ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। তাছাড়া জমিতে মালচিং করে দিলে গাছের জন্য ভালো হয়।

এই মালচিং পরে জৈব সারে পরিনত হয় এবং জমির উর্বরতা বাড়ায়। রাইজোম বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে।

আদার চারা হালকা ছায়া যুক্ত স্থানে ভালো জন্মে বলে জমিতে ছায়া প্রদান কারি গাছ ও লাগানো যেতে পারে।

এসব গাছ যখন ১.৫-২.৫ মিটার উচু হবে তখন আগা কেটে দিতে হবে যেন শাখা প্রশাখা বৃদ্ধি পায়। এবং জমিতে ছায়ার ব্যবস্থা হয়।

Ginger Farming Method in Bangla
Ginger Farming Method in Bangla

রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনাঃ

আদা গাছে সাধারনত কন্দ পচা রোগ দেখা দেয় ও আদা হলুদ হওয়া রোগ দেখা দেয়।

জমিতে বিভিন্ন রোগ ও পোকা আক্রমন করলে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক ও বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে।

ফসল সংগ্রহঃ

আদার কন্দ রোপন করার ৯-১০ মাস পর পাতা এবং গাছ শুকিয়ে হলুদ হয়ে যায়।

তখন ডিসেম্বর মাস থেকে জানুয়ারি মাসে কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে আলগা করে আদা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।

 

ফলনঃ

সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করতে পারলে এক হেক্টর জমি থেকে প্রায় ২০-২৫ টন আদা পাওয়া যেতে পারে।

 

আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top