পৃথিবীর এখন চলছে দুঃসময়। একের পর এক দেশ করোনা মহামারীতে পর্যুদস্ত! কিছুটা সামলে ওঠে, আবার কিছুদিন পরেই মহামারী নতুনরূপে প্রকট হয়।
আমাদের দেশে এখন করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এত মানুষকে অক্সিজেন সরবরাহ করাটা হয়ে দাড়িয়েছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ!
কিন্তু করোনার লক্ষণ এবং নতুন লক্ষণগুলো যদি আমরা না জানি, তাহলে কোনভাবেই সময় থাকতে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হবেনা, এবং কোন ধরনের চিকিৎসা করার আগেই রোগটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে, যেভাবে প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমাদের দেশে মানুষ মারা যাচ্ছে, চারদিকে জ্বলছে চিতার আগুন।
এই আগুন ঠান্ডা করতে প্রয়োজন করোনা সম্পর্কে নতুন সকল তথ্য জানা, যা আমাদের নিজেদের বাঁচার জন্যই প্রয়োজন। ভারতে করোনারোগীর সংখ্যা, প্রতিদিন মৃত্যুরহার এবং সংক্রমণ ছড়ানোর মাত্রা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
অক্সিজেনের অভাবে প্রতিদিন ২-৩ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে।এই সংকট এবং চিতার আগুন থামাতে প্রয়োজন সতকর্তা।
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
এজন্য করোনার নতুন লক্ষণ ও করোনা সম্পর্কে নতুন তথ্যসমূহ নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন। চলুন দেরী না করে আলোচনা শুরু করা যাক।
করোনার নতুন লক্ষণ ও করোনা সম্পর্কে নতুন তথ্যসমূহ জেনে নিন :-
১. গোলাপি চোখ
করোনা দ্বিতীয় ওয়েভের লক্ষণে দেখা যাচ্ছে রোগীদের চোখ গোলাপি বা লাল বর্ণের হয়ে যাচ্ছে, তাদের চোখের চারপাশ ফুলে যাচ্ছে, চোখ রক্তবর্ণ দেখাচ্ছে।
এ ধরনের লক্ষণ হঠাৎ দেখা দিলে সতর্কতা অবলম্বন করুন। কারণ চোখের রং পরিবর্তন হলে তা বুঝতে পারা সহজ।
বিভিন্ন কারণে চোখের রং পরিবর্তন হলেও চোখ গোলাপি বা লালের সাথে শ্বাসকষ্ট থাকলে তা একদম অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
২. অতিরিক্ত ক্লান্তি
করোনার দ্বিতীয় ওয়েভে আক্রান্তের লক্ষণ পরিবর্তন হয়েছে। আগের বারের লক্ষণের তুলনায় এবারের লক্ষণগুলো আলাদা।
করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি অতিরিক্ত ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়ছেন, কোন কাজেই গতি পাচ্ছেন না। খুব দ্রুত কার্যক্ষমতা হারাচ্ছেন, যা তাদের রোগ প্রতিরোধ করার শক্তি কমিয়ে দিচ্ছে।
এরজন্যই মৃতের হার বেড়েই চলেছে। কোন কারণ ছাড়াও অতিরিক্ত ক্লান্ত লাগলে তাই সতর্ক হোন এবং করোনার টেস্ট করান।
৩. অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট
এবারের দ্বিতীয় ওয়েভের করোনাতে রোগীকে চিকিৎসা নিয়ে ভাল হওয়ার সুযোগ খুব কম পাওয়া যাচ্ছে। সংক্রমণ টের পেতে না পেতেই দ্রুত শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে।
এবারের করোনাতে শ্বাসকষ্টের মাত্রা অবিশ্বাস্য রকম বেশী। এজন্য প্রতিটি রোগীকেই অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে, কিন্তু পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় অনেক রোগী মারা যাচ্ছেন। এজন্য শ্বাসকষ্ট হওয়া মাত্র রোগীকে হসপিটালে নিন।
৪. জ্বর
করোনার দ্বিতীয়ভাগে রোগীদের জ্বরের মাত্রা অনেক বেশী। আগের বারের চেয়েও শরীরের তাপমাত্রা এবারের জ্বরে বেশী।
জ্বরের অধিক তাপের কারণে রোগীরা অনেক বেশী অসুস্থ বোধ করছেন। জ্বর কমানোর জন্য কোন জলপট্টি বা মাথায় জল ঢালা যাচ্ছেনা শ্বাসকষ্টের কারণে।
এজন্য শুধুমাত্র ঔষধের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে যা বিভিন্ন প্বার্শপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে। অতিরিক্ত জ্বরের সাথে শ্বাসকষ্ট থাকলে রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে।
করোনা সম্পর্কে নতুন তথ্যসমূহ:-
১. তরুণরাও আক্রান্ত হচ্ছেন
করোনার প্রথম ওয়েভে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশী আক্রান্ত ছিলেন, তখন তরুণরা কম আক্রান্ত হচ্ছিলেন। ধরে নেয়া হত তরুণদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী, তাদের স্ট্যামিনা বেশী বলে তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কম।
কিন্তু এবারের দ্বিতীয় ওয়েভে তরুণরাও সমানভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন। করোনার সংক্রমনের ধরন, আক্রান্তের মাত্রা, রোগের লক্ষণ এবং জীবাণুর শক্তি সবকিছুতেই পরিবর্তন এসেছে।
এজন্য এবার তরুণদের আক্রান্ত হওয়ার হার রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
২. শক্তিশালী সংক্রমণ
এবারে দ্বিতীয় ওয়েভের আক্রমণে আগের চেয়ে সংক্রমণ ৩০০ গুণ বেশী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
আগে যেখানে একই পরিবারে একজন আক্রান্ত হলেও সবাই আক্রান্ত হচ্ছিলেন না, এবার আর সেটা হচ্ছেনা, একজন আক্রান্ত হলেই পরিবার আশেপাশের মানুষও আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন।
আগে মাস্কের ব্যবহারে করোনা আটকানো গেলেও এবারের সংক্রমন সমস্ত রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তাই রোগীর কাছাকাছি থাকলে একসাথে দুটি – তিনটি মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তাররা।
৩. আক্রান্তের হার রেকর্ড ছাড়িয়েছে
আমাদের দেশে করোনা তার মরণ ছোবল এনেছে। দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দেড় কোটি। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আজ আক্রান্তের সংখ্যা তিনলক্ষ প্রায়, এবং মৃতের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। এটা আমাদের দেশে এর আগে কখনো হয় নি।
সকলেই মৃত্যুভয়ে কম্পিত। এত দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে যে তাদেরকে দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছেনা।
এজন্য প্রতিদিন রেকর্ড সংখ্যক লোক মারা যাচ্ছে করোনায়। এত বিপুল পরিমাণ লাশের সৎকার করতেও জায়গার অভাব দেখা দিয়েছে।
৪. আক্রান্তদের অতি দ্রুত মৃত্যু
করোনার দ্বিতীয় ওয়েভে লক্ষণ, আক্রান্তের হার, মৃতের সংখ্যা এবং মৃত্যুর সময় সবকিছুতেই পরিবর্তন এসেছে।
এবার আক্রান্তরা তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছেন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেও একদিনের ভিতর অধিকাংশ রোগী মারা যাচ্ছেন। তরুণদের ক্ষেত্রেও এ বিষয়ের কোন পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা।
খুবই দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে বিধায় কারো লক্ষণ বিস্তারিত জানা সম্ভব হচ্ছেনা। প্রতিদিন দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
৫. আক্রান্তের লক্ষন পরিবর্তন
করোনা হলে আগে যেসব লক্ষণ দেখা যেত, এবার সেসব লক্ষণ পরিবর্তন হয়েছে। এজন্য করোনা শনাক্ত করতে দেরী হচ্ছে, ফলে শনাক্ত করার পর চিকিৎসার আগেই অনেক রোগী মারা যাচ্ছে।
আগে যেখানে ঠান্ডা লাগা,হাচি, কাশি, সর্দি, জ্বর-ভাব দেখা দিত এবার সেখানে তীব্র তাপমাত্রা, শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে। এবং খুব দ্রুত অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হচ্ছে।
এত রোগীর জন্য দ্রুত অক্সিজেনের সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় অনেকে মারা যাচ্ছেন। অনেক রোগীর অবস্থা এত খারাপ হচ্ছে যে, তারা অক্সিজেন গ্রহন করতে পারছেন না।
বিশেষ কথা
কোন রকম অসুবিধা বা উপরে দেওয়া শারীরিক কোন প্রবলেম হলে নিজেদের থেকে ওষুধপত্র বা উপচারে সময় নষ্ট করবেন না। সরাসরি নিকটবর্তী হাসপাতালে বা ফ্যামিলি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনার এক-এক সেকেন্ডের দাম অনেক তাই কোনভাবে সময় নষ্ট করবেন না।
বিশ্বজুড়ে চলছে মহামারী করোনা। লকডাউন দিয়েও এর বিস্তার রোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। আমাদের দেশে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি মহামারী আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন রেকর্ড সংখ্যক মানুষ মৃত্যুবরণ করছে।
এ থেকে বাচতে আমাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। নিজেদের সতকর্তা সর্বোচ্চ পর্যায়ের থাকলে এই রোগ থেকে বাচা সম্ভব। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রচুর ফল ও ভিটামিন সি রাখুন।
প্রচুর জল খান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। মুখে মাস্ক পরিধান করুন, হাত নিয়মিত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন। যেসব হসপিটালে অক্সিজেন সিলিন্ডার পর্যাপ্ত আছে সেখানকার খোঁজ রাখুন।
আশা করি মহামারী করোনার নতুন লক্ষণ ও নতুন তথ্যগুলো আপনাদের জানাতে পেরেছি। পোস্টটির বিষয়ে কোন তথ্য জানানোর হলে বা কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করুন। আমরা অবশ্যই তথ্য জানিয়ে আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।