বরলক্ষ্মী ব্রত 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Varalakshmi Vratam 2024: History and Significance

বরলক্ষ্মী ব্রত 2024 (Varalakshmi Vratam 2024 Date Time and Significance) 2024 বরলক্ষ্মী ব্রত ইতিহাস এবং জানুন বরলক্ষ্মী ব্রত কেন পালন করা হয়? বরলক্ষ্মী ব্রত তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য বরলক্ষ্মী ব্রত গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

বরলক্ষী পূজা অথবা বরলক্ষ্মী ব্রত দক্ষিণ ভারতের খুবই জনপ্রিয় একটি উৎসব। লক্ষ্মীকে স্মরণ করে এই পূজা অর্চনা করা হয়ে থাকে। তাছাড়া আমরা সবাই জানি যে দেবী লক্ষী হলে ভগবান বিষ্ণুর পত্নি অথবা স্ত্রী। সেই অনুসারে সংসারে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি, ধন সম্পদ বৃদ্ধির জন্য পালন করা হয় বর লক্ষী ব্রত।

বরলক্ষ্মী ব্রত ইতিহাস ও তাৎপর্য - Varalakshmi Vratam History and Significance
2024 বরলক্ষ্মী ব্রত ইতিহাস ও তাৎপর্য – 2024 Varalakshmi Vratam History and Significance

বিশ্বাস করা হয় যে কেউ যদি বরলক্ষ্মীর এই ব্রত করেন তবে এটি হয় আটটি লক্ষীর ব্রতের সমান। সেই আটটি দেবদেবী হলেন, পৃথিবী, সম্পদ, শিক্ষা, প্রেম, খ্যাতি, শান্তি, আনন্দ এবং শক্তি।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই বরলক্ষ্মী ব্রতর ইতিহাস সম্পর্কে: 

ভারলক্ষ্মী অথবা বরলক্ষ্মী  ব্রতর ইতিহাস 2024:

কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, প্রাচীন মগধের কুন্ডিন্যপুর নামে একটি শহরে চারুমতি নামে একজন মহিলা বাস করতেন। সেই মহিলার পরিবারের প্রতি তার ভক্তি দেখে প্রভাবিত হয়ে দেবী মহালক্ষী তার স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন, এবং তাকে বরলক্ষ্মীর উপাসনা করার জন্য বলেছিলেন। শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা রাতের পূর্ববর্তী শুক্রবারে এই ব্রত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

চারুমতি তার পরিবারকে এই স্বপ্নে যা যা দেখেছেন সেগুলি ব্যাখ্যা করে বলতে থাকেন। তা শুনে পরিবারের সকলেই খুবই উৎসাহিত হয়ে ওঠেন পূজার জন্য। গ্রামের আরো অনেক মহিলারাও তার সাথে এই পূজায় যোগ দিয়েছিলেন এবং দেবীর নানান ধরনের মিষ্টির নৈবেদ্য অর্পণ করা হয়েছিল।

হিন্দু শাস্ত্রে আরেকটি কাহিনী অনুসারে বড়লক্ষ্মী ব্রতর উৎপত্তি ভগবান শিব এবং পার্বতীর মধ্যে খেলার, পাশা খেলার সাথে জড়িত।

এছাড়া বিবাহিত মহিলারা এই ব্রত খুবই বিশ্বাস ও নিষ্ঠার সাথে পালন করে থাকেন। এদিন সকালে ব্রত পালনকারীরা তাড়াতাড়ি স্নান সেরে নেন এবং দিনের অর্ধেকটা সময় পর্যন্ত উপবাস করে থাকেন।

এই ব্রত পালন করার মধ্যে দিয়ে সম্পদ ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায় সংসারে। এই স্বপ্নের কথা শুনে গ্রামের আরো অন্যান্য মহিলারা ব্রত পালন করতে উৎসাহিত হয়ে পড়েন। তারপর থেকে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এই বরলক্ষ্মী ব্রতকথা।

অন্নপূর্ণা পূজা ইতিহাস ও তাৎপর্য

বিবাহিতদের জন্য বিশেষ ব্রত এই বরলক্ষ্মীর ব্রত:

এই বরলক্ষ্মীর মত শুধুমাত্র বিবাহিত রাই পালন করতে পারবেন। কুমারি মেয়েদের জন্য এই ব্রত নিষিদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শাস্ত্র অনুসারে এই পুজো বা ব্রতটি শুধুমাত্র বিবাহিত মহিলারা পালন করতে পারবেন, দক্ষিণ ভারত এবং মহারাষ্ট্রের বিবাহিত মহিলারা তাদের স্বামী দীর্ঘায়ু, পরিবারের কল্যাণ ও ধনসম্পত্তি সমৃদ্ধির জন্য উপবাস ও অনেক আচার অনুষ্ঠান পালন করার মধ্য দিয়ে এই পূজা ও ব্রত করে থাকেন।

তার পাশাপাশি বিবাহিত পুরুষরাও তাদের পরিবারের সুখ, শান্তি এবং সমৃদ্ধির জন্য এই ব্রত করে থাকেন। স্বামী স্ত্রী দুজনেই একসাথে এই পুজো করলে তারা মা লক্ষ্মীর বিশেষ আশীর্বাদ পায় বলে জানা যায়।

বরলক্ষ্মীর পূজার জন্য যে জিনিসগুলি প্রয়োজন পড়বে সেগুলি সম্পর্কে জানা যাক:

  • এই পূজা করার জন্য দেবী লক্ষ্মীর প্রতিমা অথবা ছবি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে আপনাকে দেবী লক্ষ্মীর প্রতিমা স্থাপিত করতে হবে, অথবা ছবি রাখলেও হবে।
  • যে কোন ব্রত ও পূজায় চন্দন একটি শুভ জিনিস। সেই কারণে দেবতাকে সাজানোর জন্য চন্দন বাটা ব্যবহার করতে হবে, এই পূজায় ব্যবহৃত সমস্ত জিনিসকে শুদ্ধ করার কাজও ব্যবহার করা হয়।
  • পুজার জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল কুমকুম অথবা সিঁদুর। এই পূজাটি বিবাহিত মহিলারা করে থাকেন যেহেতু, তাই দেবী লক্ষ্মী বিবাহিত মহিলাদের প্রতীক, কুমকুম দেবীকে সাজানোর জন্য ব্যবহার করা হয়, অথবা আপনি সিঁদুর ও ব্যবহার করতে পারেন।
  • নারকেল হলো এমন একটি শুভ জিনিস যা প্রতিটি পুজোতে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া এটি একটি পবিত্র ফল হিসেবে মনে করা হয় অনেক দিন আগে থেকে। একটি কলসি অথবা একটি ধাতব ও পাত্রের উপরে ছাড়ানো নারকেল রাখতে হবে।
  • আমের পাতা অথবা পাঁচটা ও সাতটা আম পাতাযুক্ত আমের ডোগ ঘটের মুখে রাখতে হবে। আমের পাতার মালা করে পুজোর জায়গাটি সাজানোর জন্য ব্যবহার করতে হবে।
  • অনেক গৃহে আমের পাতার মালা দিয়ে প্রধান প্রবেশদ্বারটি সাজানো হয়। যা কিনা দেখতে সুন্দর লাগার পাশাপাশি এই দিনটিকে আরো বেশি শুভ করে তোলে।
  • এই শুভ দিনে ফুল ও আমের পাতা দিয়ে নিজেদের ঘর সাজিয়ে রাখুন।
  • এই পুজোয় দেবী লক্ষ্মী প্রিয় যে খাবারগুলি রয়েছে সেগুলি নৈবেদ্য হিসেবে দিতে হবে। তার মধ্যে কয়েকটি হল মুরুক্কু, বাদুশা, ম্যাংগো রাইস, লেমন রাইস, কাজজায়া, তিলকুট, মসলা বড়া ইত্যাদি।

পৌষ পার্বণ ইতিহাস ও তাৎপর্য

বরলক্ষী ব্রতর ঐতিহ্য:

হিন্দু শাস্ত্রের আরেকটি কাহিনী অনুসারে বড় লক্ষ্মী ব্রতের উৎপত্তি ভগবান শিব এবং পার্বতীর মধ্যে পাশা খেলার সাথে জড়িত। দেবী পার্বতী যিনি সমস্ত খেলা জিতেছিলেন, তাই তার বিরুদ্ধে ভগবান শিব প্রতারণার অভিযোগ এনেছিলেন।

তাই তারা শিবের গণ চিত্রনেমি কে খেলা দেখার জন্য নিয়োগ করা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। চিত্রনেমি ভগবান শিবের পক্ষে রাজত্ব করেছিলেন অর্থাৎ তিনি শিবের পক্ষে কথা বলেছিলেন এবং তা থেকে দেবী পার্বতী খুবই রেগে যান এবং তাকে কুষ্ঠ রোগী হওয়ার অভিশাপ দেন।

শিব পার্বতী কে চিত্রনেমি কে ক্ষমা করে দেয়ার কথা বলেন, তাতে পার্বতী বলেন, তিনি যদি ধার্মিক মহিলাদের দ্বারা বরলক্ষ্মী পূজা অথবা ব্রত দেখেন তাহলে এই অভিশাপ প্রত্যাহার করতে রাজি হবেন। আর সেখান থেকে এই বরলক্ষ্মী ব্রতর ঐতিহ্য চলে আসছে আজও।

এছাড়াও লক্ষী হলেন সম্পদের ধন-সম্পদের দেবী। সেই কারণে নিষ্ঠা ভরে তার ব্রত পালন করলে সংসারে ধন-সম্পত্তি বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে যায়। সেই কারণে সমস্ত বিবাহিত মহিলা ও পুরুষরা এই ব্রত পালন করে থাকেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top