অন্নপূর্ণা পূজা 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Annapurna Puja 2024: History and Significance

অন্নপূর্ণা পূজা 2024 (Annapurna Puja 2024 Date Time and Significance) 2024 অন্নপূর্ণা পূজার ইতিহাস এবং জানুন অন্নপূর্ণা পূজা কেন পালন করা হয়? অন্নপূর্ণা পূজার তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য অন্নপূর্ণা পূজার গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

আমরা সবাই জানি যে, বাঙালি দের  বারো মাসে তেরো পার্বণ। তাই প্রতিমাসে কোন না কোন উৎসব লেগেই আছে। তেমনি একটি পূজা পার্বণের মধ্যে অন্নপূর্ণা পূজার কথা আমরা সকলেই জানি। যেখানে আমাদের সকলের প্রধান খাবার অন্ন অথবা চাল/ ভাত, আর সেই অন্নের দেবী অন্নপূর্ণার পূজা করে আমরা সকলেই তার আশীর্বাদ প্রাপ্ত করে থাকি।

হিন্দু পুরাণ সহ প্রাচীন নানা রকম গ্রন্থে অন্নপূর্ণা পূজার বর্ণনা সবিস্তারে পাওয়া যায়। সেখানে অন্নপূর্ণা দেবীকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রকমের কাহিনী বর্ণিত আছে। অন্নপূর্ণা একজন হিন্দু দেবী, তার অপর নাম ছিল অন্নদা। তিনি শক্তির একটি রূপ বিশেষ। অন্নপূর্ণা দ্বুজা অর্থাৎ অন্নপূর্ণা দেবীর দুটি হাত, তার এক হাতে অন্যপাত্র, তিনি রক্তবর্ণা।

অন্নপূর্ণা পূজা ইতিহাস ও তাৎপর্য - Annapurna Puja History and Significance
অন্নপূর্ণা পূজা 2024 ইতিহাস ও তাৎপর্য – Annapurna Puja 2024 History and Significance

অন্নপূর্ণা দেবীর বর্ণনা করতে গেলে বলা যায় যে, অন্ন দিয়ে যিনি সকলের দুঃখ, দারিদ্র দূর করেন, তিনিই হলেন দেবী অন্নপূর্ণা। অন্নপূর্ণার এক হাতে থাকে অন্ন পাত্র আর অন্য হাতে থাকে একটি হাতা। তার মাথায় নবচন্দ্র, একপাশে ভূমি ও অন্যপাশে শ্রী। দেবীর দুর্গা/পার্বতীর আরেকটি রূপ হল অন্নপূর্ণা।

পূরণের ঘটনা, কাহিনী অনুসারে চৈত্র মাসে শুক্লা অষ্টমী তিথিতে কাশিতে আবির্ভূত হয়েছিলেন দেবী অন্নপূর্ণা আর সেই সূত্র ধরেই এই তিথিতে দেবীর আরাধনা করা হয়। কিভাবে এই পূজার প্রচলন শুরু হয় তার পিছনে রয়েছে পুরানের অনেক কাহিনী।

বাসন্তী পূজা ইতিহাস ও তাৎপর্য

অন্নপূর্ণা দেবীর পৌরাণিক কাহিনী 2024: 

হিন্দু ধর্ম অনুসারে জানা যায় যে, ভগবান শিবের সঙ্গে ঝগড়া করার পর এই দিনটিতে দেবী পার্বতী কালসা পর্বত থেকে চলে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল নিজের প্রয়োজনের খাবার টুকু। তার অবর্তমানে / অনুপস্থিতিতে পৃথিবী জুড়ে দেখা যায় দুর্ভিক্ষ। এটা দেখে ভগবান শিব খাবারের গুরুত্ব টের পান এবং বারানসির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান।

2024 শুভ অন্নপূর্ণা পূজার শুভেচ্ছা বার্তা

বারানসি তখন পৃথিবীর একমাত্র জায়গায় যেখানে খাবার পাওয়া যেত। সেখানে ভিক্ষার বাটি নিয়ে দেবী পার্বতীর সামনে গিয়ে হাজির হন শিব। দেবী আরো অন্যান্য দের সাথে সাথে ভগবান শিব কেও খাবার দিয়েছিলেন, সেই থেকেই দেবী পার্বতী পরিচিত হয়ে যান অন্নপূর্ণা নামে।

আবার অন্য দিকে আরেকটি কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, ভগবান শিব বিশাল দুর্ভিক্ষের পরে ভিক্ষুক হিসেবে আবির্ভূত হন, তখন দেবী পার্বতী সকলকে খাবারের আশীর্বাদ করার জন্য অন্নপূর্ণার রূপ ধারণ করেন, অথবা অন্নপূর্ণা অবতার গ্রহণ করেছিলেন।

জামাই ষষ্ঠী ইতিহাস ও তাৎপর্য

অন্নপূর্ণা পূজার প্রচলন কিভাবে হয় বাংলায়?

বাংলাতে অন্নপূর্ণা পূজার প্রচলন শুরু নিয়ে কাহিনী রয়েছে। জানা যায় যে, অন্নপূর্ণা দেবীর পুজো বঙ্গদেশে সূচনা করেন রাজা মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের পূর্বজ ভবানন্দ মজুমদার। দেবী অন্নদার অর্থাৎ অন্নপূর্ণা দেবীর কৃপাতে সম্রাট জাহাঙ্গীরের থেকে তিনি রাজা উপাধি লাভ করেছিলেন।

যদিও অন্নদা মঙ্গলে অন্য গল্প রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, নবাব ও মুর্শিদ কুলি খাঁ এর কাছে নির্ধারিত দিনে কর বা রাজত্ব মেটাতে না পারার কারণে দুর্গাপূজা চলাকালীন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় মুর্শিদাবাদের বন্দী হন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এর দুর্গাদর্শন না হওয়ার কারণে অন্নপূর্ণা সাক্ষাৎ দর্শন দিয়েছিলেন রাজাকে। আর সেই থেকেই বাংলাতে অন্নপূর্ণা অথবা অন্নদা পুজোর সূচনা বলে মনে করেন অনেকে।

দেবী দুর্গার বিভিন্ন রকমের রূপ এর পূজার প্রচলন রয়েছে বাংলায়। তাই এই অন্নপূর্ণা রূপে তিনি পূজিত হয়ে আসছেন অনেকদিন আগে থেকেই। অন্নপূর্ণা দেবীর কৃপায় শস্য ক্ষেত ভরে ওঠে বলে অনেকের ধারণা। আর সেই কারণে এখনো পর্যন্ত অনেক বনেদী বাড়ীতে অন্নপূর্ণা দেবীর পূজা হয়। দুর্গাপূজার মতোই আয়োজন, আরম্বর এর মধ্যে দিয়ে অন্নপূর্ণা দেবীর পূজা ততখানি ঐতিহ্য বহন করে যতখানি ঐতিহ্য বাঙালিদের দুর্গাপুজো বহন করে থাকে।

দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে অন্নপূর্ণা যেমন সকলের খাবার দিয়ে ক্ষুধা মিটিয়ে ছিলেন, তেমনি যাতে কোনো কারণে খাবারের অভাব না হয় সেই উদ্দেশ্যে অন্নপূর্ণা দেবীর পূজা এখনো পর্যন্ত ধুমধাম ভাবে পালন করা হয়। অনেকে দেবীর মূর্তি গড়িয়ে এই পূজা করে থাকেন আবার এমন ছবিও দেখে থাকবেন যে, যেখানে শিব ভিক্ষুক রূপে ভিক্ষা করছেন আর অন্নপূর্ণা দেবী ভিক্ষারত শিব কে অন্ন প্রদান করছেন।

পৌষ পার্বণ ইতিহাস ও তাৎপর্য

অন্নপূর্ণা পূজার তাৎপর্য 2024:

চৈত্র মাসের শুক্লাষ্টমী তিথিতে অন্নপূর্ণার পূজা করা হয় এবং নবদ্বীপ ধামে রাস পূর্ণিমা তিথিতে বউবাজার বারোয়ারি অন্নপূর্ণা পূজা পালন করা হয়। এছাড়া হিন্দু ধর্ম অনুসারে একটা বিশ্বাস আছে যে, অন্নপূর্ণার পূজা করলে ঘরে কখনোই অন্নের অভাব হয় না। যার ফলে অনাহারে দিন কাটানোর মতো পরিস্থিতি কখনোই তৈরি হবে না।

প্রতিটি উৎসবের কোন না কোন কাহিনী, তাৎপর্য, ইতিহাস তো আছেই। সেই অনুসারে এখনো পর্যন্ত হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সেই ভাবে পূজা-অর্চনা করে থাকেন সংসারে উন্নতি সাধনের জন্য। তবে অন্নপূর্ণা পূজা দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতিকে ভালো করে আশীর্বাদ প্রদান করার মাধ্যমে সকলের খাবার জোটাতে শক্তি যোগায়।

এছাড়া অন্নপূর্ণা পূজা উৎসবে পরিণত হয়েছে। যেখানে বড় থেকে ছোট সকলে এই পূজার পাশাপাশি আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন। ফল, ফুল, মিষ্টি সমারোহে তার সাথে থাকে ধান চাল, এ গুলি দিয়ে অন্নপূর্ণা পূজা সম্পন্ন করা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top