পৌষ পার্বণ 2023 (Poush Parban 2023 Date Time and Significance) 2023 পৌষ পার্বণের ইতিহাস এবং জানুন পৌষ পার্বণ কেন পালন করা হয়? পৌষ পার্বণের তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য পৌষ পার্বণের গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
আমরা সকলেই জানি যে, পৌষ পার্বণ হল পিঠে পুলির উৎসব। যারা মিষ্টি খেতে একেবারেই পছন্দ করেন না, তারাও কিন্তু এই পৌষ পার্বণের জন্য অধীর আগ্রহে থাকেন। কেননা এটি একটি বাঙালির সুন্দর শীতকালীন উৎসব।
যার মধ্যে দিয়ে নতুন শস্য ওঠার সাথে সাথে বিভিন্ন রকমের পিঠা পুলি দিয়ে, ঘরকে চালের গুঁড়ো দিয়ে আলপনা করে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলার যে পরিবেশটা, সেটা অনেকটাই মানুষকে আকর্ষণ করে।
পৌষ পার্বণের ইতিহাস 2023:
এছাড়া মকর সংক্রান্তি আর পৌষ পার্বণের এমন অনেক রহস্য রয়েছে, যা নিয়ে বাঙালির উত্তেজনার শেষ নেই। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে পৌষ পার্বণ হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্বণ। পৌষ মাসের শেষ দিনটি হল পৌষ সংক্রান্তি, বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন এই উৎসব পালন করা হয়।
এছাড়া ভারতীয় সংস্কৃতিতে উত্তরায়নের সূচনা হিসেবে পরিচিত একে শুভ সময় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই দিন বাঙালিরা বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকেন, তার মধ্য দিয়ে পিঠা খাওয়া, ঘুড়ি ওড়ানো, হলো সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সারাদিন ঘুড়ি ওড়ানোর পর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে বাজি ফাটিয়ে, ফানুশ উড়িয়ে উৎসবের সমাপ্তি করা হয়। বহুদিন আগে থেকে এই দিনটি কৃষিজীবী বাঙালির বড় আনন্দের দিন। নতুন ধান ঘরে তোলার উৎসব, প্রাচীন হিন্দুরা আগে এই দিনটিতে পরলোকগত পূর্বপুরুষ, বাস্তু দেবতার উদ্দেশ্যে পিঠা, পায়েস নিবেদন করতেন।
তাছাড়া আগের দিন গৃহস্থ বাড়ির উঠানে আশেপাশের ঘরের দরজায় জানালার আশেপাশে ঘরের মেঝেতে চালের গুড়া দিয়ে আলপনা করা হতো এবং আরো অনেক কিছু ফুল, পাতা, কলকা, এঁকে এই দিনটিকে আরো বেশি স্মরণীয় করা হতো। আর এই প্রথা এখনো পর্যন্ত বর্তমানে চলছে।
এই সময় নতুন শস্য অথবা নতুন ধান প্রতিটি বাঙালির ঘরে খামারে ওঠে। তাই নতুন ফসল ওঠার আনন্দে এই পৌষ পার্বণ উৎসবটি বেশ জোরালো হয় বলে মনে করা হয়। এই সময় অনেকেই ভাবেন যে, নতুন শস্যের সাথে সাথে লক্ষীও ঘরে প্রবেশ করবে। তাছাড়া আঞ্চলিক ভাষায় যাকে “আউনি বাউনি” পুজো বলা হয়।
এই পুজোর তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় আগে থেকেই। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে পালিত একটি শস্য উৎসব যার নাম পৌষ পার্বণ। এই উৎসবের ক্ষেতের পাকা ধান প্রথম ঘরে তোলা উপলক্ষে কৃষক পরিবারের বিভিন্ন রকমের পালনীয় অনুষ্ঠান করে থাকেন, এই পৌষ পার্বণের মধ্যে দিয়ে।
পৌষ পার্বণের তাৎপর্য 2023:
হেমন্ত কালে এমন ধান ঘরে প্রথম তোলার প্রতিক হিসেবে কয়েকটি পাকা ধানের শিষ ঘরে এনে কিছু নির্দিষ্ট আচরণ অনুষ্ঠান পালন করা হয়। বাঙালি মনে করেন যে, এই দিনটিতে লক্ষী স্বয়ং নতুন শস্যের সাথে সাথে গৃহস্থের বাড়িতে প্রবেশ করে।
তাছাড়া পূর্বপুরুষ দের মনে করে নতুন শস্যের বিভিন্ন রকমের পিঠা এবং খাবার তৈরি করে তাদেরকে নিবেদন করা হয়। এর সাথে সাথে পূজা, পার্বণ, তো রয়েছেই। ধান চাল কে লক্ষ্মী হিসেবে মনে করা হয়। তাই চালের গুঁড়ো দিয়ে লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ, আলপনা, দিয়ে দেবী লক্ষীকে ঘরে আহ্বান জানানো হয়, যাতে ঘরে ধন-সম্পত্তি বৃদ্ধি পায়।
এই উৎসবটি পবিত্র ও সৌভাগ্যদায়ক হিসেবে মনে করা হয়। তাছাড়া উৎসবটি শীতের মাঝামাঝি সময়ে পালন করা হয় বলে, শীতকালে যে খেজুরের গুড় হয় সেটা দিয়ে পিঠে পুলি তৈরি করা এবং খাওয়া বেশ সুন্দর একটা অনুভূতি দেয়।
আতপ চাল ঢেঁকিতে গুড়ো করে আগেকার দিনের মানুষ পিঠে পুলি তৈরি করতেন, কিন্তু বর্তমানে এখন অনেক মেশিন উঠেছে, যার মাধ্যমে খুবই কম সময়ের মধ্যে, কম কষ্ট করে চালের গুঁড়ো তৈরি করে তা দিয়ে বিভিন্ন রকমের পিঠে পুলি তৈরি করা হয়। অনেকখানি মজাদার ছিল আগেকার দিনের পৌষ পার্বণ।
ঢেঁকিতে চাল গুঁড়ো করার আমেজ এখনো কিছু কিছু জায়গায় লক্ষ্য করা যায়। পাটিসাপটা, নারকেলের পিঠা, দুধপুলি, ভাজা-পুলি, সরভাজা, ভেজানো দুধপুলি, ঘন দুধে ভেজানো দুধপুলি, ক্ষীরপুলি, নারকেল কোরা, চিনির পুর দেওয়া মুগ ডালের পিঠা, বিভিন্ন ধরনের পিঠা এই উৎসবকে মুখরিত করে তোলে।
অনুষ্ঠান:
পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তির পার্বণ মানে পিঠাপুলির উৎসব। তার সাথে সাথে বড় বড় ঘুড়ি তৈরি করে আকাশে ওড়ানো এই দিনটিকে আরো বেশি স্মরণ করিয়ে দেয়। বড় বড় ছেলেরা এবং ছোট ছোট বাচ্চারাও এই ঘুড়ি তৈরি করে বা কিনে নিয়ে আকাশে উড়িয়ে থাকে। বিভিন্ন রকমের স্বপ্ন, মনের ইচ্ছা, ঘুড়ি ওড়ানোর মধ্যে দিয়ে দেবতার কাছে পৌঁছানোর একটি রূপক অথবা প্রতিক হিসেবে কাজ করে।
গ্রামাঞ্চলের এবং উপকূলীয় অঞ্চলে প্রধান আকর্ষণ হিসেবে মোরগ লড়াই অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে মানুষ ভিড় জমিয়ে সেই মোরগ লড়াই দেখে থাকেন। ভারতের বীরভূমের কেন্দুলী গ্রামে এই দিনটিকে ঘিরে ঐতিহ্যময় জয়দেব মেলা হয়।
যেখানে বাউল গান হলো সেই মেলার অন্যতম আকর্ষণ। এই দিনটিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সাগরদ্বীপে মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে কপিল মুনির আশ্রমকে কেন্দ্র করে পূর্ণ স্নান এবং বিরাট মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রাচীন মহাকাব্য মহাভারতেও এই দিনের তাৎপর্য সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই সামাজিক ও ভৌগোলিক গুরুত্ব ছাড়াও এই দিনটি ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে অনেকখানি।
তাছাড়া ছোট থেকে বড় সকলেই পৌষ পার্বণ উৎসবের জন্য একেবারে মুখিয়ে থাকেন। কেননা বিভিন্ন ধরনের পিঠার সাথে সাথে খেজুরের পাতলা গুড় খাদ্য রসিকদের জন্য একেবারে অমৃত সমান। প্রতিবছর এই পৌষ পার্বণ বাঙালিকে উৎসাহিত করে তোলে, এই সমস্ত আচার অনুষ্ঠান গুলি পালন করার জন্য।
ঘরে নতুন শস্য তোলার সাথে সাথে পূর্বপুরুষ দের উপলক্ষে শস্য নিবেদন, পিঠাপুলি, ঘুড়ি উড়ানো, চালের গুড়োর আলপনা, সবকিছু মিলিয়ে পৌষ পার্বণ শীতের দিনে এক মনোমুগ্ধকর উৎসব।