মকর সংক্রান্তি 2023 (Makar Sankranti 2023 Date Time and Significance) 2023 মকর সংক্রান্তির ইতিহাস এবং জানুন মকর সংক্রান্তি কেন পালন করা হয়? মকর সংক্রান্তির তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য মকর সংক্রান্তির গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
প্রতিমুহূর্তে উৎসবের আমেজে ভরে ওঠে বাঙালির জীবন। সেই ক্ষেত্রে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে মকর সংক্রান্তি একটি বিশেষ দিন, যা কিনা পৌষ সংক্রান্তি/পৌষ পার্বণ হিসেবে অনেকেই চেনেন। এই দিন পিঠে-পুলি তৈরি করা, খাওয়া-দাওয়া, ঘুড়ি ওড়ানো এই সমস্ত বিষয় গুলির সাথে সাথে আরো অন্যান্য কিছু রীতি নীতি পালন করার মধ্যে দিয়ে মকর সংক্রান্তি পালন করা হয়।
পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরার মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন রকমের তিথি, নক্ষত্র, দিন, ক্ষণ, আমরা নির্ধারণ করি। এই ক্ষেত্রে মকর সংক্রান্তীয় এমনই একটি বিষয়, যেটি হল নিজের কক্ষ পথ থেকে সূর্যের মকর রাশিতে পৃথিবীর প্রবেশ কে বোঝানো হয়।
আর এমন ভাবে সূর্যের একটি রাশি থেকে অন্য একটি রাশিতে প্রবেশ করাকে বোঝানো হয়ে থাকে এই সংক্রান্তি দিয়ে। যেখানে ১২টি রাশি অনুযায়ী এই রকম সর্বমোট ১২টি সংক্রান্তি রয়েছে তার মধ্যে মকর সংক্রান্তি হল একটি।
তবে জানা যায় যে, সাধারণ মানুষ যেমন রাত্রে দরজা-জানলা সব বন্ধ করে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন, তেমনি কিন্তু দেবতারাও রাত্রে অর্থাৎ দক্ষিণায়নে সবকিছু বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন। এই সময় বাইরে থেকে প্রবেশ করার কোনো রকম সুযোগ থাকে না।
এক কথায় বলা যেতে পারে দক্ষিণায়নে দেবালকে সম্পূর্ণ রূপে সব কিছু বন্ধ থাকে। আবার দেবতা দের রাত পৌষ সংক্রান্তির দিন শেষ হয় বলে পরবর্তী সূর্য উদয়ের বন্ধ মুহূর্ত থেকে দেব দেবতাদের দিন শুরু হয়।
আমরা সকলেই জানি যে, মানুষ যা করতে পারে না দেবতারা তা অতি সহজে করে দিতে পারেন। তাই উত্তরায়ন পদার্পণের শুভক্ষণে এবং দেবতা দের জাগ্রত হওয়ার পূর্ণ লগ্নে ব্রহ্ম মুহূর্তে স্নান সম্পূর্ণ পূর্বক আহার গ্রহণ, সর্বশেষে ফুল, তুলসী, সাধ্যমত প্রসাদ নিবেদন করে, পূজা, প্রার্থনা, যজ্ঞ, অতিথি সেবা, ইত্যাদির মাধ্যমে ভগবত ধামে যাওয়ার পূণ্য অর্জন করার চেষ্টা করা হয়।
আবার অন্য দিক থেকে দেখতে গেলে, মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের বিশ্ব বিখ্যাত বীর সর্বত্যাগী ও জিতেন্দ্র মহাপুরুষ ভীষ্মের মহাপ্রয়াণের স্মৃতির জন্য উত্তরায়ণ সংক্রান্তি আরও মর্যাদা পূর্ণ হয়ে রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে কৌরব পক্ষের চারজন সেনাপতির মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম সেনাপতি। উভয় পক্ষের ১৮ দিন যুদ্ধের মধ্যে দশম দিনে সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগে পান্ডব পক্ষের সেনাপতি অর্জুনের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে পড়েন ভীষ্ম।
তারপর রথ থেকে মাটিতে পড়ে যান। কিন্তু তিনি মাটিতে তার শরীর স্পর্শ করার নি। টানা ৫৮ দিন পর্যন্ত তীর এর সজ্জায় শুয়ে উত্তরায়নের অপেক্ষা করে পৌষ সংক্রান্তির দিনে দেব বলে দেহত্যাগ করেছিলেন। শাস্ত্রমতে ভীষ্ম দেব মৃত্যুর পরে ভগবত ধামে যান নি।
তিনি নাকি মহর্ষি বশিষ্ঠের অভিশাপ প্রাপ্ত হয়ে ইহলোকে মানুষ হিসাবে কৃতকর্ম ভোগের জন্য আবার জন্ম নিয়েছিলেন। তাই তার পুনরায় দেবালকেই যাবার কথা কারণ তিনি সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। দক্ষিণায়নের সময় দেবা লোকে রাত্রি হয় সে সময় সেখানকার সবকিছু বন্ধ থাকে।
এছাড়া মকর সংক্রান্তি অথবা পৌষ সংক্রান্তি বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ উৎসবের দিন। বাংলায় পৌষ পার্বণ মানে পিঠে, পুলি, ঘুড়ি ওড়ানো, ইত্যাদি অনুষ্ঠানের সাথে সাথে বাজি ফোটানো, ফানুস ওড়ানো সবকিছু মিলিয়ে মানুষ এই দিনটি খুবই উৎসবের সাথে পালন করেন।
সবদিক থেকে বিচার বিবেচনা করে বলা যায় যে, মকর সংক্রান্তি হিন্দুদের দ্বারা সুখ ও সমৃদ্ধির দিন হিসেবে বিবেচিত করা হয়। বিশেষ করে বিশ্বাস করা হয় যে, এই দিনে গঙ্গা স্নান করা খুবই শুভ কাজ বলে মনে করা হয়। ভক্তরাও সূর্য ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এবং তার উষ্ণ এবং উজ্জ্বল রশ্মি দিয়ে আমাদের আশীর্বাদ করার জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকেন।
এছাড়া প্রকৃতি আমাদের উপরে অনেক আশীর্বাদ প্রদান করে, তার জন্য আমরা বিভিন্ন ভাবে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে থাকি। তবে আমাদের এই সামান্য কৃতজ্ঞতা প্রকৃতির কাছে কিছুই নয়। যেটাকে আমরা অপার শক্তি হিসেবে মনে করি সেই অপার শক্তি আমাদের জীবন যাত্রাকে স্বাভাবিক ভাবে চলার জন্য অনেক খানি সহযোগিতা করে।
সংসারের আয়, উন্নতি, শারীরিক সুস্থতা, ধন-সম্পত্তি বৃদ্ধি, সবকিছুর পিছনে কোন না কোন শক্তি, ঈশ্বরের আশীর্বাদ থাকে, সেটা আমরা সকলেই বিশ্বাস করি। আর এই গুলি পালন করার মধ্যে দিয়ে আমরা অনেক খানি স্বস্তি বোধ ও করি। এছাড়া মকর সংক্রান্তি অনেকেই বেশ ঐতিহ্যবাহী হিসাবে পালন করে থাকেন।
এই দিন উপবাসও করেন অনেকেই। তারপর ফল আহার করে সেই উপবাস ভঙ্গ করেন। ঈশ্বরের উপাসনার সাথে সাথে মকর সংক্রান্তি, পৌষ সংক্রান্তি, পিঠে পুলির উৎসব সবকিছু মিলিয়ে মকর সংক্রান্তি বাঙালি দের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হিসেবে পরিচিত।
হালকা হালকা শীতের আমেজ, ঘাসের আগায় শিশির জমা, তার ওপরে শীতের আমেজ গায়ে মেখে পিঠে, পুলি তৈরি করা, বিতরণ করা, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে খাওয়া, মকর সংক্রান্তি অথবা পৌষ সংক্রান্তি বাঙালি দের জীবনে অনেকদিন আগে থেকে প্রথা অনুযায়ী চলে আসছে। এই দিন নতুন শস্য দিয়ে পূর্বপুরুষ দের নৈবেদ্য অর্পণ করা হয়, নতুন শস্য দিয়ে পূজা করা, সব কিছু মকর সংক্রান্তি অথবা পৌষ সংক্রান্তিতে একটি বিশেষ রীতি নীতি বলে মনে করা হয়।