বাসন্তী পূজা 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Basanti Puja 2024: History and Significance

বাসন্তী পূজা 2024 (Basanti Puja 2024 Date Time and Significance) 2024 বাসন্তী পূজার ইতিহাস এবং জানুন বাসন্তী পূজা কেন পালন করা হয়? বাসন্তী পূজার তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য বাসন্তী পূজার গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

সাধারণত চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের বাসন্তী পূজা হল বাঙালির আদি দুর্গাপুজো। কিন্তু আমরা বর্তমানে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে দূর্গা পুজো বেশি ধুমধাম ভাবে পালন করে থাকি। যতই আমরা আশ্বিন মাসে দুর্গাপূজা করি না কেন বাঙালির আদি দুর্গাপূজার কিন্তু হত চৈত্র মাসে।

বাসন্তী পূজা ইতিহাস ও তাৎপর্য - Basanti Puja History and Significance
বাসন্তী পূজা 2024 ইতিহাস ও তাৎপর্য – Basanti Puja 2024 History and Significance

বাসন্তী পূজা নিয়ে বিভিন্ন রকমের পুরান অনুযায়ী কাহিনী জানা যায়। আর সেই থেকে বাসন্তী পূজা আদি দুর্গাপূজা হলেও আশ্বিন মাসে আবার দুর্গোৎসব পালন করা হয়। যেটা বাঙালির সর্বশেষ্ঠ উৎসব হিসেবে পরিচিত।

অন্নপূর্ণা পূজা ইতিহাস ও তাৎপর্য

বাসন্তী পূজার ইতিহাস 2024: 

পুরান অনুযায়ী সমাধি নামে এক বৈশ্য এর সঙ্গে রাজা সুরথ বসন্তকালে ঋষি মেধসের আশ্রমে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন। যেটা পরবর্তীতে বাসন্তী পূজা নামে প্রসিদ্ধ হয়ে যায়। দেবী দুর্গার প্রথম পূজারী হিসাবে চন্ডিতে রাজা সুরথের উল্লেখ রয়েছে।

2024 শুভ বাসন্তী পূজার শুভেচ্ছা বার্তা

রাজা সুরথ সুশাসক ও যুদ্ধবীর হিসেবে খ্যাত ছিলেন। কোন যুদ্ধে নাকি তিনি কখনো হারেন নি। কিন্তু প্রতিবেশী রাজ্য একদিন তাকে আক্রমণ করলে সেই যুদ্ধে তিনি পরাজিত হয়ে যান। এই সুযোগে তার সভাসাদরাও লুটপাট চালায় তার রাজ্যে। একেবারে কাছের মানুষদের এমন আচরণ দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান রাজা সুরথ। মনের কষ্ট কমানোর জন্য বনে ঘুরতে ঘুরতে তিনি মেধাসাশ্রমে পৌঁছে যান।

সেখানে উপস্থিত ঋষি তাকে সেখানেই থাকতে বলেন। কিন্তু রাজা কোনভাবেই শান্তি পান না। এর মধ্যে একদিন তার সমাধির সঙ্গে দেখা হয়। তিনি জানতে পারেন যে, সমাধি কেও তার স্ত্রী এবং ছেলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তবুও তিনি বউ ছেলের ভালো-মন্দ এখনো ভেবে চলেছেন। তাই নিয়ে সবসময় চিন্তিত থাকেন।

এমন পরিস্থিতিতে রাজা সুরথ এবং সমাধির অবস্থা একই রকম। তারা দুজনেই তখন ভাবলেন যাদের কারণে তাদের সবকিছু হারিয়েছে। তাদের ভালো আজও তারা চেয়ে যাচ্ছেন। ঋষি কে যখন এই সমস্ত কথা খুলে বলা হয় তখন ঋষি বলেন যে, বই মহামায়ার ইচ্ছা। এরপর ঋষি মহামায়া কাহিনী বর্ণনা করে তাদেরকে শোনান।

অক্ষয় তৃতীয়া ইতিহাস ও তাৎপর্য

ঋষির উপদেশেই রাজা কঠিন তপস্যা শুরু করেন। পরে মহামায়া রাজার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে আশীর্বাদ দেন। আশীর্বাদ পেতেই বসন্ত কালের শুক্ল পক্ষে রাজা পুজো শুরু করেন। আর এই পুজো বাসন্তী পুজো নামে পরিচিত। তবে বর্তমানে এই বাসন্তী পুজো শুধুমাত্র হাতে গোনা কয়েকটি বাড়িতেই হয়ে থাকে।

বর্তমানে এমন অনেক বনেদী বাড়ি রয়েছে যেখানে এই বাসন্তী পূজা হয়। সেখানে আজও বাঙালির দুর্গাপুজোর যে আদি পূজো সেটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করা হয়। তার মধ্যে দিয়ে ভক্ত দের ভিড় চোখে পড়ার মতো। বনেদি বাড়ি ভরে ওঠে বাসন্তী পূজার উৎসবে।

আবার অন্য দিক থেকে দেখতে গেলে কৃত্তিবাসী রামায়ণ থেকে জানা যায়, শ্রীরামচন্দ্র সীতাকে উদ্ধারের জন্য রাবণের সাথে যুদ্ধে জয়লাভের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে শরৎকালে মহামায়ার আরাধনা করেছিলেন। শরৎকালের সর্বাধিক প্রচলিত এই যে দুর্গাপূজা তা হল শারদীয়া দুর্গাপুজোর মতো। এই পূজাটি অকালে হয়েছিল বলে এর আরেকটি নাম হলো অকালবোধন।

এর ঘটনা অনুসারে ১০৮ টি নীল পদ্ম ফুল দিয়ে দেবী মহামায়ার পুজো সম্পন্ন করার কথা হয়েছিল। যেখানে রামচন্দ্র ১০৮ টি পদ্ম ফুল আনলেও মহামায়া একটি পদ্মফুল চুরি করে লুকিয়ে রেখেছিলেন। তারপর অন্য কোথাও আর সেই নীল পদ্ম পাওয়া যায়নি।

এমন পরিস্থিতিতে রামচন্দ্র তার নিজের তীর ধনুক দিয়ে নিজেরই একটি নীল চোখ দেবীকে অর্পণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তখনই মহামায়া সন্তুষ্ট হয়ে রামচন্দ্রের হাত ধরে বাধা দিয়েছিলেন আর এরপর মহামায়ার আশীর্বাদ পেয়েছিলেন রামচন্দ্র।

রাম নবমী ইতিহাস ও তাৎপর্য

বাসন্তী পূজার তাৎপর্য 2024: 

কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, অনেক দিন আগে রাজারা যুদ্ধে পরাজিত না হওয়ার জন্য এক শক্তির উপাসনা করতেন। সেই হিসেবে মহামায়া কে অপার শক্তির সাথে তুলনা করা হয়, আর তার আশীর্বাদ প্রাপ্ত হলে কোন কাজেই পরাজিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই সমস্ত কাজে জয়ী হওয়ার জন্য শক্তির উপাসনা করার মধ্যে দিয়ে তারা তাদের লক্ষ্য ভেদ করতে পারতেন।

বর্তমানে এখনো কিন্তু এমন তাৎপর্য বহন করে সেটা বাসন্তী পূজা হোক, অকালবোধন হোক অথবা শারদীয়া দুর্গাপূজা। প্রতিটি মানুষের মধ্যে এমন শক্তি বিরাজমান যার উপর নির্ভর করে আপনি অসম্ভব কেও সম্ভব করে তুলতে পারেন।

বংশপরম্পরায় এখনো পর্যন্ত সেই সমস্ত রাজাদের বংশধর দের বাড়িতে অথবা এমন অনেক বনেদি বাড়ীতে চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের এই তিথিতে বাসন্তী পুজো করা হয়। যেটা সেই বনেদি বাড়ির ঐতিহ্য আর বাসন্তী পূজা কে এখনো পর্যন্ত উদযাপন করার এই যে রীতি মানুষকে অনেকখানি আকর্ষণ করে।

সমস্ত রীতি নীতি নিয়ম কানুন সবকিছুই দুর্গাপূজার মতোই পালন করা হয়। কেননা এটাই হল বাঙ্গালীদের আদি দুর্গাপূজা। যেটা পরবর্তীতে আশ্বিন মাসের মহা পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত শারদীয়ার দুর্গাপূজার হিসেবে পালন করা হয়। বাসন্তী পূজাতে ও আনন্দের সীমা একই রকম থাকে। দেবী মূর্তি থেকে শুরু করে সবকিছু দেখে আপনি অনায়াসেই বলতে পারবেন যে অসময়ের দুর্গাপূজা।

তবে যাই হোক না কেন, দেবীর আরাধনা তে সাধারণ মানুষ আনন্দ মুখরিত হয়ে ওঠেন। এই উপলক্ষে অনেক জায়গায় অনুষ্ঠান, মেলা, আরো অন্যান্য বিভিন্ন রকমের নিয়ম কানুন পালন করা হয়। এর মধ্যে দিয়ে ছোট থেকে বড় সকলেই খুব আনন্দ উপভোগ করে থাকেন। সব জায়গায় এই বাসন্তী পূজা না হলেও বেশ কিছু বনেদি বাড়িতে, মন্দিরে দেবীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে সেখানে নিষ্ঠা করে পূজা করা হয়। যেটা তাদেরকে সমস্ত রকম বিপদ থেকে রক্ষা করার শক্তি জোগায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top