উগাদি ইতিহাস ও তাৎপর্য - Ugadi History and Significance

উগাদি 2023: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Ugadi 2023: History and Significance

উগাদি 2023 (Ugadi 2023 Date Time and Significance) 2023 উগাদির ইতিহাস এবং জানুন উগাদি কেন পালন করা হয়? উগাদির তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য উগাদির গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

যেকোনো ধর্মাবলম্বীদের কাছে নববর্ষ হল একটি আনন্দের দিন, কেননা একটা বছরকে অতিক্রম করে একটি নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আনন্দ কতখানি মধুর হতে পারে, সেটা আমরা সকলেই জানি। পয়লা বৈশাখ, ফার্স্ট জানুয়ারি ইত্যাদির মতো উগাদি হল তেলেগু নববর্ষ।

তাই এই উগাদি উৎসব দক্ষিণ ভারতীয়দের কাছে একটি প্রধান উৎসব হিসেবে পরিচিত। এই উৎসব অন্ধপ্রদেশ, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানার মত বিভিন্ন রাজ্যনববর্ষ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে অনেকদিন আগে থেকে। চৈত্র মাসের প্রথম দিনে এই উৎসব পালন করা হয়, যেটা তাদের নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে পরিচিত।

উগাদি ইতিহাস ও তাৎপর্য - Ugadi History and Significance
উগাদি ইতিহাস ও তাৎপর্য – Ugadi History and Significance

এই উগাদি উৎসব দক্ষিণ ভারতের খুবই জাঁকজমক এর সাথে পালন করা হয়। কারণ বসন্তের আগমনের সাথে সাথে এই উৎসবটি কৃষকদের জন্য একটি নতুন ফসলের আগমনের উপলক্ষ ও বটে। তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, তেলেগু নববর্ষ এই উগাদি উৎসব সম্পর্কে কিছু তথ্য:-

উগাদি উৎসবের ইতিহাস 2023: 

যেকোনো উৎসবের কোন না কোন ইতিহাস থাকে, কোন একটা সময় কাল থেকে সেই উৎসব শুরু হয় আর সেটা বংশ পরম্পরা হোক অথবা সময়ের সাথে সাথে বর্তমান সময় পর্যন্ত এসে পৌঁছায় আর সেই সমস্ত কাহিনীর উপরে নির্ভর করে একটা বিশ্বাসের জোরে সেই উৎসব প্রতিনিয়ত পালন করা হয়। তেমনি উগাদি উৎসবের ইতিহাস হল এই উৎসব খুবই প্রাচীন এবং বহু শতাব্দী কাল ধরে দক্ষিণ ভারতের রাজ্য গুলিতে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালিত হয়ে আসছে।

দক্ষিণ ভারতের চন্দ্র ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বিশ্বাসী লোকেরা এই উৎসবকে নববর্ষ হিসেবে উদযাপন করেন। তাছাড়া ঐতিহাসিকদের মত অনুসারে সম্রাট সারীবাহন অথবা গৌতমী পুত্র শতকর্নের রাজত্বকালে এই উৎসব শুরু হয়েছিল। এর পাশাপাশি এই উৎসবের সময় বসন্ত সম্পূর্ণভাবে পূর্ণতা পায়, যার কারণে চারিদিকের আবহাওয়া অর্থাৎ পরিবেশ থাকে খুবই শান্ত, স্নিগ্ধ এবং মনোরম।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এই দিনটিতে ব্রহ্মা বিশ্ব সৃষ্টির সূচনা করেছিলেন এবং এই দিনে ভগবান বিষ্ণু মৎস্য অবতার নিয়েছিলেন। তার পাশাপাশি কৃষকদের জন্য একটি বিশেষ উপলক্ষ ছিল কারণ এই সময়ে তারা একটি নতুন ফসল পেতো, যা তারা তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করে ক্রয় করতো, তাই উগাধি উৎসব কে কৃষকরা সবথেকে বেশি সম্মান করে থাকে।

উগাদি উৎসবের একটা সুন্দর মানে আছে, যা হল মানুষকে সুন্দরভাবে বাঁচতে শেখায়। কেননা উগাদি উৎসব আমাদেরকে উপলব্ধি করায় যে, অতীতের সমস্ত কিছু পিছনে ফেলে ভবিষ্যতের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। এবং কোন ধরনের ব্যর্থতায় একেবারে ভেঙে না পড়ে ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা দিয়ে নতুন সূচনা করা উচিত। যার ফলে জীবন আরো বেশি সুন্দর আর গোছালো হয়ে উঠতে পারে।

উগাদী উৎসবের গুরুত্ব 2023: 

উগাদির এই উৎসব দক্ষিণ ভারতের বিশেষ গুরুত্ব বহন করে থাকে। চৈত্র মাসের প্রথম দিন এই উৎসব পালন করা হয়। যেটা এই উৎসবের গুরুত্ব আরো বেশি বাড়িয়ে তোলে। কারণ এই উৎসবের সময় বসন্ত ঋতু পরিবেশকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে। যার কারণে আবহাওয়া থাকে মনোরম।

সেই কারণে নতুন ফসল নিয়ে কৃষকরা অনেক বেশি খুশি থাকে। উগাদির এই উৎসব আমাদেরকে প্রকৃতির আরো কাছাকাছি নিয়ে আসতে সাহায্য করে। এই উৎসবে পাচাদি নামে একটি পানিয়র কথা বলা হয়েছে। যা কিনা শরীরের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর।

আমাদের শরীরকে আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে লড়াই করার জন্য এই পানীয় অনেকখানি সাহায্য করে। তার সাথে সাথে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে তোলে। তার সাথে সাথে বিশ্বাস করা হয় যে, এই উগাদী উৎসবের দিনে কোন নতুন কাজ শুরু করলে তা সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছাতে সক্ষম হবে।

উগাদি উৎসবের দিনে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যের লোকেরা নতুন কাজ শুরু করেন, যেমন ধরুন দোকান খোলেন, অনেকে নিজের স্বপ্নের বাড়ি তৈরি করার ভিত গঠন করেন, বা অনেকে গাড়ি কেনেন যেকোনো নতুন কিছু এই শুভদিনে করে থাকেন।

উগাদি উৎসবের আধুনিক ঐতিহ্য: 

প্রতিটি উৎসব এক একটি ঐতিহ্য বহন করে। বর্তমান আধুনিক সময়ে উগাদী উৎসব পালন করার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়, সেটা হল আগের তুলনায় অনেকখানি আধুনিকতার ছোঁয়া এসেছে। এখনকার ব্যস্ততার কারণে মানুষ উৎসব উপভোগ করার জন্য যথেষ্ট সময় বের করতে পারেন না। তাই আগে এই উৎসব ভালোভাবে উপভোগ করা যেত, তা নিয়ে বেশ উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে।

তবে যাই হোক সমস্ত উৎসব কে উপভোগ করার জন্য নিজেদের সমস্ত ব্যস্ততাকে উপেক্ষা করে সেই উৎসবকে উপভোগ করতে হবে। কেননা উৎসবের মধ্যে দিয়ে জীবনের এগিয়ে চলার প্রেরণা পাওয়া যায়, জীবনকে আরো বেশি সুন্দর করে গড়ে তোলার অবকাশও মেলে।

উগাদি উৎসবের বিশেষ খাবার:

উৎসব মানেই হই-হুল্লর, খাওয়া-দাওয়া, ঘোরাফেরা, তাই উগাদি উৎসবেরও তার ব্যতিক্রম হয় না। এই উৎসবে বিশেষ খাবার অনুযায়ী তেতুল, নারকেল, আম, নিম ফুল, এবং গুড় মিশিয়ে তৈরি করা হয় পাচাদি নামক একটি পানীয়। তেলেঙ্গানা, অন্ধপ্রদেশ এ এই উপলক্ষে বোভাটটু বা পোলেলু অথবা পুরান পোলি নামে একটি বিশেষ খাবার তৈরি করা হয়।

তাছাড়া তেলেঙ্গানায় এই খাবারটি বোরেলু নামে পরিচিত। এটি এক ধরনের পরোটা যা ছোলার ডাল, গমের আটা, হলুদ ও গুড় ইত্যাদি মিশিয়ে জলের সাহায্যে ভেজে ভেজে তৈরি করা হয়। আর এই খাবারটি পাচাদি পানিয়র সাথেও খাওয়া হয়।

উগাদি উৎসবের আচার অনুষ্ঠান: 

এই দিনে পূজা অর্চনা করার একটি বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। এবং তা অনুসরণ করলে এই উৎসবে ভগবানের অশেষ কৃপা পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস।

এই দিনে সকালে ঘুম থেকে উঠে দৈনন্দিন সমস্ত কাজকর্ম সেরে শরীরে ব্যাসন আর তেল মেখে স্নান করতে হবে, যেমনটা পয়লা বৈশাখে হলুদ ও নিমপাতা মেখে স্নান করার কথা বলা হয়েছে। এরপর হাতে অক্ষত, গন্ধ ফুল ও জল নিয়ে ব্রহ্মার মন্ত্র উচ্চারণ করে পূজা করতে হয়।

উগাদি উৎসব কেন পালন করা হয়?

যেহেতু দক্ষিণ ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল এই উগাদী উৎসব, তাই এটি তাদের কাছে নববর্ষের আগমন বলা যায়। উগাদি উৎসব নিয়ে অনেক বিশ্বাস প্রচলিত আছে, এমনই একটি বিশ্বাস অনুসারে যখন শিব ব্রহ্মাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে তিনি কোথাও পূজিত হবে না, তবে অন্ধ্রপ্রদেশ ও দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য রাজ্যে উগাদি উপলক্ষে শুধুমাত্র ব্রহ্মাকে পূজা করা হবে। কারণ এটা বিশ্বাস করা হয় যে, এই দিনে ব্রহ্মা মহাবিশ্বের সৃষ্টি শুরু করেছিলেন।

আর সেই কারণে এই উগাদি উৎসবের দিনটিকে কন্নড় এবং তেলেগু নববর্ষ হিসেবে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করে থাকে। এর পাশাপাশি পুরাণের কাহিনী অনুসারে ভগবান বিষ্ণু এই দিনে মৎস অবতার নিয়েছিলেন। তাছাড়া অন্যদিকে পৌরাণিক বর্ণনা অনুসারে বিশ্বাস করা হয় যে, ভগবান শ্রী রামের রাজ্য অভিষেক হয়েছিল এই উগাদি উৎসবের দিনে।

তার পাশাপাশি আবার দেখা যায় সম্রাট বিক্রমাদিত্য শকদের জয় করেছিলেন এই দিনে। এছাড়া নতুন শস্য অথবা ফসল তোলার আনন্দে কৃষকরা এই উৎসবটিকে অনেক বেশি সম্মান করে, আর ঈশ্বরের কাছে ধন্যবাদ জানিয়ে এই উৎসব পালন করা হয় খুবই জাঁকজমকপূর্ন ভাবে।

অবশেষে বলা যেতে পারে যে, উগাদি উৎসব দক্ষিণ ভারতীয়দের কাছে একটি পবিত্র পূজা অর্চনার পাশাপাশি নতুন বছরকে আগমন জানানোর উৎসব, যেখানে খাওয়া-দাওয়া, পূজা অর্চনা, আনন্দ উৎসব, নতুন কাপড় পরিধান করা সবকিছু মিলিয়ে এটি একটি জনপ্রিয় উৎসব হিসেবে পরিচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *