গুড়ি পাদওয়া 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Gudi Padwa 2024: History and Significance

গুড়ি পাদওয়া 2024 (Gudi Padwa 2024 Date Time and Significance) 2024 গুড়ি পাদওয়ার ইতিহাস এবং জানুন গুড়ি পাদওয়া কেন পালন করা হয়? গুড়ি পাদওয়ার তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য গুড়ি পাদওয়ার গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী দের মানুষের কাছে যেমন বিভিন্ন ধরনের উৎসব প্রাধান্য পায়, তেমনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী দের মধ্যে গুড়ি পাদওয়া উৎসব মারাঠি দের কাছে নতুন বছরের সূচনার উৎসব অর্থাৎ বলা যেতে পারে গুড়ি পাদওয়া মারাঠী দের নববর্ষ উৎসব।

নতুন ফসল, পুজো আর এই দিনটি মারাঠি সম্প্রদায়ের কাছে খুবই উল্লেখযোগ্য আর গুরুত্বপূর্ণ। নতুন সূচনার জন্য এই দিনটি জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালিত হয়ে আসছে অনেকদিন আগে থেকে।

গুড়ি পাদওয়া ইতিহাস ও তাৎপর্য - Gudi Padwa History and Significance
গুড়ি পাদওয়া 2024 ইতিহাস ও তাৎপর্য – Gudi Padwa 2024 History and Significance

এই উৎসবের দিন মারাঠিরা তাদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে সম্পূর্ণ ভাবে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখেন। তারপর আবির দিয়ে রঙ্গোলি তৈরি করেন। এটা একটি রীতি বলে মনে করা হয়। যেটা এই উৎসবের সাথে জড়িত। এই দিন আমের পাতা দিয়ে মালা তৈরি করা হয় যেটা ঘরের দরজায় চৌকাঠে ঝুলিয়ে রাখা হয়।

যেটা এই উৎসবের সাথে বেশ মানানসই। মহিলারা বাড়ির ভিতর ও বাইরে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও সরঞ্জাম দিয়ে সাজিয়ে থাকেন ঘটের উপর নারকেল রাখা হয়। এটি ঘরের প্রবেশ দ্বারের সামনে অনেকেই রেখে থাকেন।

উগাদি ইতিহাস ও তাৎপর্য

গুড়ি পাদওয়া উৎসবের বিশেষ স্মৃতি হল পুরান পোলি এই দিন পুরান পোলি তৈরি করে থাকেন সকলেই, বাড়ির মহিলারা গুড়ি পাদওয়া উৎসব উপলক্ষে থালি প্রস্তুত করে থাকেন। যেখানে মিষ্টি, রুটি, গুড়, নিম, নুন, তেতুল থাকে আর একেই বলা হয় পুরান পোলি। আর এই রীতি বহুদিন আগে থেকে চলে আসছে।

এর সাথে সাথে বিশ্বাস করা হয় যে অশুভ আত্মা দূর হয় এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে, সংসারে আসে সুখ-সমৃদ্ধি।  নতুন বছর শুরু হয় এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে। এই দিনটি সুখ নিয়ে আসে তাদের পরিবারে এমনই ধারণা চলে আসছে অনেকদিন আগে থেকে। নতুন পোশাকে সেজে ওঠে বাড়ির সমস্ত সদস্য।

গুড়ি পাদওয়া উৎসবের ইতিহাস 2024: 

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে রাবণকে পরাজিত করে এই দিন ভগবান শ্রীরামচন্দ্র অযোধ্যায় ফিরে এসেছিলেন। হিন্দু ধর্ম অনুসারে রাবণ কে পরাস্ত করার এই কাহিনী বর্ণিত রয়েছে এই উৎসবের সাথে।

সিতাকে কিভাবে রাবণ অপহরণ করেছিলেন তা সকলেরই জানা আছে। সেই রাক্ষস রাজা রাবন কে পরাস্ত করেছিলেন ভগবান রামচন্দ্র, তারপর উৎসবের শুভ সময় এর মধ্যে অযোধ্যায় ফিরেছিলেন রাম

হিন্দু পুরাণ অনুসারে আদি দেবতাদের মধ্যে রয়েছেন ভগবান ব্রহ্মা। আর এটা মনে করা হয় যে, তিনি পৃথিবীর সৃষ্টি কর্তা, তার কৃপাতেই এই বিশ্ব তৈরি হয়েছিল। সৃষ্টি হয়েছিল গ্রহ, নক্ষত্র। সেই ধারণা বশত এই উৎসবকে নতুন সূচনা হিসাবে মনে করা হয়। এই উৎসব প্রসঙ্গে একটি ধারণা রয়েছে, বীর মারাঠা ছত্রপতি শিবাজীর কথা সকলেই আমরা জানি।

কথিত আছে যে, তিনি তৈরি করেছিলেন মারাঠা সাম্রাজ্য। প্রচলিত ধারণা অনুসারে বীর মারাঠা ছত্রপতি মারাঠা জয় করার পর প্রথম গুঁড়ি পাদওয়া উৎসব পালন করা হয় এবং তিনি নিজের হাতে এই উৎসব এর সূচনা করেন। সেই থেকে প্রতিবছর পালিত হয়ে আসছে এই উৎসব মারাঠি দের মধ্যে।

এই উৎসবের সাথে নিম পাতা বিশেষভাবে জড়িত। এই উৎসব বসন্ত কালে অনুষ্ঠিত হয় বলে পরিবেশ থেকে খুবই মনোরম। প্রচলিত আছে যে, এই উৎসবে নিম পাতা ও তেতো খাওয়া দিয়ে শুরু করা হয়। নতুন বছর এই খাবার খেলে রক্ত পরিশুদ্ধ হয়, সে তো আমরা সকলেই জানি, আর রক্ত পরিশুদ্ধ করা এবং শরীর শক্তিশালী করার জন্য পালিত হয় এই উৎসব।

চড়ক পূজা ইতিহাস ও তাৎপর্য

গুড়ি পাদওয়া উৎসবের তাৎপর্য 2024:

এই উৎসবের দিন বাড়ি কেনা, গাড়ি কেনা, সোনার গয়না কেনা এগুলোকে শুভ বলে মনে করা হয়। এই দিনটি নতুন বছরের সূচনার সাথে সাথে সংসারের আয়, উন্নতি, ধনবৃদ্ধি করে থাকে। দিনটির রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। প্রচলিত আছে এই দিনে গাড়ি, বাড়ি, সোনা কিনলে মা লক্ষ্মীর কৃপা পাওয়া যায়, এতে সংসারে সুখ সমৃদ্ধি ঘটে, আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটে।

প্রতিবছর চৈত্র মাসে পালিত হয় এই উৎসব। সংসারের সুখ সমৃদ্ধি বৃদ্ধির জন্য বাড়ির মহিলারা থালি সাজিয়ে গুড়ি পাদওয়া উৎসব পালন করে থাকেন। প্রতিটি বাড়ির প্রতিটি কোণ আনাচ কানাজ সেজে ওঠে রঙিন আবিরের রঙ্গোলিতে, আর আম পাতা, গাঁদা ফুল ইত্যাদির মালা দিয়ে ঘরকে সুন্দর করে সুসজ্জিত করা হয়।

এই উৎসবের জন্য অনেক দিন আগে থেকে কেনাকাটা ও করে থাকেন অনেকেই। যেমন ধরুন নতুন জামা কাপড়, গাড়ি, বাড়ি, সোনার অলংকার এবং ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য উপহার।

মারাঠিদের কাছে এই গুড়ি পাদওয়া উৎসব নতুন বছরের সুচনার সাথে সাথে অশুভ কে সরিয়ে শুভ কে স্বাগত জানানো। জীবনকে আরও বেশি উন্নত করার লক্ষ্যে এই উৎসব মারাঠি দের মধ্যে বিশেষ ভাবে জনপ্রিয়। বিভিন্ন রকমের মিষ্টি এবং আরও অন্যান্য ঘরোয়া খাবার তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন বাড়ির মহিলারা।

বিশেষ করে বয়স্ক মহিলারা এই সমস্ত খাবার তৈরি করতে ব্যস্ত থাকেন। বড়দের সাথে সাথে বাচ্চাদের আনন্দ এই উৎসবে চোখে পড়ার মতো। নিজেদের ঘরবাড়ির সাথে সাথে আশেপাশের পরিবেশকেও সাজিয়ে তোলা হয় ফুল, আম পাতা এবং আরও অন্যান্য সাজসজ্জার সরঞ্জাম দিয়ে।

তবে যাই হোক না কেন, নিষ্ঠা ভরে এই উৎসব পালন করা, পূজা-অর্চনা করা, সব কিছুর মধ্যে দিয়ে সংসারের উন্নতি সাধন করার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাড়ির মহিলারা এই উৎসব পালন করে থাকেন। তার জন্য সকাল থেকে থালি সাজিয়ে, নিজেরাও সুসজ্জিত হয়ে এই উৎসবে শামিল হয়ে থাকেন। তবে পুরুষও কিন্তু বাদ পড়েন না, তারাও সমান ভাবে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top