পালং শাক একটি জনপ্রিয় ও সু্স্বাদু পাতা জাতীয় সবজি। এটি বহুল পরিচিত ও শীতকালীন একটি শাক।
কমবেশি প্রায় সবাই পালং শাক খেয়ে থাকে। এটি ভিটামিন সমৃদ্ধ। বিভিন্ন রোগ ব্যাধি সারাতে এর ভূমিকা রয়েছে। এটি চুল পড়া রোধ করে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
শরীর ঠান্ডা রাখে এবং রক্ত পরিষ্কার করে থাকে। এটি জন্ডিস রোগে আক্রান্তদের জন্য বিশেষ উপযোগী।
আজ আমরা আপনাদের সাথে পালং শাক চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই পালং শাক চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন পালং শাক চাষের পদ্ধতি বিস্তারিতঃ
মাটিঃ
পালং শাক চাষের জন্য সাধারনত উর্বর দোআঁশ মাটি বিশেষ উপযোগী। তাছাড়া এটেল বা বেলে দোআশ মাটিতে ও এটি চাষ করা যেতে পারে।
জমি তৈরি ও বীজ বপনঃ
পালং শাক চাষ করার আগে জমি ভালো ভাবে তৈরি করে নিতে হবে। জমি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হবে।
তারপর জমিতে আইলে বীজ বপন করতে হবে। বীজ ছিটিয়ে বপন করা যায় আবার মাদা তৈরি করে মাদায় ও বপন করা যায়।
বীজতলায় চারা তৈরি করে সে চারা রোপন করতে হবে। বীজ বপন করার আগে ২৪ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে নিতে হবে। তাহলে বীজ থেকে গজানো চারা উন্নত মানের হয়।
সারি করে বীজ বপন করতে হবে। এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব হবে ৮ ইঞ্চি।
কাঠির সাহায্যে ১.৫-২ সেমি গভীর লাইন করে সারিতে বীজ বপন করতে হবে । বীজ বপন করার পর মাটি সমান করে দিতে হবে।
মাদায় বীজ বপন করতে হলে গর্ত তৈরি করতে হবে। তারপর বীজ বপন করতে হবে ২-৩ টি করে। সাধারনত ১০ সেমি দূরে দূরে বীজ বপন করা ভালো।
সার প্রয়োগঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। গোবর সার দিতে হবে ৪০ কেজি, ইউরিয়া দিতে হবে ১ কেজি, টিএসপি দিতে হবে ৫০০ গ্রাম, এমওপি দিতে হবে ৫০০ গ্রাম।
ইউরিয়া সার ছাড়া বাকি সব সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরির প্রথম দিকে জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করা ভালো।
চারা গজানোর ৮-১০ দিন পর থেকে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ কিস্তিতে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
সার প্রয়োগ করার পর মাটির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে জল সেচ দিতে হবে।
আল নির্বাচন ও তৈরিঃ
পালং শাক চাষে জমিতে আল তৈরি করা হয়ে থাকে। উচু আল নির্বাচন করা জরুরি। আল উচু হলে সেখানে পালং শাকের আগাম জাত চাষ করা যায়।
তবে চাষ করার আগে কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।
বীজ বপনের সময়ঃ
সাধারনত সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। বীজ বপন করার পর অঙ্কুরোদগম হতে সময় লাগবে প্রায় ৭-৮ দিন।
আগাছা দমনঃ
জমিতে যেন আগাছা না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আগাছা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় ও পুষ্টি শোষণ করে থাকে। তাই আগাছা জন্মালে তা সাথে সাথে পরিষ্কার করে দিতে হবে।
সেচ প্রদানঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সেচ প্রদান করতে হবে। পালং শাক চাষের জন্য জমিতে প্রচুর জল দরকার হয়ে থাকে।
প্রতিবার সার প্রয়োগ করার পর জমিতে জল সেচ দিতে হবে। মাটির জো অবস্থা বুঝে জমিতে সেচ দিতে হবে।
প্রয়োজন হলে চারা রোপন করার পর হালকা সেচ দিয়ে দেওয়া ভালো।
অন্যান্য পরিচর্যাঃ
জমির মাটি মাঝে মাঝে আলগা করে দিতে হবে। গাছের বৃদ্ধি দ্রুত ও ফলন ভালো হওয়ার জন্য মাটি আলগা করে দেওয়া ভালো।
তাছাড়া মাটি যাতে বেশি দিন রস ধরে রাখতে পারে আর মাটিতে যেন আলো বাতাস সহজে প্রবেশ করতে পারে সেজন্য প্রতিবার সেচ দেওয়ার পর মাটি আলগা করে দিতে হবে।
কোনো স্থানের চারা মরে গেলে বা বীজ থেকে চারা না গজালে সেখানে পুনরায় চারা রোপন করতে হবে। বীজ গজানোর ৮-১০ দিন পর প্রতি মাদায় ২ টি করে চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে।
এবং অন্য ফাকা জায়গায় তা রোপন করতে হবে। প্রয়োজনে জমিতে উপরি সার প্রয়োগ করতে হবে।
রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনাঃ
পালং শাক চাষে সাধারনত গোড়া পচা রোগ, পাতায় দাগ রোগ, পাতার ধ্বসা রোগ ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত ডাল পাতা তুলে ফেলে দিতে হবে। বীজ সংগ্রহ করার সময় রোগ মুক্ত এলাকা থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
পালং শাকে মাঝে মাঝে পিপড়া, উরচুঙ্গা , উইপোকা ইত্যাদি পোকা আক্রমন করে থাকে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
বীজ বপন করার এক মাস পর থেকেই পালং শাক সংগ্রহ করা যায় । গাছে ফুল আসার আগ পর্যন্ত শাক সংগ্রহ করা যাবে।
ফলনঃ
সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করতে পারলে প্রতি আলে ৮-১০ কেজি পালং শাক পাওয়া যেতে পারে।
প্রতি শতকে ২৮-৩৭ কেজি এবং প্রতি একরে পাওয়া যাবে ২৮০০-৩৮০০ কেজি।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি।
এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।