গান্ধী জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য - Gandhi Jayanti History and Significance

গান্ধী জয়ন্তী 2023: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Gandhi Jayanti 2023: History and Significance

গান্ধী জয়ন্তী 2023 (Gandhi Jayanti 2023 Date Time and Significance) 2023 গান্ধী জয়ন্তী ইতিহাস এবং জানুন গান্ধী জয়ন্তী কেন পালন করা হয়? 2023 গান্ধী জয়ন্তী তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য গান্ধী জয়ন্তী গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

সারা ভারতবর্ষ জুড়ে মহাত্মা গান্ধী অর্থাৎ গান্ধীজীর জন্ম জয়ন্তী উৎসব হিসেবে গান্ধী জয়ন্তী পালন করা হয়। ২ রা অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তী উৎসব পালিত হয়ে থাকে। এটি ভারতের অন্যতম একটি জাতীয় সরকারি ছুটির দিন। এই দিনটি ভারতের সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে যথাযথ মর্যাদার সাথে পালিত হয় গান্ধী জয়ন্তী।

গান্ধী জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য - Gandhi Jayanti History and Significance
2023 গান্ধী জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য – 2023 Gandhi Jayanti History and Significance

মহাত্মা গান্ধীর জন্মের সার্ধশতবর্ষে তাঁকে নানাভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। মহাত্মা গান্ধী অর্থাৎ মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন ভারতীয় রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে খুবই  গুরুত্বপূর্ণ একজন প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা।

এছাড়াও তিনি ছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। যার মাধ্যমে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণ তাদের অভিমত প্রকাশ করেছেন। এই আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অহিংস মতবাদ অথবা দর্শনের উপর ভিত্তি করে।

গান্ধীজীর জীবনী 2023:

গান্ধী জয়ন্তী উপলক্ষে চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক গান্ধীজীর জীবনী সম্পর্কে:

  • সম্পূর্ণ নাম: মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী
  • জন্ম: ২ রা অক্টোবর, ১৮৬৯ সাল, পোরবন্দর, গুজরাট, ব্রিটিশ ভারত, (বর্তমানে পোরবন্দর, গুজরাট, ভারত)
  • জাতীয়তা: তিনি ভারতীয়
  • অন্যান্য নাম: মহাত্মা গান্ধী, গান্ধীজী, বাবুজি
  • শিক্ষা: ইউনিভার্সিটি কলেজ, লন্ডন
  • পেশা: রাজনীতিবিদ, উকিল, আন্দোলনকারী, লেখক,
  • কর্মজীবন: ১৮৯৩ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল
  • পরিচিতির কারণ: ভারত এর স্বাধীনতা আন্দোলন, অহিংস আন্দোলন,
  • রাজনৈতিক দল: ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
  • পিতার নাম: করণচাঁদ উত্তম চাঁদ গান্ধী,
  • মায়ের নাম: পুতলি বাই গান্ধী,
  • স্ত্রীর নাম: কস্তুরবা গান্ধী
  • মৃত্যু: ৩০ শে জানুয়ারি ১৯৪৮ সাল (বয়স ছিল ৭৮ বছর) নয়া দিল্লি, ভারত,
  • মৃত্যুর কারণ: হত্যা করা হয়েছিল তাঁকে।

গান্ধীজীর অবদান:

গান্ধীজীর অবদান আমাদের ভারতে এতটাই যে যা কখনোই পরিশোধ করা যাবে না। মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন ২ রা অক্টোবর ভারতের জাতীয় ছুটি, গান্ধী জয়ন্তী হিসেবে সেই দিনটি পালিত হয়ে থাকে। ২০০৭ সালের ১৫ ই জুন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গান্ধীর জন্মদিন কে আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা যাক: 

  • ১৮৮৩ সালে মহাত্মা গান্ধী কস্তুরবা মাখাঞ্জি কে বিবাহ করেন। ১৮৮৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য তিনি লন্ডনে চলে যান।
  • গান্ধীজীর প্রথম অর্জন আসে ১৯১৮ সালের চম্পারন এবং খেদা সত্যাগ্রহের মাধ্যমে।
  • ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে মহাত্মা গান্ধী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নির্বাহী দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তার নেতৃত্বে কংগ্রেস স্বরাজের লক্ষ্যকে সামনে রেখে নতুন সংবিধান গ্রহণ করেন।
  • গান্ধী জী তার অহিংস্র নীতির পরিবর্তন করেন স্বদেশী নীতি যোগ করে স্বদেশী মতে সকল বিদেশি পণ্য, বিশেষ করে ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
  • এর পথ ধরে তিনি সকল ভারতীয় কে ব্রিটিশ পোশাকের বদলে খাদি পোশাক পরার আহ্বান জানান।
  • ১৯২২ সালের ১০ ই মার্চ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে তাঁকে ছয় বছরের জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ১৯২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে আবার মুক্তিও দেওয়া হয়।
  • ১৯৩৩ সালের ৮ ই মে তিনি হরিজন আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ২১ দিন ধরে অনশন করেছিলেন।
  • ১৯৩০ সালের গান্ধী জী ভারতীয়দের লবণ করের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডান্ডি লবণ কুচকাওয়াজ এ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
  • যা ১৯৪২ সালে ইংরেজ শাসকদের প্রতি সরাসরি ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটিয়েছিল।
  • ১৯৪৮ সালের ৩০ শে জানুয়ারি গান্ধীজিকে গুলি করা হয় এবং হত্যা করা হয়। সেই সময় তিনি নতুন দিল্লির বিড়লা ভবনে পথসভা করছিলেন।
  • তার হত্যাকারী নাথুরাম গডসে ছিলেন একজন হিন্দু মৌলবাদী, যার সাথে চরমপন্থী হিন্দু মহাসভার যোগাযোগ ছিল।

তার এই অবদান ভারতকে অনেক বেশি উর্বর করে তোলে। আর তার জন্মতিথি উপলক্ষে ২ রা অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তী পালন করা হয় সমগ্র দেশজুড়ে। তিনি ভারতবাসীর জন্য অনেক অবদান রেখে গিয়েছেন। তার পাশাপাশি এমন কিছু বাণী তিনি উপহার দিয়েছেন যা সাধারণ মানুষের জীবনে অনেকখানি পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

গান্ধীজীর কিছু বিশেষ বাণী, যা আজও সমাজকে উদ্বুদ্ধ করে:- 

“দুর্বল মানুষ কখনো ক্ষমা করতে পারে না, ক্ষমা হলো শক্তিমানের ধর্ম।”

“যখনই কোন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হবে, তখন তাকে ভালোবাসার সাথে অর্জন করো।”

“আজ তুমি যা করবে তার উপরেই নির্ভর করে তোমার ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবে।”

“চোখের বদলে চোখ গোটা বিশ্বকে অন্ধ করে দেবে।”

“যেদিন ভালোবাসা ক্ষমতার লোভ কে হারিয়ে দেবে সেদিন এই পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসবে।”

“এমন ভাবে জীবন যাপন করো যেন মনে হয় তুমি আগামীকালই মারা যাবে, আবার এমনভাবে শিখবে যেন তোমার সময়ের অভাব নেই, তুমি চিরজীবী।”

“ভালোবাসা হলো জগতের সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তি।”

“ভিড়ের মধ্যে দাঁড়ানো সহজ কিন্তু একাকী দাঁড়ানো তে সাহসের দরকার।”

“শক্তি দেহের ক্ষমতা থেকে আসে না, সেটা আসে মনের অদম্য ইচ্ছার মাধ্যমে।”

“পৃথিবীতে তুমি যদি কোন পরিবর্তন দেখতে চাও, তাহলে সেটা নিজে থেকেই শুরু করো।”

গান্ধী জয়ন্তী উপলক্ষে সারা ভারত জুড়ে প্রার্থনা পরিষেবা এবং শ্রদ্ধার মাধ্যমে গান্ধী জয়ন্তী উৎসব পালন করা হয়। বিশেষ করে নতুন দিল্লির রাজঘাটে, গান্ধীর স্মৃতি স্তম্ভে, যেখানে তাকে দাহ্য করা হয়েছিল সেখানে সকল শ্রদ্ধা অর্পণ করা হয় এবং কলেজ, স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে বিভিন্ন শহরে প্রার্থনা সভা, স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনটি উদযাপন করার জন্য বিভিন্ন স্থানে আবার আঁকার প্রতিযোগিতা এবং প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

অহিংস জীবনধারাকে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গান্ধীজীর প্রচেষ্টাকে তুলে ধরে বিদ্যালয় এবং সম্প্রদায়ের সেরা প্রকল্পগুলির জন্য পুরস্কার প্রদান করা হয়। গান্ধীজীর প্রিয় ভজন, হিন্দু ভক্তিমূলক গান হিসাবে, “রঘুপতি রাঘব রাজা রাম” সাধারনত তার স্মৃতিতেই গাওয়া হয়।

দেশজুড়ে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তিগুলিতে ফুল ও ফুলের মালা দিয়ে সাজানো হয়। তার পাশাপাশি বহু মানুষ সেই দিনটিতে মধ্যপন করা এবং মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। কেননা তিনি ছিলেন নিরামিষভোজী, আর মধ্যপান থেকে বিরত ছিলেন। এছাড়াও সরকারি ভবন, ব্যাংক ও ডাকঘর, এই দিন সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ থাকে।

এমন একটি ব্যক্তিত্ব যিনি ভারতের জন্য এত কিছু অবদান রেখে গিয়েছেন, তার জন্ম তিথি উপলক্ষে জন্মদিনের পাশাপাশি তাকে শ্রদ্ধা জানাতে গান্ধী জয়ন্তী উৎসব পালন করা হয়। বিভিন্ন জায়গায় উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান হয়। আর এই সবকিছুর মধ্যে দিয়ে আমাদের জাতির জনক কে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *