পিতৃ দিবস 2024 (Fathers Day 2024 Date Time and Significance) 2024 পিতৃ দিবস ইতিহাস এবং জানুন পিতৃ দিবস কেন পালন করা হয়? পিতৃ দিবস তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য পিতৃ দিবস গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
একটা শিশুর জীবনে তার বাবার কতটা অবদান সেটা ভালোভাবে বোঝা যায়, যে শিশুরা পিতৃহারা হয়েছে। বাবারা সবসময় বট গাছের মত হয়। অনেকটা বড় জায়গা জুড়ে ছায়া করে থাকে, যেখানে ঝড়, বৃষ্টি, রোদের তাপ থেকে পরিবারের সাথে সাথে একটা শিশুকে রক্ষা করে সমস্ত রকম দিক থেকে। আর তাইতো পৃথিবীর সমস্ত বাবাদের সম্মান জানাতে পিতৃ দিবস অর্থাৎ ফাদার্স ডে পালন করা হয়।
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, এই পিতৃ দিবস অর্থাৎ ফাদার্স ডে এর ইতিহাস এবং তাৎপর্য সম্পর্কে:
বাবারা হল পরিবারের মেরুদন্ড এবং আমাদের শক্তির প্রধান উৎস, তারা সত্যিই বিশেষ। শুধুমাত্র ফাদার্স ডে তে তাকে সম্মান জানানো টাই যে যথাযথ তা কিন্তু নয়, বছরের প্রতিটি দিন বাবাদের জন্য উৎসর্গ করাই যায়। বাবা আমাদের পরামর্শদাতা, কোন কিছুতে অনুপ্রেরণা যোগানো, বন্ধু এবং চিয়ারলিডার বলা যায়। ভারত সহ বিভিন্ন দেশে বাবা দিবস পালন করা হয়, যাকে ফাদার্স ডে হিসেবে সকলেই চেনেন।
Fathers Day এর ইতিহাস 2024:
এই দিনটির ইতিহাস সম্পর্কে জানতে গেলে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পিতৃ দিবস পালন করা শুরু হয়েছিল। মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি সমানভাবে দায়িত্বশীল, এটা বোঝানোর জন্য এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।
পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকে এই দিনটির পালন শুরু। আনুমানিক ধারণা করা হয় যে, ১৯০৮ সালের ৫ ই জুলাই আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ার মন্টের একটি গির্জায় এই দিনটি প্রথম পালন করা হয়।
2024 পিতৃ দিবস শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস ছবি
এছাড়া সনরা স্মার্ট ডট নামের ওয়াশিংটনের একজন ভদ্রমহিলার মাথাতেও এই পিতৃ দিবসের আইডিয়াটি এসেছিল। যদিও তিনি ১৯০৯ সালে ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা একেবারেই জানতেন না। মা দের নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা শোনা যায় এবং তিনি ভেবেছিলেন যে কেন না বাবাদেরও নিয়ে কিছু বলা দরকার।
কেননা মায়েদের সাথে সাথে বাবাদেরও সমান দায়িত্ব এবং কর্তব্য থাকে একটা শিশু সন্তান মানুষ করতে এবং তাদের জীবনে যাপন এর ক্ষেত্রে পরামর্শ দিতে। তারপর তিনি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টাতে পরের বছর অর্থাৎ ১৯১০ সালের ১৯ শে জুন মাসে থেকে বাবা দিবস পালন করা শুরু করেন।
পিতৃ দিবস বেশ টানাপোড়নের মধ্যে দিয়েই পালিত হতো। আসলে মা দিবস নিয়ে মানুষ যতটা উৎসাহ দেখাতো, পিতৃ দিবসে তেমনটা কিন্তু দেখাতো না বরং বাবা দিবসের বিষয়টি তাদের কাছে বেশ হাস্যকরই ছিল। ধীরে ধীরে অবস্থা পাল্টায়, ১৯১৩ সালে আমেরিকান সংসদে পিতৃ দিবসকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করার জন্য একটি বিল তৈরি করা হয়।
১৯২৪ সালে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ সেই বিলটিতে সম্পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিলেন। অবশেষে ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বিজনসন পিতৃ দিবসকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করে, এরপর থেকে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের জুন মাসের তৃতীয় রবিবার পিতৃ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
পিতৃ দিবসের প্রয়োজনীয়তা:
সবদিক থেকে বিচার করে দেখতে গেলে দেখা যায় যে, সবার কাছে মা দের পাশাপাশি বাবা দেরও গুরুত্ব দেওয়া সমানভাবে প্রয়োজন। বাবারা সবসময় স্বার্থহীন ভালোবাসা দিয়ে তাদের সন্তানকে মানুষ করে থাকেন এবং তাদের খুশির জন্য জীবনের অনেক কিছুই ত্যাগ করে দেন। এমনকি সন্তানের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার তাগিদে নিজের পছন্দের জিনিস টুকু পর্যন্ত কিনতে চান না।
নিজে না খেয়ে সন্তানদের খাওয়ানোর জন্য তারা এতোটুকুও কষ্ট পান না। সবকিছু ত্যাগ করতে পারেন একটা কথাতেই, আর তাইতো তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার জন্য সর্বস্ব বিক্রি করে দিতেও তিনি রাজি আছেন।
এর ফলে যদি নিঃস্ব হয়ে যেতে হয় তাতেও তিনি কখনোই দুঃখ প্রকাশ করেন না। তার একটি উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে একটা মেয়ের কন্যা সম্প্রদান করার সময় একটা পিতার কতখানি নিঃস্ব হওয়ার উপক্রম হয় সেটা একজন গরিব বাবা ভালোমতো বুঝতে পারেন।
তবুও কিন্তু সন্তানের সুখের জন্য এমনটা করতে দুবার ভাবেন না। আবার ছেলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে অনেক টাকা দিয়ে পড়াশোনা করানো এবং চাকরির জন্য টাকা যোগাড় করতে ও দ্বিধাবোধ করেন না।
সেই কারণে মায়েদের পাশাপাশি পিতাদের অথবা বাবাদের গুরুত্ব দেওয়া সমানভাবে প্রয়োজন। আর সেই হিসেবে পৃথিবীর সমস্ত বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই পিতৃ দিবস অর্থাৎ ফাদার্স ডে পালন করা অবশ্যই প্রয়োজনীয়।
ফাদার্স ডে সেলিব্রেশন:
উৎসব একটাই, কিন্তু উদযাপন করার পদ্ধতি আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। কেননা সবার সামর্থ্য সমান নয়। তাই বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রত্যেক ছেলেমেয়েরা তাদের সাধ্যমত উপহার বাবাকে দিয়ে বাবাকে খুশি করে।
আর বাবারাও ছেলে মেয়েদের কাছ থেকে গিফট পেয়ে খুবই আনন্দিত এবং অভিভূত হয়ে যান। যতই সে গিফট ছোট হোক না কেন, এই পিতৃ দিবসে বাবাদের কাছে অমূল্য সম্পদ সমান উপহার, অথবা খুবই সামান্য দামের একটা উপহার। কেননা ভালোবেসে দেওয়া উপহারের কোন মূল্য হয় না।
কোন কোন দেশে ছেলে মেয়েরা বাবাকে কোন কার্ড অথবা ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে বাবা দিবসের শুভেচ্ছা জানায়, সেই কার্ডে ছেলে মেয়েরা তাদের বাবাকে কতটা ভালোবাসে সে কথা উল্লেখ করে থাকে অনেকেই। আবার কোথাও কোথাও বাবাকে ছেলেমেয়েরা নেকটাই অথবা অফিসের কোনরকম কাজে আসার জিনিস উপহার দেয়। আবার অনেকেই এই দিবস উপলক্ষে কেক কাটার আয়োজন করে।
তবে বলা যেতে পারে, মায়েরা সন্তানের জন্ম দেন ঠিকই, তবে জন্মাবার আগে থেকে এবং সেই সন্তানকে তাদের সুন্দর ক্যারিয়ারে প্রবেশ করানো পর্যন্ত একটা বড় দায়িত্ব পালন করে থাকেন বাবারা, যেখানে প্রতিনিয়ত বাবাদের কে কোন না কোন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে। সন্তানদের জীবনকে সুশৃংখল করতে, তাদের সুচারিত্রিক হিসেবে গড়ে তুলতে, মানুষের মত মানুষ করতে, বাবাদের ভূমিকা বলে শেষ করা যাবে না।
সারাদিন সংগ্রাম করে উপার্জন করতে হয় পরিবার এবং সন্তানদের জন্য। এমনও অনেক বাবা রয়েছেন সারাদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানদের জন্য উপহার নিয়ে গিয়েছেন। সে সমস্ত বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা এই পিতৃ দিবস উপলক্ষে বাবাকে ছোট উপহার দিলেও সমস্ত কষ্ট যেন নিমেষে উড়ে যায়।
যে বাবা কঠোর পরিশ্রম করেন এবং তাদের বড় কীর্তি, প্রয়োজনীয়তা এবং কঠিন সময়ও তারা যেভাবে শান্ত থাকেন তা একটি সন্তানকে তাদের চরিত্র গঠন করতে অনেক খানি সহযোগিতা করেছে।
এটি একটি সত্য কথা যে, বাবারা বেশিরভাগই এই অর্থে সংরক্ষিত যে, তারা শিশুদের প্রতি তাদের ভালোবাসার বিষয়ে খুব বেশি সোচ্চার নয় এবং তারা ভালোবাসা দেখাতে বা প্রদর্শন করতে বিশ্বাস করে না।
তাই এই দিনটি আপনার বাবাকে অনেক স্নেহ, ভালবাসা এবং যত্ন দেওয়ার জন্য উপযুক্ত। এই দিনে বাবাকে মন খুলে বলতে পারবেন যে, তাকে আপনি কতটা ভালোবাসেন, তাই না! ভালো থাকুক পৃথিবীর সমস্ত বাবা। হ্যাপি ফাদার্স ডে।