নেহেরু জয়ন্তী 2024 (Nehru Jayanti 2024 Date Time and Significance) 2024 নেহেরু জয়ন্তী ইতিহাস এবং জানুন নেহেরু জয়ন্তী কেন পালন করা হয়? নেহেরু জয়ন্তী তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য নেহেরু জয়ন্তী গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
জওহরলাল নেহেরু বা বলা যেতে পারে পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। লেখক হিসেবেও তিনি ছিলেন খুবই খ্যাতিসম্পন্ন একজন ব্যক্তি।
ইংরেজিতে লেখা তার তিনটি বিখ্যাত বই, “একটি আত্মজীবনী”, “বিশ্ব ইতিহাসের কিছু চিত্র” এবং “ভারত আবিষ্কার” যা কিনা সাহিত্যের মর্যাদা লাভ করেছিল। তার জন্মতিথি উপলক্ষে পালিত হয়ে আসছে নেহেরু জয়ন্তী উৎসব। ১৪ ই নভেম্বর ১৮৮৯ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
জহরলাল নেহেরুর পিতা মতিলাল নেহেরু একজন ধনী ব্রিটিশ ভারতের নামকরা ব্যারিস্টার এবং রাজনীতিবিদ ছিলেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে নেহেরু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন নিজের হাতে। তারপরে ইন্দিরা গান্ধী এবং দৌহিত্র রাজীব গান্ধী ভারতের আগামী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
ভারতে ফিরে গান্ধী ও চাম্পারান ও খেদাতে কৃষক ও মজুরদের ব্রিটিশ সরকারের চাপিয়ে দেওয়া ট্যাক্স এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য সংগঠিত করেছিলেন। গান্ধীর নীতি ছিল সত্যাগ্রহ এবং অহিংসা।
চাম্পরান আন্দোলনের সময় নেহেরু গান্ধীর সাথে পরিচিত হন এবং তাকে সাহায্য করেন। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার চুক্তিবদ্ধ ভারতীয় শ্রমিক দের একটি বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
জওহরলাল নেহেরুর কোট:
কথায় আছে কোন ব্যক্তির সাজ পোশাক দেখে তার চরিত্র বিচার করা অনেকখানি সম্ভব হয়ে ওঠে। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন খুবই রুচিবান একজন পুরুষ। তার পরনে থাকা বহু ব্যবহৃত প্রিয় কোটটি, যা নেহেরু কোট নামে পরিচিত।
প্রতিটি মানুষের আলাদা আলাদা ফ্যাশন থাকে, তেমনি নেহেরু ফ্যাশনের সবচেয়ে চমকপ্রদ অধ্যায়টি হল, যেকোনো রাজনৈতিক অথবা সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে স্বতন্ত্র ধর্মীয় এই কোট টি তিনি পরতেন নিজের ব্যতিক্রমধর্মী ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ এই ভিন্নতর পোশাকের মাধ্যমেই তিনি প্রকাশ করেছিলেন তখনকার সময়ে।
এছাড়া নিউ ইয়র্কের জনপ্রিয় ট্যাবলয়েড টাইম ম্যাগাজিনের নতুন ফ্যাশন তালিকায় কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রর ট্রাকস্যুট এবং চীনের অবিসংবাদিত নেতা মাও সে তুং এর ব্যবহার করা চারটি পকেট বিশিষ্ট মাও সুটের পাশাপাশি স্থান পায়, তার এই কোট টি।
জওহরলাল নেহেরুর পাঁচটি সিদ্ধান্ত, যা বদলে দিয়েছিল ভারতের পরিকাঠামো:
১) জহরলাল নেহেরু ভারতকে “নতুন মন্দির” দিয়েছিলেন:
তিনি তার প্রতিভা দিয়ে আধুনিক ভারত গড়ে তোলার জন্য অনেকখানি অবদান রেখে গিয়েছেন, যা ভারত কোনদিনও ভুলতে পারবেনা। এই কারণেই তাকে আধুনিক ভারতের স্রষ্টা হিসেবে অভিহিত করা হয়। শিক্ষা থেকে শিল্প সব দিকেই ছিল তার কড়া নজর।
তিনি আই আই টি এবং আই আই এম- এর মতো বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছেন। সেই সাথে বহু শিল্প গড়ে তুলেছিলেন তিনি। তার তত্ত্বাবধানে ভাকরা নাঙ্গল বাদ, রিহান্দ বাদ এবং বোকার ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠেছিল, আর এই শিল্পগুলিকেই তিনি আধুনিক ভারতের মন্দির বলে মনে করতেন।
২) দৃঢ় প্রজাতন্ত্রের প্রতি আস্থা ছিল তাঁর:
১৯৫৭ সালের ১৯৬২ সালে ভোটে জয়লাভ করার পরেও বিরোধীদের যথাযোগ্য সম্মান দিয়েছিলেন তিনি, দেশের সর্বপ্রথম সাধারণ নির্বাচন হয় ১৯৫২ সালে।
সেই সময় অনেক মানুষ বিভিন্ন ভাবে তার সমালোচনা করতে শুরু করেন। কিন্তু তিনি কোনদিন সেই সব বিষয়ে মাথা ঘামান নি। বিরোধী নেতারা যখন তারা আলোচনা, সমালোচনা করতেন তখন তিনি তাদের গুন গানই গাইতেন।
৩) পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সূত্রপাত:
১৯৫১ সাল থেকে ১৯৫৬ সালে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সূচনা হয়েছিল দূরদৃষ্টি সম্পন্ন একজন দক্ষ মানুষ, নিজের এই দূরদর্শিতার জোর এই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন, আজ এই পরিকল্পনার জুড়ে লাভবান হচ্ছে সমগ্র দেশ। প্রথমদিকে এই পরিকল্পনা কতটা সার্থক হবে সেই নিয়ে সকলের মনে সংশয় ছিল, কিন্তু ১৯৫৬ সালে ফলাফল দেখার পর আশার আলো সকলেই দেখেন।
এই প্রকল্পের জেরে এই সময় ভারত ৩.৬% বিকাশ লাভ করে ছিল। সেই সাথে মাথাপিছু আয় এর পরিমাণও বাড়তে থাকে, এর পাশাপাশি কৃষি কাজের কথা মাথায় রেখেও গড়ে তোলা হয়েছিল প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে মাথায় রাখা হয়েছিল শিল্পকে।
৪) নেহেরুর বিদেশ নীতি আজও বর্তমানে চলছে:
স্বাধীন ভারতের সত্ত্বা টুকু অটুট করে ধরে রাখার জন্য জহরলাল নেহেরু চাইতেন যে, ভারত কে অন্য কোন দেশের চাপ সহ্য করতে যেন না হয়।
অন্য দেশের বিষয়ে মাথা গলাবে না, এই রকম পাঁচটি নীতির দ্বারা শান্তি স্থাপনের কথা বলে গিয়েছেন তিনি। তিনি চেয়েছিলেন ভারত নিজের স্বাধীন বিদেশ নীতি বজায় রাখবে, কখনো তার বিসর্জন দেবে না, সেই নীতি চলছে ভারতে আজও।
৫) তিনি তৈরি করেছিলেন “এক ভারত, অখন্ড ভারত”:
আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তবুও কিন্তু তিনি এই অবস্থাতে দাঁড়িয়েও অখন্ড ভারতের কথা বলে গিয়েছেন। দক্ষিণ ভারত যখন পৃথক দেশ হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে ছিল তখন তিনি এক ভারত অখণ্ড ভারতের কথা বলেছিলেন তিনি।
সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এই বিষয়টিকে আরো বেশি জোরালো করে তোলেন। “আমি ভারতের স্বাধীনতা ও অখন্ডতা বজায় রাখব”- এমন শপথ বাক্য পাঠ করার মধ্যে দিয়ে তিনি সকলের মুখ একেবারে বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
জওহরলাল নেহেরুর মৃত্যু:
১৯৬২ সালের প্রথম ভারত চীন যুদ্ধের পরে নেহেরু অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কাশ্মীরে কিছুদিন বিশ্রাম নিয়েছিলেন, ১৯৬৪ সালের মে মাসে কাশ্মীর থেকে ফেরার পর নেহেরু হৃদ রোগে আক্রান্ত হন, অবশেষে ১৯৬৪ সালের ২৭ শে মে তিনি তার কার্যালয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এমন একজন ব্যক্তিত্ব যিনি ভারতের জন্য বহু অবদান রেখে গিয়েছেন, সেই অবদান কখনোই ভোলার নয়। তাই তার জন্ম তিথি উপলক্ষে জন্মদিন পালন করার সাথে সাথে নেহেরু জয়ন্তী উৎসব পালন করা হয়। যা তাকে শ্রদ্ধা জানাতে এবং স্মরণ করে রাখার জন্য আমরা এই দিবসটি পালন করে থাকি।
ফুল, পুষ্পস্তবক, ফুলের মালা, সবকিছু দিয়ে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয় এই দিনে। দেশের স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি আমাদের জন্য অনেক কিছুই করে গিয়েছেন। সেই হিসেবে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে এই দিনটি উৎসর্গ করা হয়, আর সমগ্র দেশে পালিত হয় নেহেরু জয়ন্তী উৎসব।