আম্বেদকর জয়ন্তী 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Ambedkar Jayanti 2024: History and Significance

আম্বেদকর জয়ন্তী 2024 (Ambedkar Jayanti 2024 Date Time and Significance) 2024 আম্বেদকর জয়ন্তী ইতিহাস এবং জানুন আম্বেদকর জয়ন্তী কেন পালন করা হয়? আম্বেদকর জয়ন্তী তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য আম্বেদকর জয়ন্তী গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

আমাদের দেশে এমন অনেক মহান ব্যাক্তি রয়েছেন, যাদের জীবনী সাধারণ মানুষের জীবন অনেকখানি পরিবর্তন করতে পারে এবং তারা সাধারণ মানুষের জন্য অনেকখানি আত্মত্যাগ করে গিয়েছেন। ভারতীয় সংবিধানের জনক ডক্টর বি আর আম্বেদকরের নাম নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন।

আম্বেদকর জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য - Ambedkar Jayanti History and Significance
আম্বেদকর জয়ন্তী 2024 ইতিহাস ও তাৎপর্য – Ambedkar Jayanti 2024 History and Significance

তাকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য প্রতিবছর ১৪ ই এপ্রিল পালিত হয়ে আসছে আম্বেদকর জয়ন্তী অথবা ভীম জয়ন্তী উৎসব। তাছাড়া বাবাসাহেব আম্বেদকর নামেও তিনি পরিচিত এবং বি আর আম্বেদকর নামে তাকে অনেকেই চেনেন।

এমনি সব ব্যক্তিদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তাদের জন্মতিথিকে জয়ন্তী হিসেবে পালন করা হয়, অর্থাৎ বি আর আম্বেদকর এর জন্ম তিথি উপলক্ষে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে আম্বেদকর জয়ন্তী অথবা ভীম জয়ন্তী উৎসব পালিত হয়ে আসছে।

নেহেরু জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য

ভীমরাও রামজি আম্বেদকরের জীবনী 2024:

ভীমরাও রামজি আম্বেদকর এর জীবনী সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা যাক:

  • সম্পূর্ণ নাম: ভীমরাও রামজি আম্বেদকর
  • জন্ম তারিখ: ১৪ ই এপ্রিল ১৮৯১
  • জন্মস্থান: মাউ, ভারত
  • বিশ্রামের জায়গা: চৈত্য ভূমি, মুম্বাই, ভারত
  • পিতার নাম: রামজি মালোজি সকপাল
  • মাতার নাম: ভীমাবাই সকপাল
  • স্ত্রীর নাম:মা বাই আম্বেদকর (মৃত্যু 1935 সাল), সবিতা আম্বেদকর (মৃত্যু 1948 সাল)
  • রাজনৈতিক দল: স্বাধীন লেবার পার্টি, তফশিলি জাতি, ফেডারেশন
  • মাতৃশিক্ষায়তন: মুম্বাই উনিভার্সিটি (B.A., M.A.) কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি (M.A., PhD.), লন্ডন স্কুল অফ ইকোনোমিক্স (M.Sc., D.Sc.) গ্রে’স ইন (ব্যারিস্টার- অ্যাট -ল)
  • পেশা: আইন বিদ, শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, সমাজ সংস্কারক এবং লেখক
  • পুরস্কার: ভারতরত্ন (মরণোত্তর ১৯৯০ সালে)
  • মৃত্যুর তারিখ: ১৯৫৬ সালের ৬ ই ডিসেম্বর
  • মৃত্যু বরণের স্থান: নতুন দিল্লি, ভারত।

গান্ধী জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য

ভিমরাও আম্বেদকরের ব্যক্তিগত জীবন:

১৮৯৪ সালের দিকে তার বাবা অবসর গ্রহণ করেন এবং দুই বছর পর পরিবারটি সাতারায় চলে যায়। কিছুদিন পর তার মা মারা যান, তার পরিবার ১৮৯৭ সালে মুম্বাইতে চলে আসে।

যেখানে তিনি এলফিনস্টোন হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং একমাত্র অস্পৃশ্য হিসেবে ভর্তি হয়েছিলেন তখন। প্রায় ১৫ বছর বয়সে তিনি একটি নয় বছর বয়সী মেয়ে রমা বাইকে বিবাহ করেছিলেন, রিপোর্ট অনুসারে জানা গিয়েছে।

বি আর আম্বেদকর জয়ন্তীর ইতিহাস: 

ভারতের রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ এবং আইনঙ্গ ডক্টর ভিমরাও রামজি আম্বেদকরের লড়াই, যতদিন যাচ্ছে আরো বেশি করেই যেন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে ভারতে। প্রভাবশালী দলিত নেতা সংবিধান পরিষদের আলোচনার সময় ভারতের সংবিধানের খসড়া তৈরি করার কমিটির নেতৃত্ব দান করেছিলেন।

তাছাড়া তিনি নারী এবং শ্রম অধিকারের জন্যও লড়াই করেছেন। তাইতো প্রতিবছর ১৪ ই এপ্রিল সমাজের সকল স্তরের সামাজিক অধিকার কে মান্যতা দেওয়ার জন্য তার জন্মবার্ষিকীতে তাকে শ্রদ্ধা জানানোর ক্ষেত্রে এই আম্বেদকর জয়ন্তী পালন করা হয়।

বি আর আম্বেদকরের জন্ম এবং জীবনী:

তিনি ১৮৯১ সালের ১৪ ই এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন, দরিদ্র দলিত মাহার সম্প্রদায়ের একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই দেশ নায়ক। তিনি আজীবন লড়াই করে গিয়েছেন দলিত এবং অস্পৃশ্য বলে, সমাজের এক স্তরের মানুষকে একেবারে অসুস্থ করে তোলা হতো।

সেই সময় তাদের সমস্ত সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাখার ঘটনা সেই সময়ে নেহাত অস্বাভাবিক নয়। তবে আজও কিন্তু সেটা একটু একটু পরিবর্তিত হয়েও টিকে রয়েছে। সমাজে দলিতদেরকে সমস্ত কিছু থেকে বঞ্চিত করা হয়।

তাঁর জন্ম দিবস উপলক্ষে পালিত হয় এই জয়ন্তী উৎসব। দিনটি দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির প্রতিফলন এবং তাকে দলিতদের ভূমিকার কথা আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই দিনটি খুবই শ্রদ্ধার সাথে পালন করা হয়।

গুরু রবিদাস জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য

ডক্টর বি আর আম্বেদকর জয়ন্তী এর তাৎপর্য:

আম্বেদকর জয়ন্তীতে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতারা সংসদে আম্বেদকরের মূর্তিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকেন, এছাড়া তিনি দেশে কৃষি ও শিক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্য এবং শিল্পের সম্প্রসারণের জন্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।

বিশেষ এই দিনটিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মিছিল ও প্রতিযোগিতা আম্বেদকরের জীবনের উপর ভিত্তি করে নাটক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনটিকে বঞ্চিতদের উন্নয়নে বাবা সাহেবের অবদানের চিহ্নিত করার জন্য পালন করা হয়। এই দিনে বাবা সাহেবের ভক্তরা মুম্বাইয়ের চৈত্য ভূমি এবং নাগপুরের দীক্ষা ভূমিতে শোভাযাত্রা করেন।

দলিত এবং অস্পৃশ্যদের উন্নয়নে বাবা সাহেবের অবদান অর্থাৎ ভিমরাও রামজি আম্বেদকরের অবদান কে স্মরণ করে ভীম জয়ন্তী পালন করার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে থাকেন দলিত, আদিবাসী এবং শ্রমিকরাও। বর্তমান ভারতের অবস্থান ও দলিত নির্যাতনের ঘটনা আজও চোখে পড়ে। তিনি তাদের জন্য লড়াই করেছেন, সেই কারণে দলিত আদিবাসী এবং শ্রমিকরাও তাকে ভীষণভাবে শ্রদ্ধা করে থাকেন।

ভীম জয়ন্তী পালন 2024:

তিনি দলিতদের জন্য যা করেছেন, তার জন্য তাকে শ্রদ্ধা জানানোর একটাই উপায় হল তার জন্ম তিথিতে এবং প্রতিবছর এই দিনে ভীম জয়ন্তী পালন করা।

তবে জনার্দন সদাশিব রানাপিসে ১৯২৮ সালে প্রথমবার ভীম জয়ন্তী পালন করেন এবং ২৫ টিরও বেশি ভারতীয় রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল।

একটি দরিদ্র দলিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং স্বাভাবিক ভাবেই শৈশবে বৈষম্যের সম্মুখীন হন। এছাড়া স্কুলে পঠন-পাঠন শেষ করার পর তিনি বেশ কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

প্রথম ভারতীয় হিসেবে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। ভারতের বর্ণভিত্তিক সমাজকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন ভীম রাও আম্বেদকর। তার জন্মদিন উপলক্ষে সারাদেশে সমতা দিবস পালিত হয়।

বি আর আম্বেদকরের বাণী:

এমন মহান ব্যক্তিদের বাণী সাধারণ মানুষের জীবনে অনেকটাই পরিবর্তন ঘটায়, যদি সে হিসেবে চলা যেতে পারে, তাই না !

“মানুষ মরণশীল, ধারণা গুলি ও কিন্তু তাই। একটি ধারণার প্রচারের জন্য যতটা প্রয়োজন একটি উদ্ভিকে জল দেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় উভয়েই শুকিয়ে যাবে এবং মারা যাবে।”

তিনি “হোয়াট কংগ্রেস অ্যান্ড গান্ধী হ্যাভ ডান টু দ্য অস্পৃশ্য” লিখেছিলেন, দলিতদের সমস্ত দিক থেকে বঞ্চিত করার বিরোধিতা করে।

গুরু গোবিন্দ সিং জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য

বি আর আম্বেদকরের অস্পৃশ্যতার বিরোধিতা: 

তিনি যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছেন। তিনি সোচ্চার হয়েছিলেন যারা অস্পৃশ্য হিসেবেও পরিচিত, তিনি দলিত বৌদ্ধ আন্দোলন করেন এবং বৌদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। তাছাড়া স্কুল জীবন থেকেই তিনি নিজেই অস্পৃশ্যতায় ভুগছিলেন। তাকে পাত্র থেকে জল নিতে দেওয়া হয়নি।

বেশিরভাগ সময় তাকে জল চাইলে দূর থেকে ঢেলে দেওয়া হতো। সত্যিই সমাজ কত রকম ভাবেই না মানুষকে বিচার করে। এমনও জানা গিয়েছে যে, তাকে মেঝেতে বস্তাতে বসিয়ে দেওয়া হতো। যার জন্য তাকে প্রতিদিন সেই বস্তা সাথে করে নিয়ে যেতে হতো শিক্ষা ক্ষেত্রে।

বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করা:

বি আর আম্বেদকর ছিলেন খুবই মেধাবী, নৃতত্ত্বের ছাত্র হিসেবে আম্বেদকার আবিষ্কার করেন যে মহরেরা আসলে প্রাচীন ভারতীয় বৌদ্ধ, বৌদ্ধ ধর্ম কে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তাদেরকে গ্রামের বাইরে সমাজচ্যুত দের মতো থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল।

অবশেষে তারাই অস্পৃশ্যতে পরিণত হয়েছিল। তিনি তো সারা জীবন ধরেই বৌদ্ধধর্ম অধ্যয়ন করেন, ১৯৫০ এর সময় তিনি এই ধর্মে তার সম্পূর্ণ মনোযোগ দেন এবং শ্রীলঙ্কা ভ্রমন করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য

বি আর আম্বেদকরের মৃত্যু:

পরবর্তীতে ১৯৪৮ সাল থেকে আম্বেদকর ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতির জন্য ১৯৫৪ সালের জুন মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। একসময় তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায় এবং রাজনৈতিক কারণে তিনি ক্রমশ অনেক তিক্ত, বিরক্ত হয়ে ওঠেন, যা তার স্বাস্থ্যের উপরে খুবই গুরুতর ভাবে প্রভাব ফেলে।

১৯৫৫ সালের সম্পূর্ণ বছরটা জুড়ে তিনি প্রচুর কাজ করার পরে তার শারীরিক অবস্থার অনেকখানি অবনতি ঘটে। টানা তিন দিনবুদ্ধ ও তার ধর্ম” বইটির সর্বশেষ পান্ডুলিপি তৈরির পর তিনি ৬ ই ডিসেম্বর ১৯৫৬ সালে তার দিল্লির নিজের বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এরপর ৭ ই ডিসেম্বর তার জন্য বৌদ্ধ ধর্মীয় আদলে দাদর চৌপাটি সমুদ্র সৈকতে একটি শবদাহ নির্মিত করা হয়। হাজার হাজার অনুসারী কর্মীবৃন্দ ও শুভানুধ্যায়ী ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হয়েছিলেন সেখানে। একটি ধর্মান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যারা শবদাহ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন, এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তারাও একই জায়গায় বৌদ্ধ ধর্মও গ্রহণ করেছিলেন।

তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে আম্বেদকরের দ্বিতীয় স্ত্রী সবিতা আম্বেদকর, যার নাম বিবাহের আগে সার্দা কবির ছিল, তিনিও কিন্তু স্বামীর সাথে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন এবং বৌদ্ধ হিসেবেই মারা যান।

ডঃ বি আর আম্বেদকর তিনি বিভিন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ডিগ্রী অর্জন করার পাশাপাশি সমাজের দলিত, অস্পৃশ্য এবং নিপীড়িত মানুষদের জন্য নিঃস্বার্থভাবে লড়াই করে গিয়েছেন। আর তাইতো সমাজের সকল স্তরের মানুষ তার জন্ম তারিখ কে জন্মবার্ষিকী হিসাবে ভীম জয়ন্তী অথবা আম্বেদকর জয়ন্তী হিসেবে পালন করে থাকেন। তাঁকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানানো ও স্মরণ করার জন্য এটি হলো বিশেষ দিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top