কথায় আছে রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন! কিন্তু রাগ তো আর এমনিতে হয়না, কোন বিশেষ কারণ ঘটলেই মানুষ সাধারণত রেগে যায়৷
তবে অকারণে বা অল্পে রেগে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে থাকে। আসলে কোন পরিস্থিতে কেউ রাগ করবে, তা অনেকটাই তার ব্যক্তিত্ব ও পারিপার্শ্বিকতার উপর নির্ভর করে। তবে কারণ যা ই হোক না কেন, রেগে ক্ষতি ছাড়া লাভ কিন্তু কিছুই হয়না।
বরং রাগের বশে খুন-খারাবি, ভাঙচুর, সম্পর্ক বিচ্ছেদ, এবং হাল ছেড়ে দেওয়ার মত ধ্বংসাত্বক ঘটনাই ঘটে থাকে। ঠান্ডা মাথায় এখন হয়ত আর্টিকেলটি পড়ছেন, কিন্তু রেগে গেলেই এই আর্টিকেলটিও অসহ্য মনে হবে৷
কিন্তু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন আপনি রেগে গিয়ে কার সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছেন? আর রেগে গিয়ে চেচামেচি করে আসলেই কতটুকু সমাধান করতে পেরেছেন সমস্যার?
উত্তর যদি এটাই আসে যে, ক্ষতি সবচেয়ে বেশী হয়েছে আপনার নিজের! আর রেগে গিয়ে রিয়্যাক্ট করায় আসলে কোন উপকারই হয়নি, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য উপকারী হবে।
কারণ আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব কিভাবে অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন।
বিষয়টি মোটেও সহজ নয়, তবে সব কিছুরই সমাধান থাকে, আর আমরা সেই সমাধানগুলো নিয়েই আজ কথা বলব। চলুন শুরু করা যাক আজকের আলোচনা।
অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণের অব্যর্থ কিছু উপায় :
১. যার প্রতি রাগ তার মুখোমুখি না হওয়া
কোন একটি কারণবশত কারো উপর যদি আমাদের রাগ হয়, তাহলে আমরা তার উপর ক্ষোভ পুষে রাখি।
আমাদের যা কিছু অভিযোগ এবং প্রশ্ন তা আমরা জমিয়ে রাখি, সামনা-সামনি এর উত্তর শোনার জন্য।
কিন্তু বাস্তবে যেটা হয় তা হচ্ছে অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজের দোষ স্বীকার করেনা, এবং তর্ক-বিতর্ক প্রায়ই সম্পর্ক বিচ্ছেদ বা মারামারির পর্যায়ে চলে যায়।
তাই কারো উপর রাগ হলে যদি এটা মনে হয় যে, তার সামনে গেলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না, তাহলে তার সামনে যাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
খুব প্রয়োজন হলে মেসেজ করে নিজের মতামত বা প্রশ্ন করুন। এতে উত্তরও মেসেজেই আসবে। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় থেকে দুজনই রক্ষা পাবেন, এবং ক্ষতির পরিমাণও তাতে কম হবে।
২. ঘটনাস্থল ত্যাগ করা
কোন স্থানে গিয়ে যদি কারো উপর রাগ হয়, বা এমন কোন ঘটনা ঘটে বা কেউ এমন আচরণ করে যা আসলেই রেগে যাওয়ার মত, তাহলে অবিলম্বে সেই স্থান ত্যাগ করুন।
এতে দুইটি লাভ হবে। আপনি যে রেগে গিয়েছেন সেটার নীরব প্রকাশ করা হল, এতে যার উপর রাগ করেছেন সে অনুতপ্ত হবে।
আর দ্বিতীয় সুবিধা হচ্ছে, সামনা-সামনি বিবাদ এড়ানো যাবে। মুখোমুখি বিবাদ মানেই কোন পক্ষই এতে নিজেদের দোষী ভাবেনা, এবং তর্কে হেরে যাওয়া মাত্রই নিজেদের সম্পর্ক এবং ক্ষমতা অনুযায়ী তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়।
বন্ধুর সাথে বন্ধুর ঝগড়া হলে বন্ধুত্বের ইতি ঘটে, প্রেমিক-প্রেমিকা হচ্ছে সম্পর্কের ইতি ঘটে, অফিসের বসের সাথে রাগারাগি হলে চাকরির সমাপ্তি ঘটে।
মানেটা বুঝতে পারছেন আশা করি, রাগের উত্তপ্ত প্রকাশ মানেই কোন না কোন ইতি বা সমাপ্তি ঘটা! আর তাই রাগকে নিয়ন্ত্রণে আনাই বুদ্ধিমানের কাজ।
৩. অন্য কোন কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া
যখন কারো উপর খুব রাগ হবে, বা অন্য কোন ব্যাপারে রাগ হবে, তখন অন্য কোন কাজে ব্যস্ত হয়ে যান।
সেটা হতে পারে ঘরের কাজ, অফিসের কাজ, বা কোন বিনোদনমূলক কিছু। কিন্তু রাগের সময় একেবারেই কিছু না করে বসে থাকবেন না।
এতে করে রাগ আরও বেড়ে যাবে, যা প্রতিফলন ঘটবে আপনার আচার-আচরণে ও কাজের মাধ্যমে। যেটা সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলবে।
তাই নিজের মন শান্ত করতে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ুন। এতে কিছু সময় পর রাগের মাত্রা কমে আসবে। চাইলেও আগের মত রিয়্যাক্ট করা সম্ভন হবেনা।
৫. বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
এটা পরিক্ষীত বিষয় যে, রাগের কারণ সমমনা কারো সাথে শেয়ার করলে এবং ভাল রিয়্যাকশন পেলে রাগ কমে যায়।
এখন ভার্চুয়ালি স্টোরি বা স্ট্যাটাস দিয়েও অনেকে রাগ প্রকাশ করে থাকেন। তবে সেক্ষেত্রে প্রাইভেসি বজায় রাখাই ভাল।
সরাসরি কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বললে আবারও কলহ সৃষ্টি হতে পারে।
বন্ধুদের মধ্যে যারা সবচেয়ে কাছের, যারা আপনাকে খুব ভাল বোঝেন, এবং আপনার মানসিকতার সাথে যাদের মিল রয়েছে তাদের সাথেই নিজের রাগের বিষয়গুলো শেয়ার করুন।
অল্প পরিচিত বা মানসিকতার মিল নেই এমন কাউকে রাগের কথা শেয়ার করলে সে হয়ত অন্যরকম রিয়্যাক্ট করবে বা আপনার ভুল ধরে দিবে৷ তাতে আপনার রাগ আরও বেড়ে যাবে।
৬. নিজের পছন্দের খাবার খাওয়া
হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। যখন আমাদের অসম্ভব রাগ হয়, তখন আমাদের ইচ্ছামত কাজ করতে পারলে রাগের পরিমাণ কমে যায়।
আর এক্ষেত্রে নিজের পছন্দের খাবার রাগ কমাতে অনেক সাহায্য করবে৷ বিশেষ করে ঠান্ডা কিছু।
নিজের রাগ কমাতে বাইরের ভাল কোন রেষ্টুরেন্টে গিয়ে নতুন আসা কোন আইটেম বা আপনার পছন্দের কোন আইটেম টেস্ট করতে পারেন।
এখন মহামারীর সময়ে যদি বাড়িতেই থাকেন, তাহলে অনলাইন ফুড অ্যাপ থেকে অর্ডার করে বাড়িতেই পেয়ে যাবেন পছন্দের খাবার।
এটা না করে নিজের পছন্দমত খাবার বাড়িতে রান্নাও করতে পারেন। এতে করে সময় ও কাটবে আবার নিজের পছন্দের খাবার খেয়ে রাগের মাত্রাও কমে যাবে।
অতিরিক্ত রাগ হলে এটা অবশ্যই করে দেখতে পারেন।
উপসংহার
অতিরিক্ত রাগ পুষে রাখা বা অন্যের প্রতি প্রকাশ করা দুইটাই শরীর, মন ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার জন্য খুবই খারাপ।
কারণ রাগ পুষে রাখলে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাবে, উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেবে। আর অন্যদের উপর রাগের বহিঃপ্রকাশ করলে সম্পর্ক খারাপ হবে এবং অনেক ক্ষেত্রেই বড় ধরনের দূর্ঘটনাও রাগের কারণেই হয়ে থাকে।
তাই চেষ্টা করুন রাগ কমিয়ে ফেলতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে। এরফলে সবদিকেই আপনি ভাল থাকবেন।
এই আর্টিকেলের অর্থ এই নয় যে, রাগ করতে পারবেন না, বা রাগের কারণ ঘটলেও হাসিমুখে থাকবেন। এখানে বলা হয়েছে আগে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কথা। যাতে ঠান্ডা মাথায় কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
আশা করি অতিরিক্ত রাগ কমাতে পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার অথবা কোন মতামত দেওয়ার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন।
আমরা আপনার মতামত গুরুত্বসহকারে নিয়ে অবশ্যই দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।