ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগের নাম, যা একবার হলে আপনার স্বাভাবিক অভ্যাসগুলো বাধাগ্রস্ত হবে। মিষ্টি খাওয়া যাবেনা, ঘন ঘন বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হবে, এরকম আরো অনেক সমস্যাই দেখা দেবে। অসুখ দেখা দেওয়ার পর তা নিরাময়ের চেয়ে দেখা দেওয়ার আগে, তা প্রতিরোধের চেষ্টা করাই সবচেয়ে ভাল।
আমরা অনেকেই এই রোগটি সম্পর্কে ভালভাবে জানিনা, তাই আমরা সচেতনতাও গড়ে তুলতে পারিনা। কিন্তু যদি রোগ সম্পর্কে আমরা জানি, তাহলে প্রতিরোধ করাও সহজ হয়। শরীরে যখন ইনসুলিন এর মাত্রার ভারসাম্যহীনতাই ডায়াবেটিস রোগের প্রধান কারন। অতিরিক্ত ওজন, শারীরিক পরিশ্রম না করা, অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহনের কারনে ইনসুলিনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।
সুপ্রিয় পাঠক আজ আমরা ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধের কিছু উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। এই উপায় অনুসরণ করলে আমরা ডায়াবেটিস রোগ থেকে দূরে থাকতে পারব। চলুন প্রিয় পাঠক, দেরী না করে আলোচনা শুরু করা যাক।
ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধের কিছু অব্যর্থ উপায়
১. অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহন বর্জন করুন
শরীরে পুষ্টি ও শক্তি যোগাতে খাদ্য প্রয়োজন। কিন্তু অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল নয়। আপনি যদি অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহন করেন তা চর্বিতে পরিণত হবে, এবং শরীরের স্বাভাবিক রক্ত চলাচল, রক্তে ইনসুলিনের মাত্রায় ভারসাম্যহীনতা দেখা দেবে।
তাই খাদ্যগ্রহনে সংযমী হোন। পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করুন, শরীরের চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যগ্রহন করুন, কিন্তু অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহন থেকে বিরত থাকুন।
২. শারীরিক পরিশ্রম করুন
ডায়াবেটিস বেশীরভাগ তাদেরই হয়, যারা শারীরিক পরিশ্রম ব্যতীত শুধুমাত্র শুয়ে বসে দিন কাটায়। এতে ওজন বেড়ে যায়, অতিরিক্ত চর্বিতে রক্তনালী সংকুচিত হয়ে যায়। তাই নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করুন।
নিজের কাজগুলো নিজেই করুন, হাটতে যান, বাগান করুন, রান্না করুন। শুয়ে বসে দিন কাটানোর চেয়ে সারাদিন কিছু না কিছু করলে মন ও শরীর দুইই ভাল থাকবে। আর ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে না।
৩. অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলুন
উচ্চতা অনুযায়ী আপনার ওজন যদি খুব বেশী হয়, আর শরীরে যদি মাংসপেশীর চেয়ে চর্বি বেশী থাকে, তাহলে অবশ্যই সেটা ক্ষতিকর, এতে কিডনি,লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। উচ্চরক্তচাপের সমস্যায় না পড়তে চাইলে বাড়তি ওজন হ্রাসের ব্যাপারে সিরিয়াস হোন।
৪. শাকসবজী ও ফল খান
খাদ্যতালিকায় কেবল শর্করা ও মাছ-মাংস রাখবেন না, সাথে প্রচুর পরিমান ফল ও শাক-সবজিও রাখুন। এটা আপনাকে মোটা হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে, শরীরে ইনসুলিনের ভারসাম্যহীনতা হতে দেবেনা, এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাব দূর করবে। আমরা অনেকেই সবজী ও ফল খেতে অনীহা প্রকাশ করি, যা মোটেও করা উচিত নয়।
৫. সফট ড্রিংক ও এলকোহল বর্জন করুন
এলকোহল শরীরের সব ধরনের অঙ্গ এবং অন্যান্য অংশের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হ্রাস করে। আর মিষ্টি পানীয় বা সফট ড্রিংকস সবসময়ই ক্ষতিকর। তাই এগুলো বর্জন করুন। ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকিমুক্ত থাকুন।
৬. অতিরিক্ত দুঃশ্চিন্তা পরিহার করুন
জীবন একটাই। এক জীবনে অনেক বেশী চিন্তা করে খুব বেশী লাভ হয়না, বরং ক্ষতিই বৃদ্ধি হয়। তাই অতিরিক্ত দুঃশ্চিন্তা পরিহার করুন। অতিরিক্ত দুঃশ্চিন্তা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ইনসুলিনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, ফলে ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৭. পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান
একটি পূর্নবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৮ ঘন্টা ঘুম দরকার। কমপক্ষে ৬ ঘন্টা অবশ্যই ঘুমাতে হবে, তা না হলে মানসিক অবসাদ, উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য সমস্যা দেখা দেবে। যা থেকে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
৮. ভিটমিন ডি গ্রহন করুন
ভিটামিন ডি রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন কিছু সময় হালকা রোদ সেবন করুন, সামুদ্রিক মাছ, মাছের তেল ও ডিমের কুসুম খান। এগুলো ভিটামিন ডি এর অভাব দূর করবে।
৯. আঁশজাতীয় খাবার
প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় আঁশজাতীয় খাবার রাখুন। এটা রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
উপসংহার
উপরিউক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করলে আপনি ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সক্ষম হবেন। এছাড়াও নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। শুধু ডায়াবেটিস নয় যেকোন রোগ থেকেই দূরে থাকতে পারবেন।
আশা করি ডায়াবেটিস প্রতিরোধে পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসবে। এ বিষয়ে কোন মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট করতে পারেন। আমরা অবশ্যই তথ্য জানিয়ে আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।