শরীরে টক্সিন জমে যাওয়া কিভাবে প্রতিরোধ করবেন? জেনে নিন

টক্সিন (Toxins) একটি ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ, যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কলকারখানা থেকে সাধারণত টক্সিন বা ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ নির্গত হওয়ার কথা শোনা যায়, কিন্তু এখন খাবারেও টক্সিন পাওয়া যায়।

কারণ এখন সবকিছুতেই ফরমালিন আর ভেজাল দেওয়া হয়। এজন্য এগুলো খুব সহজেই আমাদের শরীরে প্রবেশ করে আমাদের অসুস্থ করে ফেলে। এগুলো নিয়মিত শরীরে জমা হতে হতে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। যার ফলে আমাদের বিভিন্ন অসুখ দেখা দেয়, যেমন ওজন বৃদ্ধি, মাইগ্রেনের ব্যথা, মাংসপেশীসহ সারা শরীরে ব্যথা, হজমে বিঘ্ন ঘটা, চর্মরোগ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

How To Reduce Toxins from Your Body
How To Reduce Toxins from Your Body

এগুলো দীর্ঘমেয়াদে আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাড়ায়। এসব থেকেই পরবর্তীতে কঠিন অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়ি আমরা। এজন্য লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্র টক্সিন থেকে বাচতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে শরীরে টক্সিন জমে যাওয়া প্রতিরোধে করণীয় কিছু পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। চলুন দেরী না করে আলোচনা শুরু করা যাক। টক্সিন জমে যাওয়া প্রতিরোধে করণীয়:-

১. ডিটক্স ওয়াটার পান করুন

বর্তমানে খাদ্যে ভেজাল ও বায়ু দূষণ এমন পর্যায়ে এসেছে যে, তা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়ার কোন উপায় নেই। তাই এর বিষক্রিয়া থেকে বাচতে নিয়মিত ডিটক্স ওয়াটার খেতে পারেন। এটা বাড়িতেই তৈরি করতে পারেন।

আধা লিটার বা এক লিটার জলেতে লেবু, পুদিনা পাতা এবং শসা ভিজিয়ে ফ্রিজে রাখতে হবে। তারপর সকালে সেটা পান করবেন। শরীর টক্সিন মুক্ত রাখতে ডিটক্স ওয়াটার জাদুর মত কাজ করে। এজন্য প্রতিদিন নিয়মিত ডিটক্স ওয়াটার পান করুন, টক্সিন থেকে বাচুন।

২. বাসায় বাগান করুন

এখন বাইরের খাবার, ফল, সবজী ঔষধি সবকিছুতেই ভেজাল আর ফরমালিন মেশানো৷ কোন খাবারটি স্বাস্থ্যকর তা বুঝে ওঠা কঠিন। এজন্য বাইরের কেনা সবজী ও ফলের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে বাড়িতেই ছাদে অথবা খোলা জায়গায় টবে বা জলের ড্রামে সবজী ও ফলের গাছ লাগাতে পারেন।

এতে করে ফ্রেশ ফল ও সবজীর চাহিদা পূরণ হবে, আর টক্সিনের ভয়ও থাকবে না। আর বাগানের কাজ করলে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা হবে, ফ্রেশ বাতাসে শ্বাস নেওয়া হবে ফলে শরীরে টক্সিনের মাত্রা কমে যাবে।

৩. সল্ট বাথ শাওয়ার

শরীরে প্রতিনিয়ত যে টক্সিন জমা হয় তা দূর করতে ইপসম বাথ সল্ট দিয়ে শাওয়ার নিতে পারেন। স্নানের কুসুম গরম জলে ৩ চা চামচ ইপসম সল্ট,৩ চা চামচ খাওয়ার লবণ, অল্প অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার, এবং ১ চা চামচ বেকিং সোডার মিশ্রণ এতে মিশিয়ে নিন।

এরপর দুই পা এই জলে ভিজিয়ে রাখুন। গোড়ালি বা তার একটু উপর পর্যন্ত ভিজাতে পারেন। আধঘন্টা পর দেখবেন জলের রঙ পরিবর্তন হতে শুরু করবে। তখন বুঝবেন শরীর থেকে টক্সিন বের হওয়া শুরু হয়েছে। এটা সপ্তাহে একদিন করতে পারেন। এতে শরীর টক্সিন মুক্ত থাকবে। তবে হাই প্রেসারের রোগীরা এই সল্ট বাথ শাওয়ার নেবেন না।

৪. নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন

যারা নিয়মিত এক্সারসাইজ করেন তাদের শরীরে টক্সিন জমে থাকতে পারেনা। এক্সারসাইজের সময় যে ঘাম নির্গত হয়, তার মাধ্যমে টক্সিন বের হয়ে যায়। তাই নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন। এতে শরীর কর্মক্ষম থাকবে, শরীর টক্সিনমুক্ত ও করতে পারবেন।

এছাড়া শরীর সুস্থ, কর্মক্ষম রাখতে শরীরচর্চার কোন বিকল্প নেই। আমাদের বর্তমান সময়ে দূষনের মাত্রা এত বেশী বেড়ে গিয়েছে যে এখন অনেককিছুই আমাদের পক্ষে এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়। কিন্তু নিয়মিত এক্সারসাইজ করা হলে শরীরে যতই টক্সিন জমা থাক, তা বের হয়ে যাবে ঘামের মাধ্যমে।

৫. শুদ্ধ তেল ব্যবহার করুন

বাজারের খোলা তেল ব্যবহার না করার চেষ্টা করুন। কারণ এগুলো সবসময় পরিশুদ্ধ করা হয়না। রান্নার কাজে একই তেল বারবার ব্যবহার করবেন না। আমরা সাধারণত ডুবো তেলে ভাজা খাবার খেতে পছন্দ করি।

আর বাড়তি তেল অন্য কিছু রাধতে বা ভাজতে ব্যবহার করে থাকি।কিন্তু বারবার ব্যবহারের ফলে তেল পুড়ে গেলে তাতে টক্সিন উৎপন্ন হয়, আর তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এই উপায়েই সবচেয়ে বেশী মানুষের শরীরে টক্সিন প্রবেশ করে।

৬. ফল বা সবজী ধুয়ে নিন

এখন যেকোন ধরনের ফল বা সবজিতেই মিশানো হচ্ছে ফরমালিন। যা মূলত মৃত মানুষকে পচনের হাত থেকে রক্ষা করতে ব্যবহার করা হত। কিন্তু এখন সেটা অসাধ্য ব্যবসায়ীদের কল্যাণে খাবারে চলে এসেছে। এজন্য এই টক্সিন এড়াতে

বাইরে থেকে ফল বা সবজী আনলে তা কমপক্ষে ১৫ মিনিট জলেতে ভিজিয়ে রাখুন, তারপর ভালভাবে ধুয়ে রান্না করুন বা,ফল হলে কাচা খান। এতে ফরমালিন থাকলেও তা দূর হয়ে যাবে, ক্ষতিকর উপাদান থেকে রক্ষা পাবেন।

৭. ওভেনের ব্যবহার কমান

প্রতিদিনের স্বাভাবিক বিভিন্ন কাজের মাধ্যমেও টক্সিন আমাদের দেহে প্রবেশ করতে পারে। ওভেনে খাবার গরম করতে যে প্লাস্টিক বা পাত্র ব্যবহার করা হয় তাতে অনেক সময় জীবাণুর মাত্রা বেড়ে যায়। কারণ অধিক তাপে প্লাষ্টিকের ক্ষতিকর পদার্থ খাবারের সাথে মিশে যায়।

এভাবেই ধীরে ধীরে আমাদের শরীরে টক্সিন প্রবেশ করে, যার দীর্ঘমেয়াদি ফল আমাদের ভোগ করতে হয়। তাই খাবার চুলায় গরম করুন। ওভেন কম ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।

৯. প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকুন

যেকোন বায়ূ দূষন দূর করতে গাছ অগ্রণী ভূমিকা রাখে৷ বাসায়, ঘরের ভিতর, ছাদে গাছ লাগান। সবসময় ঘরবন্দী হয়ে থাকলে তা শরীরের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলবে। তাই যথাসম্ভব প্রকৃতির কাছাকাছি থাকুন, খালিপায়ে মাঝেমাঝে হাটুন।

নিয়মিত প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন। বাইরে হাটতে যান বা জগিং করুন। ফ্রেশ বাতাসে শ্বাস নিলে টক্সিনের মাত্রা কমে যায় শরীরে। প্রতিদিন অন্তত ১০-১৫ মিনিট প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন।

উপসংহার

পরিবেশ দূষন ও ভেজালের কারণে টক্সিন গ্রহনের মাত্রা কমানো অনেক জটিল হয়ে পড়েছে। তবে উপরিউক্ত উপায় অনুসরণ করে টক্সিন গ্রহনের মাত্রা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। তাই উপায়গুলো অবশ্যই অনুসরণ করুন।

আশা করি শরীরে টক্সিন জমা প্রতিরোধ করতে উপায়গুলো আপনাদের উপকারে আসবে। পোস্টটির বিষয়ে কোন তথ্য জানানোর হলে বা কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করুন। আমরা অবশ্যই তথ্য জানিয়ে আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top