কলা একটি অতি পরিচিত ফল যা প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। অন্যান্য ফলে তুলনায় কলা সহজলভ্য। এটি সুস্বাদু ও পুষ্টিগুন সম্পন্ন। পাকা কলা সবার পছন্দ। এছাড়া কাচাকলা সবজি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তরকারি রান্না ছাড়া ও কাচা কলার ভর্তা অনেকের প্রিয়। কলায় রয়েছে প্রচুর খাদ্য শক্তি।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সাথে কলা চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই কলা চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।
চলুন দেখে নেই কলা চাষের বিস্তারিতঃ
মাটিঃ
কলা চাষের জন্য দরকার উজ্জ্বল রোদ যুক্ত ও সুনিষ্কাশিত উচু জমি। উর্বর দোআঁশ মাটি কলা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কলা চাষের জন্য জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। জমিকে সমতল ও আগাছা মুক্ত করে তৈরি করতে হবে। শুষ্ক আবহাওয়া বা অনেক সময় ধরে খরা চললে বা শিলাবৃষ্টি হলে কিংবা ঝড়, জলোচ্ছ্বাস বা বন্যা হলে কলা চাষে ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে।
বংশ বিস্তারঃ
কলা গাছের বংশবিস্তার হয় রাইজোম থেকে বা গাছের গোড়া থেকে চারা বের হয় তা থেকে। গাছের গোড়া থেকে দুই ধরনের চারা বের হয়ে থাকে।
চারা রোপণঃ
কলার চারা বছরে তিন সময়ে রোপণ করতে হয়। আশ্বিন থেকে কার্তিক মাসে প্রথম বার রোপণ করতে হয়। এটি সবচেয়ে ভালো সময়। তারপর মাঘ থেকে ফাল্গুন মাসে দ্বিতীয় বার রোপন করতে হয়। এটি ও ভালো সময় । সব শেষে চৈত্র থেকে বৈশাখ মাসে তৃতীয় বার রোপণ করতে হবে। এটি মোটামুটি ভালো সময়।
চারার দূরত্বঃ
কলার চারা লাগানোর সময় সারি থেকে সারির দূরত্ব হতে হবে ২ মিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ও হবে ২ মিটার।
গর্ত তৈরিঃ
কলার চারা রোপণ করার এক মাস আগে থেকেই গর্ত তৈরি করে রাখতে হবে। গর্তের আকার হতে হবে চওড়া ৬০ সেমি ও গভীরতা ৬০ সেমি। গর্ত তৈরি করার পর এর মাটির সাথে গোবর সার ও টিএসপি সার মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে।
চারা রোপণঃ
চারা রোপণ করার জন্য সবচেয়ে উত্তম হলো অসি তেউড়। কারণ এর পাতা চিকন, সুচালো ও অনেকটা তলোয়ারের মতো দেখতে। এর গুড়ি বড় হয় এবং খুব শক্তিশালী হয়ে থাকে। রোগমুক্ত গাছ থেকে তেউড় সংগ্রহ করতে হবে। তিন মাস বয়সী তেউড় বাছাই করতে হবে।
সার প্রয়োগঃ
জমি যদি উর্বর হয় তাহলে প্রতি গাছের জন্য গোবর সার ১০ কেজি, ইউরিয়া সার ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৪০০ গ্রাম, এমওপি ৬০০ গ্রাম, ইত্যাদি সার পরিমিত পরিমাণে প্রয়োগ করতে হবে।
সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
জমি তৈরির জন্য অর্ধেক গোবর সার জমি তৈরির সময় দিতে হবে আর বাকি অর্ধেক দিতে হবে গর্তে। একইভবে টিএসপি সার ও অর্ধেক গর্তে দিতে হবে। চারা রোপন করার দেড় থেকে দুই মাস পর চার ভাগের এক ভাগ ইউরিয়া, অর্ধেক এমওপি সার ও অর্ধেক টিএসপি সার জমিতে ভালোভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে।
তারপর মাটি কুপিয়ে মাটির সাথে সার মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর দুই থেকে আড়াই মাস পর প্রতি গাছ অনুযায়ী বাকি সার প্রয়োগ করতে হবে। কলার মোচা বের হবারা সময় বাকি সার জমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে এবং মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
সেচ ও নিকাশঃ
জমিতে প্রয়োজন অনুযায়ী জল সেচ দিতে হবে। চারা রোপন করার পর যদি জমিতে রস না থাকে তাহলে জমিতে জল সেচ দিতে হবে।
কলার জমিতে শুকনা মৌসুমে দশ থেকে পনের দিন পর পর জল সেচ দিতে হয়। আবার বর্ষাকালে বাগানে যাতে অতিরিক্ত জল না জমে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তার জন্য জমিতে নালা তৈরি করে দিতে হবে যাতে অতিরিক্ত জল বের হয়ে যেতে পারে।
চারা ছাটাইঃ
কলার কাদি বের হবার আগ পর্যন্ত কলা গাছের গোড়ায় কোন চারা গাছ রাখা উচিত না। কাদি বের হবার পর একটি চারা রেখে বাকি সব চারা কেটে ফেলতে হবে। মাটির সমান করে এগুলো কেটে ফেলতে হবে।
অন্যান্য পরিচর্যাঃ
কলা গাছের অন্যান্য পরিচর্যার মধ্যে আছে ঠিক সময়ে বেড়া দিতে হবে, সময়মতো আগাছা দমন করতে হবে, গাছে ঠেস দিতে হবে, পাতা পরিষ্কার করে দিতে হবে, গাছের গোড়ায় মাটি দিতে হবে, কলার মোচা অপসারণ, কলার কাদি ঢেকে দেওয়া ইত্যাদি পরিচর্যা করতে হবে।
রোগ দমন ব্যবস্থাপনাঃ
কলা গাছের অন্যতম রোগের মধ্যে হচ্ছে পানামা রোগ, বানচিটপ ভাইরাস রোগ, সিগাটোকা রোগ ও কলার দাগ রোগ। পানামা রোগ প্রতিকারের জন্য আক্রান্ত চারা গাছকে গোড়া সহ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। সিগাটোকা রোগে আক্রান্ত গাছের পাতা তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
এছাড়া ও পরিমিত পরিমানে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে রোগ ও পোকা মাকড় দমন করার জন্য। রোগ আক্রান্ত জমিতে বার বার কলা চাষ করা উচিত নয়।
ফসল সংগ্রহঃ
কলা গাছের চারা রোপণ করার দশ থেকে পনের মাসের মধ্যেই সাধারনত সব জাতের কলা পাকতে থাকে। এরপর সেই পাকা কলা সংগ্রহ করতে হবে। অবশ্য কাঁচা কলাও তরকারী হিসেবে খাওয়া যায়।
ফলনঃ
কলাগাছের ভালোভাবে যত্ন নিলে অনেক ভালো ফলন হয়ে থাকে। প্রতি হেক্টরে প্রায় ১২-১৫ টন কলা পাওয়া যেতে পারে। তাই কলা চাষ করে আমাদের দেশে অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে।