সুস্থ শরীর মানেই কর্মক্ষম, কাজের গতি থাকা। মানুষ সাধারণত বেশ কিছুক্ষণ কাজ করার পর সামান্য দূর্বল অনুভব করে, অথবা অনেক শক্ত কাজের পর দূর্বল বোধ করে।
কিন্তু কেউ যদি সর্বক্ষন দূর্বল বোধ করে সেটা অবশ্যই খারাপ কোন অসুখের ইঙ্গিত দেয়। অনেক সময় খাদ্যের অনিয়ম বা রক্তস্বল্পতা থেকে শারীরিক দূর্বলতা দেখা দেয়।
সেটা ঠিক করতে হলে দ্রুত শরীর গঠন করে এমন খাদ্য নিয়মিত খেলে শারীরিক দূর্বলতা কেটে যায়, কিন্তু পুষ্টিহীনতা ছাড়াও এমন কিছু কারণ রয়েছে যার জন্য শারীরিক দূর্বলতা দেখা দেয়।
এগুলোর মধ্যে কিছু কারণ জটিল রোগের ইঙ্গিত দেয়, আর কিছু কারণ তেমন জটিল নয়, অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমেই এর সমাধান করা সম্ভব হয়।
সুপ্রিয় পাঠক আজ আমাদের লেখা সাজানো হয়েছে শারীরিক দূর্বলতার কারণ ও তার প্রতিকার নিয়ে। চলুন জেনে নেয়া যাক শারীরিক দূর্বলতার কারণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে।
শারীরিক দূর্বলতার কারণ
১. আমিষের অভাব
আমিষ জাতীয় খাদ্য শরীর গঠন ও মাংশপেশী গঠন করে। কিন্তু খাদ্যে যদি পর্যাপ্ত পরিমান আমিষ না থাকে তখন হাত, মুখ, পা ফুলে যায়, মেজাজ খুবই খিটখিটে হয়ে থাকে এবং প্রচন্ড শরীর ব্যথা হতে পারে।
যদি দেখেন এইসব লক্ষন আপনারও দেখা দিয়েছে তাহলে বুঝবেন আপনার আমিষের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
২. রক্তস্বল্পতা
যাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন কম, তারা প্রচুর শারীরিক দূর্বলতায় ভোগেন। শরীরে যতটুকু রক্ত থাকা প্রয়োজন ততটুকু না থাকলেই কাজ করতে গেলে অথবা সবসময় দূর্বল লাগবে।
৩. পর্যাপ্ত জলের অভাব
জল আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপ নিয়ন্ত্রণ করে। জল যদি খুব কম পান করেন, সেক্ষত্রে শরীরের ভারসাম্য ঠিক থাকবে না, জলের অভাবে দূর্বল বোধ করবেন।
৪. শারীরিক পরিশ্রম না করা
যারা সারাদিন শুয়ে বসে আরামে থাকেন, তারাও শারীরিক দূর্বলতায় ভোগেন।
কারণ তারা নিজেদের কর্মক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করেন না বিধায় তাদের আরও দূর্বল লাগে।
৫. দূর্বল কিডনি
কিডনি আমাদের শরীরে জল এবং অন্যান্য খাবার থেকে সব পুষ্টি নিয়ে দেহের দূষিত পদার্থ বের করে দেয়।
কিন্তু কোন কারণে যদি দূষিত পদার্থ বের হয়ে না যায়, তবে দিনদিন এসবের বিষক্রিয়ায় আপনি আরও বেশী দূর্বল হয়ে পড়বেন।
৬. নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ
যারা নেশা করে, তারা শুধুমাত্র নেশার সময় নিজেদের অনেক সুখী ও শক্তিশালী ভাবে। কিন্তু নেশার ঘোর কাটতেই তারা শারীরিকভাবে দূর্বল বোধ করেন।
৭. অতিরিক্ত ঘুমানো
অতিরিক্ত ঘুমালে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা হওয়া সহ শারীরিক দূর্বলতা দেখা দেয়।
কারণ অতিরিক্ত ঘুমালে অনেকক্ষণ যাবত দেহের কোন অঙ্গ দিয়ে যেহেতু কোন কাজ করা হয়না, তাই সেগুলো আড়ষ্ট হয়ে পড়ে।
শারীরিক দূর্বলতার প্রতিকার
১. সুষম খাদ্য গ্রহণ
দেহের সঠিক পুষ্টি, বৃদ্ধি ও শক্তির জন্য সবরকম খাদ্য উপাদানের সমন্বয়ে সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
শুধুমাত্র ভিটামিন,বা শর্করা, আমিষ, ক্যালসিয়াম বা যেকোন এক বা দুই জাতীয় খাদ্য উপাদানকে বেশী প্রাধান্য দিয়ে দৈনিক ক্যালরির চাহিদা পূরণ করা যাবেনা। সবরকম খাদ্যই খেতে হবে।
২. পর্যাপ্ত জল পান
জলের অভাব শরীরকে দূর্বল ও নিস্তেজ করে দেয়, কারণ আমাদের দেহকোষে অধিকাংশই জল।
তাই পর্যাপ্ত জল পান করুন। এতে শরীর বিষাক্ত পদার্থমুক্ত থাকবে এবং জলের অভাবে দূর্বলতাও দেখা দেবেনা।
৩. মাদক বর্জন করুন
সবরকম অ্যালকোহলই শরীরের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর, যারা মাদক সেবন করে তাদের জীবনীশক্তি আস্তে আস্তে কমে যায়, ওজন হ্রাস পায় এবং শারীরিক দূর্বলতা দেখা দেয়। তাই মাদককে না বলুন।
৪. নিয়মিত শরীরচর্চা
নিয়মিত পরিশ্রম ও শরীরচর্চা আপনার ক্ষুধা বাড়াবে, আপনি তৃষ্ণার্ত হবেন, ফলে জল পান করবেন।
শরীরে মাসল বাড়বে, ফ্যাট কমে যাবে, মনোযোগ বাড়বে এবং হার্ট,কিডনি, লিভার সবকিছুই সুস্থ থাকবে।
৫. অন্যান্য অভ্যাস
পর্যাপ্ত পরিমান শাকসবজী ও ফল খান, প্রতিদিন ৬-৮ ঘন্টা ঘুমান। অসময়ে খাওয়া, এবং দেরীতে ঘুমানোর অভ্যাস ত্যাগ করুন।
বাথরুমের সমস্যা থাকলে চিরতা বা নিমের রস খান প্রতিদিন স সকালে খালিপেটে। এটা আপনার কিডনি ও লিভার ভাল রাখবে।
শেষ কথা
শারীরিক দূর্বলতা বিভিন্ন কারণে দেখা দিতে পারে। অনেকেই শারীরিক দূর্বলতাকে পাত্তা দেন না, আবার অনেকেই বিচলিত হয়ে বিভিন্ন টেস্ট করান।
দুইটার কোনটিই ঠিক নয়। কারণ শারীরিক দূর্বলতার সাথে অন্য কোন উপসর্গ না থাকলে প্রথমেই কোন টেস্ট করানোর প্রয়োজন নেই।
আপনি লক্ষ্য রাখুন উপরিউক্ত কোন কারণ ঘটেছে কিনা, যদি এমন কোন কারণ না থাকে এবং সাথে আরও কোন লক্ষন থেকে থাকে, তবে জরুরীভাবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
আশা করি পোস্টটি আপনাদের শারীরিক দূর্বলতার কারণ জানতে এবং প্রতিকার করতে সাহায্য করবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার অথবা কোন মতামত দেওয়ার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন।
আমরা আপনার মতামত গুরুত্বসহকারে নিয়ে অবশ্যই দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।