লোহরি 2024 (Lohri 2024 Date Time and Significance) 2024 লোহরির ইতিহাস এবং জানুন লোহরি কেন পালন করা হয়? লোহরির তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য লোহরির গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
উৎসবে উৎসবে ভরপুর বাঙ্গালীদের জীবন। একটা উৎসবের আমেজ কাটিয়ে না উঠতে উঠতে আরেকটি উৎসব যেন দরজায় এসে কড়া নাড়ে। তাইতো সারাক্ষণ খুশির আমেজ বজায় থাকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষদের জন্য। তেমন একটি উৎসব হল লোহরি। এই উৎসব উত্তর ভারতের একটি বিখ্যাত উৎসব, বিশেষ করে কৃষি প্রধান রাজ্য পাঞ্জাবের।
এই উৎসব মকর সংক্রান্তের একদিন আগে পালন করা হয়। এই উৎসব অনুসারে ঘুড়ি উড়িয়ে থাকেন অনেকেই। এই দিন গুলিতে বিভিন্ন বিশ্বাসের সাথে সারা দেশে উৎসবটি উপভোগ করা হয়। শিখ সম্প্রদায়ের জন্য একটি বিশেষ উৎসব এবং নববিবাহিত দম্পতিদের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎসব।
প্রতিটি উৎসবে যেমন ইতিহাস রয়েছে তেমনি এই লোহরি উৎসবেরও ইতিহাস আছে। তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই উৎসবের ইতিহাস সম্পর্কে:
লোহরি উৎসবের ইতিহাস 2024:
এই উৎসব একটি গল্পের সাথে জড়িত। যেটা দুল্লা ভাট্টি এর গল্পের সাথে জড়িত কাহিনী অনুসারে সম্রাট আকবরের আমলে দুল্লা ভাট্টি পাঞ্জাবে থাকতেন। তিনি জোর করে বিক্রি হওয়া হিন্দু মেয়েদের মুক্তি দিয়েছিলেন এবং ধনী এবং সামন্ত প্রভু দের কাছ থেকে অর্থ লুট করে গরিবদের মধ্যে তা বিতরণ করেছিলেন।
এর পাশাপাশি তিনি এইসব মেয়েদেরকে হিন্দু রীতি অনুযায়ী হিন্দু ছেলেদের সাথেই বিয়ে দিয়ে দেন এবং যৌতুকও দেন। যার কারণে তিনি পাঞ্জাবের মানুষের কাছে হয়ে ওঠেন একজন নায়ক। আর সেই কারণে এই উৎসবের সময় লোহরির গানের সাথে দুললা ভাট্টির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে তার নাম নেওয়ার কথা কখনোই ভোলেন না শিখ সম্প্রদায়ের মানুষজন।
লোহরি পূজার বিধি 2024:
লোহরি উৎসব দেশের বিভিন্ন জায়গায় পালন করা হয়। এই দিনে শ্রীকৃষ্ণ, আদি শক্তি ও অগ্নিদেবের বিশেষ পূজা করা হয় লোহরির দিন বাড়ির পশ্চিম দিকে আদি শক্তির মূর্তি বা ছবি রেখে এবং সর্ষের তেলের প্রদীপ জ্বালিয়ে থাকেন অনেকেই। তারপর প্রতিমার উপরে চন্দন ও বেলপাতা অর্পণ করা হয়।
শুকনো নারকেল নিয়ে তার সাথে কর্পূর যোগ করে আগুন জ্বালিয়ে তিল, ভুট্টা ও চিনা বাদাম মিশিয়ে ৭ থেকে ১১ বার তাওয়াফ করা হয়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, এটি করলে সারা বছরই একজন ব্যক্তির ওপর মহাদেবীর কৃপা থাকে। এছাড়াও অর্থ এবং খাবারের কোনরকম অভাব হবে না সংসারে।
লোহরি উৎসবের তাৎপর্য 2024:
এই উৎসবটি ফসল কাটা এবং বপন হিসেবে উদযাপিত করা হয়। এই দিনে মানুষজন আগুন জ্বালিয়ে আনন্দ উপভোগ করেন এবং সেই আগুনের চারপাশে নাচ গান করে থাকেন। গুড়, তিল, রেবদি ইত্যাদি আগুনে ফেলে একে অপরের মধ্যে বিতরণ করার রীতিও রয়েছে। এই সময় অনেকখানি গুরুত্ব থাকে বিবাহিত বোন এবং কন্যাদের, তাদের এই দিনে বাড়িতে আমন্ত্রণ করতে এখানকার মানুষ কখনোই ভোলেন না।
সেই জন্যই তো এই উৎসব সদ্য বিবাহিত মেয়েদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাঞ্জাবে ফসল কাটার সময় এই উৎসব পালন করা হয়। বোন এবং কন্যাদের সম্মান রক্ষার জন্য এই উৎসব পালন করা হয় বলে জানা গিয়েছে। এই উৎসবে রবিশস্য তুলে নিয়ে অগ্নি দেবকে উৎসর্গ করা হয় এবং সূর্যদেব এবং অগ্নিদেবকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।
লোহরি এমন একটি উৎসব যা হলো দক্ষিণায়নের শেষ সূচকের প্রতীক মানুষজন সূর্য দেবতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং কৃষকরা একটি ভালো উৎকৃষ্ট মনের ফসলের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে থাকেন।
এই উৎসবের সঙ্গে সম্পর্কিত জনপ্রিয় যে বিশ্বাস গুলি রয়েছে সেটি হল এই উৎসবের মধ্যে যে লোহরি শব্দটি আছে সেটা কে অর্থ হিসেবে লোহা বলে মনে করা হয়। ঐতিহ্যগত বিশ্বাস অনুসারে সমাজ সংস্কারক কবির দাসের স্ত্রী লোয়ের নাম অনুসারে লোহরির নামকরণ করা হয়েছে।
এছাড়া দুল্লা ভাট্টি নামে একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির সাহসিকতার কথা এই উৎসবের সাথে অঙ্গাভঙ্গি ভাবে জড়িত। যিনি কিনা দুজন সুন্দরী হিন্দু নারীকে মুঘলদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন যে দুজন হিন্দু সুন্দরী নারীর নাম, একজনের নাম ছিল সুন্দরী এবং অপরজনের নাম ছিল মুন্দ্রি, এবং পরবর্তীকালে তিনি তাদেরকে মেয়েদের মত দেখাশোনা করে হিন্দু ছেলেদের সাথেই বিবাহ দিয়েছিলেন।
লোহরি উৎসবের কাহিনী 2024:
এই উৎসবের কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, লোহরি হোলিকার বোন, তার ভাই হিরণ্যকশিপু (যিনি কিনা একজন রাক্ষস), প্রহ্লাদকে (যিনি কিনা ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্ত) আগুন দিয়ে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। তো বিষ্ণু প্রহ্লাদ কে আগুন থেকে রক্ষা করেছিলেন এবং পাপের জন্য হোলিকাকে শাস্তি প্রদান করেছিলেন। লোহরি অগ্নি ঈশ্বরের ক্রোধ থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন এবং তাই লোহরির দিন তাকে স্মরণ করা ও হয়ে থাকে।
লোহরি উৎসব বিবাহিত মেয়েদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ:
এই উৎসব ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের জম্মু অঞ্চল, পাঞ্জাব এবং হিমাচল প্রদেশের লোহরি একটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃত। পাঞ্জাবে মকর সংক্রান্তি মাঘি নামে পরিচিত এই উৎসব যেটা লোহরির আগে হয়। এই উৎসবটি জনপ্রিয় শীতকালীন লোক উৎসব। তাদের রক্ষা করার জন্য অর্থাৎ বাড়ির বোন ও মেয়েদের রক্ষা করার জন্য এই উৎসব হয় বলে অনেকের ধারণা।
তাই এই উৎসবে বিবাহিত মেয়েদের নিজের ঘরেতে নিমন্ত্রণ করে আনার প্রথা অনেক দিন আগে থেকেই চলে আসছে। হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান এবং কিছু মুসলমানরা পাঞ্জাবের গ্রামাঞ্চলে এবং ফয়সালবাদ ও লাহোর শহরে এই উৎসবটি পালন করে থাকেন।
ঐতিহ্যগতভাবে লোহরি হলো একটি উর্বরতা, সৌভাগ্য এবং শুভ বিষয়ের প্রতিক বলে বিশ্বাস করা হয়। বিবাহের পর প্রথম লহরী একজন সদ্য বিবাহিত দম্পতি বা নবজাতকের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রতিটি উৎসব মানুষের সাথে বিশেষভাবে মিশে গিয়েছে। সেই উৎসবের সাথে অনুষ্ঠান, মেলা, পার্বণ সবকিছু দিয়ে পালন করার সাথে সাথে মনের ইচ্ছা ঈশ্বরের কাছে জানানো, সংসারে আয়, উন্নতি, সবার মঙ্গল কামনায় এই উৎসব পালন করে থাকেন এখানকার সাধারণ স্থানীয় মানুষজন।