গুরু নানক জয়ন্তী 2024 (Guru Nanak Jayanti 2024 Date Time and Significance) 2024 গুরু নানক জয়ন্তী ইতিহাস এবং জানুন গুরু নানক জয়ন্তী কেন পালন করা হয়? গুরু নানক জয়ন্তী তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য গুরু নানক জয়ন্তী গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
গুরু নানকের জন্মতিথি উপলক্ষে পালিত হয় গুরু নানক জয়ন্তী, শিখ ধর্মের প্রবক্তা এবং এই ধর্মের প্রথম গুরু হলেন তিনি। প্রতিবছর কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে তাঁর জন্মোৎসব হিসাবে গুরু নানক জয়ন্তী পালিত হয়। শিখ ধর্মে বিশ্বাস করা হয়ে থাকে, পরবর্তী শিখ গুরুদের গুরুপদ লাভের সময় তাদের মধ্যে ঐশ্বরিক ক্ষমতা, ধর্মীয় কর্তৃত্ব ও পবিত্রতা প্রবাহিত হয়ে থাকে।
শিখ সম্প্রদায়ের প্রথম গুরু নানক দেবের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গুরু পর্ব উদযাপিত হয়। এটি গুরু নানক জয়ন্তী নামে পরিচিত। তিনিই সেই ব্যাক্তি, যিনি শিখ ধর্মের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। তাই তার ভক্তরা যুগ যুগ ধরে এই দিনটি খুবই ভালবাসা এবং শ্রদ্ধার সাথে উদযাপন করে থাকেন।
তার জন্মদিন চন্দ্র ক্যালেন্ডার এর উপর নির্ভর করে প্রতিবছর পরিবর্তিত হতে থাকে। শিখ সম্প্রদায়ের ১০ জন গুরু রয়েছেন এবং প্রত্যেকেরই নিজস্ব গুরু পর্ব রয়েছে, কিন্তু সেই ধর্মের প্রবক্তা এবং এই ধর্মের প্রথম গুরু হলেন গুরু নানক।
গুরু নানকের জীবনী 2024:
গুরু নানকের জীবনী সম্পর্কে কিছু জানা যাক:
- জন্ম: ১৫ ই এপ্রিল ১৪৬৯ সাল, তালবন্দী গ্রাম, দিল্লির সুলতানত, (বর্তমানে যেটা নানকানা সাহেব, পাকিস্তান)
- ধর্ম: শিখ ধর্ম, কিন্তু জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বী
- স্ত্রীর নাম: মাতা সুলক্ষণী
- পিতার নাম: মেহতা কালু
- মায়ের নাম: তৃপ্তা
- মৃত্যু: ২২ শে সেপ্টেম্বর ১৫৩৯ সাল, তখন বয়স ছিল ৭০ বছর, মুঘল সাম্রাজ্য, বর্তমানে কর্তারপুর, পাকিস্তান,
- সমাধিস্থল: গুরুদ্বারা দরবার, সাহেব কর্তারপুর, পাকিস্তান।
গুরু নানক জয়ন্তীর ইতিহাস 2024:
গুরু নানক জয়ন্তীর ইতিহাস সম্পর্কে জানতে গেলে জানা যায় যে, ১৪৬৯ সালে কার্তিক পূর্ণিমাতে গুরু নানক দেব রায় -ভোয় – কি তালবন্দী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যা তৎকালীন দিল্লির সুলতানত এর একটি প্রদেশ ছিল। বর্তমানে এই জায়গাটি পাকিস্তানের নানকান সাহেব নামে পরিচিত। তার পিতা দাস ব্যাধি হিসাবে পরিচিত ছিলেন কল্যাণ দাস মেহতা এবং মাতা ছিলেন তৃপ্তি দেবী।
এছাড়াও তিনি ইসলাম এবং হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করেছিলেন সেই সময়ে। তিনি এক ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলেন এবং তিনি সবসময়ই বলতেন যে, হিন্দু বা মুসলমান বলে কিছু নেই।
তার মত অনুসারে স্মরণ করার মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে সংযোগ স্থাপন করা যায়। যে কোন নামে ঈশ্বরের উপাসনা করা যায় এবং ঈশ্বরের কাছে নিজের সমস্ত প্রার্থনা জানানো যায়, পঞ্চদশ শতাব্দীতে তিনি শিখ ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন।
এছাড়া গুরু নানক দেবের বাণীগুলি শিখ ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহেব নামে বইতে সংরক্ষিত করা আছে। তার শিক্ষায় বিভিন্ন নীতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা ধার্মিকতা, পবিত্রতা এবং নিঃস্বার্থ সেবার গুণাবলী সম্পর্কিত এক ঈশ্বরের নামে বিশ্বাস করা হয় এবং ধ্যানের পাঠ রয়েছে।
শিখ ধর্মে বিশ্বাস করা হয় যে, পরবর্তী শিখ গুরুদের গুরুপদ লাভের সময় তাদের মধ্যে গুরু নানকের ঐশ্বরিক ক্ষমতা, ধর্মীয় কর্তৃত্ব ও পবিত্রতা প্রবাহিত হয়ে থাকে। ১৪৯৬ সালে তিনি তার পরিবার ত্যাগ করেন এবং তার শিক্ষা প্রচারের জন্য আধ্যাত্মিক জীবন যাত্রা শুরু করেছিলেন।
তিনি বহু জায়গায় ভ্রমণ করে মানুষের মধ্যে এক ঈশ্বরের মতবাদ প্রচলন করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। তিনি সমতা, সদা আচরণ, ভ্রাতৃত্ববোধ এর উপরে নির্ভর করে একটি অনন্য ধর্মীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
গুরু নানক জয়ন্তীর তাৎপর্য 2024:
শিখ সম্প্রদায়ের কাছে গুরু নানক জয়ন্তী এই দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। তাই তারা গুরু পর্বের ১৫ দিন আগে প্রতি ভোরে প্রভাত ফেরির আয়োজন করে। এছাড়াও গুরু পর্ব উদযাপনের একদিন আগে নগর কীর্তন এর আয়োজন করা হয়। তাছাড়া শিখ ধর্মাবলম্বীরা গুরু নানক দেবের শিক্ষা অনুসরণ করে শপথ গ্রহণ করেন।
এই ধর্ম অনুসারে শিখ ধর্মের তিনটি মূলনীতি হল, ১) নাম জাপানা অর্থাৎ সারাক্ষণ ঈশ্বরের স্মরণ করা, ২) কিরত কর্ণ অর্থাৎ নিঃস্বার্থভাবে মানুষের সেবা করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকা, ৩) ভন্ড ছকনা, যার মানে হল আপনার যা কিছু আছে তা সকলের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়া।
এর পাশাপাশি গুরু পর্বের দিন ভোর ৪ টের সময় প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে দিন শুরু হয়। আর এই সময়টি অমৃত ভেলা নামেও পরিচিত সকলের কাছে। এরপর আবৃত্তি এবং কীর্তন, শিখ রীতি অনুসারে স্তব যাকে বলা হয়।
এরপর গুরুদ্বার প্রাঙ্গণে লঙ্গরখানার আয়োজন করা হয়। শিখ ঐতিহ্য অনুসারে এক ধরনের কমিউনিটি রান্নাঘর এর আয়োজন এর মূল মন্ত্র হল ধর্ম, বর্ণ ও সংস্কৃতি নির্বিশেষে সকলকে বিনামূল্যে খাওয়ানো, এটি নিঃস্বার্থভাবে করা হয়ে থাকে। যেখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এবং বিভিন্ন বর্ণের মানুষ গিয়ে, তাদের ক্ষুধা নিবারণ করে থাকেন।
সেই কারণে শিখ ধর্মাবলম্বীরা এই ধর্মের প্রথম গুরু এবং এই ধর্মের প্রবক্তা গুরু নানককে শ্রদ্ধা জানাতে প্রতিবছর কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে তার জন্ম উৎসব হিসাবে গুরু নানক জয়ন্তী পালন করা হয়।
তবে এই তিথি অনুসারে প্রতিবছর তারিখ একটু এদিক ওদিক হয়ে থাকে। এদিন উৎসব শুরু হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে একটানা গুরুগ্রন্থ পাঠ করা হয় এবং একটি মিছিল বের হয়, যা গুরুদুয়ার থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে থাকে।
তাছাড়া নিশান সাহেব পতাকা নিয়ে মিছিল শুরু হয়। পালকি বহন করা হয় এবং সেই পালকিতে থাকে গুরুগ্রন্থ সাহেব, মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ধর্মীয় গান গেয়ে থাকেন। এরপর শুরু হয় দুয়ারে ফিরে খাবার বিতরণ করা, যেখানে অগণিত দরিদ্ররা এসে তাদের খাবার সংগ্রহ করে নিতে পারে।
তো এইভাবে গুরু নানকের জন্মদিন উপলক্ষে শিখ ধর্মের মানুষেরা প্রতি বছর তাকে শ্রদ্ধা জানাতে এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন অনুসারে তাকে এই দিনটি উৎসর্গ করে থাকেন। তারপর প্রার্থনা, অনুষ্ঠানও হয় কিছু কিছু জায়গায়। শিখ ধর্মের প্রবক্তাকে তার ভক্তরা বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জানিয়ে থাকেন এই দিনে।