শিক্ষক দিবস 2023 (Teachers Day 2023 Date Time and Significance) 2023 শিক্ষক দিবস ইতিহাস এবং জানুন শিক্ষক দিবস কেন পালন করা হয়? শিক্ষক দিবস তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য শিক্ষক দিবস গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
প্রতিটি ছাত্রছাত্রীদের কাছে এই দিনটি বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। টিচার্স ডে (Teachers Day) অথবা শিক্ষক দিবস, ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে এই দিনটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, এই বিশেষ দিনটি পালিত হয় সেই শিক্ষকদের ভালোবাসা ও সম্মান জানাতে যারা ছাত্রদের শুধু জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রেই সাহায্য করেন নি, সাথে তাদেরকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন ভবিষ্যতের লক্ষ্যে। শিক্ষা দিয়েছেন একজন ভালো মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে।
অনেকেরই মুখে বলতে শোনা যায়, জীবনে যিনি প্রথম দিনের পৃথিবীর জ্ঞানের আলো দেখান, তিনিই প্রথম গুরু। যে মানুষটি হাত ধরে সমস্ত বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে সুন্দর পরিবেশে চলতে শেখায়, তিনিও কিন্তু একজন শিক্ষক। সে হিসেবে মায়েরাও কিন্তু শিক্ষক হয়ে থাকেন। মা বাবাই শিশুর প্রথম শিক্ষক, তাই শিক্ষক দিবসে তাঁদের কে শ্রদ্ধা জানাতে ভোলেন না অনেকেই।
আমাদের জীবনে প্রতিদিনেরই কিছু না কিছু তাৎপর্য থাকে, আনন্দ উপভোগ করার কোন সীমা নেই। প্রতিটি দিন যেন আমাদের কাছে উৎসব। তেমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হল ৫ ই সেপ্টেম্বর, শিক্ষক দিবস। তবে বিশ্বব্যাপী ৫ ই অক্টোবর শিক্ষক দিবস পালন করা হলেও ভারতে এই দিনটি পালিত হয় ৫ ই সেপ্টেম্বর।
ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি ও দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি তথা প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের জন্ম জয়ন্তী ৫ ই সেপ্টেম্বর অর্থাৎ তার জন্ম তিথি উপলক্ষে এই দিনটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, শিক্ষক দিবসের ইতিহাস ও তাৎপর্য সম্পর্কে:
শিক্ষক দিবসের ইতিহাস 2023:
এই দিনটির ইতিহাস সম্পর্কে জানতে গেলে, জানা যায় যে, ১৯৬২ সালে ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। তাছাড়া জানা যায় কয়েকজন ছাত্র, বন্ধু-বান্ধব প্রখ্যাত শিক্ষাবিদের জন্মদিন পালন করতে ইচ্ছুক হয়েছিলেন। সেই সময় রাধা কৃষ্ণান জানিয়েছিলেন তার জন্মদিন আলাদা ভাবে পালন না করে এই দিনটি দেশের সব শিক্ষকের জন্য পালন করা হলে তিনি খুবই গর্ববোধ করবেন এবং খুশি হবেন।
2023 শিক্ষক দিবস শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস ছবি
এই আবেদন শিক্ষকদের প্রতি তার ভালোবাসা ও সম্মানকেই প্রকাশ করেছিল, আর তাই ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডক্টর রাধা কৃষ্ণান এর জন্মদিন শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তিনি বিশ্বাস করতেন দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিদেরই শিক্ষক হওয়া উচিত। এই দিনটির সাথে সাথে ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ এর জন্মদিন ও পালন করা হয়ে যায়।
শিক্ষক দিবসের কিছু জানা-অজানা তথ্য:
শিক্ষকদের এই অবদানকে সম্মান জানানোর জন্য ১৯৯৪ সাল থেকে ৫ ই অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন শুরু হয় ইউনেস্কো তে। ৫ ই অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়। ইংল্যান্ড, জার্মানি, রোমানিয়া, রাশিয়া, সার্বিয়ার মতো কয়েকটি দেশে এই দিনে শিক্ষক দিবস পালন করা হয়।
তাছাড়া অফিসের ১০০ টিরও বেশি দেশে আলাদা আলাদা তারিখে শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। ২৮ শে ফেব্রুয়ারি শিক্ষক দিবস পালিত হয়। লিবিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, সংযুক্ত আরব শাহির মত দেশ গুলিতে।
১৯৪৪ সালে আমেরিকার মৈটে ওয়ায়েটে উডব্রিজ সর্বপ্রথম শিক্ষক দিবসের পক্ষে প্রশ্ন করেন, পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে মার্কিন কংগ্রেস তাতে সায় দেয়। ১৯৮০-৮০ সাল থেকে ৭ ই মার্চ, শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়।
কিন্তু পরবর্তীতে মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার এই দিনটি পালিত হতে থাকে। আবার সিঙ্গাপুরের সেপ্টেম্বরের প্রথম শুক্রবার শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয় এবং আফগানিস্তানের পাঁচই অক্টোবর এই দিনটি পালন করা হয়।
ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ, এর জীবন সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা যাক:
তিনি ছিলেন খুবই মেধাবী এবং নিজের অধিকাংশ পড়াশোনায় ছাত্র বৃত্তির সাহায্যে সম্পন্ন করেছিলেন। ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ এর বাবা তার ইংরেজি শিক্ষা ও স্কুল যাওয়ার বিরোধী ছিলেন, তার বাবা চেয়েছিলেন তিনি যেন পুরোহিত হন।
ডক্টর রাধা কৃষ্ণান পড়ুয়াদের মধ্যে এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন যে, তার কলকাতা যাওয়ার সময় তাকে ফুলে সাজানো গাড়িতে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রেল স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শোভাযাত্রা হিসাবে।
প্রখ্যাত অধ্যাপক এইচ এন স্পেলডিং ডক্টর রাধা কৃষ্ণের ভাষণ এর দ্বারা এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়, তার জন্য চেয়ার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এছাড়া শিক্ষাক্ষেত্রে অভূতপূর্ব যোগদানের জন্য ১৯৩১ সালে, ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেছিল।
শিক্ষক দিবস উপলক্ষে স্কুল কলেজ সমস্ত জায়গাতে শিক্ষক দের প্রতি এবং গুরুদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উপহার দেওয়া হয়। সকলে নিজেদের সাধ্যমত শিক্ষক দের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন ফুল, চকোলেট আর অন্যান্য উপহার এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র উপহার দেওয়ার প্রচেষ্টা করে থাকে। আর এই একটা দিন হলো শিক্ষকদের থেকে, কোনরকম বকাঝকা না খেয়ে তাদের সাথে ভালোবাসা ভাগাভাগি করে নেওয়া।
শিক্ষকদের থেকে ভয় পায় না, তারা কিন্তু ছোট ছোট হাতে উপহার নিয়ে বুকে সাহস জুগিয়ে সেই রাগী শিক্ষকের কাছে এই দিনের শুভেচ্ছা জানাতে এগিয়ে যায়। এই দিন উপলক্ষে আনন্দ, অনুষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এর আয়োজন খুবই চোখে পড়ার মতো। সঠিক শিক্ষার আলোতে শিক্ষিত হোক, সমস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণ তবেই না তারা ভবিষ্যতে গিয়ে একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে। তাই তো এই দিনটির গুরুত্ব এতখানি তাদের হাত ধরেই আসবে নতুন যুগ।
তবে হ্যাঁ আপনার প্রথম শিক্ষক বাবা-মা এবং পরিবারের আরো অন্যান্য সদস্যরা যারা আপনাকে নতুন কিছু শিখতে আগ্রহী করেছে, জীবনে চলার পথে অনেক জ্ঞান প্রদান করেছে। তাদেরকে শ্রদ্ধা জানাতে একেবারেই ভুলবেন না। কেননা আপনার জীবনের প্রথম শিক্ষক হলেন তারাই। অবসর নিয়েছেন এমন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্মান জানাতে তাদের বাড়িতে হাজির হন পুরনো ছাত্রছাত্রীরা। এতে কিন্তু প্রচুর পরিমাণে আনন্দ পেয়ে থাকেন তারা।
কেননা ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কাটানো সেইসব সুন্দর মুহূর্তগুলো হয়তো অবসর গ্রহণের পরে শুধুমাত্র স্মৃতি হয়ে থাকে, যখন আপনি কোন রকম ছোট উপহার নিয়ে সেই শিক্ষক অথবা শিক্ষাকে, শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা জানাবেন, তখন দেখবেন আনন্দে তাদের চোখ দুটি জলে ভরে উঠেছে। যারা আমাদের জীবনে এতখানি আলো ভরিয়ে দিতে পারে, তাদের জন্য এতটুকু করা তো যেতেই পারে, তাই না !