প্রধানমন্ত্রী মেক ইন ইন্ডিয়া মিশন 2024: যোগ্যতা ও আবেদন পদ্ধতি

মেক ইন ইন্ডিয়া 2024: দেশীয় উৎপাদন খাতকে আরও উন্নত করে তোলার লক্ষ্যে এবং দেশে ব্যবসায় এবং ক্ষুদ্রশিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দ্বারা চালুকৃত একটি ভারত সরকার প্রকল্প হচ্ছে মেক ইন ইন্ডিয়া।

একটি দেশ তখনই অর্থনৈতিক দিক দিয়ে উন্নতি লাভ করে যখন সে দেশ তার অভ্যন্তরীণ শিল্প ও উৎপাদন খাতে উন্নতি লাভ করে।

Make in India Mission
মেক ইন ইন্ডিয়া 2024 – Make in India Mission 2024

আমদানী নির্ভর দেশগুলো কখনোই বিশ্ব অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারেনা, কোন কারণে আমদানী না করতে পারলেই দেশের জনগণের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে উৎপাদন বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই।

সুপ্রিয় পাঠক, আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে মেক ইন ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্য , পরিকল্পনা এবং উদ্যোগগুলি, সুবিধা, চ্যালেঞ্জ এবং মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্প সম্পর্কিত অগ্রগতি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হবে। চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

মেক ইন ইন্ডিয়া মিশন 2024

ভারত সরকার পিছিয়ে থাকা ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েছে।

G.O.I. (Government of India) বিদেশী ব্যবসায়ীদের দেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে এবং দেশের ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে উন্নত করে এখানে উৎপাদন বাড়ানো পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে।

এই প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হ’ল ধীরে ধীরে ভারতকে বৈশ্বিক উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করা এবং দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা।কারণ দেশীয় উৎপাদনে দেশের প্রচুর কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী নিয়োজিত থাকে, ফলে তারা বেকারত্ব থেকে মুক্তি পায়, দেশের কল্যাণের পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়।

মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের নামকরণ করা হয় ২৫ শে সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই প্রকল্পটি চালু করেন। মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকটি ভিজিট করতে পারেন।

মেক ইন ইন্ডিয়া মিশন লক্ষ্যমাত্রা

উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি প্রতি বছর ১২-১৪% এ বৃদ্ধি করা। ২০২২ সালের মধ্যে উত্পাদন খাতে ১০০ মিলিয়ন অতিরিক্ত কর্মসংস্থান তৈরি করা।

২০২২ সালের মধ্যে জিডিপিতে উৎপাদন খাতের অংশীদারিত্ব বাড়িয়ে ২৫২ শতাংশে উন্নীত করা হবে।

সারাদেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শহুরে দরিদ্র এবং গ্রামীণ অভিবাসীদের মধ্যে প্রয়োজনীয় দক্ষতার সেট তৈরি করা যাতে উভয়শ্রেণীই সুবিধা ভোগ করতে পারে। উৎপাদন খাতে গার্হস্থ্য শিল্প এবং গৃহভিত্তিক শিল্পে প্রযুক্তিগত ব্যবহার বৃদ্ধি।

পরিবেশগতভাবে উপযুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত উৎপাদন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে উৎপাদন কার্য সম্পাদন।।ভারতীয় উৎপাদন খাতের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা জোরদার করা।

মেক ইন ইন্ডিয়া – অগ্রগতি

মেক ইন ইন্ডিয়া স্কিমের জন্য হয়েছে বেশ কয়েকটি মাইলফলক নির্ধারণ করা হয়েছে। পণ্য ও পরিষেবাদি শুল্ক (GST) প্রবর্তনের ফলে ব্যবসায়ের জন্য ট্যাক্স পদ্ধতিগত ব্যবস্থা সহজ হয়েছে। GST মেক ইন ইন্ডিয়া প্রচারণার একটি আকর্ষণীয় ও জরুরী দিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দেশে ডিজিটালাইজেশনে গতি অর্জন করেছে। কর, কোম্পানির অন্তর্ভুক্তি এবং অন্যান্য অনেক প্রক্রিয়া সামগ্রিক প্রক্রিয়াটিকে সহজ করেছে এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করে অনলাইনেও এই প্রক্রিয়া সংযুক্ত করা হয়েছে। এটি ইওডিবি সূচকে ভারতের র‌্যাঙ্ককে শক্তিশালী করেছে।

নতুন ইনসলভেন্সি কোড যথা, ইনসোলেভেন্সি এবং দেউলিয়া কোড ২০১৬ সালে একক আইনে ইনসলভেন্সি সম্পর্কিত সমস্ত আইন এবং নিয়মকে একীভূত করেছে। উৎপাদনে অক্ষম এবং সমস্যায় পতিত খাত ও ব্যবসায় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কর ও শুল্কে ছাড় ও নগদ সহায়তাও পাবেন।

PMJDY (Pradhan Mantri Jan Dhan Yojana)য়ের মতো আর্থিক অন্তর্ভুক্তির স্কিমগুলির কারণে, মে ২০১৯ পর্যন্ত ৩৬৫ মিলিয়ন নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল।

এফডিআই উদারকরণ নীতির কারণে ভারতের ইওডিবি সূচককে অনুকূল হতে সাহায্য করেছে। এফডিআই প্রবাহ কর্মসংস্থান, আয় এবং বিনিয়োগ তৈরি করবে। ভারতমালা এবং সাগরমালার পাশাপাশি বিভিন্ন রেলওয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে অবকাঠামোগত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি লাভ করেছে।

ভারতনেট – এটি দেশের গ্রামীণ অঞ্চলে ডিজিটাল নেটওয়ার্কগুলি উন্নত করতে G.O.I. (Government of India) দ্বারা স্থাপন করা একটি টেলিকম অবকাঠামো সরবরাহকারী।

এটি সম্ভবত বিশ্বের বৃহত্তম গ্রামীণ ব্রডব্যান্ড প্রকল্প যেখানে বায়ু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার দিক থেকে ভারত বিশ্বে চার নম্বরে রয়েছে। সামগ্রিকভাবে, ইনস্টল করা নবায়নযোগ্য শক্তি সক্ষমতাতে ভারত বিশ্বের পঞ্চম স্থানে রয়েছে।

মেক ইন ইন্ডিয়া – উপকারিতা

মেক ইন ইন্ডিয়া ক্যাম্পেইনটি দেশের জন্য বেশ কয়েকটি ইতিবাচক অগ্রগতি অর্জন করেছে। নীচে আরও কিছু সুবিধা রয়েছে যা এই মিশন থেকে নেওয়া হয়েছে।

মেক ইন ইন্ডিয়া মিশন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা করেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রসারিত করে জিডিপি বৃদ্ধি করেছে, ফলে দেশের রপ্তানির মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এফডিআইয়ের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে।

ক্ষুদ্র নির্মাতারা বিশেষত বিদেশের বিনিয়োগকারীরা যখন এতে বিনিয়োগ করেন তখন তারা দেশীয় অর্থনীতির উন্নয়ন দেখে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন।

দেশগুলি যখন ভারতে বিনিয়োগ করবে, তারা তাদের সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের উদ্ভাবিত সর্বশেষতম প্রযুক্তিও নিয়ে আসবে। মিশনের আওতায় নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে ভারত ইওডিবি সূচকে শীর্ষে উঠে দাঁড়িয়েছে।

গ্রামীণ অঞ্চলে উৎপাদন কেন্দ্র এবং কারখানা স্থাপনের ফলে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, ফলে দেশীয় পণ্যের বাজার বিস্তৃত হবে,রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।

মেক ইন ইন্ডিয়া – চ্যালেঞ্জস

মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পটি যেমন সফলতা দেখেছে তেমনি এর সীমাবদ্ধতাও রয়েছে।

ভারতে প্রায় ৬০% আবাদযোগ্য জমি রয়েছে। ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের উপর চাপ পড়লে তা কৃষিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে বলে জানা গেছে। এমনকি এটি আবাদযোগ্য জমিতে যদি ব্যবসায় স্থাপন করা হয় তবে উৎপাদন স্থায়ীভাবে ব্যাহত হতে পারে।

এটিও বিশ্বাস করা হয় যে দ্রুত শিল্পায়ন করতে গিয়ে যাতে প্রাকৃতিক সম্পদের হ্রাস না পায় সেদিকে ও মিশন লক্ষ্য রাখবে। কিন্তু এতদিকে লক্ষ্য রেখে মিশনের কাজ বাস্তবায়ন করা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ।

দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও এই পণ্যগুলিকে বিদেশী পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হয়। সবসময়ে দেশী পণ্য প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনা, কারণ দেশীয় পণ্যের উৎপাদন খরচ বেশী হয়, ফলে দামও বেশী এবং অনেক সময় দেশীয় পণ্যের মানও বিদেশী পন্যের মত হয়না।

এর ফলে দেশীয় পণ্য উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া মেক ইন ইন্ডিয়া মিশন পরিবেশ দূষণ এবং পরিবেশগত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

দেশে শারীরিক অবকাঠামোগত সুবিধার ক্ষেত্রে মারাত্মক লক্ষণ রয়েছে। প্রচারটি সফল হওয়ার জন্য, দেশে উপলভ্য অবকাঠামো তৈরি করা এবং সর্বনিম্ন স্তরে দুর্নীতির মতো সমস্যা হ্রাস করা প্রয়োজন।

এখানে, ভারত চীন থেকে শিক্ষা নিতে পারে, যা ১৯৯০ এর দশকে বৈশ্বিক উৎপাদনে নাটকীয়ভাবে উন্নতি করেছে এবং ২০১৩ সালে উৎপাদন ২৪.৯% এ উন্নীত করেছে।

চীন তার রেলপথ, সড়কপথ, বিদ্যুৎ, বিমানবন্দর ইত্যাদির মতো অবকাঠামো দ্রুত বিকাশ করেছে।

মেক ইন ইন্ডিয়া কতটা সফল?

মেক ইন ইন্ডিয়া বিদেশ থেকে মোবাইল আমদানী কমাতে দেশেই মোবাইল উৎপাদন করছে এবং এই সেক্টরে উন্নতি লাভ করেছে। আশা করা যায় এবার মোবাইল আমদানীর হার অনেক কমে যাবে।

দেশের দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যোগাযোগ ও ইন্টারনেট ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে, ফলে মানুষ এখন ঘরে বসে প্রযুক্তিগত সুবিধা উপভোগ করতে পারছে।

বিভিন্ন অবকাঠামো সুবিধার জন্য দেশের এক স্থান হতে অন্যস্থানে পণ্য ও সেবা সরবরাহে গতিশীলতা এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের মানুষ বিদেশী পণ্য ও প্রযুক্তি দেখে আফসোস করবেন না হয়ত।

কারণ দেশীয় পণ্য ও প্রযুক্তি তখন এতটাই উন্নত হয়ে যাবে যে তা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে।

উপসংহার

অবহেলিত খাতসমূহের উন্নয়ন, দেশীয় পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নয়ন, দেশের জনগণের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বৃদ্ধি মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

এই উদ্দেশ্য পূরণে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ ও অসুবিধা থাকলেও উদ্দেশ্য পূরণে সরকার কাজ করে চলেছে। এই মিশনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ আরও ২৫ টি প্রকল্প রয়েছে যার কাজ চলমান। প্রতিটি প্রকল্প সফল হলে বৈশ্বিক উৎপাদন ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিতে ভারত একসময় এক নাম্বারে অবস্থান করবে।

ডিজিটাল ভারত গঠনের স্বপ্ন পূরন হবে। আশা করি মেক ইন ইন্ডিয়া সম্পর্কে ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি। সুপ্রিয় পাঠক, আমাদের লেখার উদ্দেশ্য থাকে ভারত সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প এবং তার অগ্রগতি সম্পর্কে আপনাদের জানানো, যাতে সেগুলো সম্পর্কে আপনারা অবগত হতে পারেন এবং সুবিধাসমূহ উপভোগ করতে পারেন।

আশা করি পোস্টটি ভাল লাগলে এ বিষয়ে মন্তব্য করে আমাদেরকে উৎসাহ প্রদান করবেন। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে।

কেন্দ্র সরকারের সমস্ত যোজনাClick Here
পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত প্রকল্পClick Here
বাংলাভুমি হোমClick Here

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top