শালগম কমবেশি সবার কাছেই পরিচিত। একটি সাধারনত নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় উপযোগী। কম তাপমাত্রায় এটি ভালো জন্মে।
এই গাছের বৃদ্ধির জন্য প্রচুর আলো দরকার হয়ে থাকে। তাপমাত্রা বেশি হলে ফসলের মান কমে যায়। স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। মূল আশময় হয়ে যায়। আবার বেশি বৃষ্টিপাত ও শালগম চাষের জন্য ক্ষতিকর।
আজ আমরা আপনাদের সাথে শালগম চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই শালগম চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন শালগম চাষের পদ্ধতি বিস্তারিতঃ
জমি ও মাটি:
শালগম চাষে জমি অধিক আলো যুক্ত হতে হবে। শালগম চাষে সাধারনত বেলে দোআঁশ মাটি বেশি উপযোগী।
চাষের সময়:
শালগম চাষ করার উপযুক্ত সময় হলো রবি মৌসুম। শালগম গাছ বৃষ্টিপাত সহ্য করতে পারে না। চারা কচি অবস্থায় যদি বৃষ্টি হয় তাহলে ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
তাই শালগম এমন সময় চাষ করতে হবে যখন বৃষ্টি পাত না হয়। সাধারনত নভেম্বর মাসের প্রথম থেকে ডিসেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত শালগমের বীজ বপন করার উপযুক্ত সময়।
জমি তৈরি:
জমিতে বীজ বপন করার আগে জমি ভালো ভাবে তৈরি করে নিতে হবে। জমিতে ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে। তারপর বীজ বপন করতে হবে।
বীজ প্রস্তুত:
উন্নত ফলন পেতে হলে ভালো মানের বীজ বাছাই করতে হবে। বীজ গুলো ৫% লবনের দ্রবণে ডুবিয়ে রাখতে হবে।
তাহলে নিম্ন মানের বীজ গুলি ভেসে উঠবে এবং ভালো বীজ গুলি দ্রবনের নিচে থাকবে। এভাবে ভালো বীজ বাছাই করা যাবে।
বীজ শোধন:
বীজ বপন করার আগে বীজ শোধন করে নিতে হবে। বীজ শোধন করে নিলে বীজ বাহিত রোগ দ্বারা ফসল আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে না।
বীজ গুলি প্রথমে একটু বেশি গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে তারপর একবারে খুব ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
এছাড়া বীজ গুলি পটাসিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট দ্রবণে ও ভিজিয়ে নিয়ে শোধন করা যাবে।
বীজ বপন:
বীজ বপন করে আবার চারা রোপন করে শালগমের চাষ করা যায়। তবে চারা রোপন করতে গেলে অনেক সময় প্রধান শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা থাকে তাই চারা রোপন পদ্ধতি না ব্যবহার করাই ভালো।
ভালো মানের বীজ বপন করার ৪০-৫০ দিনের মধ্যেই ফসল সংগ্রহের উপযোগী হয়ে থাকে। বীজ সারিতে বপন করতে হবে।
এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব হবে ৩০ সেমি। এক চারা থেকে আরেক চারার দূরত্ব হবে ২০ সেমি।
বীজের হার:
বীজ বপন করলে এক শতক জমিতে ১২ গ্রাম চারা প্রয়োজন হতে পারে। চারা রোপন করলে এক শতক জমিতে ২.৫ গ্রাম চারা রোপন করা যেতে পারে।
সার ব্যবস্থাপনা:
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে। এক হেক্টর জমিতে গোবর দিতে হবে ১০ টন, ইউরিয়া সার ১৫০ কেজি, টিএসপি দিতে হবে ১২৫ কেজি, পটাশ দিতে হবে ১৭৫ কেজি।
তবে যদি আগাম জাত চাষ করা হয়ে থাকে তাহলে ফসল লাগানোর সময় সব সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। আর নাবি জাত চাষ করলে ইউরিয়া সার ও পটাশ সার জমিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
বীজ বপন করার ৩০ দিন পর প্রথম কিস্তি সার প্রয়োগ করতে হবে । তখন ইউরিয়া দিতে হবে ১৫০ গ্রাম ও এমওপি দিতে হবে ১৫০ গ্রাম।
আর বীজ বপন করার ৪৫ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি দিতে হবে আরো ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১৫০ গ্রাম এমওপি। প্রতিবার সার প্রয়োগ করার পর জমিতে সেচ দিতে হবে।
সেচ প্রয়োগ:
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে সেচ দিতে হবে। সেচ দেওয়ার পর জমিতে জো আসলে মাটির চটা ভেঙে দিতে হবে।
জমিতে চারা রোপন করার পর প্রয়োজন অনুযায়ী এক সপ্তাহে দুটি সেচ দিতে হবে। তারপর ৭-১০ দিন পর পর সেচ দিলে হবে।
জমিতে সেচ ঠিক মত দিতে হবে কারণ ফসলের আর্দ্রতা মাটির আর্দ্রতার উপর নির্ভর করে। জমিতে জলের পরিমান কম হলে ফল গুলি তিতা স্বাদ যুক্ত হয়ে যেতে পারে।
আবার জল বেশি হলে ফলের স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং ফল জলময় হয়ে যেতে পারে। তাই শালগম চাষে মাটিতে জলের পরিমান ঠিক রাখা খুব জরুরি।
আগাছা দমন:
জমির আগাছা ঠিক মত পরিষ্কার করে দিতে হবে। জমিতে আগাছা জমে থাকলে ফসলের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
জমি নিড়ানি দিয়ে গোড়া আলগা করে দিতে হবে। প্রয়োজনে গোড়ায় মাটি দিয়ে দিতে হবে।
রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনা:
শালগম চাষে কাটুই পোকা ক্ষতিকারক। এ পোকা চারা গাছ কেটে নষ্ট করে ফেলে। তাই এ পোকা দমন করার জন্য ৫ লিটার জলে ১.৫ চা চামচ পরিমান ডায়াজিনন নিয়ে মিশাতে হবে।
তারপর তা স্প্রে করতে হবে জমিতে। এছাড়া জাব পোকা ও শুয়ো পোকা ও গাছের পাতা খেয়ে পাতা নষ্ট করে ফেলে। এর জন্য ম্যালাথিয়ন পরিমিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ:
শালগম বেশি পরিপক্ক হয়ে গেলে বাজারে আনা যাবে না। তখন সে সব শালগমের মূল আশ যুক্ত হয়ে যায় এবং ফসল স্বাদহীন হয়ে যায়।
সাধারনত বীজ বপন করার ৪৫-৬০ দিনের মধ্যেই শালগম খাওয়ার উপযু্ক্ত হয়ে থাকে।
ফলন:
এক শতক জমিতে প্রায় ১০০-১২০ কেজি শালগম এর ফলন হয়ে থাকে।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।