ঠোঁট চেহারার মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় অঙ্গ। ঠোঁট সুন্দর ও আকর্ষণীয় হোক, এটা আমরা সকলেই চাই৷ কিন্তু বিভিন্ন কারণে ঠোঁটের সৌন্দর্য হারিয়ে যায়, ঠোঁট শুষ্ক ও কালচে হয়ে যায়।
ঠোঁট শুষ্ক ও কালচে থাকলে তাতে কোন লিপষ্টিক বা লিপ কালারও ভাল লাগেনা। আর যারা লিপস্টিক ব্যবহার করেন না, তাদের চেহারা অনেক বেশী বিবর্ণ দেখায় ঠোঁটের কারণে।
ঠোঁট শুষ্ক ও কালচে হওয়ার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে, এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে, অতিরিক্ত লিপষ্টিক ব্যবহার, লিপষ্টিক পুরনো হলে বা ঠিকভাবে পরিষ্কার না করা হলে, পুষ্টিহীনতা,অনিদ্রা, ধুমপান, ঠোঁটের যত্ন না নেওয়া ইত্যাদি।
এই কারণগুলোর জন্যই মূলত ঠোঁট কালচে ও অনুজ্জ্বল দেখায়। কিন্তু চেহারা সুন্দর রাখতে হলে ঠোঁটের যত্ন নেয়া আবশ্যক। আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে ঠোঁটের শুষ্কতা ও কালচেভাব দূর করার কার্যকর উপায়।
আশা করি পোস্টটি পড়ার পর আপনাদের ঠোঁট কালচে ও শুষ্ক হওয়ার সমস্যায় আর ভুগতে হবেনা৷ চলুন প্রিয় পাঠক, দেরী না করে আলোচনা শুরু করা যাক।
ঠোঁটের শুষ্কতা ও কালচেভাব দূর করার কার্যকর উপায় :
১. ঠোঁটের যত্নে নিয়মিত স্ক্রাবিং
জ্বী হ্যাঁ, শিরোনামে ঠিকই পড়ছেন। ঠোঁটে সবচেয়ে বেশী মৃতকোষ বা ডেডসেল জমে। ঠোঁটের বাড়তি কোন তেলগ্রন্থি নেই বিধায়, ঠোঁট বেশী শুকিয়ে যায়। আর ঠোঁটের চামড়া উঠতে থাকে।
এমন অবস্থায় মৃতকোষ বা ডেডসেলস নিয়মিত পরিষ্কার করা না হলে ঠোঁটে কোন ধরনের লিপষ্টিক বা লিপবাম লাগানো হলেও ঠোঁট সুন্দর দেখাবে না, ফাটা চামড়া বোঝা যাবে।
এজন্য ঠোঁটের যত্নে সপ্তাহে ৩-৪ দিন স্ক্রাবিং করতে হবে। স্ক্রাবিং এরজন্য টুথপেস্ট এর সাথে বেকিং সোডা বা চিনি মিশিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন ৫-৭ মিনিট, তারপর নরম ব্রাশ দিয়ে ঠোঁটের উপর ঘষুন। সমস্ত মৃতকোষ উঠে যাবে।
২. অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার না করা
ঠোঁটের চামড়া খুবই নরম ও সংবেদনশীল। তাই অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করা হলে ঠোঁটের চামড়া ফেটে যায়, ঠোঁট খসখসে ও কালচে হয়ে যায়।
এজন্য ঠোঁটে অতিরিক্ত কোন প্রসাধনী যেমন, লিপষ্টিক, লিপ লাইনার, ম্যাট লিপষ্টিক, ড্রাই লিপষ্টিক, গ্লস, গ্লিটার লিপষ্টিক এগুলো বারবার ব্যবহার করা ঠোঁটের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
সবচেয়ে ভাল হয়, যদি ঠোঁটে সবসময় ভ্যাসলিন ব্যবহার করা যায়। কারণ এটা বারবার দিলেও সমস্যা নেই। কিন্তু ড্রাই লিপষ্টিক ও ম্যাট লিপষ্টিক বারবার দিলে ঠোঁট কালচে ও শুষ্ক হয়ে যাবে।
৩. ঠোঁটের যত্নে ভ্যাসলিন
ঠোঁটের যেহেতু কোন বাড়তি তেলগ্রন্থি নেই তাই ঠোঁটের যত্নে সবসময় ভ্যাসলিন ব্যবহার করুন। এটা ঠোঁটের ত্বক নরম রাখবে, চামড়া ওঠা বন্ধ করবে।
সারাদিন ঠোঁটে ভ্যাসলিন লাগিয়ে রাখতে পারেন। চাইলে রাতেও ভ্যাসলিন মেখে ঘুমাতে পারেন। এটা করলে কখনোই ঠোঁটের চামড়া উঠবেনা।
ভ্যাসলিন ব্যবহারের ফলে ঠোঁটের কালচেভাব ও শুষ্কতা কমে আসবে অনেকটাই।
৪. দুধ ও দুধের সর লাগান
ঠোঁটের ডেডসেলস ও কালচেভাব দূর করার অব্যর্থ উপায় হচ্ছে কাচাদুধ ও দুধের সর ব্যবহার করা। লিপষ্টিক ওঠানোর পর, কাচাদুধে তুলা ভিজিয়ে ঠোঁটে লাগান।
এটা করলে ঠোঁটের কালচেভাব দূর হয়ে ঠোঁট গোলাপী হয়ে যাবে। এছাড়া ঠোঁটে দুধের সর লাগাতে পারেন। এটাও একইভাবে ঠোঁটের কালচেভাব দূর করবে সেই সাথে শুষ্ক ঠোঁট নরম ও আকর্ষণীয় করে তুলবে।
৫. লেবু ও মধু
লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড ঠোঁটের কালচেভাব দূর করতে সাহায্য করে।
তবে শুধু লেবু দিলে ঠোঁটের শুষ্কতা বেড়ে যেতে পারে, এজন্য লেবুর রসের সাথে মধু মিশিয়ে ঠোঁটে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ঠোঁট নরম উজ্জ্বল ও গোলাপি হয়ে উঠবে।
৬. নারকেল তেল
নারকেল তেলে রয়েছে ফ্যাটি এসিড যা ঠোঁটের মরা চামড়া দূর করে এবং ঠোঁটে গোলাপি আভা এনে দেয়।
প্রতিদিন ভেজা ঠোঁটে নারকেল তেল ব্যবহার করুন, এতে ঠোঁট সুন্দর ও আকর্ষনীয় হবে। কালচেভাব থাকলে তাও দূর হয়ে যাবে।
৭. শসা ও গোলাপজল
শসা যেকোন কালদাগ ও কালচেভাব দূর করতে অব্যর্থ রেমিডি। আর গোলাপজল কালচেভাব দূর করে ও ময়েশ্চার লক করে।
এজন্য শসার রস ও গোলাপজল মিক্সড করে ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন। ঠোঁটের মৃতকোষ দূর হবে সেইসাথে কালচেভাব।
রস হিসেবে ব্যবহার করতে না চাইলে দুইটি মিশ্রণ একসাথে আইসকিউব করে ঠোঁটে রাব করতে পারেন। এতেও একই রকম লাভ হবে।
উপসংহার
সুন্দর ঠোঁট নিয়ে কবি সাহিত্যকদের আগ্রহের শেষ নেই, এ নিয়ে তারা অনেক কাব্য সাহিত্য লিখেছেন। সুন্দর ঠোঁট নিয়ে আমাদেরও আগ্রহের শেষ নেই। কিন্তু সুন্দর ঠোঁট পেতে হলে কিছু পরিচর্যা অবশ্যই করতে হবে।
আর এজন্যই উপরিউক্ত উপায়গুলো অনুসরণ করা উচিত। আশা করি উপরিউক্ত উপায়গুলো অনুসরণ করে ঠোঁটের কালচেভাব ও শুষ্কতা দূর করতে সমর্থ হবেন সহজেই।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার অথবা কোন মতামত দেওয়ার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আমরা আপনার মতামত গুরুত্বসহকারে নিয়ে অবশ্যই দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।