ধনিয়া সাধারনত মসলা জাতীয় ফসল। বাসা বাড়িতে এটি রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর ফলের জন্য চাষ করা হলেও এর পাতা ও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। খাবারের স্বাদ বাড়াতে ধনিয়া পাতার ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।
এর সবুজ পাতা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। ধনিয়া পাতা চাটনি, স্যুপ, ভর্তা ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আজ আমরা আপনাদের সাথে ধনিয়া চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই ধনিয়া চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন ধনিয়া চাষের বিস্তারিতঃ
মাটি ও জলবায়ুঃ
সাধারনত সব ধরনের মাটিতেই ধনিয়া চাষ হয়ে থাকে। তবে ধনিয়া চাষের জন্য বেলে দোআঁশ বা এটেল দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। জমিতে প্রয়োজনীয় জল নিকাশেন ব্যবস্থা রাখতে হবে।
বীজ বপনের সময়ঃ
ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ধনিয়া বীজ বপন করার উপযুক্ত সময়।
জমি তৈরিঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমি ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে । জমিতে মাটির প্রকৃতি অনুযায়ী ৪-৬ টি চাষ ও মই দিতে হবে।
বীজের হারঃ
সাধারনত এক হেক্টর জমিতে ৮ কেজি ধনিয়ার বীজের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
বীজ বপনঃ
বীজ বপন করার আগে বীজকে ২৪ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। বীজ যদি ছিটিয়ে বপন করা হয় তাহলে বীজের পরিমান বেশি লাগে ।
যদি ধনিয়া মিশ্র ফসল হিসেবে জমিতে বপন করা হয় তাহলে ৪-৫ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়ে থাকে।
বীজ বপনের পদ্ধতিঃ
বীজ বপন করার আগে জমিতে বেড তৈরি করে নিতে হবে। বেডের মাঝখানে নালা তৈরি করতে হবে। নালার আকার হবে ৪০-৫০ সেমি।
জমি তৈরি করার সময় মাটির সাথে জৈব পদার্থ মিশিয়ে দিতে হবে। বীজ বপন করার আগে ছত্রাকনাশক দ্বারা বীজ শোধন করে নিতে হবে তাহলে বীজ দ্বারা বাহিত রোগ থেকে চারা কে রক্ষা করা যাবে।
বীজ দুই ভাবে বপন করা যায়। ছিটিয়ে ও বপন করা যায় আবার লাইনে ও বীজ বপন করা যায়। ছিটিয়ে বীজ বপন করার পর জমিতে হালকা মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
লাইন করে বীজ বোনার ক্ষেত্রে জমিতে লাইন করতে হবে। এক লাইন থেকে আরেক লাইনের দূরত্ব হবে ৩০ সেমি। লাইনের গভীরতা হবে ১.৫ সেমি। বীজ বপন করার পর মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে।
চারা গজানোর পর ১০-১৫ দিন পরে একটি করে চারা গাছ রেখে বাকি সব চারা তুলে ফেলতে হবে।
সার প্রয়োগঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটির গুনাগুন পরীক্ষা করে মাটিতে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।
জৈব সারের পাশাপাশি মাটিতে অন্যান্য সার ও প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে গোবর ৮-১০ টন, ইউরিয়া ২৮০-৩১০ কেজি, টিএসপি ১১০-১৩০ কেজি, এমপি ৯০-১১০ কেজি প্রয়োগ করতে হবে।
পাশাপাশি আবর্জনা পচা সার ও ব্যবহার করা যেতে পারে।
সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
জমি তৈরি করার সময় জমিতে অর্ধেক পরিমান গোবর সার, সম্পূর্ণ টিএসপি ও অর্ধেক এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক সার চারা রোপন করার ৭ দিন পর মাদায় মিশিয়ে দিতে হবে।
তারপর চারা রোপন করতে হবে। ইউরিয়া ও বাকি অর্ধেক এমপি সার দুই কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।
চারা রোপন করার ৮-১০ দিন পর প্রথম কিস্তি দিতে হবে এবং চারা লাগানোর ৩০-৫০ দিন পর বাকি সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগ করার পর প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাঃ
জমিতে প্রয়োজনীয় সেচ প্রয়োগ করতে হবে। শুকনা মৌসুমে জমিতে সেচ দিতে হবে।
তবে জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন অতিরিক্ত জল বের হয়ে যায়।
অন্যান্যা পরিচর্যাঃ
ধনিয়া যদি পাতার জন্য চাষ করা হয়ে থাকে তাহলে জমিতে গাছ পাতলা করে দিতে হবে। চারা বড় হওয়ার ১০-১৫ দিন পর একটি সারিতে ৫ সেমি পর পর একটি করে চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে।
আর যদি বীজের জন্য চাষ করা হয়ে থাকে তাহলে এক লাইনে ১০ সেমি পর পর চারা রাখতে হবে। গাছের গোড়া সবসময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
জমিতে আগাছা জমে থাকলে তা নিড়ানি দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে। প্রতিবার সেচ দেওয়ার পর জমিতে জো থাকা অবস্থায় মাটির চটা ভেঙে দিতে হবে।
রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনাঃ
জমিতে রোগ ও পোকা আক্রমন করলে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক ও বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
ধনিয়া যদি পাতা ফসল সংগ্রহ করা হয় তাহলে চারা রোপন করার ৩০-৩৫ দিনের মধ্যেই সংগ্রহ করা যাবে।
আর যদি বীজের জন্য রোপন করা হয়ে থাকে তাহলে ১১০-১২০ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করা যাবে।
গাছ যখন সম্পূর্ণ ভাবে পাকে এবং গাছ সবুজ থাকে তখন বীজ সংগ্রহ করা যায়।
ফলনঃ
সঠিক ভাবে চাষ করতে পারলে এক শতক জমি থেকে ১৫-২০ কেজি পাতা পাওয়া যায়। আর যদি বীজ সংগ্রহ করা হয় তাহলে ৮-১০ কেজি বীজ পাওয়া যায়।