(Saptashrungi Shakti Peeth in Bengali) সপ্তাশ্রুঙ্গী শক্তিপীঠের বর্তমান অবস্থান কোন স্থানে? দেবী সতীর কোন অঙ্গ এখানে পতিত হয়েছে? সপ্তাশ্রুঙ্গী শক্তিপীঠের পৌরাণিক কাহিনী কি? কিভাবে আরাধনা করা হয়? এই মন্দিরের তাৎপর্য কি? জানুন সবকিছু বিস্তারিত।
হিন্দু ধর্মাবলম্বী দের কাছে এক একটি তীর্থস্থান এক একটি গুরুত্বপূর্ণ মাহাত্ম্য বহন করে। সেই কারণে সকলে জীবনের কিছুটা সময় এই তীর্থস্থানে কাটানোর জন্য সারা জীবনের কোনো না কোনো সময়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।
হিন্দু ধর্মাবলম্বী দের মধ্যে সকলে মনে করেন যে, এমন তীর্থ স্থানে ঘুরে, দেবীর দর্শন করে, মন্দির প্রাঙ্গণে সময় কাটিয়ে অনেকটা শান্তি পাওয়ার সাথে সাথে পুণ্য অর্জন করা যায়। আর তাই তো সারা বছর ধরে বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্রে ভক্তদের সমাগম সব সময় লেগেই রয়েছে।
তেমনি সব তীর্থস্থান এর মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেকখানি মাহাত্ম্য বহন করে তা হলো সতীর ৫১ টি শক্তিপীঠ অথবা সতী পীঠ। তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি পীঠ হল সপ্তাশ্রুঙ্গী শক্তি পীঠ, যা কিনা ভারতের মহারাষ্ট্রের নাসিকে অবস্থিত। কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, এই স্থানে সতী দেবীর চিবুক অথবা থুতনি পতিত হয়েছিল।
সপ্তাশ্রুঙ্গী শক্তিপীঠ:
শক্তিপীঠের নাম | সপ্তাশ্রুঙ্গী শক্তিপীঠ |
স্থান | সপ্তশ্রীঙ্গী মাতা মন্দির বাণী, ডিন্ডোরি রাড, বৈদুওয়াদি, নাসিক, মহারাষ্ট্র |
দেশ | ভারত |
দেবীর অংশ | চিবুক (থুতনি) |
শক্তির নাম | ভ্রামরী |
সপ্তাশ্রুঙ্গী শক্তি পীঠের ভৌগোলিক গুরুত্ব:
সপ্তাশ্রুঙ্গী শক্তি পীঠ ভারতের মহারাষ্ট্রের নাসিকে অবস্থিত, এই স্থানে দেবীর চিবুক অথবা থুতনি পতিত হয়েছিল। এই পীঠের অধিষ্ঠাত্রি দেবীর নাম ভ্রামরী এবং পীঠ রক্ষক ভৈরবের নাম বিকৃতাক্ষ।
সপ্তাশ্রুঙ্গী শক্তি পীঠের পৌরাণিক কাহিনী:
সতী পার্বতী যখন নিজের বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে বাবার অমতে নিজের পছন্দ অনুসারে মহাদেবকে বিবাহ করেছিলেন, সেই সময় সতীর বাবা দক্ষ রাজা খুবই রেগে গিয়েছিলেন।
তাছাড়া দেবী পার্বতী অথবা সতী মহাদেবকে পতি (স্বামী) হিসেবে পাওয়ার জন্য তপস্যা করেছিলেন। সেই তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে মহাদেব পার্বতীকে বিবাহ করেন। কিন্তু এই ঘটনায় একেবারে খুশি হননি সতীর বাবা দক্ষ রাজা।
সেই কারণে এই বিবাহ না মেনে নিয়ে তাদেরকে অনেক ভাবে অপমান করতে শুরু করেন। এইভাবে দক্ষ রাজা বাড়িতে দক্ষ যজ্ঞের আয়োজন করলে দেবতাদের সকলেই নিমন্ত্রিত থাকলেও, দক্ষ রাজার আরো অন্যান্য কন্যা ও জামাতা নিমন্ত্রিত থাকলেও, পার্বতী ও মহাদেবকে নিমন্ত্রণ করা হয়নি।
এই খবর নারদ মুনি কোনো ভাবে মহাদেবের কাছে কৈলাসে গিয়ে জানিয়ে আসেন। এমন ঘটনায় পার্বতী বাপের বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু মহাদেব তখন পার্বতীকে বাধা দিয়ে বলেছিলেন যে, বিনা নিমন্ত্রণে সেখানে যাওয়া সতী পার্বতীর জন্য উচিত হবে না।
কিন্তু সতী সেই কথা মানতে পারেন নি। তাই নন্দী কেশরকে সাথে নিয়ে বাপের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। গিয়ে যখন বাবার কাছে জিজ্ঞাসা করলেন যে, কেন তারা নিমন্ত্রিত নন, তখন অনেক ভাবে দক্ষ রাজা তাদের অপমান করতে শুরু করেন। এমনকি মহাদেবকেও অনেক ভাবে অপমান করতে থাকেন।
স্বামীর এই অপমান সহ্য করতে না পেরে বাপের বাড়িতে সেই দক্ষ যজ্ঞের জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। এই খবর মহাদেবের কাছে পৌঁছাতেই তিনি উন্মাদ পাগলে পরিণত হয়ে যান। তারপর সেখানে পৌঁছে দক্ষ রাজাকে হত্যা করেন, তারপরেই দেবীর মৃতদেহ কাঁধে করে তুলে নিয়ে তান্ডব নৃত্য শুরু করে দেন। যার ফলে এই পৃথিবীতে সৃষ্টি হয় মহাপ্রলয়।
পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়, এমন অবস্থায় পৃথিবী কে বাঁচানোর জন্য আর মহাদেবকে শান্ত করার জন্য একটাই মাত্র পথ দেখতে পেলেন, তা হল দেবীর দেহকে খন্ড-বিখন্ড করা। এরপর তিনি সুদর্শন চক্র দিয়ে দেবীর দেহকে ৫১ টি খন্ডে বিভক্ত করে ছড়িয়ে দেন। যে দেহ অংশগুলি খন্ড-বিখন্ড হয়েছিল, সেগুলি পৃথিবী পৃষ্ঠে যে যে স্থানে পতিত হয়েছে, পৃথিবীর মাটিতে পড়া মাত্রই সেগুলি প্রস্তর খন্ডে (পাথর) পরিণত হয়।
তারপর পরবর্তীতে সেখানে এক একটি সতীপীঠ অথবা শক্তিপীঠ গড়ে ওঠে। সবদিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে, এইসব জায়গা গুলি অথবা শক্তিপীঠ গুলি খুবই জাগ্রত আর এখানে পার্বতী ও মহাদেব অর্থাৎ দেবী ও ভৈরব বিরাজ করছেন। এই সমস্ত জায়গাতে আপনি ঐশ্বরিক শক্তির আভাসও পেতে পারেন।
চারিদিকে নির্জন বন- জঙ্গল, নদীর তীর, স্নিগ্ধ বাতাস, একেবারে জন কোলাহল থেকে অনেকটাই দূরে এই মন্দির গুলি অথবা শক্তি পীঠ গুলি অবস্থিত হয় বলে, সেই কারণে এখানে আধ্যাত্মিক দিক থেকে অনেকখানি উন্নত বলাই যায়, ধ্যান করার জন্য জায়গা গুলি একেবারে উপযুক্ত।
সারা বছর ধরে এখানে ভক্তগণ ও পর্যটকদের আনাগোনা তো রয়েছেই, তার সাথে সাথে মহা শিবরাত্রি, কালী পূজা, দুর্গা পূজা, প্রভৃতি উৎসব গুলি এখানে খুবই জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করা হয়। দেশের বাইরে থেকেও ছুটে আসেন পর্যটকেরা মন্দির ঘুরে দেখার জন্য এবং চারিপাশের পরিবেশ উপভোগ করার জন্য।
এখানে গেলে আপনার সমস্ত দুঃখ কষ্ট এক নিমেষে উড়ে যাবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। মায়ের কাছে নিজের মনের সকল কষ্ট জানিয়ে অনেকেই পূজা অর্চনা দিয়ে নিজের মনের ইচ্ছা পূরণের আশায় এখানে বারবার ছুটে আসেন।
সতী দেবীর প্রতিটি সতী পীঠ অথবা ৫১ টি পীঠের মতো এই সপ্তাশ্রুঙ্গী সতী পীঠও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বী দের কাছে। সকলেই সকলের সাধ্যমত পূজা অর্চনা আর ভোগ নিবেদনের মধ্যে দিয়ে এখানে দেবীর পূজা দিয়ে থাকেন