সর্বশৈল শক্তিপীঠ: (কোটিলিঙ্গেশ্বর মন্দির) যে স্থানে সতীর বাম গাল পতিত হয়েছিল

(Sarvashail Shakti Peeth in Bengali) সর্বশৈল শক্তিপীঠের বর্তমান অবস্থান কোন স্থানে? দেবী সতীর কোন অঙ্গ এখানে পতিত হয়েছে? সর্বশৈল শক্তিপীঠের পৌরাণিক কাহিনী কি? কিভাবে আরাধনা করা হয়? এই মন্দিরের তাৎপর্য কি? জানুন সবকিছু বিস্তারিত।

এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে ত্রি-শক্তির মধ্যে দিয়ে, অর্থাৎ হিন্দু ধর্মের ত্রিশক্তির উল্লেখ পাওয়া যায় সর্ব জায়গায়। এই ত্রি-শক্তি হলেন ব্রহ্মা-বিষ্ণুমহেশ্বর এর মধ্যে শিব হলেন প্রধান।

তিনি সমসাময়িক হিন্দু ধর্মের তিন সর্বাধিক প্রাচীন সম্প্রদায়ের অন্যতম শৈব সম্প্রদায়ের প্রধান দেবতা। তাছাড়া ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে ভগবান শিবের মন্দির। হিন্দুদের আদি দেবতা হিসেবে তিনি অনেক খানি গুরুত্বপূর্ণ সকলের কাছে।

Sarvashail Shakti Peeth in Bengali - সর্বশৈল শক্তিপীঠ
Sarvashail Shakti Peeth in Bengali – সর্বশৈল শক্তিপীঠ

ভারতের কর্নাটক রাজ্যের পোলার জেলার কমমাসান্দ্রা গ্রামে অবস্থিত এই কোটি লিঙ্গেশ্বর শিব মন্দির হল একটি শক্তিপীঠ। যা কিনা বিশ্বের বৃহত্তম এবং অন্যতম শিব মন্দির হিসেবে বিখ্যাত।

নাম থেকে আপনি কিছুটা ধারণা করতে পারবেন যে, এখানে অনেকগুলি শিবলিঙ্গ রয়েছে অর্থাৎ কোটি লিঙ্গেশ্বর মন্দির এই হিসেবে নামকরণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

সর্বশৈল শক্তিপীঠ:

শক্তিপীঠের নাম সর্বশৈল শক্তিপীঠ
স্থান সর্বশৈল, কোটিলিঙ্গেশ্বর মন্দির, গোদাবরী নদী তীরে অবস্থিত, রাজামুন্দ্রী, অন্ধ্রপ্রদেশ
দেশ ভারত
দেবীর অংশ বাম গাল
শক্তির নাম রাকিনী/বিশ্বেশ্বরী

সর্বশৈল শক্তিপীঠ / কোটি লিঙ্গেশ্বর মন্দির:

এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত শিব মূর্তি গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় শিব মূর্তিটির উচ্চতা হল ১০৮ ফুট, ভারত তথা বিশ্বের বিখ্যাত শিব মন্দির এর মধ্যে এটি হলো একটি অন্যতম শিব মন্দির।

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের কোলার জেলার কমমাসান্দ্রা গ্রামে স্থাপিত করা হয়েছিল এই কোটি লিঙ্গেশ্বর মন্দিরটি। এই মন্দিরে দেবী হলেন রাকিনি অথবা বিশ্বেশ্বরী আর ভৈরব হলেন দন্ডপানি।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, সতীর দেহ যখন সুদর্শন চক্র দিয়ে ৫১টি খন্ডে বিভক্ত করা হয়েছিল তখন সতীর বাম গাল এই স্থানে পতিত হয়েছিল।

১ কোটি শিবলিঙ্গ আছে কর্নাটকের কোটিলিঙ্গেশ্বর মন্দিরে। আর তাইতো এই মন্দিরের নাম কোটি লিঙ্গেশ্বর হয়েছে। এই মন্দিরে গেলে আপনি দেখতে পাবেন ছোট থেকে বড় মাপের বিভিন্ন ধরনের শিবলিঙ্গ উপস্থিত আছে।

কোটি লিঙ্গেশ্বর মন্দির
কোটি লিঙ্গেশ্বর মন্দির

এই মন্দিরের সমস্ত শিবলিঙ্গের উচ্চতা ১ ফুট থেকে তিন ফুট। তবে সবচেয়ে বড় শিব মূর্তিটির উচ্চতা ১০৮ ফুট তা তো আমরা আগেই জানলাম। বিশ্বের আর কোন মন্দিরে এমন এতগুলো শিবলিঙ্গ দেখতে আপনি কোন কখনোই পাবেন না। এক কথায় বলা যায় এশিয়ার সবথেকে বৃহত্তম শিবলিঙ্গ রয়েছে এই মন্দিরে।

এই শিবলিঙ্গ এশিয়ার আর কোন মন্দিরে নেই বললেই চলে। যে কারণে দেশ বিদেশ থেকে ভক্তরা এবং মন্দির পরিদর্শন করতে আসেন পূর্ণার্থীরা। দেশের বাইরে থেকেও অনেকে এই শিবলিঙ্গ দর্শন করার পাশাপাশি আশেপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে দেখার জন্য ছুটে আসেন।

নন্দী কেশরের মূর্তি:

আবার বলা যায় এই মন্দিরের শিবমূর্তি ছাড়াও রয়েছে নন্দীকেশরের মূর্তি, আর তার উচ্চতা ৩৫ ফুট। এই মূর্তিটিও বিশ্বের সবথেকে বড় নন্দী কেশরের মূর্তি।

প্রায় সব শিব মন্দিরেই নন্দীর মূর্তি দেখা যায়। কিন্তু এই বড় মাপের নন্দির মূর্তি আর কোন মন্দিরে নেই যে কারণে কর্নাটকের কোটি লিঙ্গেশ্বর মন্দিরটি সারা বিশ্বের নজর কাড়ে।

কোটি লিঙ্গেশ্বর মন্দির এর সৌন্দর্য:

মন্দির চত্বরে ভগবান শিব ছাড়াও আছেন আরো অন্যান্য দেবতা। এই মন্দির প্রাঙ্গণে বিভিন্ন দেবতার মন্দিরও উপস্থিত আছে। বলতে গেলে প্রায় ১১ টি মন্দির আছে এই এলাকায়।

যেমন ধরুন ব্রহ্মা ও মহেশ্বরের মন্দির আছে, বিষ্ণু মন্দির আছে, এর পাশাপাশি দেবী কণিকা, রাম সীতার মন্দির, পরমেশ্বরী মন্দির সহ আরো একাধিক মন্দির স্থাপিত হয়েছে এই অঞ্চলে। তবে এই অঞ্চল কে  তীর্থভূমি বলাটা একেবারে ভুল হবে না।

এক কোটি শিবলিঙ্গ:

এই মন্দিরে রয়েছে এক কোটি শিবলিঙ্গ, কিন্তু এতগুলো শিবলিঙ্গ অথবা মূর্তি রাখতে এখানে লেগেছে মাত্র ১৫ একর জমি। যা কিনা সত্যিই অবাক করার মতো ঘটনা, মাত্র ১৫ একর জমিতে স্থাপিত হয়েছে ১ কোটি শিবলিঙ্গ।

আর সেই কারণে এই মন্দিরের খ্যাতি বিশ্বজোড়া, এখানে শিবের মহিমা সম্পর্কে সকলেই অবগত।

কোটি লিঙ্গেশ্বর মন্দিরের পৌরাণিক কাহিনী:

প্রতিটি তীর্থস্থানের পিছনে থাকে এক একটি কাহিনী। এই কোটি লিঙ্গেশ্বর মন্দির কে ঘিরে রয়েছে একটি কাহিনী। মন্দির স্থাপন করার আগে এই অঞ্চলে মঞ্জু নাথ শর্মা নামে এক ব্যক্তি থাকতেন, তিনি খুবই সৎ ব্যক্তিত্বের অধিকারী একজন মানুষ ছিলেন।

তবে জীবনের শুরুতে তিনি নাস্তিক ধরনের মানুষ ছিলেন অর্থাৎ দেব দেবীতে বিশ্বাস করতেন না। আর স্বাভাবিক ভাবেই সেই কারণে তিনি ভগবান শিব কেও একেবারেই সম্মান করতেন না। কিন্তু কথায় আছে ঈশ্বর নাস্তিকদেরই ধর্মের পথে আনার জন্য নিজেই সচেষ্ট হন।

তাই একদিন তিনি শিবের দেবত্ব উপলব্ধি করেছিলেন। সেই ব্যাক্তি স্থানীয় একটি শিব মন্দির পরিদর্শন করতে গলে তার পদার্পণে এক অশুভ লক্ষণ দেখা যায়। তখন তিনি অনুভব করেন যে তিনি অনেক ভুল করেছেন।

তারপর নিজের পাপ মোচন করতে তিনি শিবলিঙ্গ তৈরির কাজ শুরু করেন, শিবলিঙ্গ তৈরি করতে করতে অবশেষে ১ কোটি শিবলিঙ্গ অথবা শিব মূর্তি তৈরি করে ফেলেন।

তবে এখানে একটা কথা বলে রাখা খুবই জরুরী যে, কোটি লিঙ্গেশ্বর মন্দিরে যদি আপনি কখনো যান, তাহলে আপনি নিজে থেকেই সেখানে শিব লিঙ্গ উপস্থাপন করতে পারেন।

নিজের শিবলিঙ্গ স্থাপনের মূল্য ৬০০০ টাকা নির্ধারণ করা আছে। ভক্তরা অনেকেই এই মন্দিরে শিব লিঙ্গ স্থাপন করে থাকেন। এতে অনেকখানি পুণ্য অর্জন করা যায়। এই ধারণা অনেক কাল আগে থেকে প্রচলিত হয়ে আসছে।

কোটি লিঙ্গেশ্বর মন্দিরের পূজা-অর্চনা:

যেহেতু এই মন্দিরটি শিবলিঙ্গ তে ভরপুর, তাই মহা শিবরাত্রি এখানে যে ধুমধাম ভাবে পালন করা হবে না, সেটা তো ভাবাই যায় না, তাই না ! মহা শিবরাত্রি উদযাপনের জন্য হাজার হাজার ভক্তরা এই মন্দির পরিদর্শনে ছুটে আসেন, মন্দিরে মহা শিবরাত্রি উদযাপন করা হয় খুবই জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে।

মন্দির সেজে ওঠে আলোকসজ্জায় আর ফুল এর সাজে। আপনি যদি কোটি লিঙ্গেশ্বর মন্দিরের এমন অপরূপ দৃশ্য দেখতে চান, এই মহা শিবরাত্রি উপলক্ষে যেতেই পারেন। তাছাড়া সারা বছর ধরে এখানে ভক্তদের আনাগোনা তো থাকেই, তার সাথে সাথে বিভিন্ন পূজা অর্চনা তেও এখানে ভক্তদের সমাগম চোখে পড়ার মতো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top