ঈদুল ফিতর 2024: ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়? | Eid al-Fitr 2024: History and Significance

ঈদুল ফিতর 2024 (Eid al-Fitr 2024 Date Time and Significance) 2024 ঈদুল ফিতর ইতিহাস এবং জানুন ঈদুল ফিতর কেন পালন করা হয়? ঈদুল ফিতর তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য ঈদুল ফিতর গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

ইসলাম ধর্মাবলম্বী দের কাছে দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর অবশেষে এই খুশির দিনটি আসে। এই দিনটি খুবই আনন্দের সাথে পালন করা হয়। ঈদ মানেই আনন্দ উৎসব। ঈদ মানে যা বারবার ফিরে আসে। ফিতর মানে হচ্ছে উপবাস ভঙ্গ করা অথবা রোজা ভঙ্গ করা।

ঈদুল ফিতর ইতিহাস ও তাৎপর্য - Eid al-Fitr History and Significance
ঈদুল ফিতর 2024 ইতিহাস ও তাৎপর্য – Eid al-Fitr 2024 History and Significance

ইসলাম ধর্মাবলম্বী দের কাছে এই দিনটি এতটাই আনন্দের যে, যার জন্য সারা বছর অপেক্ষারত করা তো হয়েই থাকে, তার সাথে সাথে টানা এক মাস রোজা অথবা উপবাস রেখে এই দিনটির জন্য দিন গুনতে থাকেন সকলেই।

এই দিনে সবাই নতুন পোশাক পরেন, ঘরে ঘরে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরির তোড় জোড় শুরু হয়ে যায়। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরাও এই আনন্দের অংশীদার হয়। একে অপরের বাড়িতে গিয়ে ঈদ মোবারক জানিয়ে থাকেন।

রমজান ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়?

ঈদের দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন, এবং ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই সবাইকে কোলাকুলি করা, সালাম দেওয়া ও শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকেন এই খুশির ঈদের।

তবে এই ঈদ উদযাপনের পেছনে রয়েছে এক ইতিহাস। তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, ঈদ উল ফিতরের ইতিহাস সম্পর্কে:

ঈদুল ফিতরের ইতিহাস 2024:

আমরা সকলেই জানি যে, মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এই ঈদ উৎসবটি একটি সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। ইসলাম ধর্ম অনুসারে বছরে দুবার ঈদ আসে। প্রথমে ঈদ উল ফিতর যেখানে দান করার উৎসব বলা হয় এবং খুশির উৎসব বলা হয়, তারপরে আসে ঈদ উল আযহা, যেটা ত্যাগ করার উৎসব এবং খুবই বেদনাদায়ক উৎসব। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মদিনায় হিজরতের পরেই ঈদ উল ফিতর উৎসব পালন শুরু করেন।

2024 শুভ ঈদ-উল-ফিতর শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস

এমন কিছু ঐতিহাসিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) মদিনায় এসে দেখলেন যে, মদিনা বাসি বছরের দুটি দিনে আনন্দ উল্লাস করে থাকে। তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন এই দিবস দুটি কি ? তারা জানালেন নওরোজমিহিরজান। শরতের পূর্ণিমাতে পালিত হয় নওরোজ উৎসব, বসন্তের পূর্ণিমা তে পালিত হয় মিহিরজান উৎসব।

তখন নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন যে, আল্লাহ তোমাদের এই দিবস দুটির পরিবর্তে খুবই ভালো দুটি দিবস দান করেছেন। তা হল ঈদ- উল- আযহা এবং ঈদ- উল- ফিতর এই দুটি দিন এর মধ্যে রমজান মাসের শেষে সবাই একসঙ্গে মিলে ও আনন্দের সাথে পালিত করে থাকেন ঈদ- উল- ফিতর

বকরি ঈদ ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়?

ঈদ-উল-ফিতর অথবা ঈদের গুরুত্ব সম্পর্কে জানা যাক:

রমজান মাসকে অত্যন্ত পবিত্র মাস হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। ইসলাম ধর্ম অনুসারে এই মাসে সৎকর্ম মানুষের মধ্যে সৌভাতৃত্ব বোধ ছড়িয়ে দেওয়া এবং খুবই ধৈর্য ধরা, আর সমস্ত রকম খারাপ চিন্তা ও অভ্যাসকে দূরে সরিয়ে রাখা। তার সাথে সাথে ঈদ- উল- ফিতরের মধ্যে দিয়ে পবিত্র ইসলামী মাস রমজানের সমাপ্তি হয়।

ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে ঈদ- উল- ফিতরের গুরুত্ব রয়েছে অপরিসীম, তারা এই দিনটি খুবই সুন্দরভাবে উৎযাপন করে থাকেন।

এই দিনে বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে এই ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেন এবং ভালোবাসা ও ভাতৃত্বের বার্তা ছড়িয়ে দেন সকল জায়গায়।

এই খুশির ঈদ উপলক্ষে মসজিদের সবাই একসঙ্গে নামাজ পড়েন এবং একে অপরকে জড়িয়ে ধরে খুশির বার্তা দেন এবং ঈদ মোবারক জানিয়ে থাকেন। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঈদ মোবারক জানানোর পিছনে ধারনা হলো, সমাজের সহানুভূতিশীল ও ভালবাসা ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টিকে আরো বেশি উজ্জ্বল করা।

এই দিন উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার এবং পায়েস, ক্ষীর তৈরি করা হয়। এর মধ্যে সেমাই, লাচ্ছা, সবচেয়ে প্রচলিত খাবার। এছাড়াও বিরিয়ানি, কাবাব এবং আরো অন্যান্য কিছু তৈরি করা হয়, পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সেই খাবার খাওয়া দাওয়া করা হয়। বাড়িতে আমন্ত্রিত থাকেন অনেক অতিথি।

যারা খুবই দরিদ্র এবং অভাবী মানুষ তাদের মধ্যে জামা কাপড়, টাকা পয়সা এবং খাবার বিতরণ করা হয়। ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে। গরীব দুঃখীদের মধ্যে বিতরণ করা হয় যে দান, সেই দানকে যাকাতুল ফিতর (যাকাত) বলা হয় এবং এটি ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দান কর্ম যা তাদেরকে অনেকখানি সওয়াব (পূণ অর্জন করা) পেতে সাহায্য করে।

একে অপরকে শুভেচ্ছা ও উপহার পাঠানো হয় এবং কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসার প্রকাশ করা হয়। এই দিনটিতে সবাই রাগ, হিংসা ভুলে গিয়ে একে অপরের কাছে গিয়ে এই ঈদ এর শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকেন।

জুমাতুল বিদা ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়?

ঈদ-উল-ফিতর অথবা ঈদের তাৎপর্য:

সম্পূর্ণ একটা মাস কাটিয়ে দেওয়ার পর তবেই আসে এই ঈদ এর আনন্দ উৎসব। তবে এই একটা মাস খুব সহজ থাকে না। সম্পূর্ণ নির্জলা উপবাসে থাকতে হয় একটা মাস।

এক মাস টানা রোজা রাখার পরে এই ঈদের খুশি সকলকে অভিহিত করে থাকে। যত দরিদ্রই হোক না কেন ঈদ উপলক্ষে সকলে নতুন জামা কাপড় কিনতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর তার পাশাপাশি ঘরেতে তৈরি হয় বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু খাবার।

ঈদের দিন যা করণীয়:

ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে এর একটি বিরাট নিয়ামত, কিন্তু এই দিনকে নিয়ামত হিসেবে গ্রহণ করা হয় না। এই দিনে অনেক কাজ আছে যার মাধ্যমে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া যায়। এমন কিছু কাজ রয়েছে যেগুলির মধ্যে দিয়ে আপনি আপনার ঈদ সুন্দর ভাবে উদযাপন করতে পারেন।

যারা একেবারেই চলতে পারেন না, তারাও কিন্তু এই ঈদের নামাজ পড়তে উপস্থিত হন মসজিদে অথবা ঈদগাহ নামক জায়গাতে। এই দিনটি সকলের মনে থাকে অফুরন্ত ভালোবাসা ও আনন্দ অনুভুতি, যা চারিদিকে পরিবেশকে খুবই সুমধুর করে তোলে।

জুমাতুল বিদা ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়?

যে কাজগুলি ঈদের দিনে করাটা খুবই ভালো বলে মনে করা হয়:

  • ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করা।
  • ঈদের নামাজ পড়া।
  • ঈদ এর দিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে থাকা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জামা কাপড় পড়া অথবা নতুন জামা কাপড় পরা।
  • পায়ে হেঁটে ঈদগাহে নামাজ পড়ার জন্য যাওয়া।
  • সারা মাস রোজা রাখার পর ঈদের দিন অবশ্যই অবশ্যই খাবার গ্রহণ করতে হবে দিনের বেলা।
  • ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের ভাষা যেন খুবই শ্রুতি মধুর হয়।
  • ঈদের চাঁদ দেখার পর থেকে তাকবীর পাঠ করা।
  • ঈদের খুতবা শ্রবণ করা।
  • দোয়া করা এবং ইস্তেগফার করা, মুসাফাহা ও মোয়ানাকা করা।
  • ফিতরা দেওয়া অথবা দান করা।
  • এতিম অথবা অনাথ শিশুদের ও অভাবীদের খাবার খাওয়ানো এবং কিছু জামাকাপড় ও টাকা-পয়সা দান করা।
  • আত্মীয় স্বজনদের খোঁজখবর নেওয়া, বন্ধু-বান্ধবদের ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা জানানো।
  • প্রতিবেশীদের খোঁজ খবর নেওয়া, তাদের বাড়িতে ঈদের দিন আদৌ কোন রান্নাবান্না হলো কিনা।
  • সমস্ত মনোমালিন্য দূর করা, সবার সাথে আনন্দ প্রকাশ করা।

মহরম ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়?

ঈদের দিন যে সমস্ত বিষয়গুলি আপনাকে বর্জন করতে হবে ঈদ উদযাপন করার জন্য: 

  • ঈদের দিন রোজা পালন করা।
  • অন্য ধর্মের আচার-আচরণ প্রদর্শন করা।
  • নারীদের খোলামেলা অবস্থায় রাস্তাঘাটে বের হওয়া।
  • গান বাজনা করা, অশ্লীল সিনেমা ও নাটক দেখা ও বেকার কাজে সময় ব্যয় করা।
  • জামাতের সঙ্গে ফরজ নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে অলসতা দেখানো।
  • অবাদে নারীদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করা।
  • অপচয় ও অপব্যয় করা, ঈদের দিনকে কবর জিয়ারত এর জন্য নির্দিষ্ট করা।
  • জুয়া খেলা ও আতশবাজি করা। মানুষকে কষ্ট দেওয়া ও ঈদের নামাজ আদায় না করে কেবলমাত্র আনন্দ ফুর্তি করা।

ঈদ হলো একটি ইবাদত, আনন্দ ও ফুর্তি করার মাধ্যমে যে ইবাদত পালন করা যায়, ঈদ হলো তার অন্যতম উদাহরণ। ইসলাম শরীয়ত মতে আনন্দ প্রকাশের বিষয়ে কুরআন শরীফে এসেছে এভাবে যে, সমস্ত রকম ইসলামিক নিয়ম কানুন মেনে আনন্দ উৎসবের মধ্যে দিয়ে ঈদ উদযাপন করা যেতে পারে। তেমনি এই খুশির ঈদে সকলেই যেন থাকে সুস্থ সবল আর আনন্দিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top