মহরম 2024: ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়? | Muharram 2024: History and Significance

মহরম 2024 (Muharram 2024 Date Time and Significance) 2024 মহরম ইতিহাস এবং জানুন মহরম কেন পালন করা হয়? মহরম তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য মহরম গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

ইসলাম ধর্মাবলম্বী দের কাছে মহরম হলো একটি উৎসব। হিজরী বর্ষের প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা হিসেবেও পরিচিত বলে আমরা জানি।

মহরম ইতিহাস ও তাৎপর্য - Muharram History and Significance
মহরম 2024 ইতিহাস ও তাৎপর্য – Muharram 2024 History and Significance

মহররম হলো ইসলামী মাসের একটি নাম। মহররমের আভিধানিক অর্থ হল হুরমত মাস অর্থাৎ সম্মানের মাস।

রমজান ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়?

মহরমের ইতিহাস 2024:

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, মহরমের ইতিহাস সম্পর্কে:

মহরমের ইতিহাস সম্বন্ধে জানতে গেলে জানা যায় যে, হযরত ইমাম হোসাইন ছিলেন ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদের নাতি এবং হযরত আলীর পুত্র। ইয়াজীদের অত্যাচার ক্রমশই বাড়তে থাকে। ইতিহাস অনুসারে জানা যায় যে, ইমাম হোসেন তাঁর পরিবারের সদস্য সহ ৭২ জন সঙ্গী নিয়ে হজের জন্য মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন।

সেখানে গিয়ে দেখা গেল সেখানকার অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। সেই পবিত্র স্থানে যাতে কোনরকম রক্তপাত না হয়, সেই জন্য তারা আবার ফিরে আসেন ইরাকে। এরপর তার কাফেলা কারবালার কাছে পৌঁছে যান, যেখানে ইয়াজিদ বাহিনী তাদেরকে ঘিরে ফেলে।

জুমাতুল বিদা ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়?

কারবালা আসলে কি?

কারবালা হল হোসেনের মৃত্যুর সাথে জড়িত একটি বিশেষ জায়গা। অনেকেই হয়তো জানেন না যে কারবালা আসলে কি ? মহরমের দ্বিতীয় দিনে ইমাম হুসাইনের কাফেলা কারবালায় পৌঁছান, সেখানে পৌঁছে ইয়াজিদের বাহিনী ঘিরে ফেলার পরে হোসেনের যুদ্ধের কোন ইচ্ছাই ছিল না। কিন্তু ইয়াজিদের বাহিনী স্বেচ্ছাচারিতা করেছিল।

ইমাম হোসাইনের হাতে বায়াত চাপিয়ে দিতে, বায়াত এর মানে হলো নিজের ইচ্ছা কে অন্যের হাতে তুলে দেওয়া। কিন্তু ইমাম হোসেন স্পষ্ট ভাবে বললেন যে, তুমি সঠিক শাসক নও, তার পাশাপাশি জামিন নামঞ্জুর করা হয়।

ইয়াজীদ তার বক্তব্য আদায়ের জন্য অনেক জোরাজুরি করছিল কিন্তু ইমাম হোসেন মাথা নত করে সবকিছু মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলেন না। অবশেষে বাহিনী বুঝতে পারল তারা বায়াত করবে না। এরপর তিনি যুদ্ধে রওনা হন, এদিকে ষষ্ঠ মহরমের দিন হোসেনের শিবিরের পানি অথবা জল শেষ হয়ে যায়।

সপ্তম মহরমের দিন ইয়াজিদ সেখানকার পানির একমাত্র উৎসব খাল-ই- ফারাত (ইউফ্রেটিস খাল) সেখান থেকে পানি অথবা জল গ্রহণ করা একেবারে নিষিদ্ধ করে দেয়, ৬ তারিখ এবং ৭ তারিখ অর্থাৎ মহরমের এই দুটি তারিখে খাবার পানি শেষ হয়ে যায়।

এর ওপরও কিন্তু হোসেন যুদ্ধের সূচনা করেন নি। ইমাম হোসেন শহীদ হয়ে যান, একে একে শহীদ হন ৭২ জন সাহাবী। কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, ৭২ জন সাহাবীর মাথা নিয়ে রাখা হয়েছিল এবং শহর গুলিতেও ঘোরানো হয়েছিল।

ইসলামিক নববর্ষ আল হিজরী বা আরবি নববর্ষ নামে পরিচিত মহরম এর প্রথম দিনে পালিত হয়। কারণ এই পবিত্র মাসেই নবী জী মক্কা থেকে মদিনায় গমন করেছিলেন। কিন্তু মাসের দশম দিন যা আশুরা নামে পরিচিত, সেদিন কারবালার ময়দানে নবীর নাতি হোসেন ইবনে আলীর শাহাদাতের মৃত্যু হয় তার স্মরণে মুসলমানরা এই দিন শোক প্রকাশ করে পালন করেন।

ইসলামিক নববর্ষ ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়?

মহরম শব্দের অর্থ হলো অনুমতি নেই অথবা নিষিদ্ধ। তাই এই দিনে মুসলমানদের যুদ্ধের প্রথম ক্রিয়া কলাপে অংশগ্রহণ নেওয়া একেবারেই নিষিদ্ধ ছিল। এই দিনটি প্রার্থনা এবং আত্ম দর্শন বা প্রায়শ্চিত্তের দিন হিসেবেও পালন করা হয়।

মহরম হলো ইসলামিক চান্দ্র ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস। আর এই মাসের পরে আসে সাফার, রাবি -আল -থানি, জুমাদা -আল -আউয়াল, জুমাদা- আত -থানিয়া, রজব, শাবান, রমাদান অর্থাৎ রমজান, সাওয়াল, জুলকাদাহ, জুয়াল, হিজ্জাহ, এই মাস গুলি আসে।

রমজান বা রমাদানের পরে মহরমকে ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র মাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি চান্দ্র ক্যালেন্ডারের সূচনা করে থাকে, তাই এটিকে নতুন বছরের সূচনা হিসাবেও ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ধরে থাকেন।

এছাড়া ইসলামিক ক্যালেন্ডার চন্দ্র চক্রের উপর ভিত্তি করে চলে, অর্থাৎ চাঁদের উপরে নির্ভর করে দিন গণনা করা হয়। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চলে সূর্যের গতির উপর ভিত্তি করে, একটি মাসের ৩০ বা ৩১ দিন থাকে এবং চান্দ্র ক্যালেন্ডারের একটি মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে। সেটা ২৯ অথবা ৩০ দিনে হয়।

আর সেই কারণেই তো রোজা কোন কোন বছর ২৯ টি তে সম্পন্ন হয়। আবার কোন বছর ৩০ টি রোজা দিয়ে রমজান সম্পন্ন হয়। বলা যেতে পারে একটি নতুন মাস শুরু হয় যখন পুরনো মাসের ২৯ তম দিনে নতুন চাঁদ দেখা যায়।

যদি এটি ২৯ তারিখে দেখা না যায়, তাহলে চলমান মাস ৩০ দিনে পূর্ণ হয় এবং পরের দিন একটি নতুন মাস শুরু হয়। এই মতো হিসাব অনুসারে গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার এ যেখানে বছরে ৩৬৫ দিন থাকে, সেখানে কিন্তু ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুসারে ৩৫৪ দিন বারটি মাসে বিভক্ত করা হয়।

পবিত্র আশুরা ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়?

মহরমের তাৎপর্য ও ঐতিহ্য:

১৪৪ বছর আগে হযরত মুহাম্মদ ও তার অনুগামীরা মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে রওনা হতে বাধ্য হন। ওই দিনটি ছিল মহরমের প্রথম দিন। তাকে মক্কায় ইসলামের বার্তা প্রচার করা জন্য বাধা প্রদান করা হয়।

মহররমের দশম দিনটি আশুরা হিসেবে পালিত হয়। এদিন ইমাম হোসেনের মৃত্যুর শোক পালন করা হয়। ইমাম হোসেন ছিলেন হযরত মুহাম্মদ এর পৌত্র অর্থাৎ নাতি এবং হযরত আলীর পুত্র ৬৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কারবালার যুদ্ধে তিনি প্রান ত্যাগ করে শহীদ হন।

জুমাতুল বিদা ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়?

মহরম উদযাপন:

মুসলমান সম্প্রদায় দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত। একটি হলো শিয়া সম্প্রদায় এবং অপরটি সুন্নি সম্প্রদায়। ইসলামের অন্যান্য উৎসব থেকে এই উৎসবটি একটু আলাদা। কারণ এই মাসটি হলো শোক জানানোর এবং প্রার্থনার মাস। এই সময় কোন উৎসব পালিত হয় না।

তবে শিয়াদের জন্য এই মাসটির বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। শিয়া মুসলমান রা এই দিনে একটি শৃংখল তৈরি করে নিজেদেরকে ক্ষতবিক্ষত করতে থাকে। একে ততবির অথবা কামা জানি বলে জানা যায়। আবার সুন্নি মুসলমানরা এই দিন উপবাস পালন করেন, তার পাশাপাশি “ইয়া হোসেন” অথবা “ইয়া আলী” উচ্চারণ করে থাকেন।

এছাড়া এই দিন উপলক্ষে অনেক জায়গায় ধর্মানুষ্ঠান এর আয়োজন করা হয়। যেখানে অনেক মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ জড়ো হয়ে এই দিনটি খুবই দুঃখের সাথে পালন করে থাকেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top