পটল অতি পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি সবজি। প্রায় সারা বছরই পটল পাওয়া যায়।
গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকালে অন্য সবজি কম পাওয়া গেলে তখন বাজারে এর চাহিদা বেড়ে যায়। তরকারি হিসেবে, ভাজি করে পটল খাওয়া হয়ে থাকে।
আজ আমরা আপনাদের সাথে পটল চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই পটল চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন পটল চাষের পদ্ধতি বিস্তারিতঃ
মাটি ও জলবায়ুঃ
পটল চাষে জলবায়ু সাধারনত উষ্ণ ও আর্দ্র হওয়া জরুরি। অধিক সূর্যের আলোতে এর ফলন ভালো হয়। তাপমাত্রা উচ্চ হলে ভালো হয়।
তবে বৃষ্টিপাত কম হলে এর পরাগায়নে বাধা পায় এবং ফলন কমে যায়।
পটল চাষে সাধারনত দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি বেশি উপযোগী। পটল চাষে জমি উচু ও মাঝারি উচু হতে হবে।
জমিতে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভালো থাকতে হবে। জমিতে জলের অভাব হলে ফলন কম হয়। পলিমাটিতে ও পটল এর চাষ ভালো হয়।
সময়ঃ
সাধারনত অক্টোবর মাস থেকে নভেম্বর মাস রোপন করার উপযুক্ত সময়। এই জন্য অক্টোবর মাস আসার আগেই জমি তৈরি করতে হবে।
চারা তৈরিঃ
পটলের চারা সাধারনত পলিব্যাগে তৈরি করা যায়। পলিব্যাগে শাখা কলম লাগানো যায়। এতে যে চারা তৈরি হয় তাতে চারার জীবন কাল বৃদ্ধি পায় এবং ফলন ভালো হয়।
জমি তৈরি ও চারা রোপনঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমি ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হবে। জমিতে ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে।
উপরের মাটি সমান করে দিতে হবে। পটল সাধারনত বেডে চাষ করলে এর ফলন ভালো হয়ে থাকে।
প্রতিটি বেড ১-১.৫ মিটার চওড়া হয়ে থাকে। এক বেড থেকে আরেক বেডের মাঝে নালা তৈরি করে দিতে হবে।
চারা রোপন করতে হবে মাদায়। এক মাদা থেকে আরেক মাদার দূরত্ব হবে ১-১.৫ মিটার।
এক গাছ থেকে আরেক গাছের দূরত্ব হবে ৭-১০ সেমি। মাদার গভীরতা হবে ৫০ সেমি।
সার প্রয়োগঃ
ভালো ফলন পেতে জমিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি মাদায় গোবর সার দিতে হবে ১ কেজি, খৈল ২৫০ গ্রাম, ইউরিয়া দিতে হবে ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১৭০ গ্রাম, এমওপি ১৩০ গ্রাম, জিপসাম দিতে হবে ১৫০ গ্রাম।
চারা রোপন করার সময় এই সব সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছে যদি ফুল ধরা কমে যায় তখন মাদা প্রতি ৫০০ গ্রাম গোবর, ৭০ গ্রাম ইউরিয়া, ৯০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমওপি দিতে হবে। তাহলে গাছের ফলন বেড়ে যাবে।
পটল সাধানরত দীর্ঘমেয়াদি ফসল। তাই ফসল সংগ্রহের পর থেকে প্রতি মাসে যদি প্রতি হেক্টরে ইউরিয়া ১৮ কেজি, টিএসপি ২৫ কেজি, এমপি সার ১৪ কেজি উপরি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে তাহলে ফলন বেশি হয়ে থাকে।
সার প্রয়োগের পর প্রয়োজনে জল সেচ দিতে হবে।
মাচা তৈরিঃ
পটল চাষে জমিতে মাচা তৈরি করে দিলে ভালো হয়। পটল একটি লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এটি যদি মাটির উপরে জন্মায় বা খড় এর উপর হয় তাহলে পটলের গায়ে সাদা সাদা দাগ বা হলুদ রঙের দাগ পড়ে।
এতে পটলের বাজারমূল্য কমে যায়। বাশ দিয়ে বা রশি দিয়ে মাচা তৈরি করে দিতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাঃ
ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে সেচ দিতে হবে। পটল জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন অতিরিক্ত জল বের হয়ে যেতে পারে।
মুড়ি ফসল হিসেবে পটলঃ
পটল সাধারনত মুড়ি ফসল হিসেবে চাষ করা হয়ে থাকে। এ জন্য জমির আগাছা পরিষ্কার করে রাখতে হবে। জমি কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে।
তাতে মাটিতে প্রয়োজনীয় আলো বাতাস ঢুকতে পারে। মুড়ি ফসল হিসেবে চাষ করে যদি মূল ফসলের মতো সার প্রয়োগ করা যায় তাহলে ফলন মূল ফসলের চেয়ে অনেক ভালো হয়ে থাকে।
রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনাঃ
পটল গাছ বিভিন্ন পোকা দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। ফলের মাছি পোকা, কাটলে পোকা, উই পোকা, মিলিবাগ ও সাদা মাছি এর মধ্যে অন্যতম।
গাছে রোগ ও পোকা আক্রমন করলে প্রয়োজনীয় বালাই নাশক ও ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
পটল সাধারনত কচি অবস্থায় সংগ্রহ করতে হয় । সকালে বা বিকালে সংগ্রহ করা ভালো। ফুল ফোটার ১০-১২ দিনের মধ্যে পটল সংগ্রহ করার উপযোগী হয়ে থাকে।
জাত ভেদে ভিন্নত দেখা যায়। ফল যখন পূর্ণ আকার ধারন করে কিন্তু বেশি পরিপক্ক হয় না তখন সংগ্রহ করা উচিত। ফল বেশি পরিপক্ক হতে দেওয়া ঠিক নয়।
এত বীজ বেশি হয় এবং বীজ শক্ত হয়ে যায় তাই ফসল খাওয়ার উপযোগী থাকে না। পটল গাছে সাধারনত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ফল ধরা শুরু হয়ে থাকে এবং অক্টোবর মাস পর্যন্ত মোট নয় মাস ফসল সংগ্রহ করা যায়।
প্রতি সপ্তাহে এক বার করে ফল সংগ্রহ করা যায়।
ফলনঃ
সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে পারলে জাত ভেদে প্রতি শতক অনুযায়ী ১১০-১৫০ কেজি পর্যন্ত পটল পাওয়া যায়।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।
Potol Chash Korte Chai Kintu Chara Pachsi Na Kivabe Pabo Janale Upkrito Hobo ?