রুপচর্চায় বিভিন্ন মৌসুমি ফলের ব্যবহার – Uses of Seasonal Fruits in Beauty Care

রুপচর্চায় হাতের কাছে থাকা প্রাকৃতিক জিনিসের ব্যবহার হয়ে আসছে সেই প্রাচীন কাল থেকে। এরমধ্যে ঔষধি গুণসম্পন্ন উপাদান রয়েছে।

কিন্তু মৌসুমী ফল দিয়েও যে সৌন্দর্যচর্চা করা যায়, সেটা হয়ত অনেকেই জানেন না। বা জানলেও এর কার্যকারিতা সম্পর্কে বিশেষ অবগত নন। ফল খাওয়া যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ভাল, তেমনি খাওয়ার পর ফলের অবশিষ্টাংশ ত্বকে মেখে নেওয়াটাও ত্বকের জন্য ভাল।

Uses of Seasonal Fruits in Beauty Care in Bangla
Uses of Seasonal Fruits in Beauty Care in Bangla

ফল খেলে ভিটামিনটি শরীরে শোষিত হবে আর মাখলে ভিটামিন ত্বকের বহিরাংশে কাজ করবে। আমাদের আজকের আয়োজনটি সাজানো হয়েছে মৌসুমী ফল দিয়ে কিভাবে সৌন্দর্যচর্চা করবেন এ বিষয়টি নিয়ে।

আশা করি পোস্ট পুরোটা পড়বেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক সৌন্দর্যচর্চায় মৌসুমী ফলের কার্যকর ব্যবহার সম্পর্কে।

 

১. কলা

কলা আমাদের দেশের খুবই সহজলভ্য একটি ফল যা প্রায় ১২ মাসই পাওয়া যায়। কলা দিয়ে শরীরের সব অঙ্গের যত্ন নেওয়া সম্ভব। কিভাবে সেটা ভাবছেন?

ত্বকের শুষ্কতা ও কালচেভাব দূর করতে পাকা কলা ও মধুর মিশ্রণ ব্যবহার করুন। এটা ত্বক উজ্জ্বল ও মোলায়েম করবে। দাঁত হলুদ হলে পাকা কলার খোসার উল্টা দিক দাঁতে সপ্তাহে ৩ দিন নিয়ম করে ঘসুন।

দাঁতের হলুদভাব দূর হয়ে যাবে, দাঁত সাদা ঝকঝকে হবে। চুলের সমস্যাতেও কলার জুড়ি নেই।

চুল রুক্ষ, শুষ্ক ও প্রাণহীন হলে মেহেদী, কলা, টকদই ও ডিমের সাদা অংশ একসাথে মিশিয়ে স্নানের ৩০ মিনিট আগে চুলে লাগান, তারপর ভালভাবে ধুয়ে নিন। মাসে ২-৩ বার প্যাকটি ব্যবহার করলে চুল সুন্দর ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল হবে।

 

২. আমলকি

আমলকিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, এটা ত্বকের ব্রণ ও র‍্যাশ দূর করতে সাহায্য করবে। ত্বকে ব্রণ বা র‍্যাশ হলে আমলকি ব্লেন্ড করে তাতে নিমের রস মিশিয়ে ত্বকে লাগান।

এটা ব্রণের প্রকোপ কমিয়ে দেবে, ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ করবে। চুলের যত্নে আমলকির কোন জুড়ি নেই।

চুল প্রাকৃতিকভাবে কালো ও মজবুত করতে আমলকি, মেথি ও মেহেদী একসাথে মিশিয়ে চুলে সপ্তাহে দুইদিন ব্যবহার করুন। চুল কালো ও ঝলমলে হবে। চুল পড়ার সমস্যাও দূর হবে।

 

৩. কমলালেবু

কমলালেবু শীতকালীন একটি সুস্বাদু ফল, যা ভিটামিন সি ও এসকরবিক এসিড সমৃদ্ধ। ত্বকের মৃতকোষ দূর করে ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করতে কমলালেবু খুবই ভাল কাজ করে।

কমলালেবুর খোসায় যে রস থাকে তা ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে। আপনি কমলা খাওয়ার পর খোসাটা চিপে রস বের করে তা ত্বকে মাখুন।

কমলার খোসা রোদে শুকিয়ে সেটা গুড়া করে মধুর সাথে ব্যবহার করতে পারেন। এটা ত্বকের ময়লা, মৃতকোষ দূর করে ত্বক উজ্জ্বল, মসৃণ ও আদ্র করে তোলে।

কমলালেবুর রস ও মধু মিশিয়েও ত্বক ম্যাসাজ করতে পারেন। এটা ত্বকের শুষ্কতা ও বলিরেখা দূর করবে।

 

৪. আপেল

আপেল শীতকালীন মুখরোচক একটি ফল, যা আমাদের সবারই প্রিয়।

ত্বক ফর্সা ও ঝলমলে করতে আপেলের কোন জুড়ি নেই। যারা ঝামেলা ছাড়াই মুখ এবং গায়ের রং ফর্সা করতে চান তারা আপেল খাওয়ার পর বাকি অংশটুকু মুখে এবং হাত পায়ে মেখে নিলে ত্বক সুন্দর ও টানটান থাকবে।

আপেলের ফেসপ্যাক বানাতে চাইলে আপেল ব্লেন্ড করে তাতে মধু মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে এটা ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করবে।

 

৫. তরমুজ

তরমুজ গ্রীষ্মকালীন একটি ফল, যা গরমের দিনে খুবই প্রশান্তিদায়ক। যাদের ত্বকে ব্রণ ও তৈলাক্তভাব রয়েছে তাদের জন্য তরমুজ ব্যবহার খুব ভাল ফল এনে দেবে।

তরমুজের রস নিয়ে মুখে সরাসরি ব্যবহার করুন, তারপর ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটা গরমে ত্বকের জ্বালাপোড়া কমাবে, ত্বকের পুড়ে যাওয়া কালচেভাব দূর করে ত্বককে সুন্দর করে তুলবে৷

সরাসরি তরমুজের রস ব্যবহারে সমস্যা হলে আইসকিউব করে ব্যবহার করতে পারেন।

 

৬. পেঁপে

পেঁপে মূলত গ্রীষ্মকালীন একটি ফল, পাকা পেঁপের স্বাদের সাথে অন্যকিছুর জুড়ি মেলা ভার। তৈলাক্ত ও ব্রণ আক্রান্ত ত্বকের যত্নে পেঁপের জুড়ি নেই।

পেঁপের রস ও মধু মিশিয়ে তা ত্বকে ব্যবহার করুন, সপ্তাহে ৩ দিন। এটা ত্বকের বাড়তি তেল দূর করবে। ত্বকের লোমকূপ ছোট করবে, এবং ত্বক সতেজ ও উজ্জ্বল করবে৷

যাদের সরাসরি পেঁপে ব্যবহার করতে সমস্যা হবে তারা চাইলে আইসকিউব করেও পেঁপে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বকের বাড়তি তেল দূর হয়ে যাবে, ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও প্রানবন্ত।

৭. লেবু

লেবু আমাদের দেশে প্রায় ১২ মাসই পাওয়া যায়, তবে শীতকালে বেশী পাওয়া যায়। এটা দিয়ে সারাশরীরের পরিচর্যা করা যায়৷ ত্বক অনুজ্জ্বল ও কালচে হলে লেবু ও মধু মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করুন।

খুব দ্রুত উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে। ত্বক ফর্সা করতে লেবু ও দুধের সর মিশিয়ে ব্যবহার করুন। হাত-পা সহ সারা শরীরের ত্বক স্ক্রাবিং করতে লেবু ও চিনি মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন, এটা ত্বকের ময়লা ও মৃতকোষ দূর করে, এছাড়াও এতে রয়েছে প্রাকৃতিক ব্লিচ উপাদান।

চুলের যত্নে তেলে লেবু মিশিয়ে ব্যবহার করুন, এতে চুল সিল্কি হবে এবং চুলের খুশকি দূর হবে।

 

জরুরী কথা

রুপচর্চায় দামী প্রসাধনী বা প্রোডাক্টই যে শুধু কাজ করে তা নয়, প্রাকৃতিক উপাদান এবং মৌসুমী ফলের যথাযথ ব্যবহার আপনার ত্বকের জেল্লা বাড়াতে ও ত্বক সুন্দর করতে সাহায্য করে।

এর কোন পার্শপ্রতিক্রিয়াও নেই। তাই সব মৌসুমে হাতের কাছে পাওয়া যায় এমন সব ফল খাদ্যতালিকায় রাখার পাশাপাশি রুপচর্চায় এগুলোর ব্যবহার করুন।

ফল ত্বকের গভীর থেকে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনবে, এবং বলিরেখা, ব্রণ, ও অন্যান্য সমস্যা থেকে ত্বক, চুল এবং অন্যান্য অঙ্গকে রক্ষা করবে। আশা করি পোস্টটি মৌসুমীফল দিয়ে রুপচর্চায় আপনাকে সাহায্য করবে।

পোস্টটির বিষয়ে কোন তথ্য জানানোর হলে বা কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করুন। আমরা অবশ্যই তথ্য জানিয়ে আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top