ত্বকের রঙ হালকা করতে আমাদের চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। ত্বকে থাকা লোমের জন্য মুখের সৌন্দর্য ঠিকভাবে ফুটে ওঠেনা। এজন্য অনেকেই ত্বকের লোম দূর করার জন্য বা রঙ হালকা করাএ জন্য পার্লারে গিয়ে ব্লিচ করে থাকেন।
কিন্তু পার্লারের ব্লিচ ত্বকের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটা ত্বকের ইলাস্টিসিটি কমিয়ে ত্বকে তাড়াতাড়ি বয়সের ছাপ ফেলে দেয়। এজন্য পার্লারে গিয়ে ব্লিচ না করাই ভাল।
কিন্তু ব্লিচিং এর সুবিধা তা পেতে হলে কি করা উচিত? ত্বকের ক্ষতি না করে ব্লিচিং করা কি একেবারেই সম্ভব নয়? অবশ্যই সম্ভব! আর সেটা সম্ভব বাসায় থাকা রান্নার জন্য ব্যবহৃত সব উপকরণ দিয়েই।
এর ফলে ত্বকে যে জেল্লা আসবে তা পার্লারে করা ব্লিচের চেয়ে কিছু কম নয়, বরং ঘরোয়া উপাদানে নিয়মিত ব্লিচ করা সম্ভব, যে সুবিধা পার্লারে পাবেন না।
আর ঘরোয়া উপাদান দিয়ে ব্লিচ করলে এর তেমন কোন প্বার্শপ্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়না। সুপ্রিয় পাঠক, কিভাবে আপনারা ত্বকের ক্ষতি ছাড়াই সবরকম ত্বকচর্চা ও রুপচর্চা করতে পারবেন, সেটাই আমাদের পোস্ট লেখার উদ্দেশ্য।
আমাদের আজকের প্রয়াস থাকবে, কিভাবে ঘরোয়া উপাদান দিয়ে ত্বকে ব্লিচ করতে পারবেন, এবং ঘরোয়া উপাদান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে। চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
যেসব ঘরোয়া উপাদান দিয়ে বাড়িতেই ব্লিচ করতে পারবেন!
১. লেবু ও চিনি
লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক এসিড ও ত্বকের রঙ হালকা করার উপাদান। আর চিনিতে রয়েছে গ্লুকোজ এবং ত্বকের ময়লা ও মৃতকোষ পরিষ্কার করার আশ্চর্য শক্তি।
এজন্য ত্বকে ব্লিচ করতে লেবু ও চিনি মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। চিনি মেশানোর আগে চিনি গুড়া করে নিন, যাতে দানা বড় না থাকে। এরপর ত্বক ফেসওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করে নিন।
তারপর মিশ্রণটি দিয়ে ত্বকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কিছুক্ষণ মাখুন। তারপর ৫ মিনিট রেখে কুসুম গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের লোমের রঙ পরিবর্তন হয়ে সোনালি হয়ে যাবে দ্রুত। তাতে ত্বক আরও উজ্জ্বল ও পরিষ্কার দেখাবে। তবে যাদের ত্বকে প্রচুর ব্রণ, এলার্জি অথবা দাগ আছে তারা এই মিশ্রণটি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
২. টমেটো ও মধু
টমেটোতে রয়েছে প্রাকৃতিক ব্লিচ উপাদান। এটা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে, ত্বকের ময়লা দূর করতে এবং লোমের রঙ পরিবর্তন করতে অতুলনীয়।
একটি বাটিতে একটি বাটিতে একটি পাকা টমেটো নিয়ে তাতে তিন টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে মাঝারি ঘনত্বের মিশ্রণ তৈরি করুন।
মিশ্রণটি মুখে লাগানোর আগে মুখ ভাল করে পরিষ্কার করে, ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। এরপর মিশ্রণটি ত্বকে ব্যবহার করুন। ২০ মিনিট রেখে কুসুম গরম জল দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে নিন।
ত্বকে নিয়মিত এই মিশ্রনটি ব্যবহার করলে দ্রুত ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে এবং ত্বকের লোমের রঙ হালকা হয়ে যাবে। এই প্যাকটির কোন প্বার্শপ্রতিক্রিয়া নেই।
৩. মধু ও টকদইয়ের প্যাক
টকদই ত্বকের রঙ উজ্জ্বল ও সুন্দর করায় অতুলনীয়। মধুতে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট ও প্রাকৃতিক ব্লিচিং উপাদান। এই দুইটি উপাদানের মিশ্রণে প্যাক তৈরি করে মুখে নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ার সাথে সাথে মুখের ত্বকের লোমের রঙও পরিবর্তন হয়ে যাবে।
মুখের ত্বকের লোম যাদের কালো, তাদের ত্বক মূলত লোমের জন্যই আরও কালো দেখায়। এজন্যই লোমের রঙ হালকা বা সোনালি হয়ে গেলে ত্বক অনেক মোলায়েম, গর্জিয়াস আর উজ্জ্বল দেখায়। আর সেজন্য এই প্যাকটি খুবই কার্যকর।
এটা সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করলে ভাল ফল পাবেন।
৪. তেতুল ও মধু
তেতুলে রয়েছে টারটারিক এসিড যা প্রাকৃতিক ব্লিচ উপাদান এবং মধুতে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট। দুইটি উপাদানের মিশ্রণে প্যাক তৈরি করে নিতে পারেন। মুখ ফেসওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
এরপর তেতুল গুলিয়ে তাতে পরিমাণমত মধু মিশিয়ে মিশ্রন তৈরি করুন। এরপর এটা ত্বকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করুন। ৫-১০ মিনিট রেখে স্বাভাবিক জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
এটা ত্বকের বাড়তি তেল দূর করে ত্বক ফ্রেশ করে তুলবে, এবং ত্বকের লোমের রঙ পরিবর্তন করবে। এটা সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করা যেতে পারে। এটা খুবই ভাল ও কার্যকর ব্লিচিং প্যাক।
৫. লেবু ও মধু
লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক এসিড, ও রঙ ফর্সাকারী উপাদান। মধু ত্বকের ভাজ, বিবর্ণতা ও রুক্ষতা দূর করে ত্বকের রঙ ফর্সা করতে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। এই দুইটি উপাদান দিয়ে চমৎকার প্যাক বানানো সম্ভব।
একটি বাটিতে একটি কাগজী লেবুর রস চিপে নিন, তাতে দুই টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে মিশ্রন তৈরি করে নিন। পরিষ্কার ত্বকে প্যাকটি লাগান। তারপর ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
এরপর কুসুম গরম জলে মুখ ভালভাবে ধুয়ে ভাল মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এটা ত্বকের রঙ কয়েক শেড পর্যন্ত উজ্জ্বল করে। আর সেইসাথে লোমের রঙও হালকা করে।
এই প্যাকটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। সপ্তাহে তিনদিন প্যাকটি ব্যবহার করতে পারবেন। এটা ব্যবহার করলে ব্লিচের কাজ যেমন হবে, তেমনি বাড়তি কোন উপটান ব্যবহার না করলেও হবে।
জরুরী কথা
আমাদের হাতের কাছেই আমাদের সব ধরনের ত্বকের সমস্যার সমাধান রয়েছে। শুধু কোন উপাদানে কি উপকারিতা রয়েছে, এবং কোন কোন উপাদানের মিশ্রণ কোন প্রক্রিয়ায় কতবার ব্যবহার করা উচিত সেটা জানা থাকলেই ঘরোয়া উপাদান দিয়েই আমরা প্বার্শপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই নিজেদের সুন্দর রাখতে পারি।
এর জন্য পার্লার বা লেজারের মত ব্যয়বহুল ও ক্ষতিকর ট্রিটমেন্টের কোন দরকার পড়েনা। আশা করি, ঘরোয়া উপাদান দিয়ে ব্লিচ করতে পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসবে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার অথবা কোন মতামত দেওয়ার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আমরা আপনার মতামত গুরুত্বসহকারে নিয়ে অবশ্যই দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।