জাতীয় সমবায় উন্নয়ন কর্পোরেশনের (এনসিডিসি) সহকার প্রজ্ঞা উদ্যোগের (Sahakar Pragya Scheme in Bengali) অধীনে ৪৫ টি নতুন প্রশিক্ষণ মডিউল লক্ষণরাও ইনামদার জাতীয় সমবায় গবেষণা ও উন্নয়ন একাডেমী (লিনাক) সহ দেশের গ্রামীণ অঞ্চলের প্রাথমিক সমবায় সমিতিগুলিকে প্রশিক্ষণ দেবে।
সহকার প্রজ্ঞা উদ্যোগটি মূলত ভারতের গ্রামীণ জনগণকে জ্ঞান এবং দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়েছে। দেশের সমবায় খাতকে শক্তিশালী করে কৃষিকাজে ঝুঁকি হ্রাস করে কৃষকদের সামগ্রিক উন্নয়ন করা এই উদ্যোগের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।
সুপ্রিয় পাঠক আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে এনসিডিসির সহকার প্রজ্ঞা – সমবায় খাতের উন্নয়নের উদ্যোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
এনসিডিসির সহকার প্রজ্ঞা – সমবায় খাতের উন্নয়নের উদ্যোগ :-
নীচে এই উদ্যোগের কয়েকটি প্রধান লক্ষ্য দেওয়া হল:
এনসিডিসির সহকার প্রজ্ঞার ৪৫ টি নতুন প্রশিক্ষণ মডিউল গ্রামীণ ভারতের সমবায় সমিতিগুলিকে প্রশিক্ষণ দেবে যাতে কৃষি উৎপাদন, বন্টন, ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি, অসাধু মধ্যস্থ ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়া থেকে কৃষকরা নিজেদের রক্ষা করতে পারে এবং নিজেরা লাভবান হয়।
কৃষকদের কৃষিক্ষেত্রে ঝুঁকি হ্রাস করার বিষয়ে শিক্ষার জন্য প্রাথমিক সমবায় কর্তৃক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে
এটি কৃষকদেরকে অসাধু ব্যবসায়ী হতে সাবধান হতে সহায়তা করবে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় করার ক্ষেত্রে ন্যায্যমূল্য পেতে সমবায় খাতের সাথে যুক্ত হবে।
সারাদেশে ১৮ টি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এনসিডিসির প্রশিক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, যাতে করে দেশের সব অঞ্চলের মানুষই এই প্রকল্পের আওতায় নিজেদের শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারে।
সহকার প্রজ্ঞার উদ্দেশ্য
সহকার প্রজ্ঞা উদ্যোগের অধীনে প্রশিক্ষণ মডিউলগুলি জ্ঞানের পাশাপাশি কৃষকদের সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে।কৃষকরা যখন সমবায় সমিতিতে যোগ দেয় তখন তাদের মধ্যে থেকেই নেতৃত্ব গড়ে ওঠে।
তারা সরকারের আত্মনির্ভর ভারত উদ্যোগে প্রধান ভূমিকা রাখতে সারা দেশে প্রাথমিকভাবে সমবায় সমিতিগুলি প্রস্তুত করার চেষ্টা করে এবং এখানে নিজেদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে থাকে।
এই কর্মসূচিটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের সাদৃশ্যপূর্ণ এবং এর লক্ষ্য দেশের দরিদ্র কৃষকদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় আলোকে শিক্ষিত করা এবং তাদের আত্ম-সচেতন এবং স্বাধীনভাবে নিজেদের পেশায় উদ্ভুদ্ধ করা।
সহকার প্রজ্ঞা উদ্যোগের তাৎপর্য
প্রায় ২৯০ মিলিয়ন সদস্য নিয়ে ভারতে ৮.৫ লক্ষেরও বেশি সমবায় সমিতির বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে। সমবায় খাত কৃষকদের বিভিন্ন উপায়ে সহায়তা প্রদানে সফল হয়েছে। এটি বলা যেতে পারে যে ভারতের প্রায় ৯৯% কৃষক কোন না কোন সমবায় সমিতির সাথে যুক্ত।
সমবায়গুলি কৃষিক্ষেত্র ও মিত্র খাতে ঝুঁকি হ্রাস করতে কৃষকদের শক্তিবৃদ্ধি করে এবং ব্যবসায়ীদের শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে এবং ব্যবস্থা নিতেও সাহায্য করে।
আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্প বাস্তবায়নে সমবায়ীরা মুখ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। একাডেমীক প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং সমবায়গুলির মাধ্যমে দেশের মানবসম্পদ আরও শক্তিশালী করার জন্য একটি শক্তিশালী ক্লায়েন্ট-ওরিয়েন্টেশন এবং উন্নত দৃষ্টিভঙ্গির সাথে প্রকল্পের কর্মসূচি এবং পদক্ষেপগুলি সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা করা হয়।
৪৫ টি প্রশিক্ষণ মডিউল সমবায় সমিতিকে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পেশাদার ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সমবায়ের নীতি মেনে চলতে উৎসাহিত করবে।
যেহেতু গ্রামীণ জনসংখ্যা এবং কৃষিকাজ কার্যক্রম ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি প্রধান উৎস , তাই সরকার দেশের সমবায় খাতের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ ও প্রায়োগিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য সহকার প্রজ্ঞা প্রকল্প স্থাপন করেছে।
সহহার প্রজ্ঞা উদ্যোগের বিস্তৃত উদ্যোগ
সমবায়গুলির মাধ্যমে কৃষকদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে এই উদ্যোগের আওতায় আরেকটি উদ্যোগ হল ২২২টি জেলা এবং অন্যান্য আগ্রহী জেলাগুলিতে ফোকাস সমবায় উন্নয়ন করা। বিভিন্ন সমবায় কেন্দ্রে ইন্টার্ণ হিসেবে কাজ করার সময় অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।এটি সামার ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম (এসআইপি)
শিক্ষার্থী এবং তরুণ পেশাদারদের কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ইন্টার্ন হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হবে এবং তাদের সহযোগিতামূলক ক্ষেত্রের জন্য উদ্ভাবনী সমাধান প্রদানের সুযোগ দেওয়া হবে যাতে তাদের মেধা ও মননের বিকাশ ঘটে।
ভারতের জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশই কৃষিকাজের সাথে জড়িত। কিন্তু তাদের প্রযুক্তি এবং অন্যান্য জ্ঞান কম বিধায় তারা মধ্যস্বত্তভোগীদের কারণে পণ্যের কম মূল্য পেয়ে থাকে। এছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি এবং জ্ঞানের অভাবে তাদেএ উৎপাদন কম হয়, সংরক্ষণ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে তারা সমস্যার সম্মুখীন হয়।
এই সমস্যা থেকে বাঁচতে সহকার প্রজ্ঞা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে দেশের কৃষকরা সমবায়ের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার ফিরে পায় এবং নিজেদেরকে উন্নত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষিত করতে পারে।
শেষ কথা
দেশের কৃষিখাত এবং কৃষিকাজ অনগ্রসর হয়ে থাকলে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব। কৃষকরা যদি ফসল ঠিকমত না ফলায়, বিভিন্ন সমস্যার কারণে ফসল কম হয় তবে সেসব পণ্য বিদেশ হতে আমদানি করতে হয়, যা দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর। তাই কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির জন্য মূলত সহকার প্রজ্ঞা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
৪৫ টি নতুন প্রশিক্ষণ মডিউলের মাধ্যমে সারাদেশে ১৮ টি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশের কৃষকদের প্রশিক্ষিত করা হবে৷ এতে তাদের মধ্যে থেকেই দক্ষ নেতৃত্ব গড়ে উঠবে এবং প্রশিক্ষনে যাদের ইন্টার্ন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে তাদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে।
কৃষিকাজের ঝুঁকি কমাতে এবং কৃষকদের নিজেদের মধ্যে সাহায্য- সহযোগিতা বৃদ্ধি ও নিজেদের অধিকার আদায় করার জন্যই এরকম।উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়লে দেশের অর্থনীতিও চাঙ্গা হয়ে উঠবে। আশা করা যায় সহকার প্রজ্ঞা উদ্যোগের মাধ্যমে কৃষকদের সার্বিক উন্নয়ন সাধন সম্ভব হবে।
এর মাধ্যমে কৃষকদের অন্য পেশায় যাওয়া এবং কৃষিকাজের প্রতি অনিহা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। এভাবে দেশ কৃষিক্ষেত্রে উন্নতি ও সমৃদ্ধি লাভ করবে। সুপ্রিয় পাঠক, আমাদের লেখার উদ্দেশ্য থাকে ভারত সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প এবং তার অগ্রগতি সম্পর্কে আপনাদের জানানো, যাতে সেগুলো সম্পর্কে আপনারা অবগত হতে পারেন এবং সুবিধাসমূহ উপভোগ করতে পারেন। আশা করি পোস্টটি ভাল লাগলে এ বিষয়ে মন্তব্য করে আমাদেরকে উৎসাহ প্রদান করবেন। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।