প্রোডাকশন লিংকড ইনসেনটিভ প্রকল্প (PLI Scheme) সম্পর্কে জেনে নিন

প্রোডাকশন লিংকড ইনসেন্টিভ প্রকল্প বা পিএলআই স্কিম (Production Linked Incentive Scheme in Bengali) এমন একটি স্কিম যার লক্ষ্য হল বিভিন্ন সংস্থা বা কোম্পানির দেশীয় ইউনিটগুলিতে উৎপাদিত পণ্যসমূহ বিক্রয়ের প্রনোদনা দেওয়া।

এই প্রকল্পটি বিদেশী সংস্থাগুলিকে ভারতে ইউনিট এবং শাখা স্থাপনের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে, তবে এটির লক্ষ্য হচ্ছে স্থানীয় সংস্থাগুলির বিদ্যমান উৎপাদন বৃদ্ধি করে আরও ইউনিট স্থাপন এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ড বিস্তৃত করতে এবং আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতেএবং অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির উপর আমাদের দেশের নির্ভরতা হ্রাস করা।

পিএলআই প্রকল্পটি বৃহৎ পরিসরে ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের জন্য ২০২০ সালের এপ্রিলে চালু হয়েছিল, তবে পরে ২০২০ এর শেষের দিকে আরও ১০ টি সেক্টরের জন্য চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পটি ভারতের আত্মনির্ভর ভারত প্রচারণার সাথে সামঞ্জস্য রেখে চালু করা হয়েছে।

প্রোডাকশন লিংকড ইনসেনটিভ প্রকল্প (PLI Scheme) সম্পর্কে জেনে নিন
প্রোডাকশন লিংকড ইনসেনটিভ প্রকল্প (PLI Scheme) সম্পর্কে জেনে নিন

সুপ্রিয় পাঠক আমাদের আজকের আয়োজন সাজানো হয়েছে প্রোডাকশন লিংকড ইনসেনটিভ (পিএলআই) প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে। চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্প আবেদন অনলাইন

প্রোডাকশন লিংকড ইনসেনটিভ (পিএলআই) প্রকল্প:-

পিএলআই স্কিম – সংক্ষিপ্ত পটভূমি

ইলেকট্রনিক সংস্থাগুলিকে মোবাইল ফোন, ট্রানজিস্টর, ডায়োড ইত্যাদির মতো বৈদ্যুতিক উপাদান উৎপাদন, আইটি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদন সম্পর্কিত জাতীয় নীতিমালার অংশ হিসাবে এটি চালু করা হয়েছিল।

এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ভারতে তাদের উৎপাদন ইউনিট স্থাপনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো এবং স্থানীয় নির্মাতাদের তাদের ইউনিটগুলি বিস্তৃত করতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উৎসাহ দেওয়া।

পিএলআই প্রকল্পটি প্রথমে ইলেকট্রনিক সেক্টরকে লক্ষ্য করে ২০২০ সালের এপ্রিলে বৃহৎ পরিসরে ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং বাড়াতে গ্রহণ করা হয়েছিল এবং বছরের শেষ দিকে (২০২০ সালের নভেম্বর), খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, টেলিকম, ইলেকট্রনিক্স, টেক্সটাইল, বিশেষ ইস্পাত, অটোমোবাইলস এবং অটোসহ আরও ১০ টি সেক্টর পরবর্তীতে এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

পিএলআই প্রকল্পের আওতায় উপাদান, সৌর ফটোভোলটাইজ মডিউল এবং এয়ার কন্ডিশনার এবং এলইডি এর মতো আধুনিক এবং প্রয়োজনীয় পণ্যগুলির উৎপাদন ও বিপণণ বৃদ্ধি করাটাও এই প্রকল্পের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

লক্ষ্মীর ভান্ডার পেমেন্ট স্ট্যাটাস অনলাইন চেক করুন @এখানে

পিএলআই প্রকল্পের বাজেট

যথাযথ যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে, সমস্ত ইলেকট্রনিক উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি যেগুলি হতে পারে ভারতীয় বা ভারতে নিবন্ধিত ইউনিট রয়েছে এমন কোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবে।

কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২১-এ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ পিএলআই প্রকল্পের আওতায় আরও ১৩ টি খাত অন্তর্ভুক্তির কথা বলেন। এই প্রকল্পটি চালু হবে পাঁচ বছরের মেয়াদে এবং ২০২২ অর্থবছরে চালু হবে বলে উল্লেখ করেছিলেন।

২০২২ অর্থবছর থেকে এই প্রকল্পের জন্য ১.৯ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে যা উৎপাদনের সাথে সংযুক্ত উদ্দীপনা বৃদ্ধি করবে এবং প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণের জন্য উৎসাহিত করবে।

২০২০ সালের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ১০ টি মূল খাতের জন্য পিএলআই প্রকল্প চালু করার অনুমোদন দিয়েছে যা ভারতের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং রফতানিকে উন্নত করতে অনেক সাহায্য করবে।

প্রধানমন্ত্রী কিষান যোজনা {এই মাসের} নতুন লিস্ট ও আবেদন পদ্ধতি

পিএলআই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও সুবিধা

সরকার বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে এই প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করে চলেছে।

২০২৫ সালের মধ্যে ভারতের এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের ডিজিটাল অর্থনীতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে কারণ সরকার স্মার্ট সিটি এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়ার মতো প্রকল্পের আওতায় ইলেকট্রনিক্সের চাহিদা বাড়বে বলে আশাবাদী।

পিএলআই প্রকল্পটি ভারতীয় মোটর শিল্পকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে এবং ভারতীয় স্বয়ংচালিত খাতের বিশ্বায়নকে বাড়িয়ে তুলবে। ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এবং এই প্রকল্পের মাধ্যমে, বিভিন্ন খাত বিশেষত তালিকাভুক্ত ১০টি খাতের গার্হস্থ্য উৎপাদন, বিশেষত ম্যানমেড ফাইবার (এমএমএফ) বিভাগ এবং উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন টেক্সটাইল খাতের উৎপাদন ও বিস্তার আরও উৎসাহিত করতে বড় বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করবে।

ইন্ডিয়া, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদক হিসাবে পরিচিত, পিএলআই প্রকল্পের আওতায় এই সেক্টরকে অন্তর্ভুক্ত করায় দেশের উপকার হবে কারণ এটি রপ্তানির সুযোগ বাড়িয়ে দিতে পারে কয়েকগুণ। একইভাবে, টেলিকম, সোলার প্যানেল, ফার্মাসিউটিক্যালস, অন্যান্য পণ্যগুলি এবং প্রবর্তিত অন্যান্য সমস্ত ক্ষেত্রগুলি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী ভারতকে একটি শীর্ষ উৎপাদন কেন্দ্র হিসাবে পরিচিতি লাভ করাতে পারে।

স্বাস্থ্যসাথী লিস্টে নাম আছে কিনা দেখার পদ্ধতি

শেষ কথা

দেশের রপ্তানিখাতের উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে আগে বিভিন্ন খাতের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। তা নাহলে রপ্তানি বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। এজন্য পিএলআই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার ইলেকট্রনিক্সসহ আরও ১০ টি খাতের উৎপাদন বৃদ্ধি, ব্যবসায় বা প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ, প্রতিষ্ঠানের কর্মীসংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন প্রনোদনা ও সুবিধা প্রদান করছে।

বিদেশী বিভিন্ন কোম্পানিকে আমাদের দেশে শাখা স্থাপন এবং ব্যবসায় সম্প্রসারণে উৎসাহ প্রদান করছে যাতে উৎপাদন এবং রপ্তানি বৃদ্ধি পায় সেই সাথে রাজস্বও বৃদ্ধি পায়। আগামী বছর থেকে পিএলআই প্রকল্পের আওতায় সেক্টরের সংখ্যা এবং প্রকল্প বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে যাতে দেশের অর্থনীতি খুব দ্রুত ১ ট্রিলিয়ন ডলারের হতে পারে।

দেশের অর্থনীতি যাতে আমদানি নির্ভর না হয়ে রপানি নির্ভর হয়ে সেজন্যই মূলত এই প্রকল্পের সূচনা। আশা করা যায় এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত খুব দ্রুত বিশ্বের শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হবে।

সুপ্রিয় পাঠক, আমাদের লেখার উদ্দেশ্য থাকে ভারত সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প এবং তার অগ্রগতি সম্পর্কে আপনাদের জানানো, যাতে সেগুলো সম্পর্কে আপনারা অবগত হতে পারেন এবং সুবিধাসমূহ উপভোগ করতে পারেন। আশা করি পোস্টটি ভাল লাগলে এ বিষয়ে মন্তব্য করে আমাদেরকে উৎসাহ প্রদান করবেন। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top